নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নাবিকঃ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে খুবই কঠিন গদ্য। আমি এক এলেবেলে মানুষ। লেখালেখির কিচ্ছু জানি না। গায়ের জোরে লিখে যাই। তবে ছোটকালে ভালো লিখতাম। বড় হয়ে মনে হয় নষ্টদের অধিকারে চলে গেছি।

মৃদুল শ্রাবন

মেরিনার

মৃদুল শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ শেষ বিকেলে

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৮





বারান্দায় এসে দাড়াতেই বোটকা গন্ধটা নাকে এল জয়ার। কফির মগটা হাতে নিয়ে যে মুডে বারান্দায় এসেছিল তা উবে গেল। গ্রীলে মাধবীলতা পেঁচিয়ে আছে। মাত্র তিনদিন হল এগুলো এনেছে সে। দোয়েল চত্তর থেকে উত্তরা পর্যন্ত আনতেই নেতিয়ে গেছিল। বাসায় আসার পরে পানি পুনি দিয়ে কোন রকমে পূবের বারান্দার গ্রীলে পেঁচিয়ে দিয়েছিল। তিনদিনেই লতাটির উন্নতি লক্ষ্যনীয়। নিজে জড়িয়ে ধরতে শিখে গেছে। জয়া বেশ অবাকই হয়, মানুষ এত সহজে কাউকে আকড়ে ধরতে পারে না।



গন্ধটার উৎস খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। বারান্দায় কয়েকটা ফুলের টব ছাড়া আর কিছু নেই। কোন টবে শুকনো পাতা পড়ে পঁচে নি। হতে পারে ওপরের অথবা নিচের ফ্লাট থেকে গন্ধটা আসছে। জয়া সেখানে যেয়ে গন্ধটা নির্মূল করে আসতে পারবে না। তবে সে গন্ধটা এড়িয়ে যেতে পারে। যে কোন খারাপ কিছু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তার একটা টেকনিক আছে।



ভেতরের ঘর থেকে রাহেলার মার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। কোন বাসার কাজের মহিলার যে এতরকম ঔদ্ধত্য হতে পারে সেটা তাদের বাসায় না আসলে কেউ জানতে পারবে না। তবে চেঁচামেচির কারণটা গুরুতর। পাশের এপার্টমেন্টর চারতলা থেকে কে যেন প্রায়ই তার রুমের জানালা লক্ষ্য করে সুপারি ছুড়ে মারে। দু এক বার তার রুমের মধ্যেও এসে পড়েছে। মাঝে মাঝে থাইগ্লাসে লেগে ভেঙে গেল গেল শব্দ হয়। সে জানে সুপারির গ্রাভাইটি অনেক বেশী। অনেকটা বন্দুকের গুলির মতো। শুধু প্রয়োজনীয় গতি দিতে পারলেই হল। তবে যে এই কাজ করে সুপারির গতি তার কন্টোলে। থাইয়ে লেগে ঠুস করে একটু আওয়াজ হয় কিন্তু কোন চোট খায় না। তার মায়ের ধারনা চেয়ারম্যানবাড়ীর লোকমান সাহেবের দোকানে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনানো থাই বলে রক্ষে। না হলে এক সুপারির আঘাতে ভেঙে খান খান হয়ে যেত।



তবে ব্যপার যাই হোক এইরকম ছোটলোকের মতো গালাগলি করাটা তার একদম পছন্দ না। এপার্টমেন্টে গিয়ে কমপ্লেইন করলেই হয়। কিন্তু রাহেলার মা বলল, ‘আফা কম্পেলিন কইরা কুন লাভ হইবো না। কেউ কি স্বীকার করবো? তার চাইতে গালি দিয়া ধুইয়া দিই। ভদ্রলোকেরা গালি সহ্য করবার পারে না’।



রাহেলার মায়ের যুক্তির সাথে তার মাও একমত। তার মায়ের সাহসেই সে এই ধরনের কাজ করতে পারে। এবং এই ব্যাপারটা নতুন না। এই ধরনের কাজে তার মা রাহেলার মাকে প্রতিনিয়ত কাজে লাগিয়ে থাকেন। এমনিতে তিনি খুব নিরিহ শ্রেনীর মানুষ তবু পাড়ার বখাটে ছেলেপেলে তাকে বেশ ভালো করেই চেনে এবং বলতে গেলে ভয়ও পায়। i



কিন্তু জয়া ভেবে পায় না এই কাজটা আসলে কে করে। সে কখনো ঐ জানালায় কাউকে দাড়িয়ে থাকতে দেখেনি। কাজটা মূলত যদি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য কেউ করে থাকে তবে তাকে মাঝে মাঝে ঐ জালানায় দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু ঐ রকম কাউকে তার চোখে পড়ে নি। তবে ঐ বাসায় নিশ্চয় কোন বৃদ্ধ আছেন। না হলে সুপারি কোত্থেকে আসবে? পাশের বাসার কোন মেয়ের ঘরের জানালায় ছুড়ে মারার জন্য নিশ্চয় কেউ বাজার থেকে সুপারি কিনে আনবে না। কিংবা কে জানে আনতেও পারে। জগতে পাগলের তো অভাব নেই।



রাহেলার মার চিল্লানি এখনো থামে নি। জয়া ব্যালকনির থাইটা টেনে দিয়ে বেতের চেয়ারে আরাম করে বসলো। ভেতর থেকে আর কোন শব্দ আসছে না। হঠাৎ করে কেমন একটা নিস্তব্ধতা এসে গেল। সামনের রাস্তায় কোন গাড়ির হর্নের আওয়াজ নেই। এমনকি প্রাকৃতিক কোন শব্দও নেই। গ্রামের নিস্তব্ধতায় প্রাকৃতিক গুঞ্জন থাকে থাকে। হয় পাখির ডাক না হলে ঝি ঝি পোকার ডাক। কিন্তু এই শহরে কোন প্রকৃতি নেই। আছে শুধু যান্ত্রিকতা। তবে উত্তরার তাদের এই এলাকাটায় যেমন প্রকৃতি নেই তেমন যান্ত্রিকতাও নেই। কেমন যেন একটা নিস্তব্ধতা আছে শুধু।



অবশ্য একটু পরেই এই নিস্তব্ধতা আর থাকবে না। জয়াদের সামনের প্লটটা এখনো খালি। সন্ধ্যার একটু আগে থেকেই ওখানে ব্যডমিন্টনের আসর জমে। শীতের দিনে উত্তরার সব খালি প্লাটগুলো ব্যডমিন্টনের কোট হয়ে যায়। অনেকে চট দিয়ে রাস্তার দিকটা ঘিরে নেয়। কিন্তু এই কোটটা অনান্য কোটের মতো চটের ক্যানভাস দিয়ে ঘেরা না থাকাতে জয়ার অসুবিধা হয়। সে ইচ্ছা থাকলেও বারান্দায় বসে থাকতে পারে না। লোকজন আসা শুরু করলেই তাকে সরে পড়তে হয় বারান্দা থেকে।



থাই সরিয়ে রাহেলার মা এসে দাড়িয়েছে পেছনে। জয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। 'আফা আপনার ফোন'।



জয়ার মোবাইল বন্ধ। ফোন আসার কথা না। রাহেলার মা কর্ডলেস রিসিভারটা বাড়িয়ে ধরলো। অপরিচিত কেউ হলে রাহেলার মা ফোন নিয়ে তার কাছে আসতো না। জয়া কফির মগটা তার অন্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে রিসিভারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কে?



'আপনে জিগান'। বোঝা গেল রাহেলার মা এখনো উত্তপ্ত। সুপারি ঘটিত কারণ।



জয়া রিসিভারটা কানে লাগালো। ওপর প্রান্তে অভির গলা শোনা যাচ্ছে।



রাহেলার মা থাই খোলা রেখে চলে গেছে। সেটা সমস্যা না কিন্তু সে আবার চিল্লানি শুরু করেছে। জয়া আবার থাইটা টেনে লাগিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করল, কিরে তুই?



-‘যাক বাবা বেঁচে আচিস তাহলে’। অভির গলায় স্বস্তি। বন্ধুদের মধ্যে খুব সাধারণ কথা এটি। কিন্তু জয়ার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

-হুম এখনো আছি।

-ঢং করিস না। ফোন বন্ধ রাখছিস কেন? এদিকে কত কি ঘটে যাচ্ছে আর তোকে ট্রেস করতে পারছি না।'

- কি হয়েছে?

- কি হতে বাকি আছে বল? আচ্ছা আগে বলতো নিশিকে কোন রঙের শাড়িতে বেশী মানাবে?



জয়া হাসলো। অভি তার পাগলামি শুরু করেছে।



- সেটা দিয়ে তোর কি দরকার?

- দরকার আছে। নিশিকে জানাতে হবে।

- নিশি তোকে জিজ্ঞেস করেছে কোন কালারের শাড়িতে ওকে ভালো লাগে? মাথা ঠিক আছে তোর?

- বিলকুল। নিশির সাথে ডেট হচ্ছে। আগমি রোববার। বিকাল পাঁচটা। স্থান কড়াই গোশত।

- কড়াই গোশত? তুই পারিসও বটে। আর জায়গা খুঁজে পেলিনা?

- কি করবো বল? আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না এই অফারের জন্য। উত্তেজনায় হুট হাট উত্তর দিয়ে ফেলছি। আমি ভাবতেই পারিনি নিশি আমার সাথে দেখা করতে চাইবে।



ব্যপারটা যদি সত্যি হয় তবে আসলেই অভির জন্য উত্তেজনাকর। তবে তার কাছে পাগলামি। ফেসবুকে পরিচয় হওয়া কোন মেয়ের জন্য যে কেউ সিরিয়াসলি এমন করে না। যেটা করে যেটা ম্যাডলি।



- ও জানতে চাইলো কি পরে আসবে? হুট করে বললাম শাড়ি। কি কালার জিজ্ঞেস করতে আর বলতে পারিনি। বলেছি পরে জানাবো। আমিতো কখনো ভাবিনি নিশিকে কোন কালারের শাড়িতে মানাবে। তুই বলে দে।

- কি আজব! আমি কিভাবে বলবো? আমি কি নিশিকে দেখেছি কখনো?

- তবু তুই ঠিক বলতে পারবি। আমি সেই দুপুর থেকে তোর ফোনে ট্রাই করছি। আমি নিশির মেসেজের রিপ্লে দেয়ার ভয়ে অনলাইন পর্যন্ত হচ্ছি না। তাড়াতাড়ি বল।

- তুই কি সিওর নিশি আসবে তোর সাথে দেখা করতে?

- শিওর মানে? ও কেন মিথ্যা বলবে? তাছাড়া আমি তো দেখা করতে চাইনি। ও নিজেই না আমাকে দেখতে চাইলো?

- তা তোকে ও কি পরে যেতে বলেছে?

- ওর পছন্দ মেরুন। বলেছে ফুল হাতা শার্ট পরতে।

জয়া হো হো করে হেসে উঠলো, 'মেরুন শার্টে তোকে রাঙা মুলো রাঙা মুলো লাগবে'।

অভিও হাসলো। সে কখনো অপমান গায়ে মাখে না। মনে হল সেও মজা পেয়েছে।

- আচ্ছা তোর নিশি দেখতে কেমনরে?

- খুব সুন্দর। একেবারে নারগিস ফখরির মতো।

- হুম ! উপমায় আপডেটের ছোয়া। তবে তুই তো একটা গর্ধভ। তুইতো ওকে কখনোই দেখিস নি?

- আরে ফেসবুকে কত্তো ছবি দেয়া আছে। দেখিনি মানে?

- আফসোস! ফেসবুকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা লাগে না।

- তুই কিন্তু আমার সময় নষ্ট করছিস।

- আকাশী নীল। যা বলে দিলাম।

- আকাশী নীল কেন?

- আরে প্রথম দেখা। একটা আর্টের ব্যাপার আছে না? তুই মেরুন আর সে আকাশী নীল। অনেকটা বিকেলের মতো।

- আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি। পরে কথা হবে।

- পারলে কড়াই গোশত টা চেঞ্জ করে নিস।

শেষ কথাটা অভি শুনেছে কিনা ঠিক নেই। লাইন কেটে গেছে।



অভির কাছে জীবনের সংজ্ঞাটা কত সহজ। জয়া ভাবে তার পৃথিবীটা যদি এরকম সহজ থাকতো !! এক নিমিষেই তার সব কিছু কেমন যেন পাল্টে গেল !! তার কাছে এখন জীবনের মানে শুধুমাত্র ক্যালেন্ডারের পাতার কয়েকটি দিন। এক একটা বিকেল যায় আর ক্যালেন্ডারের পাতায় একটা দাগ পড়ে। জয়া ভাবে জীবনে এখনো কতো কিছুই করা বাকি। গাজীপুরের বৃদ্ধাশ্রম দেখাবে দেখাবে করেও ছোটটা এত দিন খালি ঘোরালো। আর কি দেখা হবে? গতবছর ভার্সিটি থেকে সবাই ফ্যান্টাসি কিংডম গিয়েছিল। জয়া যেতে পারে নি। কি যে হয় তার! সামান্য জ্বরের কারনে মা যেতে দিল না। আর এবার !!! সবাই ফয়েজ লেকে যাবার প্লান করছে। জয়া আগেই ধারনা করেছিল হয়তো এবারো তার কিছু একটা হবে। সে কোত্থাও যেতে পারবে না। ঠিক তাই হলো। তবে এবার হওয়াটা সবকিছু ছাড়িয়ে গেল। সবকিছু পেরিয়ে যাবার জন্য সোজা একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়ে গেল।



বাবা মা এখনো জানেনা যে জয়া ব্যপারটা জানে। এমনি ছোট বা রাহেলার মা পর্যন্ত না। জয়া যেন কিছুই বুঝতে না পারে এজন্য কেউই তাদের ব্যবহার চেঞ্জ করেনি। কোন সিম্প্যাথি বা এক্সট্রা কেয়ার কিছুই কেউ দেখাচ্ছে না। কিন্তু তবুও জয়া জানে। সেদিন মাথাটা ঘুরে যাবার পরে যখন নিজেকে হসপিটালের সাদা বিছানায় জেগে উঠতে দেখলো সে তখনি বুঝে গিয়েছিল। এরকম একটা খারাপ স্বপ্ন সে মাঝেমাঝেই দেখতো। এরকম একটা সাদা ঘর। একটা সাদা বিছানা। বিছানায় তার বয়সী একটা মেয়ে সাদা পোষাক পরে শুয়ে আছে। মেয়েটা সবসময় শুয়ে থাকতো না। মাঝে মাঝে হেটে চলে যেত জানালার ধারে। জানালার ওপাশে আকাশী রঙের আকাশ। এই স্বপ্নটা সে কেন দেখতো জানতো না। সে কখনো বুঝতে পারেনি মেয়েটা কে? তার নিজের চেহারার সাথে কোন মিলও নেই। মেয়েটার মাথা ন্যাড়া করা। যার কারনে কাকে তার বয়সের থেকে আরো অল্প বয়সী দেখাতো।



জ্ঞান ফেরার পরে যখন সে দেখলো একটা সাদা বিছানা আর একা আকাশী আকাশ উঁকি দিচ্ছে জানালা দিয়ে তখনি স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে তার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। নিজের অজানন্তেই চোখের কোনা দিয়ে এক টুকরো জল গড়িয়ে পড়ে তার। সে তখন নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখেছিল। না এখনো চুল ফেলে দেওয়া হয়নি। তবে সে বুঝে গিয়েছিল সে দিন হয়তো আর বেশী দূরে নেই।



ব্যডমিন্টন কোর্টে লোক আসতে শুরু করেছে। জয়া উঠে পড়লো। তবে এখনি রুমে চলে আসলো না। রেলিং ধরে কিছুটা সময় দাড়ালো। তার চোখ ব্যডমিন্টনের কোর্টের দিকে। ছেলেটা নেট বাধছে। আকাশী রঙের একটা টি শার্ট পরা। প্রতিদিন সে একই রঙের শার্ট পরে আসে। সেই গত বছর থেকে জয়া লক্ষ্য করছে ব্যপারটা। কেন জানি কোথাও আকাশী রঙ দেখলে তার চোখ আটকে যায়। গত বছর ছেলেটা একটা রেসিং সাইকেল চালিয়ে আসতো। একটা বেলী ফুল গাছ আছে ঐ প্লটের কোনায়। সেই গাছে সাইকেলটা হেলান দিয়ে ছেলেটা নেট লাগানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে যেত। এই দৃশ্যটুকু দেখেই জয়া বারান্দা থেকে চলে আসতো। এর পরে একটা বছর পার হয় গেছে। এর মধ্যে জয়ার সাথে আর কোথাও ছেলেটার দেখা হয়নি।



এই বছর শীত শুরু হবার পরেই আবার ছেলেটাকে দেখলো জয়া। তবে এবার আর তার সাইকেলটা দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা শহরের ছেলেদের মধ্যে এক একটা সময় এক একটা ক্রেজ কাজ করে। এই বছর আর কাউকেই সাইকেল চালাতে দেখা যাচ্ছে না। ছেলেটা বেশ বড় হয়ে গেছে মনে হল জয়ার। হয়তো সে নিজেও অনেক বড় হয়ে গেছে। তবে নিজের বড় হওয়াটা হঠাৎ করে চোখে পড়ে না। অনেকদিন পরে কাউকে দেখলে যেমনটা পড়ে। হঠাৎকরে জয়ার মনে হল হয়তো আগামী বছর ছেলেটা আরো বড় হবে। তবে সে দেখবে না। কেমন যেন একটা খারাপ লাগলো তার। না ছেলেটার প্রতি তার অন্য কোন আকর্ষণ কাজ করে না। জাস্ট চোখের একটা অভ্যস্থতা ছাড়া কিছুই না। তবু দৈনন্দিন জীবনে অভ্যস্থ কিছু ছেড়ে যেতে মানুষের খারাপ লাগে। যেমনটি তার লেগেছিল মাধব চাচার জন্য। প্রতিদিন বিকেলে মাধব চাচার কাছে চটপটি খাওয়ার অভ্যাসটা যে তার কবে হয়েছিল সে মনে করতে পারে না। মাধব চাচার চটপটি স্কুলের সবার অনেক প্রিয় ছিল। তবে তার ভালো লাগতো মাধব চাচার কাজের স্টাইল। তার ব্যস্ততা, তার হাতের ছন্দ, তার স্কুলের মেয়েদের সাথে কথা বলার ভঙ্গি। যশোর ছেড়ে চলে আসার সময় তার নিলু সুমন শান্তাদের জন্য যতটা বেশী খারাপ লেগেছিল তার থেকে বেশী খারাপ লেগেছিল মাধব চাচা জন্য। কিন্ত সে জানে মাধব চাচা হয়তো এখনো স্কুলের গেটে আগের মতোই ছন্দ তুলে চটপটি বানায় এবং সে চাইলেই যশোর গিয়ে এখনো তাকে দেখে আসতে পারে। কিন্তু আগামী শীতে সে হয়তো এমন জায়গায় চলে যাবে যেখান থেকে আর আকাশী শার্টের ছেলেটা কত বড় হল দেখতে আসা যাবে না!!!



বারান্দার গ্রীল ধরে দাড়িয়েছিল জয়া। হঠাৎ একটা প্লেন যাওয়ার শব্দ হল। বিকট শব্দ। এই একটা কারনে তার উত্তরার বাসা অপছন্দ। প্লেনগুলো একেবারে মাথার ওপর দিয়ে এমন বিকট আওয়াজ তুলে যায় যেন মনে হয় দুনিয়া চৌচির হয়ে গেল। মাঝে মাঝে রাতের বেলা ঘুম ভেঙে চমকে উঠতে হয়। কিন্তু এই বিকেলেই জয়া চমকে উঠলো। প্লেনের আওয়াজটা থামছে না। দুই মিনিট তিন মিনিট পাঁচ মিনিট। এতক্ষণ তো একটা প্লেনের শব্দ থাকে না। থাকার কথাও না। হঠাৎ মনে হল জয়ার মাথার ভেতরটাই চৌচির হয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব কষ্ট হতে লাগলো তার।



মধ্যম




ছোটর জন্য জয়ার খারাপ লাগছে। হঠাৎ করে তাকে চলে আসতে হল আমেরিকা থেকে। তিন মাসের মাথায়। বলছে তার কাগজ পত্রে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু জয়া জানে সমস্যা কোথায়। নিজেকে অপরাধী লাগছ তার। ছোটর অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল অমেরিকা যাবার। গত দুই বছর ধরে চেষ্টা করে সফল হয়েছিল সে। কিন্তু তার কারনে ওর ওখানে থাকা হল না। এই রকম পাগলামির কি কোন মানে হয়? অনেকে তো বাবা মা মারা গেলেও বাইরে থেকে আসে না। আর ছোট তার এই খারাপ সংবাদ শুনে এতদিনের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে চলে আসলো!! জয়ার চোখে পানি চলে আসে। এত ভালোবাসা না থাকলে হয়তো এই পৃথিবীটা ছেড়ে যেতে এই খারাপ লাগতো না।



আজকাল পৃথিবীর সব কিছুর ওপর অনেক মায়া হয় তার। মনে হয় সব কিছুই তার কতো আপন। এমনকি পাশের ফ্লাটের নাম না জানা সুপারি ওয়ালাটা পর্যন্ত। জয়া ভাবছে হসপিটাল থেকে বাসায় গেলে একদিন ছোটকে নিয়ে পাশের এপার্টমেন্টে যাবে। ছেলেটা নিশ্চয় অনেক অবাক হবে। হয়তো ভয়ই পেয়ে যাবে প্রথমে। কিন্তু জয়াকে বোঝাতে হবে সে কোন কমপ্লেইন করতে আসে নি। কিন্তু মা কি তাকে ঐ বাসায় যেতে দিবে? অথবা ঐ ছেলেটা একদিন বাসায় দাওয়াত দিলে কেমন হয়? তবে রাহেলার মা তার ওপর যেমন ক্ষেপা মনে হয়না সে তাকে কিছু খেতে দিবে। কিন্তু দাওয়াত করে কি মানুষকে না খাইয়ে বিদায় করা যায়? জয়া অবশ্য টুকটাক রান্না জানে তবে ঐ ছেলের জন্য সে যদি নিজে কিচেনে ঢোকে তবে ভালো দেখাবে না। সবাই ভাববে জয়া হয়তো ঐ ছেলের সাথে প্রেম ট্রেম করে !!! ধুর এটা কেউ ভাববে না। সবাই তো জানেই জয়ার বয়ফ্রেন্ড আছে। আচ্ছা মাহি গত কয়েকদিন ধরে এরকম লাপাত্তা হয়ে গেল কেন? সিলেটের প্রগ্রামটা শেষ করে তো গতকালই ঢাকা ফিরে আসার কথা। হসপিটালে জ্ঞান ফেরার পর থেকে সে অবচেতনমনে তাকে খুঁজেছে। তখন অবশ্য সে জানতো মাহি এখনো সিলেট। কিন্তু তার হসপিটালে ভর্তি হবার খবরটা কি কেউ তাকে দেয়নি? তবে ঢাকা ফিরে এসেও সে কেন তাকে দেখতে আসলো না? নাকি ও এখনো সিলেট থেকে ফেরে নি? না ফিরলেও একটা ফোন তো করবে?



আজ দুই দিন হয়ে গেল সে হসপিটালে আছে। প্রথমবার এখানে আসার সময় তা কোন জ্ঞান ছিল না। কিন্তু এবার সে সব কিছু দেখতে পারছিল। মাধবীলতায় ঘেরা একটা বারান্দা, একটা প্লেন, একটা আকাশী রঙের টিশার্ট, তারপর এ্যম্বুলেন্সের সাইরেন এবং বাবার অসহায় চোখ। জয়া তার বাবার চোখে দিকে তাকাতে পারছিল না। কেমন জানি কান্না পাচ্ছিল তার। এরকম নিরীহ, নির্লিপ্ত চোখে বাবাকে একদম মানায় না।



সে এখন অনেকটা সুস্থ বোধ করছে। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে এখনো রিলিজ দিচ্ছে না। তার গত দুইবার আক্রান্ত হবার ইন্টারভেলটা অনেক কম। তাই ডাক্তাররা চাইছে দুএকটা দিন হসপিটালে থেকে যাক। অবশ্য এখন তাকে আইসিইউ থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। তার রুমে এখন একটা জানালা আছে। যেটা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। জয়া ইচ্ছা করলে হেটে জানলার ধারে যেতে পারে। তার মোটেও দূর্বল লাগে না। সে যখন আইসিইউতে ছিল তখন শরীরের মধ্যে, মাথায় একগাদা তার পেচানো ছিল। নিজেকে কেমন যেন ল্যাবের গিনিপিক গিনিপিক লাগছিল। তখন কে যেন তাকে একফোটাও নড়াচড়া করতে দেয়নি। শুধু তার চোখ দুটো সচল ছিল। সে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক্টা জানালা খুজতো যেটা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না আইসিইউ'র রুমটায় কেন কোন জানালা থাকে না?



জয়া এই রুমটাতে একা থাকতে পারছেনা। এখানে ভিজিটর আওয়ারের কড়াকড়ি নেই কেন? সারাক্ষন কেউ না কেউ আসতেই আছে। নিজেকে কেমন জানি চিড়িয়াখানার নতুন কোন জন্তু বলে মনে হচ্ছে। আজ দুপুরে ইয়াং একটা ডাক্তার এসেছিল ভিজিটে। অনেকটা মাহির মতো দেখতে। সে প্রথমে ভেবেছিল মাহি লুকিয়ে তাকে দেখতে এসেছে। কিন্তু মাহি কেন লুকিয়ে আস্তে যাবে? ডাক্তারটা একটু কাছে আসতেই ভুল ভাংলো তার। না। মাহি না। ডাক্তারের থুতনির নিচে একটা কাটা দাগ। মাহির মুখটা একদম ছেলেমানুষের মতো। নিষ্পাপ। ডাক্তারটি যখন জয়ার হাত ধরে পালস পরিক্ষা করছিল তখন সে তাকে চুপিচুপি বলেছিল, প্লিজ নো ভিজিটর। মনে হয় কাজ হয়েছে। দুপুরের পরে শুধু একবার বাবা এসে বলে গেছে আজ বিকেলে তারা বাড়ি যেতে পারবে। জয়া খুশি হয়েছে। বিকেলই ভাল।



এখন সে একা। একবার উঠে জানালার ধারে গিয়েছিল। নার্স এসে ধমকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গেছে। নার্সটা রাহেলার মার থেকেও কাটখোট্টা। ঐ ডাক্তারটিকে পেলে কাজ হতো। সে তার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারতো। জানালার ওপারের আকাশী আকাশটা তাকে টানছে। মাঝে কিছুদিন গ্রামীনফোনের থ্রিজির একটা বিজ্ঞাপণ দিত। অর্ষ নামের ছেলেটা হসপিটালের বিছানায় শুয়ে থাকা তার বান্ধবীকে আকাশ দেখানোর জন্য ভিডিও কল অন করে কয়েকটি বেলুনের সাথে বেধে মোবাইলটা উড়িয়ে দিয়েছিল। তাকে কি কেউ এইভাবে আকাশ দেখাতে পারে? না, মাহি পারে না। সে খুব প্রাকটিক্যাল। ছেলেমানুষি তাকে দিয়ে হবে না। তবে অভি পারে। অভিকে বললে সাথে সাথে বড় একটা বেলুন যোগাড় করে ছাদে উঠে যাবে এক্ষুনি। জয়া অভিকে ফোন করার জন্য নিজের মোবাইলটা খুজলো। বালিশের আসে পাশে নেই। হাত বাড়িয়ে বেডের পাশের লকারে খুজলো। নেই। হঠাৎ মনে পড়লো থাকবে কি করে? সে তো মোবাইল সাথে করে আনেনি। কিন্তু তাই বলে কি কেউ তাকে মোবাইলটা দিয়ে যাবেনা? জয়ার আফসোস হল সবাই থাকতে কেন সে মোবাইলের খোঁজ করেনি। নার্স কে ডেকে তার কাছে মোবাইলটা চাইবে কিনা ভাবলো একবার। তাতে লাভ না হবার সম্ভাবনা বেশী। নার্সের ফোনে ভিডিও ফ্যাসিলিটি নাও থাকতে পারে। অবশ্য চাইলেও নার্স মোবাইল দিবে কিনা সন্দেহ। হসপিটালের বিধি নিষেধ থাকতে পারে।



বড্ড এলোমেলোভাবে দুপুরটা পার হয়ে গেল। কিছুটা সময় সে ঘুমিয়েই কাটালো। ঘুমের মধ্যে আজ আবার সেই মেয়েটি এসেছিল। তবে আজ মেয়েটি হসপিটালের সাদা বিছানায় ছিল না। একটা মাধবীলতায় ঘেরা বারান্দা। জয়া চিনতে পেরেছিল। ওটা তার বারান্দা। তবে ওখানে তার বেতের চেয়ারের বদলে একটা নেটের বিছানায় শুয়ে শুয়ে মেয়েটি দোল খাচ্ছিল। অনান্য বারের তুলনায় আজ তাকে অনেক হাসিখুশি মনে হল।



বিকেলে বাসায় ফিরে জয়া অবাক হল। তার বারান্দায় সত্যি সত্যি একটা নেটের দোলনা বাধা। জিজ্ঞেস করে জানলো ছোট এনেছে। জয়া ভাবলো যে স্বপ্ন তাকে অনেক কিছুই আগে থেকে দেখিয়ে দেয় সেই স্বপ্ন যদি একটু মাহিকে দেখিয়ে দিত তবে খুব ভালো হতো। সে চলে গেলে মাহি কেমন থাকবে জানতে পারলে মন্দ হতো না !!



দোলনাটা খুব সুন্দর। জয়া প্রথমে পা উঠিয়ে বসলো। তারপর শুয়ে পড়লো। সে ভাবলো একটা দিকদিয়ে ভালোই হবে। নেটের মধ্যে শুয়ে থাকলে বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। সুতরাং ব্যডমিন্টনের ছেলেপেলে আসলেও আর তাকে বারান্দা ছেড়ে চলে যাওয়া লাগবে না। তখন সে তার আকাশী রঙের আকাশটা গোধুলীর লাল রঙ মাখতে দেখতে পারবে।



শেষ



জয়া মানতে পারছে না সময়গুলো এত দ্রুত কেন শেষ হয়ে যাচ্ছে? অনেকেতো বছর খানেক ও বেঁচে থাকে। অথচ এই এক মাসের মধ্যে তাকে কেমো নেয়া শুরু করতে হল। নিজের চেহারাটা এখন একদম সেই স্বপ্নে দেখা মেয়েটার মতো। রাহেলার মাকে বলে রুম থেকে ড্রেসিং টেবিলটা সরিয়ে ফেলেছে সে। ওটার সামনে দাড়ালে চমকে উঠে জয়া। সামনের প্রতিবিম্বটা নিজের বলে মানতে পারতো না। মনে হতো অচেনা কেউ। ঐ স্বপ্নের মেয়েটা হয়তো তার ছায়াকে সরিয়ে নিজেই আস্তানা গড়েছে তার ভেতরে।



গতকাল অভি এসেছিল। নিশিকে সঙ্গে নিয়ে। নিশি মেয়েটা আসলেই সুন্দর। আকাশী রঙের শাড়ী পরেই এসেছিল। অভি মনে তাকে বলেছে জয়ার আকাশী রঙ পছন্দ। কিন্তু মেয়েটার বয়স একেবারে কম। অভি যে কেন তাকে শাড়ী পরতে বলেছে কে জানে। অভির আসলে মাথামুন্ডু জ্ঞান নেই। নাহলে আজকাল কেউ ফেসবুকে কোন মেয়ের প্রেমে পড়েনা। অবশ্য তার এই হালকা স্বভাবের কারনেই হয়তো তার লাইফটা অনেক সহজ। এবং মনে হয় সে ঠকেনি। মেয়েটিকে দেখে জয়ার মনে হল সে অভির অনেক কাছের। আর জয়া জানে তার মনে হওয়ায় কোন ভুল থাকে না।



অভি বলেছিল ওরা নন্দন যাবে। জয়া যাবে কিনা? তার নাকি বাইরে থেকে ঘুরে আসা দরকার। কিন্তু জয়ার ইচ্ছা করেনি। আর এতটা পথ জার্নি করার মতো অবস্থা তার নেই।



-তাহলে চল কাছে কোথাও যাই। এই ধর বারো নম্বরের শেষ মাথায়। একটা দোকানে খুব ভালো চিঙড়ি ভাজে। অথবা নর্থ টাওয়ার। নিশি বলল একটা দোকানে নাকি খুব ভালো টেডিবিয়ারের কালেকশন আছে। চল কয়েকটা ধরে নিয়ে আসি।



জয়া হাসলো। বন্ধুরা যেমন হয় আরকি।



-আমি কোথাও যাবোনারে। তার চাইতে তোরা কিছুক্ষন থাক। ভালো লাগবে। অবশ্য তোদের যদি কোন প্রোগ্রাম থাকে তাহলে অন্য কথা। তোদের তো এখন ঘোরাঘুরির সময়।



-প্রোগ্রাম মানে? আমি এখনি বাসায় ফোন করে দিচ্ছি আমার কাপড়চোপড় এখানে দিয়ে যাবার জন্য। আজ থেকে আমি তোদের বাসায় পার্মানেন্ট। এই নিশি তোমার কিছু আনা লাগলে আনিয়ে নাও। তুমি অবশ্য জয়ারটা দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারবে। যা একটু লুজ ফিটিং হবে আরকিছু না।



-আমাকে মোটা বললি? তোর সাহসতো কম না। জয়া হাত উচিয়ে অভিকে মারতে উদ্দত হয়। নিশি হাসে। সাবলিল হাসি জয়ার চোখ এড়ায় না।



-আরে না তোকে মোটা বলিনি তবে নিশিকে একটু স্লিম বললাম। তুই ভালো করে দেখ নিশি আসলেই কত স্লিম। অভি সুযোগ পেয়েই নিশিকে বাতাস দিতে থাকে।



-হুম। ঘটনা সত্যি। আর সাক্ষীও সবল। তবে কথা হচ্ছে তোদের দুজনকে আমি এখানে থাকতে দিবো কেন? ডেটিং এর ফন্দি করা হচ্ছে না? অভি তুই এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে গেলি?



ওরা যতক্ষণ ছিল জয়ার আসলেই সময়টা অনেক ভালো কাটলো। অভির কাছ থেকে সে সবার খবর নিল। অনন্তর সাথে ব্রেকাপের বিশদিন পরেই রিমা আবার তাকে পটিয়ে কিভাবে বিয়ে করে ফেলল, কিভাবে রাফিত ভার্সিটির নতুন মনোনজ্ঞানের ম্যাডামের সাথে ডেটিং এ যেয়ে ম্যাডামের হাসবেন্ডের কাছ ধরা খেল এই সব রসাত্মক খবরগুলো শুনে হাসতে হাসতে জয়া কিছুটা সময় ভুলেই গিয়েছিল সে মৃত্যুপথযাত্রী। অভি জানালো শান্তা তার হাসবেন্ডের সাথে পার্মানেন্টলি সুইজারল্যান্ড চলে গেছে, জানালো হাসেম চাচার সিঙ্গারার দোকানের যে বিশুকে তারা ধরে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল সে নাকি প্রাইমারি ফাইনালে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। জানালো নিশির মা নাকি অভির সাথে পরিচিত হবার জন্য তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। তোদের বিয়ের কাজীও কি ফেসবুক থেকেই নেয়া হবে? নিশি সামনে থাকাতে জয়া কথাটা বলতে গিয়েও বলল না।



জয়া জানলো বাইরের পৃথিবীটা একদম আগের মতোই চলছে।

অভি যখন চলে যাবে সে তখন অনেকক্ষণ ধরে চেপে রাখা প্রশ্নটা আর চেপে রাখতে পারলো না। শেষমেষ জিজ্ঞেস করেই ফেলল, ‘মাহির কোন খবর জানিস’?

অভি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লো। জয়া অভির কাছে মাহির খবর নিচ্ছে? তার মানে কি মাহির সাথে তার যোগাযোগ হচ্ছেনা? সে তো কালকেও তাকে টিএসসির কনসার্টে দেখলো। জয়া নিজেও আকাশ থেকে পড়লো। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন। সে তো চিরতরেই চলে যেত তার লাইফ থেকে। তাহলে এত ব্যস্ততার কি ছিল? ক্যন্সার তো ছোঁয়াচে না। শেষ কয়েকটা দিন কি মাহি তার পাশে থাকতে পারতো না?



সে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে হয়তো সে ব্যস্ত আছে। কিন্তু অবুঝ মন যতটা অবুঝই হোক এতটা অবুঝ না। চন্দনাকে নিয়ে টিএসসিতে কনসার্ট করা মোটেও ব্যস্ততা হতে পারে না। হতে পারে সে এখনো খবর পায়নি। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। মাহির কাছে যদি সব কিছু স্বাভাবিক থাকতো তবে সে সিলেট যাবার পর থেকে এখনো একটা ফোন করেনি কেন? এমনকি তার মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত চেঞ্জড।

যে একবার ভাবে এটা হয়তো স্বপ্ন। এই ব্যপারটা এখনো ঘটেনি। তবে ঘটবে। সে তো অনেককিছুই আগে থেকে দেখতে পাই। সিওর হবার জন্য সে গায়ে চিমটি কাটে। ব্যাথা পায়। না এটা স্বপ্ন নয়। অভির কাছ থেকে যা শুনেছে সেটা বাস্তব। অন্যরকম একটা খারাপ লাগা শুরু হয় তার। এটা যদি স্বপ্ন হত তবু ভালো হতো।

জয়ার কাছে জীবনের মিনিংটা গত কয়েকদিনে এক একবার এক রকম লেগেছে। এখন আবার অন্যরকম লাগল। মনে হল এই পৃথিবীর কোন কিছুই সে আসলে চিনতে পারেনি। পুরো পৃথিবীটা একটা স্বার্থপরের স্তুপ ছাড়া আর কিছুই না।



সে নিজে কখনো ডাইহার্ট প্রেমিকা ছিল না। তবু ঘরের মধ্যে তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। মনে হতে লাগলো এই কংক্রিটের দেয়াল তাকে পিষে মারার জন্য এক্ষুনি ভেঙে পড়বে। বারান্দায় এসে দাড়ালো সে। টনটনে রোদ আকাশে। এই সময়ে বারান্দায় দাড়াতে তার ভালো লাগেনা। তবু দাড়ালো। আকাশের রঙটা এখনো ঠিক আকাশী হয়ে ওঠেনি। কেমন যেন একটা ধোয়াটে ভাব। তার চোখের কোনায় যন্ত্রনা হচ্ছে। গতবার জ্ঞান হারানোর আগে মাথার ভেতরটায় প্রচন্ড যন্ত্রনা হচ্ছিল। হতে পারে সে আবারো জ্ঞান হারাতে যাচ্ছে। তবে লুটিয়ে পড়ার ভয়ে সে নেটের দোলনা বা বেতের চেয়ারটায় বসে পড়লো না। গ্রিল ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো। অপেক্ষা করতে থাকলো পতনের, কিংবা একটা স্নিগ্ধ বিকেলের। যে বিকেলে ব্যডমিন্টনের কোটে আকাশী টিশার্টের ছেলেটি নেট বাধার জন্য সবার সবার আগে হাজির হবে, যে বিকেলে রাহেলার মা পাশের ফ্লাটের সুপারি ছুড়ে মারা ছেলেটাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিবে, যে বিকেলে কোন প্লেনের শব্দ এ্যম্বুলেন্সের সাইরেন হয়ে শেষ হবে না, যে বিকেলে মাঝে মাঝে এক ঝলক হাওয়া এসে মাধবীলতায় দোল দিয়ে যাবে এবং যে বিকেলে আকাশে রঙটা হবে ঠিক আকাশী।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৩২

এম. এ. হায়দার বলেছেন: অনেক ভাল লাগল, ভাই।
সব দিক থেকেই ভাল।

তবে আমার মনে হয়, প্রথমে বন্ধনীর অংশটুকু বলে না দিলেই ভাল হত।


অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:১২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

প্রকাশের পর আমারও তাই মনে হল। এডিট করে দিলাম।

ভালো থাকবেন।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লেগেছে। তবে কিছু জায়গায় ক্লান্তিকর দীর্ঘ সংলাপ বা বর্ণনা পাঠককে ধরে রাখতে পারবে কী না এটা ভাবার বিষয়।

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন:
হামা ভাই ব্লগে আপনার মতো এমন একজনের সান্নিধ্য পাচ্ছি আমার ভাগ্য। জানিনা আপনাদের সহযোগিতা ও নির্দেশনায় কোন একদিন জাতে উঠে আস্তে পারবো কিনা। তবে আমি নিজেও জানি আমার গল্পে পাঠক ধরে রাখার মতো কিছু নেই। সংলাপের চাকায় একটি গল্পকে গড়িয়ে নেয়াটা আমার হয়ে ওঠে না। কিছু লিখতে গেলেই আত্মকথন হয়ে যায় বেশী।

অনেক ভালো থাকবেন ও পাশে থাকবেন মধুর সমালোচনা নিয়ে।

৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৪১

মামুন রশিদ বলেছেন: সব মিলিয়ে ভালো ।

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৩

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

মদন বলেছেন: +++++++++

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৮

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

অথৈ শ্রাবণ বলেছেন: ১৫ ঘন্টার রোজার মত দীর্ঘ কিন্তু শেষটা সুন্দর ॥প্রথম গল্প,আশা করি পরের গুলো অনেক সাবলীল হবে ॥

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: সুন্দর কিছুর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় অথৈ।

৬| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:৪৮

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: ভাল লাগল ভাই ।শেষটাও সুন্দর ।
ভাল থাকবেন ।

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৩৬

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: গল্প কেমন লিখি ঠিক জানি না। তবে মনে হয় ভালো না। এজন্য উৎসাহ পাই না সামনে এগুবার। :) আপনার মন্তব্যে ভালো লাগলো।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.