নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নাবিকঃ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে খুবই কঠিন গদ্য। আমি এক এলেবেলে মানুষ। লেখালেখির কিচ্ছু জানি না। গায়ের জোরে লিখে যাই। তবে ছোটকালে ভালো লিখতাম। বড় হয়ে মনে হয় নষ্টদের অধিকারে চলে গেছি।

মৃদুল শ্রাবন

মেরিনার

মৃদুল শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোমালিয়া যাচ্ছিঃ স্বপ্নের মাঝে দুঃস্বপ্ন

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩

যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। ইউরোপে ট্রেড করে এরকম একটা জাহাজে জনের করার পরও যে আজ এই সোমালিয়া আতঙ্কে পড়বো এটা ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু বিধি বাম। ঘুরায় ফিরায় জাহাজ হাই রিস্ক এরিয়া তেই এসে পড়েছে।

জিব্রাটাল থেকে জয়েন করার পরে জার্মানি, হল্যান্ড , ইউকে আর বাল্টিক সি এরিয়াতে ভালোই ঘুরছিলাম। ডেনমার্কের সাউন্ড চ্যানেল দিয়ে সুইডেন আর ডেনমার্ককে খুব কাছ দিয়ে বাল্টিক সি'তে ঢুকতাম আর গ্রেটবেল্ট দিয়ে বের হতাম। এর মধ্যে সেন্ট পিটার্সবার্গ এলাকার নয়নাভিরাম বরফ! গালফ অফ ফিনল্যান্ডের ঐ এলাকা টা সম্পূর্ন বরফে ঢেকে থাকতো। কাপিতান নিকোলাভ নামের আইচব্রেকার টা যেন এখনি চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পাই। বরফের চ্যানেল ধরে আমরা নিকোলাভের পিছে পিছে পোর্টে ঢুকতাম। মুসনি নামের একটা টাগ বোট তো একদিন আমাদের ক্যাপ্টেন কে প্রায় হার্ড এট্রাক করিয়ে দিয়েছিল। আইচ চ্যানেলের কিনার ঘেসে দাড়িয়ে সে আমার যাবার জন্য পথ করে দিয়েছিল। কিন্তু আইচ চ্যানেলের মধ্যে স্টিয়ারিং খুবই ডিফিকাল্ট। পাইলট থাকার পরেও ক্যাপ্টের অস্থিরতা দেখার মতো ছিল।



যাইহোক গালফ অফ ফিনল্যান্ড মিশন শেষ করে আমাদের পাঠানো হলো মূরমানস্ক। রাশিয়ার অনেক পরানো পোর্ট। আমস্টারডাম(হল্যাল্ড) থেকে নরওয়ের ওয়েষ্ট কোস্ট হয়ে পঁচাত্তর ডিগ্রি ল্যাটিচিউড পার হয়ে মূরমানস্ক গেলাম আমরা। সেবারই প্রথম দেখলাম মেরু অঞ্চলের দিনরাত্রি। আমি তখন থার্ড অফিসার্। রাত বারোটা পর্যন্ত ব্রিজে থেকেও সূর্যাস্ত দেখলাম না। পরে সকালে সেকেন্ড অফিসারের কাছে জানলাম একটার দিকে কিছু সময়ের জন্য সূর্য হরায়জনের(দিকচক্রবাল) নিচে নামছে। তারমানে সেটাও টুইলাইট। পরে পোর্টে কার্গো ওয়াচে এই রাত না হওয়া রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতাম।



মূরমানস্ক থেকে আমরা চীনের জন্য আইরন অর কনসেনট্রেট লোড করলাম। মূরমনস্ক থেকে চীনের সর্টেষ্ট রুট হল জীব্রাল্টার প্রনালী দিয়ে সুয়েজ ক্যানেল পার হয়ে শ্রীলঙ্কার নিচে দিয়ে চীন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সোমালিয়াম পাইরেটস জোন পার হতে হয়। আমরা সবাই তখন কোম্পানিকে আমাদের বক্তব্য জানালাম যে আমরা ঐ রুটে যেতে চাই না। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের আবেদনপত্র টি কোম্পানির কাছে পোছানোর আগেই আচমকা গায়েব হয়ে গেল। সবার সাক্ষরের জন্য মেস রুমে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তবুও কোম্পানি ফাইনালি আমাদেরকে সুয়েজ দিয়ে নিল না। আমরা লাস পালমাস তারপর কেপটাউন(সাউথ আফ্রিকা) হয়ে মাদাগাস্কার ও মরিসাসের নিচ দিয়ে সাতচল্লিশ দিন সেইলিংয়ের পরে সিঙ্গাপুর এসে পোছালাম। কোম্পানির দশদিন বেশি সময় লাগলো।



সে যাত্রা বেচে গেলেও এবার যে কি হবে বুঝতেছি না। কান্ডলা (ইন্ডিয়া) থেকে ব্লাক সি যাবার প্রোগ্রাম হচ্ছে। সোমালিয়ার বুকের ওপর দিয়েই যেতে হবে। রেজার ওয়ার , হাই স্পিড ওয়াটার স্প্রে, নাইট ভিশন বাইনোকুলার ও অনেক প্রিকোশনারি যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে জাহাজে এসে পৌছেছে। তারপর মাসকট (দুবাই) থেকে আর্মগার্ড নেয়া হবে। বলা হচ্ছে আমরা সেফ। হ্যা জানি এখন শত শত জাহাজ আর্মগার্ড নিয়ে সুয়েজ পাড়ি দিচ্ছে কিন্তু তবু কোন মেরিনার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না যে সোমালিয়ার নাম শুনে তার বুক কাঁপবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: সোমালিয়ার বুকের ওপর দিয়েই যেতে হবে। - আমার নিজেরই গা ছমছম করছে। ভালো থাকবেন ভাই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের নিরাপদে রাখুন।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৪৮

রাখালছেলে বলেছেন: সোমালীয়া দিয়ে যেতে কি কি সমস্যা হয় একটু জানাবেন । আমরা ডাঙায় বাস করি তাতে কি সমুদ্র যে আমাদের টানে । জানতে চাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.