নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাস জীবনে রোজার ঈদ উদযাপন ও ৩ টা অপ্রাপ্তি

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:২৭





২০০৮ সালের পর থেকে পরিবারের সাথে ঈদ করা হয়নি। প্রবাসেও অনকে বন্ধু-বান্ধ হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে ঈদে কম আনন্দ হয় তা না। কিন্তু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ঈদের আনন্দের সাথে তা কখনই তুলনীয় না।



প্রথম অপ্রাপ্তি: পারিবারিক সান্নিধ্য

===========================



দেশে থাকা কালীন ঈদের দিনে মসজিদ হতে ফজরের নামাজ পড়ে এসে দিতাম আর একটা ঘুম। একটু বেলা হলে "মা" এসে ঘরের দরজায় নক করে বলবে এই তোর আব্বা চিল্লা-চিল্লি করতেছে এখনও উঠিস নাই!!! কখন গোছল করবি? আর কখন নামাজ পড়তে যাবি? এর কিছুক্ষণ পরে ভাতিজা-ভাতিজি এসে শুরু করবে কানের কাছে চিল্লা-চিল্লি। বিছানা থেকে না উঠা পর্যন্ত রক্ষা নাই।



অতঃপর, টিউবওয়েলের গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে ছোটবোনের আয়রন করে ভাজ করে রাখা পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়া (আমার কৃষক বাবা-মায়ের পক্ষে তার ৪ সন্তানকে প্রতি রোজার ঈদে নতুন পাঞ্জাবী বা সালোয়ার -কামিজ দেওয়া সম্ভব হতনা)। আমার ছোট বোনের ঈদের দিনে সকাল বেলার কাজ হলো সকল ভাই ও বাবা-চাচা দের পান্জাপি ও পায়জামা আয়রন করে দেওয়া। ঈদের পূর্বের দিনের কাজ হলো বাড়ির সকল পিচ্চি -পাচ্চা ও মহিলাদের হাতে মেহেদি দেওয়া। এই কাজ দুটা থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই।



এর পর "মা" এসে চোখে সুরমা ও পাঞ্জাবিতে আতর মেখে দেওয়া। অবশেষে বাড়ী থেকে ৫০০ মিটার দূরে ঈদের মাঠের উদ্দেশ্যে হাটা পথে (মটর সাইকেলে যাবার সুযোগ থাকা সত্যেও) রওনা বেশি ছওয়াব এর আশায়।



ঐ একটা দিন মটর সাইকেলে বড়রা কেউই চড়তে চায় না। যদিও অবশিষ্ট দিন গুলোতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টে যায়।



দ্বিতীয় অপ্রাপ্তি: প্রয়াত পারিবারিক সদস্যদের কবর জেয়ারত

========================================



ঈদের নামাজ পড়ে মাঠের পাশেই ঈদ উপলক্ষে অবস্থিত ক্ষণস্থায়ী মেলা হতে জিলাপি (প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বেলুন), ও তিলের খাজা কিনে যে পথে নামাজ পড়তে যাওয়া হয়েছিল সেটা ব্যতীত অন্য পথে বাড়ির উদ্যশ্যে রওনা দেওয়া (প্রচলিত আছে যে এতে করে নাকি বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়)।



বাড়ির কাছা-কাছি এসে প্রথমে দাদির কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারতের দোয়া পড়া। এর পরে দাদার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে জিয়ারতের দোয়া পড়ে রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা। যখন ছোট ছিলমা তখন এই কাজে আব্বা ও চাচারা ছিল নেতৃত্বে আর আমরা চাচাত-ভাইয়েরা ছিলাম অনুসারী। এর পর যখন স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি দিলাম তখন নেতৃত্বের ভাঁড় এসে পড়ল আমার উপর যেহেতু চাচাত ভাই বোনদের মধ্যে আমি হলাম বয়সে বড়।



কবর জিয়ারত শেষে বাসায় ফিরে শুর হতো সিরিয়াল ধরে চাচা ও ফুফু দের বাসায় সেমাই ও পায়েস খাওয়া। এই প্রোগ্রাম চলত দুপুর ১২ টা পর্যন্ত। এর পর বাসায় ফিরে ম্যাগি নুড়ুস এর বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল গাওয়া হতো ভাই-বোনরা মিলে "চল গিয়ে দেখি মা রানছে কি"। যদিও উত্তরটা পূর্বে থেকেই জানা থাকত "পোলাও, গরু/খাসি/মুরগি মাংস, আলু ভাজি, পটল ভাজি"।



তৃতীয় অপ্রাপ্তি: বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পাড়ার মোড়ে আড্ডা।

======================================



দাদা বাড়ির ঈদ উদযাপন দুপুর ৩ টার মধ্যে সমাপ্তি করিয়া বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে নানা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেওয়া। কারণ টা হইলো নানা বাড়িতে থেকে পড়া-লেখা করার কারণে আমার সকল বন্ধু-বান্ধবের অবস্থান সেখানেই। নানা বাড়িতে প্রবেশ করিয়া কোনমতে মুখে একটু সেমাই দিয়া দে দৌড় মোড়ের উদ্দেশ্যে।



মোড়ে অবস্থান করত স্কুল জীবনের সকল বন্ধু। পাড়ার ক্লাবে গিয়া চলত বাজি ধরিয়া কার্ড খেলা। বেশিভাগ সময় বাজির শর্ত থাকিত কোল ড্রিন্কস খাওয়ানো। খেলার মধ্যে চলিত চুরির প্রতিযোগিতা। কিন্তু চুরি ধরা পড়িলে আর রক্ষা নাই। পিঠের মধ্যে পড়িত কিল-ঘুষি অনেক সময়ই খেলা শুরু পূর্বে শর্ত ঘোষণা করা হইত এই যে চুরি ধরা পড়িলে দিগম্বর হইয়া কান ধিরয়া উঠ-বোস করিতে হইবেক।



৫~৬ টার মধ্যে কার্ড খেলা শেষ করিয়া ১০~১৫ জন বন্ধুর কাফেলা নিয়া বিকাল থেকে খাওয়া শুরু হইবে বন্ধুদের বাসায়। এই খাওয়া দাওয়া চলত রাত ১০ টা পর্যন্ত।



বন্ধুদের বাসায় খাওয়া সমাপ্ত করিয়া আবারও ৩ রাস্তার মোড়ে উপস্থিত হইতাম। এর মধ্যে দুষ্ট পোলা পান চিপায়-চাপায় গিয়া ধূমপানে বিষপান করিত বাসায় ফিরিবার পূর্বে (আমি অবশ্য এই কর্মে সামিল হইতাম না কখনও)। বেশিভাগ সময়েই শেয়ার করিয়া সিগারেট খাইতে গিয়া ফ্রেন্ডলি ফায়ার হইয়া যাইত। সিগারেট খাইতে গিয়া বন্ধুদের কমন ডায়লগ হইত দোস্ত শেষ টানটা আমাকে দিস। এই রকম ক্ষেত্রে যা হইত তা হলো একজন সিগারেট পুরোটা ফুঁকিয়া ঠিক ফিল্টারের আগুন ঠেকিবার পূর্ব মুহূর্তে শেষ টান দিতে চাওয়া বন্ধুকে দিত। অতঃপর দুইজনের মধ্যে চলিত পুরা খিস্তি-খেউর যার রূপ হইত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এমপিদের রেকর্ড ভাঙ্গিবার প্রতিযোগিতা।



পরিশেষে রাত ১২ টার কিছু পূর্বে মোড়ের চায়ের দোকান থেকে উপস্থিত বন্ধু সংখ্যার অর্ধেক কাপ চা ও অর্ধেক পাইলটের (ফাঁকা কাপ) টাকা কে দিবে তা নিয়া আর এক প্রস্থ তর্ক চলিত। অতঃপর ঈদ উৎসবে সাঙ্গ দিয়া বসায় ফিরিতে হইত। বাসায় ফিরিবার পূর্বে ধুমপানের গন্ধ দূরি করিবার জন্য চলত নানা রকম কসরত। কেউ চুয়িং গাম চিবাইত কেউ বা হাতের গন্ধ দূরি করিবার জন্য আতা গাছে পাতা হাতে তালুতে ডলিত। স্কুল>কলেজ>বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনের সাথে সাথে বাসায় ফিরিবার সময়টাও বাড়িয়া গিয়াছিল।









মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ঈদের শুভেচ্ছা পলাশ ভাই।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:০৮

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা কান্ডারি ভাই। ঈদ কেমন করলেন? কোথায় করলেন?

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


একেবারেই সাদামাটা ঈদরে ভাই, ঢাকাতেই ছিলাম।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: কি বলেন ঢাকায় তো ম্যালা মানুষ, কাভা ভাই, ঘুপা ভাই, ত্রিশোনকু ভাই, নিম চাঁদ ভাই। তার উপর জানজট নাই। দূষন নাই।

নাকি ঐ গুলা না থাকার কারণে ভাল লাগতেছে না?

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

সুমন কর বলেছেন: আপনার অপ্রাপ্তিগুলো শেয়ার করাতে ভাল হয়েছে। একটু কি হালকা লাগে না !! প্রিয়জনকে ছাড়া ঈদ উদযাপনটা বেশ কষ্টের।

সংকলনের জন্য নিয়ে গেলাম। ঈদ মোবারক।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: হ্যা, নিজের কষ্ট গুলো শেয়ার করলে কিছুটা কমে। অন্য অনক কে সাথে পাওয়া যায়। আপনাকে ধন্যবাদ সুমন কর।

৪| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৩০

তাসনুভা সাখাওয়াত বীথি বলেছেন: ঈদ মুবারক ভাইয়া :)

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৫

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: ঈদ মোবারক বীথি?

পোষ্টিং কোথায় হচ্ছে?

৫| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা সুপ্রিয় ব্লগার ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৬

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: ঈদ মোবারক সেলিম ভাই। ঈদ কেমন করলেন? কোথায় করলেন ঢাকা নাকি গ্রামের বাড়িতে?

আপনাকে ধন্যবাদ।

৬| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আহা! পুরাই নস্টালজিক করে দিলেন ভাই।
আপনাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই!

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৭

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা কাভা ভাই। ঈদ কেমন করলেন? ঈদ উদযাপন নিয়া একটা মার-মার কাট-কাট পোষ্ট লিখে ফেলেন।

৭| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল, নেক্সট ঈদের পরিবারের সাথে থাকার চেস্টা করে। আমিও নিয়ত করেছি।

প্রবাস জীবন নিতান্তই বস্তুবাদী জীবন, ভোগবাদী না হলে এটা ইঞ্জয় করা টাফ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২০

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ও ঈদ মোবারক। হ্যা, আগামীবার চেষ্টা করব পরিবারের সাথেই ঈদটা করতে।

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

অপ্‌সরা বলেছেন: তোমার ছোটবেলার ঈদ চোখের সামনেই দেখতে পেলাম ভাইয়া!

স্মৃতিচারণে ১০০ তে ২০০ নাম্বার!

অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া!

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:৫৩

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপু আপনাকে ধন্যবাদ। হ্যা গ্রামে বেড়ে ওঠা সকল ছেলেদের ঈদটা এমনই হয়।

৯| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩৮

মোঃ মোশাররফ হোসাইন বলেছেন: প্রায় সবই কমন পড়সে ! আমি অবশ্য একবেলা ঈদ সংখ্যা মুখে নিয়া কাটাইতাম।ঈদ মুবারক ভাই.

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:৫৪

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ মোশারফ ভাই। আমরা কলেজ বা স্কুল পড়েছি তখন কোন ঈদ সংখ্যা বের হতো না দেশে। যা পেতাম তা হলো ১/২ বছরের পুরোনো পুজো সংখ্যা দেশ বা সানন্দা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.