নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষ ভাল নয় কিন্তু মন ভাল।

মোস্তফা সোহেল

আমি আমার মত করে অন্যদের যতটুকু ভালবাসি অন্যরা আমাকে ততটুকু ভালবাসে না।

মোস্তফা সোহেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্বে বন্ধুর জন্য \'what you do\' গুরুত্বপূর্ন নয়, \'How you do\' টাই গুরুত্বপূর্ণ।

১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩



.......হুট করে একদিন মনে হল, আমার সব বন্ধুই স্বার্থপর।

তাদের ভালোবাসায় খুত আছে। তাদের কথায়, হাসিতে স্বার্থ আছে। তাদের ব্যয়িত সময়ের প্রত্যেকটা সেকেণ্ডের মধ্যে আমার কাছ থেকে বিনিময় প্রত্যাশা আছে।

আমার খারাপ লাগতে শুরু করল। তাদের হাসি, কথা, মেসেজ দেখলেই আমার খারাপ লাগা বাড়তে শুরু করল। যাদের আমি এত যত্ন করি, তাদের সবকিছুতে সন্দেহ লাগতে শুরু করল। সন্দেহ থামাতে হবে। খারাপ লাগায় ফুলস্টপ দিতে হবে। খারাপ লাগাকে দীর্ঘায়িত করা অর্থ, নিজেই নিজের আত্মাকে মেরে ফেলা।

সিদ্ধান্ত নিলাম সবাইকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কারণ-পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে ত্যাগ করতে পারছি না। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব এক দিনেই ভেঙ্গে ফেলে একা থাকা সম্ভব নয়। আমাকে কঠিন শক পেয়ে আলাদা হতে হবে। পরেরদিন থেকে যেন মনে হয়- তার সাথে আমার বন্ধুত্ব নেই। সে স্বার্থবাদী। সে আমার শকের কারণ। যত খারাপই লাগুক, তার কাছে আর যাবনা। তার সাথে কোন সম্পর্ক নাই।

আমার আত্মবিশ্বাস কম। দুদিনেই আবার বন্ধুদের কাছে ফিরে যাবার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য উপরের সাইকোলজিক্যাল থেরাপী। উপরোক্ত স্বান্ত্বনা দিতে পারলেই নিজেকে দুরে রাখতে পারব।

আমার পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত রেজাল্টের ভিত্তিতে সত্যিকারের বন্ধুগুলোকে আইসোলেট করে ফেলতে হবে।

দুইটা লিস্ট থাকবে। একটা 'who care for me' আরেকটা 'I care for them'।

I care for them - লিস্টে জালে ধরা খাওয়া বন্ধুগুলো থাকবে। তাদেরকে বিদায় দিতে হবে আজীবনের জন্য।

who care for me লিস্টে থাকবে পাশ করা বন্ধুরা। এই লিস্টের সবাইকে অন্যদের চাইতেও বেশি সম্মান দিতে হবে। তাদের পেছনে ভালোবাসা, অর্থ, সময় এই তিনটির বিনিয়োগটা/বাজেট বাড়াতে হবে। সম্পর্কটাকে আরো বেশি নিঃস্বার্থ করে ফেলতে হবে। জীবনের প্রত্যেকটা কাজকে 'who care for me' বন্ধুদের দিকে নিজেকে ডাইভার্ট করতে হবে। শয়নে, স্বপনে, ব্যস্ততায় সবকিছুতেই এরা আমার প্রায়োরিটি লিস্টে থাকবে।

আমার কাছের বন্ধু খুব অল্প। মোটামুটি ১০ জনের মতো। লিস্ট দাড় করিয়ে ফেললাম।

এক এক করে ১০ জনকে ফোন দিলাম।
-দোস্ত! চিকেন ফ্রাই খাব। খাওয়াবি কবে ক?

বন্ধু বিচিত্র সব উত্তর দেওয়া শুরু করল।

-দোস্ত! আজকেই খাইলাম। পেট ভরা।
-আরেকদিন খাওয়াবি?
-হ্যা। কাল।

আমি শুধু ফোনে যোগাযোগ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম না। সশরীরে দেখা করতে গেলাম। আমার চিকেন ফ্রাই খাওয়া ফরজ হয়ে গেছে এটা অন্তত তারা বুঝে নিক। না খেতে পারলে আমার খারাপ লাগবে এটা জেনে যাক।

বারবার ফোন, ফেসবুকে মেসেজ করতে লাগলাম। বারবার মনে করিয়ে দিলাম, আগামীকাল তুই আমাকে চিকেন ফ্রাই খাওয়াবি।

১০ জন এর সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে খাওয়াতে রাজি। তাদের উৎসাহ দেখে আমি বিমুগ্ধ। তারা নিশ্চয় আমার ভালো বন্ধু। আমিই ভুল ভাবছি। নিজের উপর লজ্জা হতে লাগল। এমন ভালো বন্ধু পেয়ে আমি উচ্ছসিত!

উল্লখ্য- যাদের সাথে মোটামুটি সবসময় খানাপিনার সম্পর্ক তাদেরকে খানার জন্যই বারবার নক করেছি। সম্পর্ক যেভাবে গড়ে উঠেছে, বন্ধুত্বের পরীক্ষাও সেভাবেই নিতে হবে। ফেয়ার এন্ড ইকুভ্যালেন্ট!

১০ বন্ধুকে বলে টানা ১০ দিন একই রেস্টুরেন্টে আলাদা আলাদা তারিখে ডাকলাম।

.....পরদিন থেকে নির্ধারিত রেস্টুরেন্টে আমি বন্ধুদের অপেক্ষায় রইলাম। টানা ১০ দিন। একই সময়ে।

পকেটে মানিব্যাগ নেইনি। টাকা সব রুমে রেখে গেলাম। ফেরার পথে দুই কিলোমিটার হেটে আসতে হবে, যদি বন্ধুরা কেউ না আসে। সারাদিন না খেয়ে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত হয়ে নির্ধারিত রেস্টুরেন্টের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ফ্রেন্ড আসলেই খানা পিনা হবে। ক্ষুধা মিটবে।

.....যে বন্ধুদের সাথে আমার ঘোরাঘুরির সম্পর্ক, তাদের ফোন দিলাম।

-দোস্ত! ঘুরতে ইচ্ছা করছে।
-আমারো। চলে যায়।
-আসব। কিন্তু সমস্যা আছে।
-ওহ! (বন্ধুর ভয়েস স্লো)
- টাকা শেষ। বাইকের তেল নাই।

বাইকে তেল ছিল। আমি সত্যি সত্যি বাইকের তেলের টিউবটা খুলে সব তেল ফেলে দিলাম। দুইশ কেজি ওজনের বাইক হাতে ঠেলে একাএকা বন্ধুদের দেওয়া নির্ধারিত ঠিকানায় চলে গেলাম।

নির্ধারিত ঠিকানাটি আমার হোস্টেল থেকে ২ কিলোমিটার দুরে। বন্ধু আসবে। তেল উঠাব। অতপর বাইকে উঠে ঘুরতে যাব। বন্ধু না তেল উঠালে আমার হেটেই ২ কিলোমিটার বাইক ঠেলে আবার হোস্টেলে ফিরতে হবে।

উল্লেখ্য- আমি নিজেই সবসময় বাইকের তেলের টাকা বহন করি। একদিনের জন্য বন্ধুদের ঘাড়ে দিলাম পরীক্ষা করার জন্য।

......১০ দিন বিচিত্র সব কাণ্ড হলো।

কেউ আসল, খাওয়ালো। আসার সময় হোস্টেল পর্যন্ত রিক্সায় উঠে আসার টাকাও দিল।

কেউ আসল কিন্তু খাওয়ালো না। কারন তার কাছে টাকা নেই। টাকা থাকলেও অল্প। তার বাড়ি থেকে টাকা আসতে অনেক দেরি। এই কয়েক টাকা নষ্ট করা উচিৎ হবেনা। ছেলেটা চলতে পারবে না। আমার সিদ্ধান্তেই.....আমরা না খেয়েই ক্ষুধা পেটে দুইজন মিলেই হোস্টেল পর্যন্ত হেটে আসলাম।

তৃতীয় -কিছু বন্ধু আসল না। ফোন করল না। খাওয়ালো না।

খাওয়ানো মূখ্য বিষয় নয়। আন্তরিকতা আসল কথা। অন্তত ফোন করে বলতে পারে- সরি রে। পারলাম না আজ!

এরা সেটাও করল না। আমি রেস্টুরেন্টের পাশে দুই ঘন্টা দাড়িয়ে থাকলাম। প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে দুই কিলোমিটার টলতে টলতে হোস্টেলে ফিরলাম।

পকেটে মানিব্যাগ না দেওয়া, ক্ষুধার্ত থেকে যাওয়ার উদ্দেশ্য আছে। দুই কিলোমিটার হেটে হেটে টলতে টলতে ফেরার সময় আমি বারবার ভেবেছি- না! তারা আসলেই আমার বন্ধু! অন্তত কোন ভুলে/বিপদে পড় পারেনি কথা রাখতে। কিন্তু ক্ষুধা এবং হেটে আসার কষ্ট বারবার স্মরণ করে দিয়েছে-লিভ দেম। তুমি খাওয়াইতে, ফোন করতে, অপেক্ষা করতে, ক্ষুধার্ত হয়ে থাকতে, হেটে আসতে পারলে.....তারা কি অন্তত জানাতে পারত না.....এক শব্দে....ফোন করে....সরি রে! আরেকদিন।

আমি পরীক্ষার পরের ১ সপ্তাহও অতিরিক্ত অপেক্ষা করেছি। যাদের সাথে প্রায় প্রতিদিন কথা হত, দেখা হত, খানাপিনা হত- তারা একদিনের জন্যেও আমাকে নক করেনি অতিরিক্ত সময়টিতেও।

আমি তাদের 'I care them' লিস্টে রেখে দিলাম।

সরি! লিস্টের নাম বদলে- I DID care for them নাম রাখলাম।

.....বাইকের তেল কিনে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে একই কাহিনী হল।

যারা অন্তত না পেরেও স্বীকার করেছে, তাদেরকে 'They care for me' লিস্টে রেখে দিলাম।

২০০ কেজি ওজনের বাইকটা দুই কিলোমিটার ঠেলে আনতে আনতে প্রচন্ড পরিশ্রম হয়েছে। এই পরিশ্রম মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে আবেগের কেন্দ্রকে উদ্দীপ্ত করেছে।

সিদ্ধান্ত নিয়েছি- যারা আমার বিপদের দিন ২ কিলোমিটার হাটিয়ে আনতে পারে, বড় বিপদের দিনে তারা আমাকে চিনবেই না। চুপচাপ কেটে পড়বে।

.....আমি খানা চাইনি, তেল চাইনি....আমার সব ছিল। শুধু অল্প 'care' চেয়েছি। পেয়েছি, পাইনি। স্বার্থপর ভেবে যাদের ব্যবহারে আগে কষ্ট পেতাম, তাদের ছাড়া পর থেকে ভালোই আছি। অন্তত কথায়, ব্যবহারে আর খারাপ লাগেনা।

......বন্ধু চাইলে হাজারটা বানানো যায়, বিপদের দিনে 'ফিল' করার মত একটা বন্ধু বানাতে পারায় বিশাল ক্রেডিটের কাজ।

বন্ধুত্বে বন্ধুর জন্য 'what you do' গুরুত্বপূর্ন নয়, 'How you do' টাই গুরুত্বপূর্ণ।
smile emoticon

যাই হোক- ১০ জনে কতজন আমার 'Who care for me' লিস্টে আছে, বলব?

না থাক।

লজ্জায় পেতে চাইনা, দিতেও চাইনা।


** রাজীব হোসাইন সরকার **
লেখাটা আমার খুব ভাল লেগেছিল তাই আমার ব্লগ বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলাম।লেখক-রাজীব হোসাইন সরকার।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

নকীব কম্পিউটার বলেছেন: বিচিত্র অভিজ্ঞতা।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: বিপদের দিনে 'ফিল' করার মত একটা বন্ধু বানাতে পারায় বিশাল ক্রেডিটের কাজ।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৬

প্রামানিক বলেছেন: পুরো লেখাটাই ভাল লাগল। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.