নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নাবিকঃ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে খুবই কঠিন গদ্য। আমি এক এলেবেলে মানুষ। লেখালেখির কিচ্ছু জানি না। গায়ের জোরে লিখে যাই। তবে ছোটকালে ভালো লিখতাম। বড় হয়ে মনে হয় নষ্টদের অধিকারে চলে গেছি।

মৃদুল শ্রাবন

মেরিনার

মৃদুল শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশবের একটি সাদামাটা ঈদের গল্প

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদ মিইয়ে আসতে শুরু করেছে চারিদিকে।আলো আধারের এ লুকোচুরি খেলাটা দেখতে ভালো লাগে জয়ের।দিনের আলোটা কেমন যেন তরল হয়ে আসতে আসতে শুন্যে মিলিয়ে যায়।সে জানালার পাশে উপুড় হয়ে শুয়ে শুয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।জানালার ওপাশেই একটা নদী।অবশ্য এটাকে নদী বলা ঠিক না।এটা একটা বাওড়।নাম বেতনা।বর্ষার মৌসুমে বাওড়ের কানায় কানায় পানি থৈ থৈ করে।তবে এখন বর্ষা কাল না।পুরো বাওড়টা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।বাওড়ের বুকে জন্ম নিয়েছে ভুইচাপাতি ঘাস।



জয়ের কাছে প্রতিদিনের সন্ধ্যে থেকে আজকের সন্ধ্যেটা আলাদা হয় নি।যদিও হবার কথা ছিল।কারণ কাল ঈদ।তবে কেন জানি তার কাছে ঈদের আনন্দ টা ঠিক আনন্দ হয়ে ধরা দেয়না কখনো।এটা ঠিক বন্দিত্ব কিনা যে জানে না।



জয়ের এখনি বই নিয়ে বসতে ভালো লাগছে না মোটেও।মাইকে হরেক রকম গান বাজছে।কিছু সময় ধুম ধাড়াক্কা হিন্দি আবার কিছু সময় বাংলা আবার কখনো পাড়ার শিমুল,সোহেলের,আরো কার কার জানি গলা শোনা যাচ্ছে।সন্ধ্যা থেকেই ঈদগাহ সাজানো শুরু করে ওরা। দুইদিন ধরে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে ঈদের চাঁদার ‘কালেকশন’ যদি ভালো হয় তবে আগের দিন বিকেলেই মাইক ভাড়া করে ফেলে ওরা।তারপর চাঁদ দেখা যেতে যতটুকু বাকি।শুরু হয় গানের আসর।ঈদগাহের খুঁটিগুলোতে রঙিন কাগজ কেটে কেটে ফুল বানিয়ে সাজায় ওরা।কিন্তু ঠিক কিভাবে কি করে জয় ঠিক জানে না।সে সকালে নামাজ পড়তে গেলেই দেখে সুন্দর সাজানো গোছানো ঈদগাহ।নিজের পাড়ার মধ্যে তার নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন লাগে তখন।



প্রতিবার ঈদ আসার আগে জয় ভাবে এবার সে মজা করবে।পাড়ার ছেলেদের সাথে থেকে ঈদগাহ সাজাবে।কাঁপা হাতে মাইক্রোফোন ধরে গান গাইবে।সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা পর্যন্ত সব ঠিকই থাকে। সবার সাথেই সে রাস্তার মাথায় দাড়িয়ে থাকে চাঁদ দেখার জন্য। অনেক চাঁদ না দেখেও হঠাৎ ‘চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে’ চিৎকার শুরু করে দেয়। অনেকে নিজে কিছুই না দেখেও হাত উচু করে অন্যকে চাঁদ দেখানো শুরু করে। অসম্ভব মজা হয় তখন।কিন্তু ফাইনালি চাঁদ দেখা হয়ে গেলেই তার ডাক পড়ে বাড়িতে।প্রতিদিনের মতো হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসো।বিচ্চিরি ব্যাপার।চাঁদ রাতে আর কেউ পড়তে বসে কিনা সে জানে না।



জয় অবশ্য এইভাবে চলতে অভ্যস্থ হয়ে গেছে।বিকেল থেকেই পাড়ার ছেলে গুলো নানা ধরনের খেলার আসর জমায় এই বাওড়ের মধ্যে।লোল্লাছুট, সাতমালা, ফুটবল এমন কি ক্রিকেটও।জয় শুধু দূর থেকে চেয়ে চেয়ে দেখে।পাড়ার ছেলেগুলোর দলে সে মিশতে পারে না।তার ঐ দলগুলো থেকে সে যে কবে কিভাবে আলাদা হয় গেছে নিজেও জানে না।ঘরের মধ্যে খুব বেশী হাঁপিয়ে গেলে মাঝে মাঝে সে অবশ্য চলে যায় বাওড়ের মাঝে সৃষ্ঠ হওয়া মাঠে।তবে তখন তার হাতে থাকে গল্পের বই।সবার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে নরম ঘাসের বিছানায় বসে বসে বই পড়ে সে।তখন অবশ্য সবার চোখ বাঁচিয়ে ঘাসের বিছানায় গড়াগড়িও খাওয়া হয় তবে তাতে পাড়ার ছেলেগুলোর মতো আনন্দ পায় না সে।তাকে সন্ধ্যা নেমে যাবার আগেই ঘরে ফিরে আসতে হয়। তারপর হাতমুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে।



নিজেকে কেমন যেন একটু আলাদা মনে হয় তার। বিশেষ করে এ পাড়ার ছেলেদের থেকে।এপাড়ায় তার কোন বন্ধু নেই।স্কুলে তার যে বন্ধুগুলো আছে তারা অন্য গ্রামের।বিকেল বেলা তাদের সাথে খেলা ধুলা করার সুযোগ হয় না।সে কোন ভাবেই নিজেকে কোন ধরনের খেলাধুলার সাথে যুক্ত করতে পারেনি।কারন তার বাবা খেলাধুলা পছন্দ করেন না।তার মতে খেলার মাঠে গেলেই হাত পা কিছু একটা ভাঙবে।অবশ্য জয়ের ও এ পাড়ার ছেলেগুলোকে মোটেও পছন্দ নয়।কেউই স্কুলে যায় না।আর স্কুলে না গেলে তার সাথে বন্ধুত্ব হবে কিভাবে?



জয় অবশ্য এই একাকিত্বতাকে জয় করার জন্য বই পড়ার নেশায় নিজেকে ডুবিয়ে দেয় সে।তবে স্কুলের বই না।গল্পের বই।তাদের গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে একটা পাবলিক লাইব্রেরি আছে।ওটা তাদের স্কুলেরই পাশে। স্কুলের সকলেই ঐ লাইব্রেরির সদস্য।হয় সপ্তাহে দুই তিন দিন বিকেলে বিকেলে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পাল্টে আনে।সত্যজিৎ রায়ের বইগুলো সব পড়া হয়ে গেছে।এখন সে শরৎচন্দ্র পড়া ধরেছে। বই পাল্টাতে বিকেলে বের হলে বাবা কিছু বলেন না।



তবে এই অভ্যস্থতার মধ্যেও এই একটি দিন তার খারাপ লাগে।মনে হয় এটা পরাধীনতা।এটা বাড়াবাড়ি।কিন্ত বাবার মুখের ওপর কিছু বলার মতো সাহস তার নেই।নেই কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার অভ্যাস।তাই শুধু চাঁদ রাত না ঈদের রাতও তাকে পড়ার টেবিলে বসেই কাটাতে হয়।সে জানে না সে বড় হয়ে কি হবে।তবে মনে হয় বাবা মনে করে অনেক বড় কিছু হতে হবে তাকে।তা নাহলে কি পড়ার টেবিল থেকে ঈদের দিনেও তার জন্য ছুটি মেলেনা???





লেখাটি সামুর ব্লগারদের শৈশবের ঈদ-প্রথম পর্বে পূর্বে প্রকাশিত।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪

সুমন কর বলেছেন: সবার মতো আপনারটিও যোগ হবে। অনেক ধন্যবাদ, পোস্টটি দেবার জন্য।

ঈদ মোবারক।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৪

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন ভাই। মবীন ভাইয়ের অনুপ্রেরনায় এইটুকু লিখেছিলাম।মজাদার কোন কাহিনী না তাই আলাদা করে আগে পোষ্ট করিনি। আজ সকালে আপনার সংকলণ টি দেখে লেখাটা নিজের ব্লগে দিলাম। সংকলনে নেবার জন্য ধন্যবাদ।

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লেগেছে শৈশবের ঈদ আর একাকীত্বের বর্ণনা ।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:২৪

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই। ঈদ মোবারক আপনাকে।

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: চানরাতেও পড়ার টেবিলে! ভাবাই যায় না। এক বিষণ্ণ শৈশবের ঈদনামচা পড়ে খারাপই লাগলো।

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: কাহিনীটা মন খারাপের হলেও এখন ঐ দিনগুলোকে মিস করি হামা ভাই। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় তখনকার পরাধীনতা যে শান্তি ছিল এখনকার স্বাধীন জীবনে সেই শান্তি নেই।

৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৬

জসীম অসীম বলেছেন: মৃদুল শ্রাবণ , আপনার গল্প পড়ে আমার দম বন্ধ হওয়ার মতো। ঈদের দিনে পড়তে হলে আমি বাঁচতাম না। জয়ের কষ্টে আমারই দম আটকে যাচ্ছিল। আমি আমার ছেলেকে এমন কষ্ট থেকে রক্ষা করতে চেষ্টা করবো। সব মিলিয়ে গল্পটি ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: মন্তব্যে ধন্যবাদ। প্রত্যেক বাবারই উচিত তাদের ছেলের জন্য সুস্থ একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে তার মস্তিস্ক সঠিক ভাবে বিকাশিত হতে পারে। আপনি আপনার ছেলের সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশের দিকে খেয়াল রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে জয়ের ক্ষেত্রে সুস্থ বিকাশের জন্যই তার বাবা তার এই বন্দীত্ব গড়ে তুলেছিলেন। কারন তাদের আশেপাশেরর পরিবেশটা তার জন্য স্বাভাবিক বিকাশের সঙ্গী হতো না।

৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৭

রাজিব বলেছেন: ছোট বেলা থেকেই আমার গল্পের বই পড়তে খুব ভাল লাগতো। আমার বাবা মা অবশ্য তেমন ঝামেলা করতেন না। আর এত বেশী গল্পের বই ও পত্রিকা পড়তাম যে পড়ার বই পড়তে তেমন কষ্ট হতো না কারণ দিনের শেষ টেক্সট বই হোক আর গল্পের বই হোক সব কিছুর বেসিক হল কিন্তু পড়া। ফলে রেজাল্ট মোটামুটি ভালই হত (প্রথম কয়েকজনের মধ্যেই থাকতাম)। তবে সেই আমিও ঈদের দিনে পড়া তো দূরের কথা গল্পের বইও পড়তাম না। যদি আপনার জীবনের সত্যিকারের গল্প হয় তবে সমবেদনা রইলো।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমাদের পাড়ায় সত্যিই আমরা এলিয়েনের মতো ছিলাম। ওখানে আমার বয়সী কোন ছেলের সাথে কোন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার কোন সুযোগ ছিল না। আমার চাচা বা আত্মীয় কেউও কাছাকাছি ছিল না। তাই আমার আসলেই খেলার মতো কোন সঙ্গী ছিল না। শুধু ঈদের দিন বলে কথা না যেকোন দিনেই আমি সন্ধ্যার পর থেকে অনেক বোরিং ফিল করতাম। তাই পড়ার টেবিলটাই ছিল আমার একমাত্র সঙ্গী। বলছিনা যে টেক্সট বই পড়তাম আমি। পড়তাম গল্পের বই। গল্পের বইয়ের মাধ্যমে আমি হারিয়ে যেতাম অন্য এক জগতে।

মন্তব্যে ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো।

৬| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৪

রাজিব বলেছেন: আপনার অবস্থা কিছুটা বুঝতে পারি। একেবারে ছোটবেলায় (৪-৮ বছর বয়স পর্যন্ত) আমার অবস্থাও কিছুটা আপনার মত ছিল। যে পাড়ায় থাকতাম সেটি তখন আধা গ্রাম আধা শহর এবং সেখানে আমার সমবয়সী কেউ স্কুলে যেত না। আমার মা আমাকে পাড়ার কারো সঙ্গে মিশতে দিত না। তবে আমার পত্রিকা পড়তে আর রেডিও শুনতে খুব ভাল লাগতো।তাই সময় খারাপ কাটতো না।
দোয়া করি আপনার ভবিষ্যৎ জীবন যেন সুখের হয়।

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:১৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: রাজিব ভাই আপনার শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। জানিনা যে ভবিষ্যতের কথা বলেছেন এখন আমি সেই ভবিষ্যতেই আছি কিনা। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় সুখেই আছি। আবার হামা ভাইয়ের মন্তব্যের জবাবে যেমনটি বলেছি এখন মাঝে মাঝে মনে হয় তখনকার পরাধীনতা যে শান্তি ছিল এখনকার স্বাধীন জীবনে সেই শান্তি নেই।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.