নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষ্যাত ছেলেটিও একটি ফোনকল পেয়েছিল !

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯



হ্যাংলা-পাতলা ছেলেটি মস্ত একটা ক্ষ্যাত ছিল। যেনতেন ক্ষ্যাত নয়, একেবারে উর্বর জৈবসার সমৃদ্ধ। না ছিল সে দেখতে স্মার্ট, না ছিল তার কোন বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধি- সকল দিক থেকেই অতি উত্তম প্রজাতির ক্ষ্যাত। কখন কোন পরিস্থিতিতে কি বলতে হবে, তা তার ক্ষ্যাত মস্তিষ্কে কস্মিনকালেও আসে না। ঠিকমতো গুঁছিয়ে কথা বলাটি সে তার জন্মেও শিখতে পারে নি। তবে কোন ঘটনা ঘটে যাবার পর, কিংব উল্টোপাল্টা কিছু বলে বা করে ফেলার পর হয়তো সে বুঝতে পারে যে কি বোকামীটাই না সে করে ফেলেছে। তখন রাগে-দুঃখে সে তার মাথার গুটিকয় চুল ছিড়তে থাকে। ভাবে- "ইশ, তখন কথাটি এভাবে না বলে ওভাবে বলতাম!" বা "কাজটি যদি ঠিকমতো করতে পারতাম!" এই বিবেচনায় তাকে একেবারে এঁদো ক্ষ্যাত হিসেবে আখ্যায়িত করা সুবিচারপ্রসূত হবে না। সে ক্ষ্যাত, তার মধ্যে রবি শস্যের আবাদ হয়তো করা যাবে না, কিন্তু উন্নত জাতের ফডার ঘাস দিয়ে তানিশ্চিতভাবেই ভরিয়ে তোলা যাবে। ছেলেটিও দীর্ঘ জীবন যাপন করতে করতে একসময় উপলব্ধি করতে পারে যে, সে একটা বিশাল মাত্রায় ক্ষ্যাত। এই অবস্থা থেকে মুক্তি না পাওয়ায় ছেলেটি ভেতরে ভেতরে আরও গুঁটিয়ে যায়। আজকাল অনেক কথাই আর প্রকাশ করে না সে, পাছে আরো বড় কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে!

কেউই এমন জীবন চালিয়ে নিতে চায় না। মাঝে মাঝে এই ছেলেটিরও স্মার্ট হয়ে তার দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে চায়। সে-ও চায় একটু স্মার্ট হয়ে লোকজনের কাছে নিজেকে শো-অফ করবে। কিন্তু অতিমাত্রায় ক্ষ্যাত হলে যা হয় আরকি- সবকিছু ভজকট পাকিয়ে কিছু না কিছু গুবলেট করে ফেলে সে। সে তার আউটলুকের পরিবর্তন আনতে চায়, চায় স্মার্ট ছেলেদের মত করে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে। নতুন হেয়ার কাট, ট্রেন্ডি পোষাক-আশাক, ইত্যকার ফ্যাশন এক্সেসরিজ নাই যে ছেলেটি ট্রাই করে দেখে নি। কিন্তু ভাগ্যের শিকে আর ছিঁড়ে না। দু'চারদিন পর সে তার পুরনো চেহারাতেই ফিরে যায়। হাল আমলের ক্রেজ আর তার বয়ে বেড়ানো হয় না। লোকজন তাকে আরও পচায়, সে-ও পচে। পচতে পচতে সে আরও উর্বর হয়। যে হারে সে পচতে থাকে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে তার মধ্যে ইরি ধানের বাম্পার ফলন সম্ভব বলে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। এভাবে দিনকে দিন তার ক্ষ্যাত অবস্থার উন্নতি বৈ অবনতির কোন লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে সে-ও এটাকে নিয়তির অংশ হিসেবে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।

মাঝে মাঝেই তার মানবজাতির সহজাত আকাঙ্খা-অনুকরণপ্রিয়তা জেগে ওঠে। আশেপাশের লোকজনের স্মার্ট লাইফস্টাইল দেখে সে-ও তাদের মত করে জীবন সাজাতে চায়। আজকাল সে স্মার্টনেসের নতুন একটা দিক খুঁজে পায়। অধিকাংশ স্মার্ট ছেলে এক বা একাধিক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। নিজের লিমিট সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল না হলেও সে এটা বুঝতে পারে যে, কোন একটি মেয়েকে পটাতে পারলেই তার ক্ষ্যাত জীবন স্বার্থক হবে। কিন্তু ক্ষ্যাত ছেলের ক্ষ্যাত ভাগ্যে তেমন কিছুই জোটে না।

তার এই জীবনে কয়েকজন দয়াশীল লোকজন তাকে বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াটাও তার একটা বিশাল এক অর্জন বলে সে স্বীকার করে। এই বন্ধুমহলও চেষ্টা করে তাদের এই বন্ধুটির জীবনে কোন নারীর সংস্পর্শ এসে তার ক্ষ্যাতজীবনের খানিকটা উন্নতি ঘটুক। কিন্তু তাদের অনেক চেষ্টাগুলোও সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হতে থাকে। কোন সুস্থমস্তিষ্কের নারীই এমন ক্ষ্যাতের সাথে তাদের জীবন জড়াবে না। ফলে ছেলেটির সিঙ্গেল থেকে কাপল তকমা লাগিয়ে উদ্ভট উপায়ে স্মার্ট হওয়াও আর হয় না। বন্ধুদের পক্ষে আর অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয় না। ব্যর্থ হৃদয়ে ছেলেটি তার দীর্ঘ ক্লান্তিকর জীবন টানতে থাকে আর হা-হুতাশ করতে থাকে

এদিকে ছেলেটি ফেসবুক নামক উর্বর স্থানে তার ক্ষ্যাতমার্কা সময়গুলোর নিয়মিত সদ্ব্যবহার করে থাকে। তার ফেসবুকের বন্ধুলিস্টে সে নানা প্রকার বন্ধু খুঁজে পায়। এদের কেউ আল্ট্রা স্মার্ট, দু'-চারজন ওভার স্মার্ট, কয়েকজন শুধুই স্মার্ট। এইসব স্মার্ট বন্ধুরা তাদের পার্টনারদের নিয়ে কাপল সেল্ফি, চেক ইন, ডাইন ইনসহ স্মার্টসব স্ট্যাটাস ফেসবুকে আপলোড দেয়। নিউজফিডে চোখ বুলায় আর এদের জীবন দেখে ছেলেটির হতাশা বাড়তে থাকে। তবে কয়েকজন ক্ষ্যাত বন্ধুও তার চোখে পড়ে। তাদেরকে দেখে সে কিছুটা স্বান্তনা খুঁজে পায়। প্রতিরাতে সে ফেসবুকে লগইন করে আর বন্ধুদের কার্যকলাপ দেখে। তবে ফেসবুকে তার সবচেয়ে ভালো সময় কাটে বিভিন্ন ফানপেইজের মজাদার ট্রল, মিম, ভিডিও দেখে। এসব দেখে সে প্রাণখুলে হাসে, কখনো কখনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। কিছু সময়ের জন্য হলেও সে তার বিরক্তিকর জীবনের যন্ত্রণা ভুলে থাকে।

এমন করে হতাশা-ব্যর্থতার জীবনটাকে ছেলেটি প্রায় মেনে নিয়েছ। সে বুঝতে পারে যে তার আর এ জন্মে প্রেম করা হবে ন, আর স্মার্টনেসের ধারের কাছেও ঘেষা হবে না। নিত্যকার মতো সেরাতেও ছেলেটি তার ফেসবুক খুল বসে ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাজুয়াল আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তার ফোনটি বেজে উঠল। ছেলেটি ঘড়ি দেখল, রাত প্রায় ১ টা। এত রাতে কে ফোন দিল ! সাধারণত ছেলেটির ফোনে খুব একটা কল আসে না। মাঝে মাঝে বাড়ির বাইরে আড্ডা দিতে দিতে দেরি করে ফেললে বাসা থেকে ফোন যায়। আর কিছু বন্ধু-বান্ধব অতি প্রয়োজনে কিছু কল দেয়। তাই বলে এত রাতে কেউ কল দেয় না। টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকালো সে, অচেনা নাম্বার! কে আবার এত রাতে কল দিল ! ছেলেটি কলটি রিসিভ করে বলল:
-হ্যালো।
-হ্যালো। আপনি ক্ষ্যাত ছেলেটি বলছেন?
ইতস্তত ছেলেটি উত্তর নেয়:
-হ্যা, আমি ক্ষ্যাত ছেলেটি বলছি।

অচেনা কণ্ঠস্বর-নারীর কণ্ঠ। চিনতে না পেরে সে তার পরিচয় জানতে চাইল। কিন্তু টেলিফোনের অপরপাশের মেয়েটি তার পরিচয় না দিয়ে উল্টো বলে:
-আচ্ছা আপনি এত ভাব ধরেন কেন? আর শোনেন এখন থেকে ভাব কম ধরবেন।
-মানে? আমি আবার ভাব ধরলাম কবে !
-আপনি ভাব ধরেন বলেই বললাম। এখন থেকে ভাব কম ধরবেন। আপনারই লাভ হবে।
প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে বোকাভাবে ছেলেটি শুধু বলে:
-আচ্ছা।

এ পর্যন্ত ছেলেটি মোটামুটি ঠিক ছিল। কিন্ত পরের কথা শুনে তার মাথা পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। মেয়েটি হঠাৎ বলতে শুরু করলো:
-মাঝে মাঝে এই নাম্বারে কল দিবেন।
-দিলাম, কিন্তু কেন?
-দিতে বলেছি, দিবেন। না দিলে পরে পস্তাবেন।

ছেলেটি তো আকাশ থেকে পড়লো! কি বলে এই মেয়ে ! এটা কি করে সম্ভব! ছেলেটি ভাবে। ক্ষ্যাত হলেও তার মাথায় এই বুদ্ধিটুকু আছে যে কোন মেয়ে তাকে অন্তত কল দিয়ে এভাবে বলবে না। ক্ষ্যাত ছেলেট পুরোপুরি বিস্ময়ে বিমূঢ়। কিছুটা সময় পর ঘোর কাটিয়ে ছেলেটি জিজ্ঞেস করে:
-মানে!
-মানে কিচ্ছু না। মাঝে মাঝে কল দিবেন।
-আচ্ছা, তা না হয় দিলাম। কিন্তু আপনি কে বলছেন?
-আরে ধীরে ধীরে। যেদিন আমার মুড ভালো থাকবে, সেদিন বলব-আমি কে।
-আপনাকে কি আমি চিনি?
-নাহ এখন বলব না।
-এখন কি মুড ভালো নেই? এখন বলেন।
-না, এখন মুড ভালো নেই আমার। এখন তো বলতে ইচ্ছে করছে না।
-ওহ, তাই?
-হুম, তাই।

এরপর মেয়েটি আবার বলে চলে:
-আর হ্যা, আপনার গেটআপটায় একটু চেঞ্জ আনেন। বুঝছেন?
-মানে !
-মানে, নতুন হেয়ার কাট নেন। ট্রেন্ডি পোষাক-আশাক পরেন। ট্রাই সামথিং নিউ। এত ক্ষ্যাত থাকলে হয় নাকি !
-ওকে। কিন্তু......

ছেলেটি বুঝতে পারল না, আর কি বলবে। সে প্রশ্ন করে:
-আচ্ছা, আপনি কি আমাকে চেনেন?
-চিনতে পারি।
-আমি কি আপনাকে চিনি?
-চিনতে পারেন।
-তাহলে বলছেন না কেন, আপনি কে?
-ঐ যে বললাম আজকে মুড নাই।
-ওহ, তাই?
-হ্যা। আচ্ছা ভালো থাকবেন।
-হুম।
-আর হ্যা মাঝে মাঝে এই নাম্বারে কল দিবেন। শুভরাত্রি।
-শুভরাত্রি।

এরপর অপরপাশ থেকে লাইনটি কেটে গেল। ছেলেটি কিছু সময়ের জন্য অবাক হয়ে পুরোই তব্দা মেরে থাকলো। সে বুঝতে পারছে না, এইমাত্র তার সাথে কি ঘটে গেল। অবশেষে কি তার ক্ষ্যাত জীবনের মধুর পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে, নাকি সে কোন প্র্যাঙ্কের শিকার হলো! কেউ নিশ্চয়ই মজা নিচ্ছে-সে ভাবছে। আবার ভাবে হতেও তো পারে, কেউ তার এই ক্ষ্যাত হওয়াটাই পছন্দ করে। এমন সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সে মনে মনে ঠিক করলো- নাহ, স্মার্ট তাকে হতেই হবে। যদি সত্যিই কেউ এসে থাকে তবে তো তার পক্ষে আর ক্ষ্যাত থাকা সম্ভব না। একটু স্মার্ট না হলে কি আর চলে !

সেরাতে ছেলেটি তার ক্ষ্যাত অবস্থার আশু উন্নতির স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমাতে গেল। ছেলটির সেরাতের ঘুমটি অস্বস্তিকর সুন্দর হলো।

================================================

পাদটীকাঃ
--------------
এরপর ছেলেটির ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা আর জানা যায় নি। ছেলেটি কি পরে মেয়েটিকে কল দিতে পেরেছিল, কিংবা রহস্যময় মেয়েটির সাথে ছেলেটির এরপর আর কখনও কথা হয়েছিল কিনা সেটাও আর জানা যায় নি। তবে কোন ক্ষ্যাতমার্কা ছেলের সাথে হঠাৎ একটি ফোনকলের বেশি কিছু হওয়াটা সাধারণ পৃথিবীতে অসম্ভব বলেই অনুমেয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে মনে হলো আপনি আমাকে নিয়েই লিখেছেন।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:২৫

মুচি বলেছেন: হতে পারে। আমাদের দেশে জমির সংকট থাকতে পারে, কিন্তু ক্ষ্যাত ছেলের সংকট নেই। :)

বাই দ্যা রাস্তা, ভাই.... পরেরদিনের ফোনালাপটা কি ছিল? :P

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪০

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ভাল লাগলো ক্ষ্যাত ছেলের গল্প।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল।

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৪

ওয়াজেদ বিপ্লব বলেছেন: আপনার লেখার এক জায়গায় পেলাম যে, "ক্ষ্যাত হলেও মাঝে মাঝে তার মানবসত্ত্বা জেগে উঠে। আশে-পাশের লোকজনের লাইফ-স্টাইল দেখে সেও তাদের মতন স্মার্ট হতে চায়।" মানবসত্ত্বা বলতে কি আপনি ছেলেটির আশে-পাশের লোকজনের লাইফ-স্টাইল যেটা খুবই স্মার্ট- সেটাকে বুঝিয়েছেন??

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

মুচি বলেছেন: মানুষমাত্রই অনুকরণপ্রিয়। আমি হয়তো সেদিকটাই বোঝাতে চেয়েছি। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.