নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরে গেলে মেঘ হতো যমুনার জল...

ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর

'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আ লেটার ফ্রম দ্য নিউ নার্সিসাস

১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:১৮

এই ঢাকা শহরে বর্তমানে যতজন ভূতের বাস, তাঁর দাবি তিনি সবার থেকে বৃদ্ধ।

হতেই পারে। মোঘল আমলের কোন ভূত তো আর এই শহরে থাকে না। কোম্পানি আমলেরও নাই। খুব পুরাতন যারা আছেন সব ওই মহারাণির আমলের। তাঁর আগের বলতে ওই একজনই । সারাদিন এই লেক ওই লেক ঘুরে বেড়ান। রাত হলে গিয়ে থাকেন সবেধন নীলমণি লালবাগের ওই কেল্লায় । কেবল ওখানেই নাকি তাঁকে মানায়। পরণের পোশাক বেশ খানদানি। জন্মেছিলেন মুর্শিদাবাদে। যাই হোক...তো এই ভূতের কয়েক শতাব্দীর জীবন। সেই জীবনজুড়ে আছ লক্ষ ঘটনা, সহস্র গল্প। সেখান থেকে কেবল এক সপ্তাহ বেছে নিয়ে একটা গল্প বলছি।

খবর এল রাণি ভিক্টোরিয়া আর বেঁচে নেই। ভারতজুড়ে ভারতেশ্বরীর জন্যে শোকের আবছা মাতম চলছে। তখনও এই শহরে ইউনিভার্সিটি হয় নাই। নবাবদের একটা খাসমহল ছির শাহবাগে। চারপাশে বাগান। এক ঘোর কৃষ্ণ রাতে এই ভূত মহোদয় সেই বাগানময় পায়চারি করছিলেন। নতুন চাঁদ, সন্ধ্যা পেরোতে না পেরোতেই ডুবে গেছে। শাহবাগের বাগানজুড়ে ঘোর অন্ধকার। কেবল খাসমহল আর পাশের হাম্মামখানায় মিটমিটে হলদে আলো জ্বলছে। হঠাৎ বাঁশির করুণ আওয়াজ ভেসে এল। দূর গ্রাম দেশের কোন এক সুর। সুরজুড়ে নদীর আভাস। তিনি ধীরে ধীরে সুর আঁচ করতে করতে এগোতে লাগলেন। আচানক বাঁশি বন্ধ হয়ে গেল। খোলা মিহি
না-পুরুষ না-নারী গলার অতি-সুরেলা গান বাগানের সমস্ত জুড়ে ভাসতে লাগল।

'কেন আজি দিনের সুরুজ রজনীর অধিক কালো?
আমার এই পথিক জীবন,
ব্যাকুল এই আকুল ভ্রমণ,
অকূল-নদীর চন্দ্রগ্রহণ;
কেন যে মরণ- সাধন জীয়নকাঠির চেয়েও ভালো?'


দেখলেন পশ্চিম-কোণের অন্ধকার আপন করে নিয়ে কেউ একজন আপন মনে বসে আছেন। ঘন নীল জ্বলজ্বলে গায়ের বরণ... পায়ের কাছে পড়ে থাকা মলিন শেফালি ফুলগুলো তার গায়ের রঙ শুষে নিয়ে নীল-কালো। স্বয়ং কৃষ্ণ? হাতের কাছে বাঁশি পড়ে আছে। কিন্তু লালরঙা মোটা কাপড়ে বুক বেঁধে আছেন। খেয়াল করে দেখলে বোঝা যায় নারীর বুক। মাথায় আবার সবুজ রঙের পাগড়ি জড়ানো। মুখে ঘন দাড়ি। কে এই জন? ভূত? কৃষ্ণ? রাধা? সপ্ত-আসমান-আরশবাসী ফেরেশতা?

ভূতের চেয়েও এতো ভীষণ অদ্ভুত!

গুণে গুণে ছয়টি রাত কেটে গেল। সপ্তম রাতে যখন সে এল, হাতে বাঁশের বাঁশির বদলে বেদেবাড়ির সাপ-ভুলানো বীণ। বুকে জড়ানো শাড়ির রঙ খানিক বদলে গেছে্। সেই শেফালি তলায় একটা জোনাকি হাতে স্হির বসে আছে, চোখ মাটিতে নামানো। মুখে বিরহের ভূবনমোহিনী গান। জোনাকি হাতে বিরহের মতো, হতাশার মতো সুন্দর সে। অদেখা চির অচেনার মতো মনমোহন, নতুন।


'নাগর আসি ফিরে গেল রজনী না পোহাতে।
নাগরী নগরকূলে খোঁপাতে রক্তফুলে,
বাঁধিল এ কোন বাঁধন অাঁধার অবেলাতে...'


তখনও ঢাকা শহরে যতজন ভূতের বাস, তিনি সবার থেকে প্রবীণ। সবার থেকে বেশি দেখেছেন। পলাশীর যুদ্ধের এক যুগ পরে ভূত হয়েছেন। কালে কালে কত কী দেখলেন। সিপাইরা বিদ্রোহ করল। ভারতবর্ষে রেল চালু হল। টেলিফোন, টেলিগ্রাম এল। আরও কত কী! সারা ভূতজীবনে তবু এর চেয়ে অবাক করা কিছু ঘটে নাই।

শেষের রাতটা ভোর হতে আর তেমন বাকি নেই। এইবার আর জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারলেন না। এই প্রথম কাছে গিয়ে বসলেন। না-পুরুষ, না-নারী। তবু কী এক অপার সুন্দর মুখ! নীল সাদায় মেশানো গায়ের বরণ। চোখে অপার্থিব, অপলক ভাষা। বুক, পায়ের পাতা, আধেক খোলা বাহু ...এত সুন্দর সৃষ্টি তিনি কোনদিন দেখেন নাই।

-'আপনি নিশ্চয়ই ফেরেশতা? শুনেছি ফেরেশতাদের গা থেকে এমন রোশনী ছলকে পড়ে। '
-'জন্মেছিলাম মানুষ হয়ে। নারীজনম ছিল। ছিলাম রাধার সহচরী। রাধা যখন কৃষ্ণ প্রেমে ব্যাকুল, আমি পড়লাম রাধার প্রেমে। মনে লুকানো অধীর প্রেম নিয়ে বিরহ-ব্যাকুল একদিন মরে গেলাম...'
- 'স্বেচ্ছামৃত্যু?'
-'হুমম ... সুপারি-গুবাকের সাথে ধুতুরার ফুল খেয়ে। পরের বার ঈশ্বর দয়া করে পুরুষজনম দিলেন। তাও আবার নবাবপুত্র। দিল্লীর শাহজাদা সেলিমকে দেখার সৌভাগ্য হল একদা। আবারও সেই ভুল-জীবন। অখণ্ড বিরহ-রোগে আবারও জীবন গেল। এখন আমার তৃতীয় জনম। আগের জন্মগুলোর সমস্ত রঙ, রূপ, রস, স্মৃতি সব একাকার করে বিধাতা আবার জনম দিলেন। অনাথ জীবন। বাবা মা ভুলে গেছি। একই দেহে আমার দুইয়ের বাস: হিন্দু-মুসলমান, পুরুষ-নারী।'
-ফেরেশতারাও এমন হয়।
-'তবে তাদের প্রেম থাকে না, কামনা থাকে না, মিলনের সাধ, বিরহের মলিনতা থাকে না। আমার এ জীবন তাদের থেকে শ্রেয়। নিজেকে ভালোবাসি। কামনা বাসনার সঙ্গীও নেজেই। দু:খ বিরহও আসে নিজের নিকট থেকেই। শুনেছি গ্রীক দেশে আমারই মতোন আত্মপ্রেমে একজন মজেছিলেন বহুকাল আগে। শেষ গন্তব্য আমার ওখানেই।

নার্সিসাসের আবার জন্ম হয়েছে। তিনি আমায় পত্র দিয়েছেন।'



ছবি: রবার্ট ওয়েনরাব


মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৪২

বিকারগ্রস্থ আগন্তুক বলেছেন: অদ্ভুত আত্মরতির সুন্দর উপস্থাপন।

২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর লাগল| অসাধারণ প্লট ও বর্ণনরীতি| ভূতের এই আইডিয়াটা চমৎকৃত করেছে, তেমনি করেছে আচমকা নার্সিসাসের আবির্ভাব

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.