নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের রাজনীতি এবং উত্তেজনা

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:২৪

দেশের রাজনীতিতে আপাতদৃষ্টে কোনো উত্তেজনা কিংবা অস্থিরতা নেই। তবে ভেতরে ভেতরে একটা কী হয় কী হয় ভাব আছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে নির্বাহী ও বিচার বিভাগের টানাপড়েন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অতি রাজনীতি, বানভাসী মানুষের প্রতি রাজনীতিবিদদের অমনোযোগ এবং তার সমালোচনা- এগুলোই এখন রাজনীতির আলোচনার বিষয়। এতদিন বিএনপি চাপের মধ্যে ছিল, দলের মধ্যে বিরাজ করছিল চরম হতাশা। রায়ের পর মনে হচ্ছে বিএনপি একটু ভারমুক্ত হয়েছে, দলের মধ্যে চাঙ্গা ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। অন্যদিকে এতদিন সরকার ভার মুক্ত থাকলেও রায়ের পর কিছু চাপে আছে তারা। সরকার ও আদালত কীভাবে তৈরি হওয়া সংকট থেকে বেরিয়ে আসবে, সেটাও অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। নেপথ্যে কোনো সমঝোতার উদ্যোগের কথা শোনা যায় না। এই অস্বস্তি দ্রুত কেটে যাক, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের একটি সম্মানজনক নিষ্পত্তি ঘটুক- এটাই এখন সবার চাওয়া।
রায় নিয়ে বিএনপি কেন উল্লসিত সে প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সরকার বিপাকে পড়াই সম্ভবত বিএনপির খুশি হওয়ার বড় কারণ। কিন্তু বিএনপির এই খুশি ভাব টেকসই হবে না। কারণ একটু স্থিতু হয়ে রায়ে সামরিক শাসনবিরোধী যেসব কথা আছে সেগুলো আওয়ামী লীগ ও অন্যরা বলা শুরু করবে। তাছাড়া সংসদ, নির্বাচন কমিশন ও অন্য যেসব বিষয়ে তেতো মন্তব্য আছে তা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, বিএনপির জন্যও হজমযোগ্য হবে না। প্রাথমিক উত্তেজনা কেটে গেলে এসব সামনে আসবে। তখন বিএনপির আনন্দ বহাল থাকবে না।
আমাদের এলাকায় দোকানে কেনাকাটা করতে গেলে খদ্দেররা পয়সা দিয়ে যা কেনে তার সঙ্গে একটু বাড়তি চায়। এটাকে বলে ‘ফাও’। যেমন একজন ক্রেতা আধা কেজি বেগুন কিনলেন। তারপর বিক্রেতাকে বললেন, আপনার তো ক্ষেতের বেগুন, দুটো ফাও দেন ! বিক্রেতা খুশি মনেই য়তো ৩/৪টা বেগুন দিয়ে দেন কখনো কখনো। তো, একবার এক কৃপন ক্রেতা ফাও বেগুন পেয়ে বিক্রেতাকে বললেন, ভাই সংসারে আমরা মানুষ মাত্র দুইজন। এত বেগুন লাগবে না। আপনি আমাকে যে কয়টা ফাও দিয়েছেন, ওতেই আমার চলবে। কেনা টুকু আপনি রেখে দেন। বিক্রেতা তখন হাসবে, না কাঁদবে !
বিএনপির সমস্যা হলো তারা মূলটার চেয়ে ফাওটার দিকে বেশি নজর দেয়। বিএনপির জন্ম হয়েছে ক্ষমতায় থেকে। তাই তারা ক্ষমতায় যাওয়ার শর্টকাট পথ খুঁজতেই বেশি অভ্যস্ত। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজন মানুষের সমর্থন। আর মানুষের সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচনের মাধ্যমে। বিএনপি দাবি করে মানুষের সমর্থন তাদের প্রতি রয়েছে। এই দাবি যদি সঠিক হয় তাহলে বিএনপির উচিত যে কোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়া। তারা নির্বাচনে না যাওয়ার অজুহাত খোঁজে কেন? মানুষ যদি ভোট দেয়, মানুষের সমর্থন যদি স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তাহলে কোনো কারসাজি করে ভোটে হারানো সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে ভোটাররাই ভোট চুরি প্রতিরোধ করবে। কোনো ক্ষমতানসীন সরকার কি প্রতিপক্ষকে ভোটে জেতার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে দেয়? বিএনপি দিয়েছিল?
মানুষের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে দেখা যায় বিএনপির প্রচণ্ড অনীহা। এটা একটু কঠিন এবং কষ্টকর কাজ। সেখানেই বিএনপির অসুবিধা। আপনি ক্ষমতায় খেকে জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে সুযোগ করে দিতে পারলে আপনার জন্য গণতান্ত্রিক সুযোগ অবারিত না হওয়ারই কথা। সরকার বিএনপিকে জনসভা করতে দেয় না। কিন্তু চলাফেরা তো করতে দেয়। মিছিল করতে দেয় না। মানব বন্ধন, সেমিনার তো করতে দেয়। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিতে যেতে পারেন, দেনদরবার করতে পারেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে পারেন না? এখানেও বিএনপির অপেক্ষা ফাওয়ের। যদি কোনো কৌশলে ক্ষমতাটা হাতে চলে আসে!
প্রধান বিচারপতি একটি মামলার রায় দিয়ে সরকারকে কাবু করেছে, আর বিএনপি ভাবছে তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত হলো। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, এই রায়ের পর সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, তাহলেও কি এটা বলা যায় যে সে ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেই বিএনপি ক্ষমতায় যাবে এই গ্যারান্টি বিএনপিকে কে দিচ্ছে বা দিয়েছে? ভারতে বিজিপি সরকার ক্ষমতায় আসায় বিএনপি মহলে সে কী উল্লাস! মনে হচ্ছিল বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া আর কে আটকায়। না, ভারতে সরকার পরিবর্তনে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো হলো না। আমেরিকার নির্বাচনের আগে-পরেও বিএনপিতে চনমনে ভাব তৈরি হয়েছিল। হিলারি প্রেসিডেন্ট হলো তো কথাই নেই, ট্রাম্প হলেও চলবে। ট্রাম্পের মতো ‘পাগলা’ প্রেসিডেন্ট কি আর শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন করবে? এখন আবার বিএনপিতে নতুন খুশির দোলা। ভারতে প্রণব মুখার্জি আর রাষ্ট্রপতি পদে নেই। এই ভদ্রলোক নাকি দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে বসে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে মদদ জুগিয়েছেন। বিজিপির নতুন রাষ্ট্রপতি নাকি বিএনপিদরদী হবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে আছেন। চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছেন বলে জানানো হলেও তিনি কার্যত গিয়েছেন ‘রাজনৈতিক মিশন’-এ। পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে শলাপরামর্শ এবং তার মাধ্যমে বিএনপির বিদেশি কানেকশন জোরদার করাই নাকি খালেদা জিয়ার লন্ডন অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। খালেদা জিয়া বিদেশি শক্তিকে বিএনপির পাশে চান। কয়েকটি দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা হয়েছে বা হবে বলে জোর গুজব রয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রতিনিধির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করার সুযোগ নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, সরকারের কাছে বেগম জিয়ার লন্ডন তৎপরতার সব তথ্য-খবর আছে।
তথ্য যেহেতু আছে সেহেতু প্রয়োজনবোধে তা দেশবাসীকে জানানোও হতে পারে। তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনা সহজে বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। বেগম জিয়া দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান। তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন। তাই তাকে নিয়ে আগ্রহ- কৌত‚হল থাকাটাই স্বাভাবিক। তিনি যেমন বিদেশে যেতে পারেন, তেমনি বিদেশে যে কারো সাথে দেখা করা, কথা বলাতেও দোষের কিছু নেই। কিন্তু এগুলোতে স্বচ্ছতা থাকা উচিত। তিনি কোনো গোপন কিংবা সন্ত্রাসী দলের নেত্রী নন। কাজেই তিনি বিদেশে কার সঙ্গে দেখা করছেন, কী বিষয়ে কথা বলছেন, সেসব দলের পক্ষ থেকেই দেশবাসীকে জানানো উচিত। কোনো কিছু গোপন করার চেষ্টা হলে বা রাখঢাক করা হলেই গুজব ডালপালা বিস্তার করবে। আর গুজব কখনই সুস্থতার লক্ষণ নয়।
শোনা যাচ্ছে, বেগম জিয়া দেশে ফিরবেন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর। ১৫ জুলাই তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। এত দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলেও তিনি দলের চেয়ারপারসন হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। দলের মধ্যে আস্থা-বিশ্বাসের সংকটের জন্যই এটা হয়েছে বলে মনে করা হয়। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হলেও এটা এখন অনেকটা যেন বেগম জিয়ার পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। তিনি এবং তার ছেলে তারেক রহমানই এখন বিএনপির মালিক-মোক্তার। সে হিসেবে দলের অন্যতম মালিক লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের কাছ থেকে কী মেওয়া নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় বিএনপির অগনিত নেতা-কর্মী-সমর্থক এবং দেশবাসী। তারেক রহমান আবার বাংলাদেশের আদালতে ‘পলাতক’ হিসেবে বিবেচিত।
বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়া দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। ব্যাগে করে এই রূপরেখার খসড়া নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরবেন চূড়ান্তটা নিয়ে। যেহেতু চূড়ান্ত করার আইনত অর্ধেক হিসসা তারেক রহমানের। এই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌত‚হল আছে। কতটা রেখায় কী রূপ আঁকা হয়েছে তা না দেখলে তিয়াস মিটবে না রাজনীতিপিপাসুদের। লন্ডন যাওয়ার আগে ম্যাডাম জিয়া বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আবার সরকার পক্ষের অবস্থানও পরিষ্কার। তারা সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। এই অবস্থায় বেগম জিয়ার রূপরেখা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষ যদি রূপরেখার রূপে দিওয়ানা হয়, তাহলে কি না হতে পারে !
বেগম জিয়ার রূপরেখার রাজনীতি দেশে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে, নাকি উত্তেজনা প্রশমনে কোনো অবদান রাখবে দেখার বিষয় সেটাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬

আবু তালেব শেখ বলেছেন: নিরপেক্ষ নির্বাচন বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.