নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরে গেলে মেঘ হতো যমুনার জল...

ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর

'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্ধ কর্পূর-চোখে প্রথম জীবন

১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

রাত ভোর করে শুনে এলাম এক অন্ধ কর্পূরগাছের দম বন্ধ করা গল্প।



একবার কোন এক বর্ষা শেষের বনে জন্মেছিল মরণগন্ধা গাছটি। আজন্ম অন্ধ তাই শ্রবণশক্তি ছিল অতি তীব্র। যা শুনত যেন দেখার থেকেও অধিক। কেবল কানে শুনেই সকলকিছুর রঙ পর্যন্ত ধরতে পারত। সমস্ত ডালজুড়ে সাদা রঙের ফুল থেকে মরণের গন্ধ ছড়াত প্রায় দশদিক জুড়ে। মরণের তৃষ্ণায়, প্রাণহীন মানুষের নিথর দেহের জন্য আকুল হয়ে প্রতি সন্ধ্যায় শত শত ফুলের কর্পূর ঝরে ঝরে পড়ত।



তেমনি এক সন্ধ্যার খানিক আগে আচানক এক বাঁশিওয়ালা বনের প্রায় পথহীন পথ ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। তার বাঁশিতে মরে যাওয়া নদীর ব্যাকুল সুর। জোছনাভাঙা রাতের মতোন প্রেমের ঢল। সেই সুর উজাড় করে বনময় ছড়িয়ে দিয়ে লোকটি বসে পড়ল সেই কর্পূর গাছের তলায়। ফুল পাতার ছায়া তাকে ঢেকে রাখল বহুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে বিকেল নিভে এল। সন্ধ্যা। এরপর গাঢ় রাত। কর্পূর গাছটির সেই প্রথম মানব দর্শন। এর আগে কোন মানুষের চোখ দেখে নাই, জীবন্ত মানুষের ঘ্রাণ সে জানত না। অন্ধ গাছটির মন জন্ম থেকেই ভরে ছিল মরণের রঙে। মৃত মানুষের ঘ্রাণ সে যেন জন্মের বহু আগে থেকেই জানে। প্রথমবার জীবনের ছবি দেখা। জীবন্ত সুরে শোনা প্রথম গান।



বাঁশিওয়ালার ঘুমন্ত চোখ যেন গাছটির সামনে এক জনমের সমস্ত হাসি-আনন্দ-বেদনার ছবি একে একে গেয়ে গেল। শীতের সকাল, বর্ষাকাল , বসন্ত , হেমন্ত- জীবনের কতই না রঙ! কতই না অনুভূতি এইকাল ওইকাল হয়ে বয়ে চলে যায়!



কোন এক বর্ষাকালের ছবি সবার চেয়ে উজ্জল হয়ে ফুটে আছে। একটা নদী। নদীর অন্যপার ঘন বৃষ্টিতে ঢেকে গেছে। এক জোড়া অনাবিল চোখ নিয়ে এক বালক ভাঙা একটা কলাগাছ জড়িয়ে ধরে তার জলজুড়ে ভেসে আছে। আর আকাশের কালো গভীর মেঘ ঠাণ্ডা কদম ফুলের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে ঝরে পড়ছে। তার নিচে বালকের অসচেতন বাসর। সে বুঝতে পারে তার শরীর ফুলে ফুলে ঢেকে দিয়ে নতুন এক সুখের জল গড়িয়ে যাচ্ছে।বয়সের মতো ঘোলা সেই জল ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।



বৃষ্টির চেয়েও আরও রঙিন হয়ে ধরা দেয় এক ঝড়ের রাত। ভেজা দেয়ালের অন্ধকার এক ঘর। জানালা ভেঙে ঝড় এসে সমস্ত ঘর এলোমেলো উদাস করে দিয়ে যাচ্ছে । আর ঝড়ের চেয়েও অশান্ত দুইজন সেই অন্ধকারে ফুল হয়ে ফুটে আছে। সেই তাদের প্রথম দেখা , প্রথম রাত, প্রথম ভালোবাসা। বসন্তশেষের ঝড়জুড়ে, শেষরাতের ঘরজুড়ে একটা কোমল সুখের গান শুনতে শুনতে যেন আরেকটা আনন্দের কালজয়ী সুর রচনা করে ফেলল দুই অচিন-আপন জন।



হাজার গল্পের রাত শেষ করে ভোরের আলো চোখে বাঁশিওয়ালার ঘুম ভাঙল। মোহন বাঁশিটা তুলে নিয়ে খানিক পরে আসার পথ ধরে ফিরে চলে গেল। কর্পূর গাছ বহুদূর থেকেও অনেকটা সময় সেই ঝড়ের রাতের সুর শুনতে থাকে। জীবনে প্রথম মানবজীবনের স্বাদ পেয়ে মরণের গন্ধ প্রায় ভুলে গেল। শাখাজুড়ে, পাতার কোলজুড়ে ফুলেরা জীবনের গন্ধ ছড়াবে ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়ল।

এরপর প্রতিদিন , প্রতিসন্ধ্যা জীবনের ছবি, গান, গল্পের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল গাছটি।



মরণের অপেক্ষায় যে গাছ এতোকাল ধরে বেঁচেছিল, জীবনের অসহ্য অপেক্ষা বুকে নিয়ে একদিন এক ঘোর বিকেলে ধীরে ধীরে মরে গেল।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.