নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেই নাবিকঃ হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

নিজের সম্পর্কে গুছিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে খুবই কঠিন গদ্য। আমি এক এলেবেলে মানুষ। লেখালেখির কিচ্ছু জানি না। গায়ের জোরে লিখে যাই। তবে ছোটকালে ভালো লিখতাম। বড় হয়ে মনে হয় নষ্টদের অধিকারে চলে গেছি।

মৃদুল শ্রাবন

মেরিনার

মৃদুল শ্রাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাহাজে ঈদ (ছবিব্লগঃ জাহাজী জীবন-৩)

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:১৭





জাহাজে ঈদের দিনটা কেমন কাটে? দিনটা কি একজন জাহাজীর কাছে আনন্দের নাকি প্রিয়জনদের থেকে দুরে থাকার বেদনাকে উস্কে দেবার উৎসব?







চার্ট পেপারের উল্টা পাশে রঙের ছিটা দিয়ে বানানো খুব সামান্য একটা পোষ্টার। জাহাজ সাজানোর জন্য খুব বেশী কিছু ছিল না আমাদের। একেবারে মাঝ সমুদ্রে ঈদ। কোন বাজার সওদা করার সুযোগ নেই। নেই জাহাজ সাজানোর কিছু। চাঁদ রাত থেকেই আমরা কয়েকজন লেগে গেলাম ইনস্ট্যান্ট কতটুকু কি করা যায়। ষ্টেশনারী লকার থেকে রঙ পেন্সিল মার্কার পেন আর বাতিল চার্ট নিয়ে কেটে কুটে রঙ মাখিয়ে কিছু জিনিস বানালাম। সাধারনত ডাইনিং রুমটাই সাজাই আমরা। জাহাজে ঈদ বলতে ভালো কিছু খাবার খাওয়া। এই দিন আমরা সবাই এক সাথে খেতে বসি। সেলফ সার্ভিস। সবাই বলতে অফিসার ক্রু। রান্না করা হয় বিশেষ খাবার। সকালে সেমাই পায়েস খেয়ে নামাজ পড়ি, তারপর নুলডস, ফ্রেন্স ফ্রাই, ফিস ফিংগার, চিপস কোল্ড ড্রিংস নিয়ে বসে কিছুক্ষন গল্প গুজব। দুপুরে একটা হেভী মেনু থাকে। প্লেইন পোলাওএর সাথে গরু মুরগী খাসি আর মাছ। আর রাতে ইংলিশ। হয় বার্গার না হয় পিজ্জা।







আমি যখন প্রথম জাহাজে উঠি তখন আমার বয়স কুড়ি বছরের কম। হঠাৎ করে উৎসবের দুনিয়া ছেড়ে একটা গন্ডির মধ্যে বন্দী হয়ে যাওয়া কুড়ি বছরের একটা ছেলের জন্য আনন্দের নয়। জাহাজের প্রথমদিনগুলি কাটতো অনেক বেদনায়। ক্যাডেট লাইফের কাজকে হাড়ভাঙা খাটুনির সাথে তুলনা করা যায়। ভোর ছয়টায় শুরু করে ডিউটি কখন শেষ করবো জানতাম না। তার ওপর সিনিয়রের টাল্টু। Ragging এর জাহাজী প্রতিশব্দ টাল্টু। এইভাবে নতুন একটা পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেবার যুদ্ধ করতে করতে চলে আসে ঈদ। আমার জীবনের সেই ঈদটা প্রথম ব্যতিক্রমি ঈদ। কাছে কোন নতুন জামাকাপড় ছিল না। ছিল না সকালে উঠে নতুন সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করার জন্য আব্বুর তাড়া।



আমাদের জাহাজের সকলেই ছিলাম বাঙালি এবং মুসলমান। তাই কিছুটা হলেও ঈদের আমেজ ছিল। বড় একটা জায়গা ঠিক করা হল ঈদের নামাজ পাড়ার জন্য। আর ঠিক করা হল ভালো ভালো খাবারের মেনু। আমরা গভীর সমুদ্রে কোন মোবাইল নেটওয়ার্কের আওটায় ছিলাম না। তখন জাহাজে কোন স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থাও ছিল না। পরিবারের কারো সাথে কোন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া শুরু হয় আমার জাহাজী জীবনের প্রথম ঈদ। বন্ধু বান্ধবদের সাথে sms বিনিময়টা খুব বেশী মিস করছিলাম। আর সারাদিনের হইহুল্লোলের কথা মনে করে জাহাজের বদ্ধ কেবিনের বদ্ধ বাতাসে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমরা নামাজ পড়ে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে একজন আর একজনের বাড়িতে গিয়ে সেমাই খাওয়ার মতো করে একজন আর একজনের কেবিনে গিয়ে কিছুক্ষন গল্প গুজব করে আসছিলাম। তখন জাহাজে ঈদের দিনের সবথেকে আরামদায়ক বিষয় ছিল রোদের মধ্যে কষ্টকর ডিউটি থেকে মুক্তি। তবে এই ছুটিটাও কিছু সময় পরে বিষাদময় হয়ে ওঠে। একাকীত্বতায় হৃদয়ের কোনায় একটা ব্যাথা অনুভব হয়। খুব বেশী মনে পড়তে থাকে দেশে কাটানো ঈদের দিনের স্মৃতিগুলো।



পরবর্তীতে জাহাজের ঈদের দিনটা বৈচিত্রময় করে তোলার জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করেছি। মাঝে মাঝে দু এক জনের উদ্যেগে জাহাজের ঈদের দিনটা আনন্দঘন হয়ে উঠেছে। আজ আমার জাহাজের কয়েকটি ঈদের কিছু ছোট খাট চিত্র তুলে ধরবো। চিত্রগুলো আনন্দের। কারন ঈদ মানে আনন্দ। একজন জাহাজীর জীবনের বেদনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এই বেদনার কথা সবসময় বলার নয়। আজ এই ঈদের আনন্দঘন আমেজের মধ্যে আমার জাহাজে কাটানো খারাপ সময়ের কথা না বলে কিছু ভালো সময়ের কথা শেয়ার করবো।



জাহাজে ঈদের নামাজ পড়ানোর জন্য কোন প্রফিশনাল হুজুর থাকে না। তবে প্রত্যেক জাহাজেই নামাজ পড়াতে পারে এমন কেউ কেউ না কেউ থাকে। আবার কারো না কারো কাছে খুদবার বইও মিলে যায়। কোন ঈদগাহ ছাড়া কোন মিম্বার ছাড়া বেশীর ভাগ জাহাজে ঈদের জামাত শুরু হয় ব্রীজ উইংয়ে। জাহাজে এই ঈদের নামাজ পড়ে নিয়ে আবার অনেক বিতর্ক আছে। অনেকের মতে জাহাজে ঈদের নামাজ পড়ার কোন দরকার নেই যেমন আমরা জাহাজে জুম্মার নামাজ পড়িনা। আমরা জাহাজে সবসময় কছর নামাজ পড়ি। মুছাফিরের জন্য ঈদের নামাজ মাফ। এজন্য আমাদের ঈদের জামাতে খুব বেশী লোক হয়না। তবে আমি অতোশতো বুঝিনা। এমনি জাহাজের পানসে ঈদ তারওপর যদি নামাজ না পড়ি তাহলে আর ঈদ কিভাবে হল?



এই ঈদের নামাজ নিয়ে জাহাজে পরবর্তিতে আরো ব্যতিক্রমি অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার এক জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিল আহ্‌লে হাদিস। তিনি তার ব্যতিক্রমী জ্ঞান দিয়ে জেনেছেন রাসুল(সঃ) ঈদের নামাজ নাকি বারো তগবিরের সাথে পড়েছিলেন। আমি সারাজীবন ছয় তগবিরে ঈদের নামাজ পড়েছি। কিন্তু জাহাজে ক্যাপ্টেনের কথা অনুযায়ী সেবার বারো তগবিরের সাথে ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছিল।





মাত্র কয়েকজন মুসল্লী নিয়ে জাহাজের ব্রীজ উইংয়ে আমাদের ঈদের নামাজ।

ফটো ক্রেডিটঃ ক্যাপ্টেন ওয়াদিয়া।




ক্যাপ্টেন ওয়াদিয়া একজন ইন্ডিয়ান পার্সী। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তিনি একটা হাফপ্যান্ট পরে আমাদের ঈদের নামাজ দেখতে এসেছিলেন। তারপর তারপর আমার কাছে থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে দিলেন। লোকটার মধ্যে আমাদের নামাজ পড়া দেখার আগ্রহ ছিল। আমরা তারাবীর নামাজ পড়ার সময় উনি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেন। তার জন্য আমার এক ধরনের কষ্ট হতো। কারণ পার্সীদের নাকি মরে গেলে লাশের গায়ে বাটার লাগিয়ে মাঠে রেখে আসে শকুনে খাবার জন্য। কি নৃশংশ ব্যপার।



আমার জাহাজী জীবনের একটি ঈদ ছিল সারাজীবন স্মরণ রাখার মতো।







জাহাজটি তখন ছিল চায়নার গোয়াংজু ড্রাই ডকে। আমরা একশদিন এই ডকে ছিলাম। আমার লাইফে কোন জাহাজ নিয়ে পোর্টে থাকা এটাই সবথেকে লম্বা সময়। সেবার বাইরে ঘুরতে ঘুরতে ঐ এলাকাটাকে একেবারে নিজের এলাকা বলে মনে হত। ঈদের দিনটা উপভোগের জন্য আমাদের চেষ্টার কোন ক্রুটি ছিল না। আমরা বাইরে থেকে কেকের অর্ডার করি। আর সব থেকে মজার আয়োজনটা ছিল ব্যাক্তিগত প্রতিভা বিকাশের প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় নাচ, গান, কৌতুক, নাটক, কবিতা আবৃত্তি সব বিভাগই ছিল। প্রত্যেক বিভাগ থেকে তিনজন করে বিজয়ী নির্ধারনের জন্য গঠন করা হয় বিচারক মণ্ডলী। বিচারক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন জাহাজে উপস্থিত ভাবীগণ। জাহাজেরর সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন একজন ডি জে। যে কোন গানে তার ছন্দময় নাচে আমরা মগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর চীফ ইঞ্জিনিয়ারের ওয়াইফের গানের গলা মাশাল্লাহ রুনা লায়লা ফেল। প্রতিযোগিতা শেষে ভাবীদের হাত থেকে পুরষ্কার গ্রহনের মূহুর্তগুলোও ছিল আনন্দময়।





গান গাচ্ছেন জাহাজের ভাবী আই মিন চীফ ইঞ্জিনিয়ারের ওয়াইফ।





সারারাত বসে বসে র‍্যাপিং করা গিফটগুলো পাওয়ার জন্য জমে উঠেছিল আমাদের পার্টি। সবাই পদমর্যদার বাইরে বেরিয়ে এসে আনন্দে যোগদান করেছিলেন সেদিন। সব থেকে মজা হয়েছিল আমাদের চীফ অফিসার বেলায়েত স্যারকে নিয়ে। ঈদ পার্টির দুইদিন আগে তিনি ডিসিশন নিলেন প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে তিনি একি সঙ্গে গান গাইবেন এবং নাচবেন। বললাম স্যার, এই বয়সে...??



স্যার আমাকে ধমক দিতে দেরি করলেন না। আমাদের মতো জুনিয়ারদেরকে তিনি সরাসরি তুই তোকারি করতেন। বললেন, দেখিস প্রথম পুরস্কারটা আমিই পাবো। স্যার কোন গানে নাচবেন তাও ঠিক করে ফেললেন। তার সিলেক্টড গান “সাধের লাউ” শুনে টাস্কিত হলাম। তিনি জানালেন আজ থেকে রাত আটটার পরে মেস রুমে রিহার্সেল চলবে।



আমরা খুব উত্তেজিত হচ্ছিলাম স্যারের কান্ড দেখে। স্যারের এই ছেলে মানুষিটা আটকানোর কোন উপায় ছিল না। কিন্তু একজায়গায় স্যার আটকে গেলেন। সাধের লাউ গানটা স্যারের পুরোপুরি মুখস্থ নেই। কিন্তু তিনি দমলেন না। নোট বুক হাতে নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কতটুকু জানি। আমার কখনো গানবাজনায় আগ্রহ ছিল না। তবুও এই ইউনিক গানটি জানার জন্য গান বাজনা জানার দরকার হয় না। আমি গাইলাম, সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৌরাগি। লাউয়ের আগা ডগা......... আমিও ঠিক গানের কথা গুলো মনে করতে পারছিলাম না। স্যার রেগে গিয়ে যে কথাটি সবসময় বলেন তাই বললেন। -ধুর তোরা কিচ্ছু জানিস না।



তারপরে তিনি সবার কাছে ঘুরে ঘুরে যে যতটুকু জানে সেটা নোট করলেন। কিন্তু শেষে দেখা গেল আসলে কেউই গানটি সঠিক ভাবে জানে না। কিন্তু তিনি আগা ডগা, যাদু মধু দিয়ে মোটামুটিভাবে গানটির একটা রিমেক্স দাড় করিয়ে ফেললেন।



তারপর দুই দিন ধরে চললো রিয়ার্সেল। পুরো ব্যাপারটা ছিল আমাদের জন্য খুবই এন্টারটেইনিং। রিয়ার্সেলে আমরা যে মজা করলাম তা কোন পার্টিতেও করা হয় না। আর পার্টিতে স্যারের নাচ??? ওফ। ফ্যান্টাটিক!! এক চুমুক বিয়ার না খেয়েও যে কেউ এরকম মাতাল হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।







মূল পার্টিতে তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নোট করা গানের তৈয়াক্কা না করে মনের সুখে যা তা গাইতে লাগলেন।





বিচারকমন্ডলীর কাছ থেকে পুরষ্কার গ্রহণ করছি আমি।



পার্টির আর একটি মজার অংশ ছিল থার্ড ইঞ্জিনিয়ারের আঁকা ছবি। যে কারো পোট্রেট আঁকা তার জন্য পাঁচমিনিটের ব্যাপার। হাস্য রসে ভরিয়ে তোলা কার্টুনগুলো জাহাজের ঈদ পার্টিকে যে উপভোগ্য করে তুলেছিল তা নিচের ছবি দেখে সহজেই বুঝতে পারবেন।







তবে আমি জানি বেশীর ভাগ জাহাজীর জীবনে জাহাজে এইরকম আনন্দময় ঈদ করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। যেমনটি আমার রিসেন্ট জাহাজগুলিতে আমি আর ঈদের দিনে আলাদা কোন আনন্দ পাইনি। আমাকে গতানুগতিক ডিউটি করে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে যখন থার্ড অফিসার ছিলাম তখন আমার ডিউটি ছিল সকাল আটটা থেকে বারোটা আর রাত আটটা থেকে বারটা। এমনও হয়েছে চলন্ত জাহাজে আমি ব্রীজের ডিউটি রেখে নামাজে যেতে পারিনি। জাহাজে সিনিয়র অফিসারগুলোর মন মানসিকতা ভালো না থাকলে কোন পার্টি অর্গানাইজ করা সম্ভব হয় না। দেখা যায় ইদানিং কালের বেশীর ভাগ সিনিয়ররা খাড়ুস টাইপের হয়। তাদের মতে জাহাজে জাহাজীরা আসে কাজ করতে। এন্টারটেইনমেন্ট বলে কোন শব্দ তাদের জাহাজী পরিভাষায় থাকেনা। তখন জাহাজের ঈদের দিনটা হয়ে ওঠে জাহাজে কাটানো সাধারণ একটা সানডে’র মতো। আবার যদি মাল্টিন্যাশনাল ক্রু'র সাথে চাকরি হয় তবে তো আলাদাভাবে ঈদের উৎসব করার কোন প্রশ্নই আসে না। অনেক সময় দেখা যায় একটা জাহাজে শুধুমাত্র একজন বা দুইজন বাঙ্গালী মুসলমান থাকে। তখন তাদের জন্য জাহাজে রোজা রাখা বা ঈদের নামাজ পড়া অনেক ডিফিকাল্ট ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।



এবার আমি অনেক বছর পরে দেশে রোজার ঈদ করার সুযোগ পেলাম। সেদিন বাড়িতে মেসওয়াক করার সময় ছোটভাই জানতে চাইলো কতোবছর পরে বাড়িতে মেসওয়াক করে ইফতারি করছি? আমি ঠিক মনে করে বলতে পারি নি। বাড়িতে এসে ইফতারী, ভোর বেলার সেহেরী সবই আমার কাছে উৎসব উৎসব লাগছিল।



জাহাজ থেকে ঈদের সময় দেশে আসাটা আমার কাছে সবথেকে প্রিয় সময়। এই সময় দেশে আসলে একই সাথে অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে যায়। হয়ে যায় একটা পূর্নমিলনী। তবে আমি এবার চেষ্টা করেছিলাম একটা সত্যিকারের পূর্নমিলনীর আয়োজন করতে। কিন্তু এবার দেশে এসে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম। বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই এখন বিবাহিত না হয় নিজ নিজ জীবনে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত। আমি ছয়মাস

পর দেশে এসে তাদের প্রতি যতটা টান অনুভব করি তারা সেটা করেনা। এমনকি তারা দেশের মধ্যে থেকেও যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় একে অপরের খোঁজ পর্যন্ত রাখে না। আমি জাহাজ থেকে এসে একেবারে বেকার হয়ে যাই। অলসভাবে কাটানোর জন্য আমার হাতে থাকে পর্যাপ্ত সময়। এই সময়ের পুরোটা আমি আমার পরিবারের জন্য ব্যয় না করে মাঝে মাঝে পুরান বন্ধুদের পেছনে লাগি। তাদেরকে একত্রিত করার চেষ্টা করি। তবে যত দিন যাচ্ছে তত আমি ব্যর্থ হচ্ছি। এই ব্যর্থতা ইদানিং আমার ইগোকে জাগিয়ে তোলে। আমি এতদিন পরে দেশে এসে যে বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে এক জায়গায় করার ট্রাই করি অথচ তার রেসপন্স করে না ব্যপারটা বেশীদিন সহ্য করা যায়না।



যাইহোক এটা অফটপিক। অনটপিক হল এবার জাহাজ থেকে নেমে পরিবারের প্রিয় মানুষদের সাথে ঈদ করলাম। মনে হল আসলেই ঈদ করলাম। জাহাজের মতো ঈদ করার অভিনয় করলাম না।

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫১

ইলি বিডি বলেছেন: সুন্দর, ঈদ মুবারাক।।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৫৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ ঈদ মোবারক আপনাকেও।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫১

সুরাজ হাসান বলেছেন: ভাই যখন পড়ছি মনে হয় যেন অন্য জগতে আছি......সত্যি দারুন দারুন ভাবে উপভোগ করলাম আপনার জিবনের সত্যি কাহিনীকে.....এই ভাবেই দিতে থাকুন....অনেক ধন্যবাদ

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: হ্যা ঠিকই বলেছেন,'অন্য জগত'। আমরাও বলি জাহাজের জীবন সাধারণ সমাজ সভ্যতার বাইরের অন্য এক সভ্যতা।

ধন্যবাদ ভাই সুরাজ হাসান।

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১১

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে মনে হচ্ছে, আমরা যারা পরিবারের সাথে ঈদের সময় টুকু কাটানোর সুযোগ পাই তারা আসলেই ভাগ্যবান! ঈদ যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশী সামাজিক উত্সব আমাদের জন্য .... ঈদ মোবারক জাহাজী ভাই

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৯

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আসলেই আপনারা ভাগ্যবান। দেশে যারা আটটা পাচটা অফিস করে কিংবা বেসরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে নয়টা আটটা ডিউটি করে তারাও সারাদিনের কাজের শেষে পরিবারের সাথে মিলিত হয়। সব সংসারে অর্থের প্রাচুর্য না থাকলেও প্রিয়মানুষের সানিধ্যের সুখ থাকে।


আপনাকেও ঈদ মোবারক অভিভাই। ঈদটা কেমন কাটালেন?

৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:১৭

ডা: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আসসালামু য়ালাইকুম। গত বছর আমারও ডিউটি ছিল হাসপাতালে। তবে চান রাতে নাইট ডিউটি। সকালে চলে আসি। তাও যথেষ্ট বিরক্ত লেগেছিল। রোযার শেষ দশদিন ইতিকাফ করে বাসায় এসেই আবার চলে যেতে হলো হাসপাতালে। তারপরও আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আল্লাহ সহজ করেছেন। ঈদের দিন ডিউটি পড়েনি। হিন্দুরা হিন্দু হওয়ার জন্য তাদের প্রতি এই এক দিনই খুব একটা কষ্ট লাগে না।

দুয়া করি আল্লাহ রব্বুল য়ালামীন আপনার ঈদগুলো সুন্দর ও আনন্দময় করুন।


জহির।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ওয়ালাইকুম আস্‌সালাম। মন্তব্য ও শুভকামনায় ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন।

৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫০

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: মন্দ কাটেনি ....

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: :) :) :) =p~ =p~ =p~

৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৫১

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
শেষে এসে দেখি পুরোটাই অফটপিক! B:-/
আমার কাছে তো জাহাজী ঈদই বেশি মজার মনে হলো...

অনেক মজা পেলাম। ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা :)

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমার জাহাজী জীবনের সাত বছরে সাতটা ঈদের মধ্যে ঐ একটা ঈদই ছিল সব থেকে মজার। বাকি সবগুলো কেটেছিল খুব বিচ্ছিরি ভাবে। ঈদের আনন্দের মাঝে ভালো কিছু শেয়ার করার ইচ্ছা ছিল তাই খারাপগুলো সামনে আনলাম না।

আর অফটপিকটা কিছুটা ক্ষোভ থেকে লেখার মধ্যে এসে গিয়েছিল। শুধু পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে থাকা যায় কিন্তু পুরান বন্ধুদের সাথে সাবলীল আড্ডা দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে তাদের সাথে মিলিত হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। এইবার দেশে এসে এই কাজটা করতে পারলাম না। অমুক গেছে শশুরবাড়ী, অমুক গেছে বউ নিয়ে ঘুরতে ইত্যাদি ইত্যাদি। কারো কারো আবার নতুন সার্কেলের নতুন বন্ধু!!

যাইহোক কেমন আছেন মইনুল ভাই? আমার জাহাজের ঈদটা বেশী মজার বললেন। তবে কি আপনার ঈদটা খুব্বেশী ভালো কাটেনি। !:#P !:#P

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

লিখেছেন বলেছেন: বিচারকমন্ডলীর কাছ থেকে পুরষ্কার গ্রহণ করছি আমি।

ki jonno prize pelen bhai?

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: নেচেছিলাম। তবে তাতে পুরষ্কার পাইনি =p~ =p~ । শেষে স্বপ্রতিভার বিকাশ ঘটালাম কবিতা আবৃত্তি করে। B-))

৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৩

সুমন কর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী আপডেটে চোখ রাখুন।
সময় করে পড়ে নেবো।


আগের মন্তব্যটি ভুলে চলে গিয়েছিল। মুছে দেবার অনুরোধ রইল।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:০২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ঈদ আনন্দে অংশীদার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মুছে দিয়েছি। ভালো থাকবেন।

৯| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: সামুদ্রিক ঈদের ব্যতিক্রমী উদযাপন আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। শুভেচ্ছা।

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই। কেমন লাগলো বললেন নাতো :!>

ঈদ মোবারক।

১০| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

হাসান মাহবুব বলেছেন: বললাম না, আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। ভালো না লাগলে কি আগ্রহ নজায় থাকতো?

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: :D :D হু তা ঠিক। জাহাজী গল্প আপনার ভালো লাগে জানি। সুযোগ পেলে আপনাকে একবার জাহাজ ভ্রমণের দাওয়াত দিব। B:-)

১১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

মুদ্‌দাকির বলেছেন: ভালোই !!

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ মুদ্‌দাকির।

১২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮

সুরাজ হাসান বলেছেন: আচ্ছা ভাই আপনাদের জাহাজে কিসের ডিউটি দিতে হয়....আর জাহাজে আপনি কিসের চাকরি করেন.....

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৫

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আপনার কোশ্চেনের জবাব কি সিরিয়াসলি দিমু নাকি ফানলি দিমু? :( :(

১৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭

সুরাজ হাসান বলেছেন: ভাই সিরিয়াস লি দেন.....কারন আমি আপনার বিষয়ে কিছুই জানিনা......তাই জানার আগ্রহ মাত্র

০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:২৬

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: একটু কষ্ট করে নীচের পোষ্ট দুইটা পড়েন। কিছুটা হলেও ধারনা পাবেন।

ছবিব্লগঃ জাহাজী জীবন-১


ছবিব্লগঃ জাহাজী জীবন-২

১৪| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর পোস্ট + ঈদের শুভেচ্ছা ।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই। প্রবাসে আপনার ঈদ কেমন কাটলো?

১৫| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

মামুন রশিদ বলেছেন: পুরো অজানা একটা ব্যাপার জানলাম । পোস্ট ভালো লেগেছে ।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ভাই।

১৬| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৫০

সোহানী বলেছেন: খুব খারাপ কাটেনি... কি বলেন !!!!!

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: হুম....।

১৭| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

ডি মুন বলেছেন: বাহ, আপনার ঈদ করার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো লাগলো।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: হু। বেশ ভালো অভিজ্ঞতা। তবে ঐ এক বারই।

পাঠ ও মন্তব্যে ধন্যবাদ।

১৮| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ওরে নীল দরিয়া
আমায় দেরেদে ছাড়িয়া
বন্দী হইয়া মনয়া পাখী আমারা
কান্দে রইয়া রইয়া!!!

এই গানটাই মনে আসল আপনার লেখা পড়তে পড়তে...

হইয়া আমি দেশান্তরী
দেশে দেশে ভিড়াই তরীরে
নোঙ্গর ফেলি ঘাটে ঘাটে
বন্দরে বন্দরে
আমার মনের নোঙ্গর পইড়া রইছে হায়রে
সারেং বাড়ীর ঘরে......................

এক অসাধারন গান জাহাজীদের মনের আকুতি যেন... নয়কি?

আপনার আনন্দ ঘন ঈদের স্মৃতি নিয়ে হোক আগামীর পথচলা।

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ভালো লাগো লিরিকস টি পড়ে। গানটি আসলেই ভালো লাগে। আমাদের কথা বলা হয়েছে কিনা। :-B :-B

ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো।

১৯| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৭

তার ছিড়া আমি বলেছেন: আপনার জাহাজী পোষ্ট গুলো আমার খুবই ভাল লাগে। তবে আপনাদের জাহাজী জীবনের কষ্ট গুলোও আমাদের সাথে শেয়ার করলে হয়তো আপনার কষ্টের কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:২২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ রইলো জাহাজী জীবনের গল্প ভাল লেগে বলে।

হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন, জাহাজী জীবনের কষ্টগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করলে আমার কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। আমি আমার বিভিন্ন পোষ্টে মাঝে মাজেহ জাহাজী জীবনের কষ্টের কথা তুলে ধরেছি, তবে সেটা সামান্যই। আসলে কিছু কিছু কষ্ট শুধুমাত্র নিজের কাছেই রাখতে হয়।

আপনার মন্তব্যে অনেক ভালোলাগলো।

অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.