নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়ি পথে, পাহাড়ি নদীতে

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪১



অবশেষে অনেক জল্পনা-কল্পনা-প্ল্যানিং এর পর আমরা একটি ট্যুর সফলভাবে সম্পন্ন করে আসলাম। ট্যুরটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য দিক-নির্দেশনায় ছিল আমাদের দীর্ঘদিনের সফল পিকনিক ম্যানেজার বর্তমানে যাবতীয় ট্যুরের জেনারেল ম্যানেজার পিয়াস ও তাকে সহযোগীতার জন্য সদা প্রস্তুত ছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার সিফাত। আর ট্যুরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল ট্যুর অর্গানাইজার সাইফ। সাথে ছিলাম আমরা বাকি ৪ জন- মাষ্টার রাতুল, হুজুর আসাদ, দার্শনিক তুহিন ও আমি মুচি নিশ্চিন্তচিত্তে। দুঃখজনকভাবে ট্যুর থেকে ব্যস্ততার কারণে বাদ পড়ে সাহিত্যিক তিয়েন ও গবেষক মাহি।

প্রত্যেকবার ট্যুর থেকে ফেরার সময় ঝামেলা লাগে। এবার ট্যুর শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঝামেলা লেগে ছিল। এই সপ্তাহে আমার সমস্যা তো, পরের সপ্তাহে আরেকজনের ঝামেলা। এমন করে পেছাতে পেছাতে গত ২৯ জানুয়ারি তারিখে রাতে রওনা দিলাম বান্দরবানের পাহাড়ে- আমরা সাতজন।

মাহির ভাষায় দুর্বল সার্ভিস, ইউনিক সার্ভিস বাসে। শীতের তীব্রতা ভেদ করে বাস বান্দরবান জেলায় প্রবেশের কিছুক্ষণ পর এক পুলিস ভাই বাসে উঠে সন্দেহজনক যাত্রী চেক করতে যেয়ে আমাদের রাতুলকে সন্দেহ করে ইন্ডিয়ান হিসাবে। পরবর্তিতে সন্দেহ থেক মুক্ত হওয়ায় ছেড়ে দেন সেই পুলিস ভাই।



ভোর ৫.৫৫ তে বাস ঠিক বান্দরবান বাস টার্মিনালে থামে, বাসের সর্বশেষ গন্তব্য। কিন্তু অতি মাত্রার শীতে আমরা ৭ জনই বাস থেকে নামব না বলে সিন্ধান্ত নিলেও সুপারভাইজার ভাইয়ের হুমকিতে হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যেও প্রকৃতিতে বের হতে বাধ্য হই। এরপর চান্দের গাড়ি বা জীপ খুঁজতে বের হয় আমাদের ম্যানেজার ও অর্গানাইজার। অবশেষে অনেক খোঁজাখুজির পর আমরা একটা ল্যান্ড ক্রুজার জীপে রওনা হই দেশের সর্ব পূর্বের উপজেলা থাঞ্চির উদ্দেশ্য আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে।

পথিমধ্যে আমরা তিনজন চিম্বুক দর্শন করে নেই হালকার ওপর ঝাপসা। নীলগিরি পরে দেখব বলে বাদ রাখি। লক্ষ্য যখন আকাশ ছোঁবার, তখন এইসব ছোটখাটো জিনিসে নজর না দেয়াই ভাল।



আর্মির কয়েকটি চেকপোস্ট পাড় হয়ে যখন আমরা থাঞ্চি সদরে তখন দুপুর। এরপর নেটওয়ার্কের বাইরে যাব, তাই আব্বুকে ফোন করে বলি যে, ফোন না দিতে পরদিন দুপুর পর্যন্ত। গাইড বিশ্বজিত বড়ূয়া ভাইকে ঠিক করে যখন দু'নৌকায় আমরা ৭ জন ভেসে চলি সাঙ্গুর অদ্ভুৎ সুন্দর জলে-নদীর দু'পাড়ের নিসর্গ উপভোগ করতে করতে।

কোথাও হাঁটুজল, কোথাও তারও কম, ইঞ্জিন নৌকা লগি দিয়ে ঠেলেঠুলে বিশাল পাথরের বোল্ডার এড়িয়ে রেমাক্রি গ্রামে পৌঁছুতে পৌঁছুতে বিকেল।



কটেজে উঠে আমাদের চক্ষু চড়ক গাছ ! একসাথে সাতজনই ক্রাশ খেয়ে গেলাম - লিলি ব্যোমের উপর। ওহ! কি সুন্দর পাহাড়ি কন্যা !

লিলি ব্যোমের হাতে জবাই করা মুরগি তুলে দিয়ে সান্ধ্য ভ্রমণে পাড়ায় ঘুরে বাজারে যেয়ে বাজার খুঁজে পেলাম। সন্ধ্যার পর নদীর পাড়ে আগুন পোহানোও হল। অতি দ্রুত রাতের খাবার খেয়ে অতি দ্রুতে শোবার আয়োজনও হল। কিন্তু ঘুম কি আর আসে সহজে- ৯.৩০ তে শুয়ে? একটু ঘুম হলে আবার ঘুম ভাঙে কনকনে ঠান্ডা বাতাসে। বাঁশের বেড়ার ফাক গলে সাঙ্গু নদীর কুয়াশা বয়ে আসে যেন। আমার মনে হল চোখটা একটু বন্ধ হল, আর শুনলাম আসাদের আর্তচিৎকার ! রাত ১১ টা- তার প্রাকৃতিক কার্য সম্পন্ন করা দরকার। কি আর করার- অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রায় ঋনাত্বক তাপমাত্রায় বের হলাম লেপের তলা হতে। কিন্তু ঘটনা এখানে শেষ হলেও হত। রাত ৩ টায় আমাদের ম্যানেজারের ডাক ! কিন্তু আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে সে ডাক উপেক্ষা করি। অগত্যা আসাদ, ভাই আমার ম্যানেজারের উদ্ধারে এগিয়ে আসে। এখানে বলে রাখা ভাল- আসাদ ডেকেছিল তুহিনকে, কিন্তু সে ঘুমের ভাণে তাকে সম্পূর্নরূপে উপক্ষা করে, যা আমরা জানতে পারি পরদিন ভোরে। ছেলে বদ।

ভোরের অনেক পূর্বেই পাহাড়ি মোরগের হুংকারে আমাদের সাতজনেরই ঘুম ভাঙে। কিন্তু এমন তীব্র শীত আমাদের নড়তে দেয় না। ভোরে ৫ টার পর নিচ থেকে গাইড বিশ্বজিত ভাই ডাকাডাকি শুরু করে দেন, নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে, ভোরে ভোরেই, হাতে সময় কম যে। তার ডাকে সিফাত লেপ থেকে বীরপুরুষের মত লেপ থেকে বের হয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হয়, এবং এর চেয়েও দিগুন বেগে ঘরে প্রবেশ করে আবার লেপের নিচে ঢুকে পরে। ওর এহেন কর্ম দেখে আমি হালকা করে দরজা ঠেলে বাইরে থাকাই এবং যে দৃশ্য দেখতে পাই, আমার জীবনে এমন ভীতিকর দৃশ্য দেখি নি। আমার দাঁত ও হাড়ে কাঁপাকাপি শুরু হয়ে যায় ভয়ে। ততক্ষণে আমরা সবাই প্রায় সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছি যে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে এই শীতের কুয়াশা ভেদ করে নাফাখুম যাওয়ার কোন মানেই হয় না। এর মধ্য আমাদের বন্ধু তুহিন হঠাৎ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু সে আর ফেরে না ! অবস্থা দেখে মনে হল টয়লেটে গেল। আমরা সবাই উদ্বিগ্ন- ছেলে বেঁচে আছে তো ! যে শীত, এতে পানির স্পর্শে না আবার হাইপোথার্মিয়া আক্রান্ত হয়ে গেল ! কিন্তু না, ছেলে সহি-সালামতে ফিরে আসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমরা বের হই ভোর পৌণে ছয়টার দিকে। বাসা থেকে নেমেই নদীতে নামতে হল ! এদিকে চারপাশ অন্ধকার। এত কুয়াশা আমার জীবনে দেখি নি। প্যান্ট গুটিয়ে পানিতে নামি ঠান্ডায় জমে। এভাবে হেঁটে হেঁটে সাঙ্গু নদী বেশ কয়েকবার পাড় হয়, পাহাড়ি পথে বেয়ে এগিয়ে চলি। পথিমধ্যে হেডম্যান পাড়ায় পাহাড়ি দোকানে নাস্তা সাড়ি- ডিম, পরোটা আর পাহাড়ী কলায়। এর আগে আগুন পেয়ে সবাই হাত পা সেঁকে নেই ভাল করে। এখানেই দেখা হয় আরাকান আর্মির ৬/৭ জন সদস্যের সাথে। একমনে ব্যাগ কাঁধে এগিয়ে চলেছে তারা।



আমরা খাবার বিরতির পর আবার হাঁটা দেই নাফাখুমের পথে। কিছুক্ষন নদীর পাড়ের পাহাড়ী পথে নদীর এক পাড় তো কিছুক্ষণ পর হেঁটে নদী পাড়ি দিয়ে অন্যপাড়ে হাঁটি। এভাবে প্রায় ৩ ঘন্টা হেঁটে আমাদের অভিযান সফল। পৌছে যাই গন্তব্যের নাফাখুমে। এখানে সেখানে ফটোগ্রাফার পিয়াস ও সিফাত আমাদের বেশ কিছু ছবি তুলে নেয়। এরপর নাফাখুমে কিছু সময় কাঁটিয়ে আবার রেমাক্রিতে আমাদের কটেজের উদ্দেশ্যে ফিরতে শুরু করি। সময় সংকটের কারণে আমিয়াখুম এবার যাই নি, কিন্তু পরবর্তিতে আবার ফিরে আসব কোন এক সময়, আমিয়াখুম জয় করব তখন।

রেমাক্রি ফলসে এসে দুপুর হয়ে আসে। আমরা গোসল সেরে নেই নদীর অস্বাভাবিক হিম জলে। জলকেলি শেষে কটেজে ফিরে যাই। এবার লিলির কাছ থেকে আমরা যখন বিদায় নিয়ে উঠে পড়ি আমাদের নৌকায়। পেছনে পড়ে থাকে লিলির স্মৃতি। থাঞ্চি ফিরে আসি দুপুরে গড়িয়ে যায়। গাইড বিশ্বজিতের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবার উঠে পড়ি আমাদের গতদিনের জীপে। ফেরার পথ, বান্দরবান শহর।

রাস্তায়া আমি আর রাতুল শেষবেলায় নীলগিরি স্পটে এসে আর্মির এক সহৃদয় ভাইয়ের কল্যাণে বিনে পয়সায় নীলগিরি ঘুরে আসি- এটাও হাল্কার ওপর ঝাপসা।



বান্দরবান শহরে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। পিয়াসকে হঠাৎ নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। আমরা ওর নস্টালজিয়ায় ঘুরে আসি ব্রীজ ও এর আশেপাশে।



বন্ধু মাহির অযাচিত পরামর্শে ফিরছি শ্যামলি পরিবহনের বাসে। রাতে ৯ টায় বাস। বাস ছাড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে। মনে থাকে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা ও মিষ্টি মেয়ে লিলি।



শীতের রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আম্মুর পানিতে না নামার ও পাহাড়ে যেয়ে পাহারে না ওঠার বারণ শুনে আমি বাসা থেকে বের হই। যার সবগুলোই আমি অক্ষরে অক্ষরে লঙ্ঘন করে এসেছি।

নেটওয়ার্কের বাইরে ছিলাম ২৪ ঘন্টার ওপর। আব্বুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আব্বু কি কারণে ঠিকমত বুঝতে পারে নি। আম্মু জিজ্ঞেস করলে আব্বু বলে যে কোথায় যেন গিয়েছি। আম্মু ফোন দিয়ে আর পায় না। পুরো ১ টা দিন আম্মুর ভীষণ টেনশনে কেটেছে। ভাবতে কষ্ট লাগে।



মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বিশাল বড় লেখা, সাথে আরো কিছু ছবিও দিতে পারতেন।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫

মুচি বলেছেন: খুব বেশি ছবি যায় না-কো দেয়া। :(

আসলে অতীব বড় হয়ে গিয়েছে লেখা। :(

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভ্রমণ বড়ই সূখকর বিষয় :)

+++

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

মুচি বলেছেন: তা তো বটে, তা তো বটে। :)

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: মুচি ,




ভ্রমনের মতোই আনন্দদায়ক করে লিখেছেন ।
ছবিগুলোও সুন্দর ।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৪

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট।
প্রতি বছর দুই তিনবার এরকম যাওয়া উচিত।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন রাজীব ভাই। ২০১৭ তে অতি ব্যস্ততার কারণে ঢাকার বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠে নি, কিন্তু এ বছর ইনশাআল্লাহ ঘুরব খুব।

৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:১৭

করুণাধারা বলেছেন: ছবিগুলো খুব সুন্দর। ছবি দেখেই পোস্ট পড়ার ইচ্ছা জাগল।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:১৭

মুচি বলেছেন: জেনে ভালো লাগল। :)

৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪২

কালীদাস বলেছেন: সুখপাঠ্য ট্রাভেলগ :) ধন্যবাদ :)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৫২

মুচি বলেছেন: কষ্টপূর্বক পাঠ করবার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। :)

৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: সাবলীল লেখার সাথে ছবি গুলো অনেক সুন্দর ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

মুচি বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভ্রাতা। :)

৮| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৪

জাইদী রেজা বলেছেন: ছবিগুলো খুব সুন্দর। ছবি দেখেই পোস্ট পড়ার ইচ্ছা জাগল।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২৮

মুচি বলেছেন: পোস্টের লেখাটাও যদি ছবিগুলোর মতই সুন্দর হত !! কত্ত ভালো হত।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

৯| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:২১

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার ভ্রমণ পোস্ট।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৫

মুচি বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

১০| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: মহামান্য মুচি,
বিল্কুল চমৎকার হইছে।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

মুচি বলেছেন: হা হা হা ... কৃতজ্ঞতা সৈয়দ সাহেব। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.