নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর উৎসবে আঁধারে আবদ্ধ ...!!!

মুচি

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে- অবাক বিস্ময়ে ....

মুচি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ "দেনা"

০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১২



বেশ বড়সর অফিস রুম। পুরোটা কাঁচে ঘেরা। ভিতরে ২ টনের এসি চলছে। এসির তাপমাত্রা একেবার কমে দেয়া। জাফর সাহেব তার ডেস্কে বসে আছেন। ভীষণ ঠান্ডা কক্ষে বসে তবু জাফর সাহেব বেশ ঘামছেন। কিন্তু জাফর সাহেবের অফিস এসি, বাসা এসি, গাড়ি এসি। গরমের টিকিটি পর্যন্ত তাকে ছুঁতে পারে না। কিন্তু ইদানিং কিছুতেই তার গরম কমছে না- কি অফিস, কি বাসা- কোথাও না। তবুও জাফর সাহেবের শরীরের গরম কমছে না। শরীর গরম হওয়ার পেছনে মূল কারণ অবশ্য তার মাথা গরম খুব। আর মাথা গরম হওয়ার মূল কারণ তার কোম্পানির বর্তমান অবস্থা। গার্মেন্টস কোম্পানি জাফর সাহেবের।

শতভাগ রপ্তানিমুখী। কিন্তু সেই রপ্তানিই এখন নেই। রপ্তানি নেই তাই প্রোডাকশনও নেই। প্রোডাকশন বন্ধ, প্রোডাকশন খরচটা শুধু নেই। এদিকে প্রায় হাজার খানেক শ্রমিক বসে আছে, সেই সাথে বসে আছে তার কোটি টাকার সব যন্ত্রপাতি। আবার এত বড় অফিসস্পেসের মাস গেলে লাখের উপর ভাড়া তো আছেই। আরও আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিল। মেইনটেন্যান্স বাবদই মাসে আরও লাখখানেক টাকা। কিন্তু কোম্পানির আয় গত চার মাস ধরে শূ্ণ্যে। কিন্তু ব্যয়ের খাতা কমছে না।

ব্যাংক থেকে আনা লোনের বোঝা মাথায়। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধ-বান্ধবের কাছ থেকেও প্রায় অর্ধকোটি টাকা এনেছেন। নিজের টাকার সাথে ধারের টাকা মিলিয়ে দিয়েছিলেন এই কোম্পানি। প্রথম ছ'মাস ভালই চলছিল। কয়েকটি শিপমেন্ট ঠিকভাবে গিয়েছেও। কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমে এসে একটা বড়সর ধাক্কা! ব্যাংকের ঝামেলায় শিপমেন্ট কয়েকটা আটকে গেল। ফলে পাওনা টাকাটা আর আসছে না। কিন্তু লোকের পাওনা টাকাটা দিতে হয়। দু'দিক আর সামলে ওঠা যাচ্ছে না। রাজ্যের চিন্তায় জাফর সাহেবের নাওয়া-খাওয়া বাদ হওয়ার যোগার।

সবচেয়ে বড় সমস্যাটা দাঁড়িয়েছে শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন নিয়ে। বসে থাকলেও নিয়মিত সবাইকে বেতন দিতে হয়। আয় না থাকায় জমানো টাকা থেকে দু'মাস বেতন দিয়েছেন। কিন্তু গত দুই মাসে কিছুই দিতে পারেন নি। এত শ্রমিক একসাথে ছাঁটাইও করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন সবাই অফিসে এসে বসে বসে ঝিমায়। কাজ নেই তো কি আর করবে? গত সপ্তাহ থেকে সবাই ফ্যাক্টরিতে এসে নাম সই করে আবার চলে যাচ্ছে। এদের বসিয়ে রাখলেও আলো-হাওয়ায় বিদ্যুৎ বিল বাড়ে। ব্যপক সমস্যা। এসব নানামুখী সমস্যার সমাধানে কোন কূল-কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্রেতা না থাকলে তো আর উৎপাদন করা যায় না।

শহীদুল লাইন সুপারভাইজার। বেশি বেতন পেয়ে অন্য একটা গার্মেন্টস ছেড়ে জাফর সাহেবের গার্মেন্টসে জয়েন করেছিল। আগে তার স্ত্রী জেসমিন একটা গার্মেন্টসে অপারেটর ছিল। দু'জনের আয়ে সংসার ভালই চলছিল। কিন্তু সন্তান-সম্ভবা হবার পর জেসমিন চাকুরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বাচ্চাটা মাত্র ৮ মাসের। শহরে আত্মীয়-পরিজন কেউ না থাকায় এ বাচ্চা রেখে কাজেও ফিরে যেতে পারে না। ঠিক এমন সময়েই কিনা শহীদুলের বেতন হচ্ছে না। তার উপর যোগ বাচ্চার খরচ। সবমিলিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা।

প্রতিদিন শহীদুল অফিসে যায়। আধাবেলা পর বাড়ি ফিরে আসে। বাচ্চাটা হবার সময় হাসপাতালে অনেকগুলো টাকা দিতে হলো। যা জমানো টাকা ছিল সব ঐখানেই শেষ। বেতন না থাকলেও পেট তো চালাতে হবে। দোকানে গত দু'মাসে অনেকগুলো টাকা বাকি পড়ে গেলো। দোকানদার বাকির টাকার জন্য জোড়াজুড়ি শুরু করে দিয়েছে। এই অবস্থায় আর বাকি চাইতেও পারছে না। সদাই আনার সময় শুধু বলে, এই যে বেতনটা দিয়ে দিলেই সব টাকা শোধ করে দিব। কিন্তু বেতনই তো হচ্ছে না। আর চলছে না এভাবে। আর কিছুদিন এভাবে চললে না খেয়ে থাকতে হবে। আবার ঘড় ভাড়াও বাকি পড়ে আছে। বাড়িওয়ালা শাসাচ্ছে। মাথার উপরে ছায়াও থাকবে না পরে। কোনরকমে সবদিক ঠেকিয়ে রেখেছ শহীদুল।

শহীদুলের মত অন্য সবারই একই অবস্থা। দিনের পর দিন বেতন না পেয়ে সবারই অবস্থা করুন। অন্য কোন ফ্যাক্টরিতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে অনেকে। কিন্তু চাইলেই তো আর হয় না। সবার মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ফ্যাক্টরিতে গণ্ডগোলও হয়েছে। বেতন-বোনাস নিয়ে। মালিক জাফর সাহেব কোনমতে ঠান্ডা করেছেন, নানা আশ্বাসে। সবাই অপেক্ষায় আছে। সবারই দেনা বাড়ছে। আর কিছুদিন চললে না খেয়ে থাকতে হবে। আর চলছে না।

জাফর সাহেব ফ্যাক্টরিতে এসেছেন শুনে শহীদুলসহ আট-দশজন শ্রমিক গেলো দেখা করতে। জাফর সাহেব ওদেরকে অনেক্ষন বাইরে দাড় করিয়ে রাখলেন। বাইরে থেকে মনে হলো তিনি কাজ করছেন। আসলে তিনি ডেস্কে বসে ঝিমুচ্ছেন আর ঘামছেন। এসির চরম ঠান্ডায়ও তিনি ঘামছেন। প্রায় মিনিট চল্লিশ পরও ওরা রুমের সামনে থেকে না সরায়, তিনি ওদের রুমে ডাকলেন। শহীদুল খানিকটা বদরাগী। কথা ঠিকমতো গুঁছিয়ে বলতে পারে না। তার উপর আধবেলা-আধপেট খেয়ে মাথাটা আরো গরম। বেতন নিয়ে বসের সাথে ওরা বচসা শুরু করে দিলো। জাফর সাহেব প্রথমে কিছুক্ষণ শুনলেন। ওদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন। ওনার কোটি কোটি টাকা কিভাবে ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু অর্ধাহারে থাকা লোকগুলির তো সেকথা শুনলে চলে না। ওদের পাঁচ-দশ হাজার টাকাই জাফর সাহেবের কোটি কোটি টাকার চেয়ে বেশি।

ছাত্রজীবনে তুখোড় রাজনীতি করে আসা জাফর সাহেব হঠাৎই আর মেজাজ ধরে রাখতে পারলেন না আর। ডেস্কের পাশে থাকা একটা লাঠি বের করে বেঁধড়ক পেটাতে থাকলেন সবাইকে একসাথে। প্রতিপক্ষকে যেমন পেটাতেন, ঠিক তেমন করে। পেটোয়া হিসেবে সে সময় বন্ধুমহলে তার ভালো নাম ছিল। মালিকের এমন আচরণে সবাই আতঙ্কিত ও হতচকিত হয়ে পড়ল। ভেতরে হৈচৈ শুনে কিছু ক্লার্ক রুমে চলে এসে জাফর সাহেবকে নিরস্ত্র করে। আক্রান্ত লোকজনসহ শহীদুল বের হয়ে আসল।

বাইরে অপেক্ষায় ছিল বেশ শ'খানেক শ্রমিক। আহত শহীদুলদের দেখে হঠাৎ করে আবার অসন্তোষে যেন দাবানল লাগল। খবর পেয়ে বাকি শ্রমিকরাও চলে এল কারখানার গেটে। অসন্তোষ থেকে এবার আন্দোলন শুরু হলো। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার অবস্থা। জাফর সাহেব এবার কিছুটা শংকিত হয়ে পড়লেন। থানায় ফোন দিলেন।

বাইরে আহত শহীদুল ভাবছে, এ কেমন বিচার? টাকাও দিবে না, উল্টো মার দিলো। শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় কেঁটে গিয়ে খুব ব্যথা করছে ওর। কিন্তু ওর চিন্তায় রাতে খাবে কি? জেসমিন অপেক্ষায় আছে। ঘরের চাল শেষ, বের হবার সময় বলে দিয়েছে। ইদানিং লবণ-মরিচ দিয়েই খাওয়া চলছে ওদের। কিন্তু সেটুকুও জোগাড়ের সামর্থ্য নেই যে ওর।

পুলিশ আসছে। পুলিশ এসে নিশ্চয়ই তাকে রক্ষা করেবন জাফর সাহেব মনে মনে ভাবলেন। যতক্ষণ পুলিশ না আসে, ততক্ষণ তার নিরপত্তার জন্য তার রুমের আশেপাশে কিছু লোক জড়ো হয়েছে। এমন সময় বাসা থেকে জাফর সাহেবের স্ত্রী ফোন দিলেন। জাফর সাহেব স্ত্রীকে বললেন না যে তিনি অবরূদ্ধ হয়ে আছেন। নইলে আবার চিন্তা করবেন। পুলিশ তো আসছেই, চিন্তা কিসের। স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, রাতে কি খাবে। জাফর সাহেবের মনে পড়ল তার ছেলের জন্মদিন আজ। ফোনে বললেন, আচ্ছা সন্ধ্যায় রেডি থেকো। আজকে বাসায় না খেয়ে ডিনারটা না হয় বাইরে কোথাও করি। ছেলেটার জন্মদিন বলে কথা।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

শামচুল হক বলেছেন: ভালো লাগল।

০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। মে দিবসের শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।

২| ০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একদিন তোর হইবোরে মরণ রে হাসন রাজা
একদিন তোর হইবোরে মরণ!!

বাস্তবতার নিরিখে লেখা গল্প
ভালো লাগলো

০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। মে দিবসের শুভেচ্ছা। ভালো থাকবেন।

৩| ০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭

মাহের ইসলাম বলেছেন:
চালিয়ে যান।

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৩১

মুচি বলেছেন: চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। দোয়া রাখবেন। মে দিবসের শুভেচ্ছা।

৪| ০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩

সৈয়দ তাজুল বলেছেন: মে দিবসের শুভেচ্ছা

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৩১

মুচি বলেছেন: শ্রমিকের অধিকার আদায় হোক। মে দিবসের শুভেচ্ছা।

৫| ০১ লা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ঢাবিয়ান বলেছেন: মালিক শ্রমিক কেউই আসলে ভাল অবস্থায় নেই।

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৩২

মুচি বলেছেন: সেটাই। সবাই নিজস্ব সমস্যার জর্জরিত। তারপরও শ্রমিক খেতে পায় না। মালিকের খাবার অভাব হয় না।

ধন্যবাদ। মে দিবসের শুভেচ্ছা।

৬| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা এবং শেষটা ভালো লাগল। +।

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৯:৩০

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। মন্তব্যে ভালোলাগা জানাবার জন্য কৃতজ্ঞতা।

মে দিবসের শুভেচ্ছা রইল।

৭| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৭

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: এভাবেই গল্পের মত প্রতিনিয়ত ঘটে যায় কত ঘটনা।

ভালো লাগলো।

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ৯:৩১

মুচি বলেছেন: এটাই জীবন। ধন্যবাদ।

মে দিবসের শুভেচ্ছা জানবেন।

৮| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তবধর্মী লেখা।

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১১:০৮

মুচি বলেছেন: মে দিবসের শুভেচ্ছা রাজীব ভাই।

৯| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১১:২০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাস্তব চিত্র। শ্রমিকদের সাথে এমন চুক্তি কি করা যায় না যে, কোম্পানী অর্ডার না থাকলে বিদায় করে দেয়া হবে?

০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১১:৪২

মুচি বলেছেন: শ্রমিক আইনে পারবেন না। কারণ তারা পার্মানেন্ট এমপ্লোয়ি। পার্ট-টাইমের ক্ষেত্রে ছাটাই করা সম্ভব। পার্মানেন্টদেরকে ছাটাই করতে গেলে কিছু প্রোসিডিউর অনুসরণ করা হয়। এরচেয়ে অর্ডার ধরে রাখার জন্য মান সম্পন্ন কাজে মনোযোগী হওয়া উচিৎ মালিকপক্ষের।

মে দিবসের শুভেচ্ছা।

১০| ০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮

আখেনাটেন বলেছেন: দেশের বেশিরভাগ ছোট গার্মেন্টস মালিকদের মনে হয় এই অবস্থা। আমার এক পরিচিত মালিক কিছুদিন আগে থেকেই গ্রাহক খুঁজছে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। দেনার দায়ে নাকি আকণ্ঠ ডুবে গেছে।

বড় বোয়ালমাছে ছোট পোনা মাছদের মাঠে টিকতে দিচ্ছে না। এত কিছুর পরেও শ্রমিকের জীবনযাত্রার উন্নতি নেই।

ভালো লিখেছেন।

০২ রা মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

মুচি বলেছেন: ধন্যবাদ। মালিক-শ্রমিক সবাই ভালো থাকুক।

আমরাও ভালো থাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.