নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ডায়রি

ইব্রাহীম সাজ্জাদ

নিজের সম্পর্কে বলার মতো তেমন কিছুই নাই

ইব্রাহীম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরুল বানিজ্য এবং ফ্যাশন

২৬ শে মে, ২০১৮ সকাল ৯:১৩



ঢাকায় সরকারীভাবে বহু টাকা খরচ করে মহাসমারোহে একবার রবীন্দ্র- নজরুল জয়ন্তী অথবা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে, আমার ঠিক মনে নেই। শাহবাগ, যাদুঘর, পাবলিক লাইব্রেরি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমী রঙিন হয়ে গেছে। উৎসব এতটাই জ্বলজ্যান্ত, দেখে মনে হলো তাঁরা দুজন এই অায়োজনের পাশে উপস্থিত আছেন। বেশ ভালো লাগছিল।

আমার সাথে এক জুনিয়র সহকর্মি ছিলেন। তিনি আবেগে বলে ফেললেন,
' স্যার ভেবে দেখেন এই দুজন মানুষ না থাকলে কত মানুষের রিজিকে টান পড়তো। এই যে আয়োজন ! এর পিছনে কত মানুষের শ্রম যুক্ত এবং এই শ্রমের বিনিময়ে অনেক পারিশ্রমিকও তারা পেয়েছে। তারপর এইসব বাজেট বের করা, অনুষ্টানের আয়োজন এবং বক্তাদের পারিশ্রমিক, তাঁদের পড়াশুনা সেগুলোর ব্যয়-বিধান সবকিছুর জন্যই বিরাট যজ্ঞ ? ভাবুন তাঁরা দুজন এই টাকা পেলে কত খুশী হতেন। অথচ তাঁদের ভাঙিয়ে আজ দুবাংলায় বহু মানুষের রুজিরোজগার? '

তাঁর কথাগুলো আমাকে প্রায়ই ভাবাতো। সত্যিই এটা অনেক বড় ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধনী পরিবারে জন্মেছিলেন কিন্তু শেষ জীবনে শান্তিনিকেতন প্রতিষ্টা করতে গিয়ে অনেক অভাবে পড়েছিলেন। তারপরও জীবনকালে স্ত্রী, কন্যা ও পরিবারের অন্যান্যদের হারিয়ে যে মৃত্যুর মিছিলের বেদনা বুকে নিয়ে আশি বছর নিদারুণ কষ্টে তিনি কাটিয়েছেন তা সাধারণের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

নোবেল পুরষ্কার না পেলে বাঙালি কখনো তাঁকে দাম দিতো না। তাঁর জন্য বাংলাদেশে এই আয়োজন ভাবা যায় না। তিনি বেঁচে থেকে যদি বাংলাদেশে বাস করতে চাইতেন তাও দেয়া হতো কিনা সেটা নিঃসন্দেহ নয়। এমনও হতে পারতো তাঁকে দেশ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে।

নজরুলের ব্যাপারটা তো আরো সেনসেটিভ। তাঁর জন্ম মুসলমান ঘরে । স্ত্রী হিন্দু। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। গান লেখেন, গান গেয়েও বেড়ান। এছাড়া যে ধরণের লেখা তিনি লিখেছেন শুরুতেই তাঁকে অবশ্যই বিপদগ্রস্ত করা হতো এবং তাঁর নামে করা প্রতিষ্টানগুলোর কর্মকর্তারাই তাঁকে ফাঁদে ফেলে দেশ ছাড়া হতে বাধ্য করতো। নইলে মিছিলের ঠেলায় তাঁকে রক্ষা করা নিয়ে খুব সমস্যা দেখা দিতো । আজ তিনি নেই তাই তাঁকে নিয়ে রুজিরোজগার করে খাওয়াও অনেক সুবিধা। কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় তাঁরই নামে অথচ অনাহারে অর্ধাহারে,টাকার অভাবে নিজের এবং স্ত্রীর চিকিৎসা করতে না পেরে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়েছে। রোগশয্যায় দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে হয়েছে অন্যের আনুকূল্যে, দুই সন্তানকে ভালোভাবে লেখাপড়াও করাতে পারেননি।

অনেকে তাঁর নামে বেহিসেবি,বাউন্ডুলে, সংসার-বিরাগী ইত্যাদি বাজে অপবাদ দিয়েছেন লেখাপড়া না করেই। এসব কথার উপর আলোচনা এখানে করা সম্ভব নয়।

নজরুল বিশ এবং ত্রিশের দশকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা
সংগ্রামের উত্তাল সময়ের কবি। স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন প্রত্যক্ষ কলম-সৈনিক হিসেবে জেনেবুঝে তিনি যোগদান করেছিলেন। এজন্য ' আনন্দময়ীর আগমনে ' কবিতাটি লেখার কারণে একবছর জেলও খাটেন।

এছাড়া রামমোহন -বিদ্যাসাগরের পথ ধরে যে সমাজ-সংস্কার আন্দোলন বিকশিত হয় সেই ধারারও তিনি ছিলেন উত্তরসূরি।

কমরেড মুজফফর আহমদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কলকাতায় তাঁর সাহিত্য-জীবন শুরু। মুজফফর আহমদের সাথে অনেক কাজ করেছেন এবং তাঁর সাথে নজরুলের সম্পর্ক ভালো ছিল। ফলে চিন্তা-চেতনায় মুজফফর আহমদের সাথে অমিল ছিলনা বরং এটুকু বলা যায় কোন কোন ক্ষেত্রে মুজফফর আহমদের চেয়েও অগ্রসর ছিলেন।

নজরুল যাপিত জীবন ও মননে ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর জীবন-সংগ্রাম এবং লেখায় আমরা তা পাই। এই সহজ কথাগুলোর সন্ধান অসংখ্য নজরুল গবেষণায় এবং তাঁর উপর লেখা বইয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। নজরুলের জন্মভূমি চুরুলিয়ার ভূ-প্রকৃতির বর্ণনা, সেসময় সেখানে কয়ঘর হিন্দু-মুসলমান ছিলেন এসব বিস্তারিত বর্ণনাসমৃদ্ধ ঢাউস বইও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি লিখেছেন। কিন্তু নজরুলের যে জীবনবোধ তার ছিটেফোঁটাও ওসবে নেই। ফলে নজরুল কেমন ছিলেন তা তাঁর লেখায় ছাড়া বলতে গেলে আয়েসী কোন গবেষণায় নেই। নজরুলকে নিয়ে অনেকে ফ্যাশন হিসেবেও লেখেন। কেউ কেউ ফ্যাশন হিসেবে পছন্দও করেন যদিও তাঁদের জীবনাচরণে এবং চিন্তা-চেতনায় তার কোন প্রভাব নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.