নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরে গেলে মেঘ হতো যমুনার জল...

ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর

'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম-যমুনা: লাভ লস্ট অ্যান্ড লস্ট বাই আ রিভার

২৯ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:৫০



যমুনা নদীর তখন তরুণ বয়স। এপার ওপার মাতাল করা খোলা ঘোলা ঢেউগুলো তখন আরও অশান্ত ছিল। সেই উত্তাল দিনগুলোতে প্রথম প্রেমের আভাস এল মনে। নদীর প্রেম তো মানুষের মতোন হয় না। সে প্রেম অতি উদাস, অতি নেশালু সেই প্রেমের ঘোর। প্রতি ঢেউয়ে ঢেউয়ে প্রেমের হাওয়া, প্রতি জল-তরঙ্গে বাসনার নিত্য-নতুন গান।

কিন্তু নদীর অমন তুমুল প্রেমের ভাষা বুঝতে পারে এমন মানুষ কই? একেক দিন একেক মানুষের প্রেমে পড়ে নদী। একেক রাতে একেক গভীর চোখ অন্ধকারে যমুনার বুকে ঝড়ের আভাস আনে। প্রতি ভোরের প্রথম পুবাল বাতাসে সে প্রেমের পত্র পাঠায়। প্রেমহীন যমুনা বুক-উপচানো প্রেম নিয়ে অপরূপ অপেক্ষায় শতাব্দীর পর শতাব্দী কাটাতে লাগল। কতবার পথ বদলে গেল। কত শত গ্রাম নগর ছুঁয়ে ভেঙে নুয়ে দিয়ে যমুনা অপেক্ষার নিদারুণ কাল কাটাতে লাগল।

তারপর কোন এক বসন্তে নিকষ কালো চাঁদের মতোন রূপ নিয়ে কেউ একজন এসে বসল যমুনার কূলে। সন্ধ্যা তখন সমাগত। আকাশে কৃষ্ণ মেঘ। নদীর বুক বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে। ঝাকড়া চুল, হাতে বাঁশি। চোখ ভরে আছে রূপকথায়। নদী বুঝল এই মানুষটা প্রেমিক। এর চোখ জুড়ে বুকের অভিমান। পরনের আনমনা বসন আর বহুদূর চলে যাওয়া কাজল দৃষ্টি প্রমাণ করে সে কবি। যেন এতো বহু বছর এরই পরম প্রতীক্ষায় বসে ছিল এই কাল-পুরাতন নদী...

দিগ্বিদিক অন্ধকার তবু দুই চোখের জল জ্বলে আছে আগুনসমান। কীসের এত অভিমান, কবি? যমুনার হাজার বছরের প্রেম সমস্ত ফাগুনপোড়া আগুন নিভিয়ে দেবে। তুমি এই নদীর কূল আকুল করা প্রেমে সাড়া দাও। তোমায় প্রতি ভোরে বুক নিঙড়ানো পত্র দিব। প্রতি পূর্ণিমায় দুনিয়া উথাল করে নৃত্য-গীতে তোমার মন ভরাব। কবি, আমাকে তোমার কবিতায় জানি বহুবার এঁকেছ। রাধা আর কৃষ্ণকাহিনী গেয়ে গেছ যতবার, আমি ততবার প্রেম-যমুনা। তবু সাগরসমান জল নিয়ে এই জীবন আজও রোদেপোড়া বনের মতোন।

নদীর ভাষা কবিও বোঝে না। কেবল নদীর নিবেদন করা প্রেম বয়ে চলা পুবাল বাতাস বুকজুড়ে আবছা এক ছবি এঁকে গেল। বিমূর্ত সেই ছবি। বড় বিদেশি সে ভাষা। নদী ফুলে উঠল, দুলে উঠল। যেন শান্ত সমুদ্রে আচানক কালবোশেখি। বাতাস উন্মত্ত হয়ে ছুটল কবির পানে। কবি কেবল জানল যমুনা কিছু একটা বলতে চাইছে। কেবল বুঝল কোন এক গভীর অব্যক্ত কথা নদীর ভিতরটা তোলপাড় করে দিচ্ছে।

'মানে না বারণ, উছলে বারি;
ভাসাল কূল-লাজ রুধিতে না'রি।
সখি, আজ শুনিছে সে কার মুরলি?
কেন প্রেম-যমুনা আজি হল অধীর?'

অন্ধকারে আসা সেই কবি অাঁধার ফুরানোর আগেই চলে গেল কোথায় যেন। হয়তো চিরতরে। আবারও বিরহ। রাধার আরেক ব্যকুলতা। আবার মথুরা। ভুলে ফেলে যাওয়া যমুনার কূল বিশাল মরুর মতোন মুসাফির-বিহীন পড়ে রইল।

সেই কবি, সেই নজরুল ফিরে এল আরেক সন্ধ্যায়। ততদিনে কতগুলো বিরহ-বছর কেটে গেছে। এইবার যেন অন্য চোখ। বোবা প্রৌঢ় কবি। চোখের আগুন নিভে গেছে। বুকের ভাষা, অভিমান, গান সব বুক-কামড়ে পড়ে আছে। কবি গত কয়েক বছর হল বাকশক্তিহীন। নিভে যাওয়া চোখে তবু যেন হাজার রাতজাগা ভাষা। যমুনা প্রাণপন চেষ্টা করল সেই ভাষার কী মানে বুঝবে। সেই প্রেমের নিবেদন কী কবি কোনদিন কোনকালে বুঝেছিল? কে জানে? আজকের বোবা কবির ভাষা যমুনা বুঝল না। ভোরের সূর্য প্রথম কিরণ ঢালার আগেই কবি নজরুল অসহায় চোখ অতি উদাস করে আরও একবার হারিয়ে গেল।

ভাদ্র মাসের এগারো দিন চলে গেছে। বারোই ভাদ্র কোন এক দূর নগর থেকে স্পষ্ট এক গান ভেসে এল। সেই গান শুনে প্রেম-দিওয়ানা নদী ভেজা পাখির মতোন ডানা ঝাপটায় আর এই কূল ওই কূল ভেঙে ভেঙে পড়ে।

'এ জনমে যাহা বলা হ’ল না
আমি বলিব না , তুমিও ব’লো না ।
জানাইলে প্রেম করিও ছলনা
যদি আসি ফিরে বেদনা দিও।
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়
ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও ।'



..........................
ছবি: পরাগ চন্ডিয়াল

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.