নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেরিনার
জাহাজে বইস্যা মনে হইত্যাছে কোন এক আন্ধা কুপের মধ্যে ডুইব্যা আছি। একটা অপার্থিব ধ্যানে মগ্ন থাকি বলে মাঝে মাঝে ভুইল্যা যাই এই কুপে আমি একেবারে একা। আমার চারপাশের পৃথিবী আমার জন্য নয়। আবার যখন ধ্যান ভাঙে তখন তখন কুপের মুখ দিয়ে তাকিয়ে দিনের আলো দেখি। আর সেই ধ্যান যদি রাতে ভাঙে তবে দেখি শুধু অন্ধকার। কখনো কান পাতলে বাইরে পৃথিবীর কোলাহল শুনি আর কষ্ট তাপাই। এই তাপই শব্দটা নতুন শেখা। আমার বউ বলে কথাটা। আমি যেখানেই থাকি বউয়ের সাথে যোগাযোগের জন্য আমার একটা তার আছে। আমি তারে নাড়া দিয়ে ঝুন ঝুন আওয়াজ করি। বউ সাড়া দেয়। আমি প্রশ্ন করি বউ কি করো। বউ বলে কষ্ট তাপাই। আমি খুশি হই। আমার বউ আমাকে মিস করে। আমার জন্য কষ্ট তাপাই।
যাই হোক যেটা কইত্যাছিলাম। আমার কূপের কাহিনি। ইদানিং যে কি হইছে সব কথার মধ্যে খালি বউ ঢুকে যাই। তো বলতেছিলাম আমার এই কূপ। মানে আমি হইলাম গিয়ে একটা কূপ আর এইডা হইলো গিয়া একটা জাহাজ। আর এই কূপ জাহাজে ভাসত্যাছে। কিন্তু জাহাজ তো সাগরে ভাসার কথা। এখানে কুপ আইলো ক্যামনে। খাড়ান! খাড়ান! মনে হইত্যাছে আবোল তাবোল বকতাছি। একডু দুই লাইন পিছায়য়া লই।
আরে হাসাই তো। এইড়া ক্যামনে হইলো। হঠাৎ এরকম আবোল তাবোল বকার শানে নাজুল কি? উল্টা পাল্টা কিছু খাওনের তো প্রশ্নই আসে না। জাহাজে খাওনের পানিই নেই আবার উল্টা পাল্টা!! তয় একটা ব্যাপার হইতে পারে। আজ দুপুরে একটা ডেট এক্সপ্যায়ারড কোল্ড ড্রিংস খাইছি। গত কাল ক্যাপ্টেন জেনারেল ইন্সপেশনের সময় ষ্টোরে ঢুইক্যা এক কেস মোজো পাইছে এক মাস আগে যার ডেট গ্যাছে গা। বেচারা স্টুয়ার্ড আপন মনে করে রাইখ্যা দিছিল খেয়াল করে নাই। ক্যাপ্টেন কইলো ফালাই দাও। মাঝখান থাইক্যা কুক পরামর্শ দিল স্যার কয়েক দিন আগে যে পানি মানুষেরে খাওয়াছি এইডা তার থাইক্যা অনেক ভালো। খাওয়াই দিই। ব্যাপারটা সত্যি। কোরিয়া থেকে পানি নেবার আগে ট্যাপ খুল্লেই যা বেরোতো তাকে কোকা কোলা কিংবা খোকা ভোলা আর যাই বলি কোন মতেই পানি বলা যায় না। হেই পানির উৎসের কথা আর নাই কইলাম। কইলে আবার জাতির বদনাম হইবো। যাইহোক ক্যাপ্টেন হা না কিছু না কইয়া চইল্যা গেল।
দুপুরের মেনুতে ছিল কাচ্ছি বিরিয়ানি। সাথে রাশিয়ান সালাড। আর এই ডেট এক্সপ্যায়ারড মোজো। এইডা খইছি তো কি হইছে? আরো কতো কিছুই খাইয়া মানুষ দুনিয়া চালাইতে পারছে আর আমি সামান্য একডা কুপের কাহিনি শেষ করতে পারুম না? না ভাই মনে হয় পারুম না। কারণ আমাকে এখন জাহাজ চালাইতে হইবো। আমার এখন কুপের কাহিনি কওনের টাইম নাইক্যা। এমনিই সামনে দেখত্যাছি দুইড়া জাহাজ একলগে চোলতাছে। দুইডারে আমি একলা ক্যামনে সামাল দিমু আগে এইডা দেহি। তারপরে টাইম পেলে আবার কথা হবে। এখন টা টা বাই বাই।
(১৭.০৩.২০১৪/East of Thaiwan)
মৃত্যুকুপ-২
লেখার নামকরনে একটু পরবর্তন আনলাম। পরিবর্তন মানে একটা নামকরন করলাম আরকি। এর আগের লেখাটা শিরনামহীন ছিল। অন্য সবার কাছে কেমন জানিনা তবে আমার কাছে একটা লেখার নামকরন করাটা সবথেকে ডিফিকাল্ট। আমার লেখা কয়েকশত কবিতা নামকরনের অভাবে পান্ডুলিপি বন্দী হয়ে আছে। এখানে অবশ্য তেমন কিছু ভেবে এই নামকরন করিনি। লেখাটা শুরু করার সময়ে হঠৎই এই নাম মনে এল। আগের লেখায় কূপের কাহিনিতে আটকে গেছিলাম। তাই ভাবলাম কাহিনিটা শেষ করি।
আমার বয়স তখন অনেক কম। মানে এত কম যে হাটতেও পারিনা। আমাদের বাড়িতে আমার দাদার দাদার আমলের একটা কুপ ছিল। আমরা যেটাকে পাতকূয়া বলতাম। আগেকার দিনে এই কূয়া থেকে পানি তুলে খাওয়ার কাজে ব্যবহার করা হত। আমাদের চাষী পরিবারে সেবার মাঠ থেকে ধান কেটে এনে বাড়ীর উঠানে ফেলে মাড়াই করা হচ্ছে। আমরা ছোটরা যে কোন ধরনের নতুন কাজ দেখতে খুবই উৎসাহ ফিল করি। আমরা মানে আমাদের বাড়ীর সব পিচ্চি পোলাপান মিলে উঠানের একপাশে বসে খুব উৎসাহ নিয়ে ধান মাড়াই করা দেখছি আর খেলছি। আমরা একটা মাদুরের উপর বসে ছিলাম তবে মাদুরটা খুব বেশী বড় ছিল না। আমরা ঠেলা ঠেলি করছিলাম। আমি সবার ছোট ছিলাম বলে আমাকে সবাই ধাক্কা দিয়ে মাদুরের বাইরে বের করে দিচ্ছিল। আমি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে দেখলাম কিছুটা দূরে একটা মাদুর একেবারে খালি পড়ে আছে। আমি ভাবলাম এখানে ধাক্কা ধাক্কি করার কি দরকার। অপাশে গিয়ে আমি পুরো মাদুরে একা একা ইচ্ছা মতো বসবো। মন চাইলে গড়াগড়ি খাবো। তো যেই ভাবা সেই কাজ। অন্য সবাই যে যার মতো ব্যস্ত ছিল। আমার দিকে কারো খেয়াল ছিল না। আমি হামাগুড়ি দিয়ে চলে গেলাম মাদুরের ওপর। সাথে সাথে টুপ। আমি সমতল থেকে বিশ ফুট গভীর পানি ভর্তি কূপের মধ্যে।
আসলে মাদুরটা ছিল ঐ কূপের ওপর। ধান মাড়াইয়ের সময় যেন কোন ধান ঐ কূপের মধ্যে পড়ে নষ্ট না হয় তার জন্য একটা ঢাকনা দেয়া হয়েছিল। ঘটনাটা আমার নিজের মেমোরি থেকে রিকল করার মতো বয়স তখন আমার ছিল না। তবে এত বার শুনেছি যে মনে হয় আমার স্পষ্ট মনে আছে।
এই আমি সেদিন ঐ কুপের মধ্যে পড়েছি। সেদিন আমাকে রক্ষা করার জন্য আমার বাবা কোন রকম সিড়ি ছাড়াই লাফিয়ে নেমেছিল ঐ কুপের মধ্যে। পরিত্যাক্ত ঐ কূপের মধ্যে একটা কলা গাছের টুকরা ছিল। আমি ঐ কলা গাছের ওপর ওপর অক্ষত অবস্থায় বসে ছিলাম চুপচাপ। এক ফোটা কাদিনি।
আজ আমি আবার ঐ কুপে পড়েছি। জাহাজ নামের এই কূপ। পানির মধ্য পানি। জলের মধ্যে জল। সেদিন আমার রিয়েলিটি বোঝার মতো বয়স ছিল না তাই কাদিনি। কিন্তু আজ আমি মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে কাঁদি। কিন্তু আমাকে কেউ রক্ষা করতে আসে না। আমি ঘুমের ঘোরে বাবাকে ডাকি। বাবা আমাকে এই কূপ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাও। কিন্তু বাবা আর আমার ডাক শোনে না। কিন্তু সেদিন আমি কাউকে ডাকিনি। তবু বাবা আমার ডাক শুনেছিল। তবে আজ কেন শোন না??? তবে কি সন্তান বড় হলে বাবারা তাদের ডাক আর শুনতে পায়না……… ???
(18.03.2014)
©somewhere in net ltd.