নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে আগস্ট মাস

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫২

আগস্ট মাস চলে যাচ্ছে। কী দুঃখের মাস! আবার আসবে পরের বছর, মনে করিয়ে দেবে দুঃখের কথা। আমাদের শোকের কথা। আমাদের নিজের সৃষ্টি দুঃখ ও শোকের কথা। এমন মাস যেন আর না আসে আমাদের জীবনে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সমস্ত জাতির জীবনে নেমে এসেছিল ভয়াবহ শোক। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নেমে আসেনি এই দুঃখ। অর্বাচীনের কর্মকাণ্ডের ফল এই শোক। কয়েকজন মনে করল জাতিকে তাদের কর্মকাণ্ড দ্বারা উদ্ধার করা যাবে। মনে হয় পেছনে কিছু উসকানির ব্যাপার ছিল। ঘটনার ভিলেনরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য দ্রুত প্রমোশন পেয়ে হয়েছিলেন মেজর। এত জুনিয়র পদের অফিসারদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার কথা নয়। এদের দুজন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপরে লেখা একটি বইয়ের লেখক মাসকারেনহাসের সঙ্গে বিলাতের একটি টিভিতে আলোচনায় মিলিত হন। মাসকারেনহাসের একটি প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বলেন যে তাঁরা সেনাবাহিনীর উপপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন এই সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে। তিনি উত্তরে বলেছিলেন যে তিনি এর সঙ্গে জড়িত হবেন না। তবে জুনিয়র অফিসাররা যদি অভ্যুত্থান করতে চান তাঁরা তা করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে মাসকারেনহাস জিয়াউর রহমানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। জিয়াউর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করেননি। সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়। একজন সিনিয়র অফিসার অভ্যুত্থানের বিষয়টি জেনেও কিছুই করেননি। এ জন্য পরবর্তী সময়ে কোনো জবাবদিহির সম্মুখীন হননি তিনি।
সব ঘটনার মধ্যে আশ্চর্যজনক অনেক কিছুই আছে। কেন কেউ অভ্যুত্থানটি প্রতিহত করার চেষ্টা করল না? পুরো ব্যাপারটিতে রক্ষীবাহিনীর কোনো ভূমিকাই ছিল না। কেন তবে গঠন করা হয়েছিল এই বাহিনী? পরে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসারদের অনেকেই বই লেখেন। বইগুলোর অনেকটিতেই নিজের দোষ স্খালন এবং অন্যকে দোষারোপ করার চেষ্টা লক্ষ করা যায়। কেন এসব কর্মকর্তা কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হননি?
এই বিশাল রক্তক্ষয়ের ফলাফল কী দাঁড়িয়েছিল। সেনাবাহিনীর দখলে চলে গেল রাজনীতি। প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে শিক্ষার। সেনাবাহিনীর নেতাদের রাজনীতিতে না ছিল প্রশিক্ষণ, না ছিল অভিজ্ঞতা। স্মার্টনেস সেনাজীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক মঞ্চ দখল করার পরে তাঁরা তাই স্মার্টনেসের সঙ্গে হুকুম চালিয়ে চললেন। রাজনীতিতে খুব একটা সফল নন এমন সব রাজনীতিবিদ সেসব হুকুম মেনে চলতে রাজি হলেন।
গোলাম আযম ফিরে এলেন দেশে। তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা ফিরে এলেন। ধীরে ধীরে তাঁরা রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এমনি করে দেশের রাজনীতি দখল করে বসল। শাহ আজিজ হলেন প্রধানমন্ত্রী। আবদুর রহমান বিশ্বাস হলেন দেশের রাষ্ট্রপতি। নিজামী আর মুজাহিদ মন্ত্রিপরিষদ আলোকিত করলেন।
শাসনতন্ত্র পরিবর্তিত হলো। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রয়োজন মেটানো হলো। চলতে থাকল সেনাকর্তার সাধুতার অবিরাম প্রচার। তাঁর শাসনের সময়ে ২০টিরও বেশি সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলে। প্রাণ দিল দুই হাজারের বেশি সেনাবাহিনীর সদস্য।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনার জনসভায় চলে গ্রেনেড আক্রমণ। এই ঘৃণ্য আক্রমণে নিহত হন ২৪ জন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমান তাঁদের একজন। আহত হন অসংখ্যজন। ক্ষমতায় তখন খালেদা জিয়ার সরকার। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই সরকার করল না। তারা বলতে লাগল যে জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন লাভের জন্য আওয়ামী লীগ এটা করেছে। তারা এ কথাও বলল যে শেখ হাসিনা ভ্যানিটি ব্যাগে করে বোমা নিয়ে গিয়েছিলেন। বিএনপির নেতারা জজ মিয়া নাটক সাজান। জজ মিয়াকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়। তার মা জোবেদা খাতুন এই তথ্য ফাঁস করে দেন।
বছর দুয়েক আগে দেশে বেড়াতে এসে একজন সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন যে ওইজাতীয় হাতবোমা একমাত্র সেনাবাহিনীর কাছে থাকে। তখন আশ্চর্য হয়েছিলাম শুনে। এবারে পত্রিকায় দেখলাম যে মামলার প্রধান কৌঁসুলি বলেছেন, ২১ আগস্ট ব্যবহৃত হাতবোমাগুলোকে আর্জেস বোমা বলা হয়। তাঁর মতে, এই শক্তিশালী বোমাগুলো একমাত্র সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে পারে। বোমাগুলো কোথা থেকে এসেছে সেটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে মনে হয় যে হাতবোমাগুলো কোনো সরকারের কাছ থেকে এসেছিল।
এই গ্রেনেড নিক্ষেপ কর্মকাণ্ডের প্রধান ব্যক্তি মুফতি হান্নান। সিলেটে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে বোমা নিক্ষেপের অপরাধে তার ফাঁসি হয়েছে। আসামির তালিকায় নাম ছিল প্রতিমন্ত্রী বাবরের। তিনি নাকি অন্যতম আসামি তাজউদ্দীনকে সীমান্ত পার করে দিয়েছেন। তাজউদ্দীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই, যিনি গ্রেনেড নিক্ষেপ কর্মাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান সংগঠক। আসামির তালিকায় রয়েছে তারেক রহমানের নাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। সঙ্গে হত্যা করা হয়েছিল তাঁর সহধর্মিণী ও তিন ছেলেকে। রাসেলের বয়স ছিল ১১। দুই পুত্রবধূকে হত্যা করা হয়। ভাইকে হত্যা করা হয়। তাঁরা সবাই বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিলেন। সেরনিয়াবাত ও ফজলুল হক মণির বাড়িতে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এত বড় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল কী জন্য? এমন নৃশংস ঘটনা যেন আমাদের দেশে আর না ঘটে। আগস্টের মতো নৃশংস মাস যেন আর না আসে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

বারিধারা বলেছেন: উহ! এই এক মাস কান্তে কান্ত অবস্থা একদম খারাপ হুইয়া গেছিলা। এখন আবার হাসতে পারব। এইবার প্রাণ খুলে হাসব!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.