নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নাবিকঃ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে খুবই কঠিন গদ্য। আমি এক এলেবেলে মানুষ। লেখালেখির কিচ্ছু জানি না। গায়ের জোরে লিখে যাই। তবে ছোটকালে ভালো লিখতাম। বড় হয়ে মনে হয় নষ্টদের অধিকারে চলে গেছি।

মৃদুল শ্রাবন

মেরিনার

মৃদুল শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের অতি প্রিয় স্যার সিরাজুল ইসলামকে বাঁচায়

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:১৯

কয়েক মাস আগের কথা। কম্পিটেন্সি পরিক্ষায় পাশ করে বাড়ি গেলাম। আমাদের গ্রামের বাজার্। শনিবার আর বুধবার সাপ্তাহিক হাট। সবার সাথে মোটামুটি দেখা সাক্ষাত হয়ে যায় বাজারে গেলে।

আমাদের গ্রামের লোকের জাহাজের চাকরি সম্পর্কে মিশ্র ধারনা। যারা একটু বেশী জানে তারা জানে আমরা টাকা না টাকার বস্তা রোজগার করি আর যারা জানেনা তারা মনে করে দুবাই ওয়ালার মতো দেশের বাইরে থাকি। তাই গ্রামের বাজারে গেলে মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়। কেউ জানতে চায় আমরা সমুদ্রে নেমে গোসল করি কিনা। কেউ জানতে চায় রাতে কোথায় জাহাজ থামিয়ে আমরা ঘুমাই? একজন তো একদিন গল্প দিয়েই ফেলল সে নাকি জাহাজের হেডলাইট দেখেছে। অনেক বড়। কি আর করা। আমাকে হাসি টিপে টিপে সবাই কে মোটামুটি ঞ্জান দিয়ে যেতে হয়। এত লোকের মধ্যে একজন একটু ব্যতিক্রম ছিল। সিরাজুল ইসলাম স্যার্। জাহাজ এই সম্পর্কে তার গভীর ঞ্জান। চায়ের দোকানে বসে তিনি নেভিগেশনের নানা চমকপ্রদ তথ্য দিতেন মানুষকে। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যেতাম তার ঞ্জানের পরিধি দেখে। গ্রামের একটা হাইস্কুলের শিক্ষক হয়ে তার এত কিছু জানার কথা না। কিন্তু তিনি জানতেন।

সেবার বাজারে গিয়ে স্যারের সাথে দেখা। রবির চায়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে তিনি কিছু লোকের সাথে কথা বলছেন। আমার সাথে এলাকার কিছু বন্ধু। স্যার কে দেখে কখনো এড়িয়ে যেতে পারিনি। সালাম দিয়ে কাছে এগিয়ে গেলাম। তাকে জানালাম আমার ক্লাশ কম্পিটেন্সি পরিক্ষা পাশের খবর্। কিন্তু তখনই স্যার যে কাজটা করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। উনি আচমকা আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আমার কপালে চুমু দিয়ে বসলো। এই আমি নিজের কাছে একজন সম্পুর্ণ পুরুষ। আমার কপালে চুমু দিয়ে আশির্বাদ ঞ্জান বুদ্ধি হবার পরে মাত্র দুইজন মানুষ করে। আমার নানা এবং আমার নানি। এই ভরা বাজারে স্যারের এই কাজে আমার কান লাল হয়ে গেল। পাশে দাড়ানো বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছে। স্যার আমাকে বলল , ' আমি তোমাকে আমার সন্তানের থেকেও বেশি স্নেহ করি। আমি দোয়া করি তুমি অনেক বড় হবে।'

হ্যা এই দোয়া হয়তো অনেকেই করে। কিন্তু স্যার গলার স্বরটা ছিল একদম অন্যরকম। এত আবেগ যে আমার নিজের চোখ ছলছল করে উঠেছিল। আমি জানতাম স্যার আমাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু মনে হত সেই ভালবাসাটা একজন শিক্ষকের ভালবাসা। কিন্তু সেইদিন মনে হল এই ভালবাসাটা একজন শিক্ষকের না একজন পিতার্। স্যার আমাকে নিয়ে সবার কাছে গর্ব করতো। যেন তার নিজের সন্তান।



গতকাল সিঙ্গাপুর এসে পৌছালাম। অনেক লম্বা ভয়েজ ছিল। সাতচল্লিশ দিন সাগরে থাকার পরে প্রথমে নেটওয়ার্ক পেলাম। ছোটভাই শাহিন প্রথমে জানালো স্যারের ক্যান্সারের কথা। বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না। আব্বুকে ফোন দিলাম। জানলাম ঘটনা। স্যারকে ফোন দিলাম। যে ব্যাক্তিত্বময় মানুষটা দেখে আসছি সর্বদা মাথা উচু করে থাকতে সে স্যার আমার ফোন পেয়ে কেঁদে ফেললেন। বললেন ইনসান আমি আর বাঁচবো নারে। তোরা আমাকে আমাকে বাঁচা।

স্যারের যে রোগ তাতে স্যারকে সান্ত্বনা দেয়া যায। ক্লোরেকটাল ক্যান্সারের চিকিৎসা এমন আহামরি কিছু না। ম্যাক্সিমাম দশ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু আমি স্যার কে সান্ত্বনা দিতে পারছিলাম না। একজন সাধারন স্কুল শিক্ষকের জন্য এই টাকাটা অনেক। স্যারের ভেতরে যে মৃত্যুভয় আর বেঁচে থাকার যে আকুতি তা আমার চোখের জল আটকাতে পারেনি। মাঝে মাঝেই আমি ভাবতাম দেশে যাবার সময় স্যারের জন্য একটা গিফট নিয়ে যাবো। কিন্তু নানা কারনে এতদিনে কিছুই নেয়া হয়নি। সেই স্যারকে যে এভাবে গিফট দিতে হবে আমি জীবনেও ভাবিনি। আমার প্রিয় স্যার আমাদের সবার প্রিয় স্যার এইভাবে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে এটা মেনে নেয়া আমার নিজের মৃত্যুর সমান বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু আমার একার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। এই জন্য আমি সবার কাছে হাত পাতছি। আমরা আমাদের স্যার কে জীবিত দেখতে চাই। দেখতে চাই আমার মতো আরো হাজারো ছাত্রের কপালে চুমু খেয়ে আশির্বাদ করছে স্যার্। আমি বিশেষ করে আমার মেরিনার বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। প্লিজ সবাই আমার স্যার কে বাঁচানোর জন্য সাহায্যের হাত বাড়ান।



যোগাযোগ: 01759097097

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

অক্রুর মাঝি বলেছেন: কি করা যায়? মাত্র ১০ লাখ টাকা যোগাড় করা যাবে না?

২| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৬

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমাদের দেশের ছাত্র ছাত্রী রা ও যদি এক টাকা করে চাঁদা দেয় ত
বুও তো হয়ে যাবে। কি বলেন? ধনীদের কথা না হয় বাদই দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.