নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গা, বাংলাদেশ ও ভারত

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:১২

৭১’এ বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত বিশ্বে যে নজীর স্থাপন করেছিলে আজো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢুকতে না দিয়ে বিপরীত এক নজীর স্থাপন করেছে। কিন্তু কেন? এর সহজ উত্তর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই ভারত মানবিক দিকটির প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। চীনের চেয়েও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায় ভারত। এজন্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাদের গুলিতে মারা গেলে তাতে কিছু যায় আসে না এমন বক্তব্য ভারতীয় বিশ্লেষকদের। অর্থনীতি ও বিনিয়োগের স্বার্থই প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রতিরক্ষার জন্যে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে ভারত মিয়ানমারকে। সেখানে রোহিঙ্গা হিন্দু মরল নাকি মুসলমান মরল, তা ভারতের বিবেচনায় নেই।

অতএব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। যদিও জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিতে বলছে, ভারত তাতে কর্ণপাত করেনি। এই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শুধু বাংলাদেশের শরণার্থীদের পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বাঁচাতে আশ্রয় দেননি বরং সারাবিশ্বে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজও নরেন্দ্র মোদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সেই নজীর স্থাপন করতে পারতেন। যদি আজ ইন্দিরা গান্ধী বেঁচে থাকতেন নিশ্চিত ছুটে যেতেন জাতিসংঘের অধিবেশনে। রোহিঙ্গাদের দুর্দ শার কথা বলতেন। মোদি কোন মুখে যাবেন, তবে গেলে গুজরাটে দাঙ্গায় মুসলিম হত্যায় তার হাত যে কালিমালিপ্ত হয়ে আছে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তার কাছে অসহায় রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মানুষের জানমালের চেয়ে ভূকৌশলগত রাজনীতি প্রাধান্য পেয়েছে।

বাংলাদেশ এমন এক সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে যখন খাদ্য উৎপাদন এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদেশে চালের জন্যে ধর্ণা দিতে হচ্ছে। প্রবল ঘনবসতির দেশে বছরের পর বছর রোহিঙ্গাদের ঠেলে দিচ্ছে অং সাং সুচির মিয়ানমার। ভারতের কাছে ৭১এ ঋণ ও কৃতজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের সরকার অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছেন। জাতিসংঘ বলছে, এত বিপুল শরণার্থীর চাপ বাংলাদেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। হ্যা ভারতও ত্রাণ পাঠিয়েছে, তুরস্ক, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র , সৌদি আরব সহ নানা দেশ ত্রাণ পাঠিয়েছে। কিন্তু কনফুসিয়াসের দেশ চীন, লেলিনের রাশিয়া নিশ্চুপ কেন! এ প্রশ্ন বিশ্ববিবেকের।

রাজনৈতিক ভূকৌশলগত স্বার্থই আজ মানবতার চেয়ে বড় হয়ে গেছে। তাই অহিংসা পরম ধর্ম এমন বাণী যে প্রচার করে গেছেন যে গৌতম বুদ্ধ সেই বুদ্ধের ধ্বজাধারী গেরুয়া পোশাকধারী উগ্র বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের রঙ্গে হাত রঞ্জিত করছেন, নির্বিচারে নারী ধর্ষণ করে ও তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে, হত্যাযজ্ঞে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছেন। শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচির মুখের দিকে তাকানো দায় হয়ে গেছে। কি ভয়ঙ্কর মুখের অবয়ব এই পাষ- নারীর উপর ভর করে আছে। নির্বিকার তিনি মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধী সেনাদের সায় দিয়ে যাচ্ছেন। আরো সায় দিয়ে যাচ্ছে জাপান, যাকে জাতিসংঘে অকুণ্ঠ আন্তর্জাতিক সমর্থন বাংলাদেশ নিজের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার দিয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে যখন এদেশে ছুটে এসেছিলেন , ষোল কোটি মানুষ তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি শিনজো আবেকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে বললেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এখানেও অতি ভদ্র মানুষের দেশ জাপান বৌদ্ধ ধর্মের সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। বাংলাদেশ পেরেছে, মানবিক দিকটিকে সবধরনের অগ্রহযোগ্যতা, অনটন ও সংকটের উর্ধে তুলে ধরতে। বাংলাদেশ বুঝেছে নিদানকালে কে তার আসল মিত্র, কে তার বন্ধু। ট্রানজিট চুক্তির বাইরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এই বাংলাদেশই উত্তর পূর্ব ভারতে প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যায় খাদ্যশস্য পরিবহনের জন্যে সীমান্ত খুলে দিয়েছে। তিতাস নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে বিশাল আকারের লরি পার করে দিয়েছে দরটানায় বিদ্যুৎকেন্ত্র নির্মাণের সরঞ্জাম ও উপকরণ নিয়ে যেতে। আজ সেই বাংলাদেশ যখন বিপর্যয়ের মুখে তখন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারত রোহিঙ্গাদের জন্যে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে কি শিক্ষা দিচ্ছে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.