নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরে গেলে মেঘ হতো যমুনার জল...

ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর

'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরণচাঁদ: \'Paradise Regained\'

১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯



দিন-ক্ষণ-তিথি প্রভৃতি উল্লেখ পূর্বক বেচারা মরণচাঁদ সবেমাত্র পরবর্তী সাতদিনের বিস্তারিত কর্মসূচি দিনপঞ্জিতে লিপিবদ্ধ করে উঠে দাঁড়াল। ঠিক তক্ষুনি মরণদেব এসে মরণচাঁদ ভৌমিকের ঘাড় মটকালেন। টেবিলে পড়ে রইল চীনামাটির ধবল চায়ের কাপ, কালির দোয়াত আর সোনার বরণ ঝর্ণা কলম। অতএব এই গল্পে আর যা যা ঘটতে যাচ্ছে তা আসলে কোনকালে ঘটে নাই। এবং মরে গিয়ে মরণচাঁদ কোনভাবে ভূতও হয় নাই।

পরদিন থেকে ছিল মুসলমানদের রোজা। মরণচাঁদের ভাড়া বাড়ির বারান্দা থেকে নিমতলীর পুরানো গেইট স্পষ্ট দেখা যায়। পরবর্তী সাতদিনের বিস্তারিত কর্মসূচি দিনপঞ্জিতে লিপিবদ্ধ করে উঠতে উঠতেই সে দেখল মিউনিসিপালের বাতিওয়ালা পৌঁছে গেছে। মাগরিবের আজান হচ্ছে। সে একনেত্রে বাতিওয়ালার কাজ দেখতে লাগল। কাজ শেষে পুরানো মই কাঁধে ফেলে লোকটি চলে গেল। মরণচাঁদ এইমাত্র বুঝতে পারল সে আর বেঁচে নাই্। সে বুঝতে পারল এইবার সে স্বপ্ন দেখছে। দুনিয়ার সবথেকে বাস্তবমতোন স্বপ্ন। যেন ইহজীবনের সমস্ত নিয়ম-কানুন-নীতি মেনে চলা একমাত্র যৌক্তিক স্বপ্ন। এই স্বপ্নে চাইলে সে দিনপঞ্জিতে লিখে রাখা কর্তব্যগুলো সম্পন্ন করতে পারবে। কিন্ত যেহেতু স্বপ্নে করা কাজ, তাই বাকি মানুষের কেউই সেই কাজ দেখবে না বা বুঝবে না। কাজের কোন প্রভাবও তাদের জীবনে পড়বে না। কী দরকার আছে কাজ গুলো করার? কিন্তু এই কাজ যতদিন, স্বপ্নও ততদিনের। অর্থাৎ কাজ না করলে এই স্বপ্ন সাতদিন টিকবে না। হুড়মুড় করে এই এখনই ভেঙে পড়বে। নিজের লাশ দেখার চেয়ে, স্বজন-সন্তানের হাহাকার শোনার চেয়ে এই স্বপ্ন অনেক ভালো। অতএব কাজের তালিকাটা পকেটে পুরে নিল। বাহিরটা ঘোর অন্ধকার হয়ে গেছে। রমজানের প্রথম রাত। নিমতলীর মোড়ে বাতিটা টিমটিম জ্বলছে। শুরু হল পথচলা।

অর্ধেক রাত পার হয়ে গেছে। ঢাকা গেইট পার হয়ে সে রমনার সুবিশাল কালী মন্দিরের একপাশে বসে পড়ল। অদূরেই বর্ধমান হাউস। দোতলায় এখনও আলো জ্বলছে। মনে পড়ল স্বপ্নের অন্য পাড়ের কথা। তার লাশ ঘিরে মানুষ বসে আছে। ধূপের গন্ধ হয়তো বাড়িময় ছড়িয়ে আছে। চিতার আয়োজন চলছে। জোর করে ফিরে এল স্বপ্নে। ওইসব সত্যিকারের ভাবনা এখন না ভাবাই ভালো। 'বরং খুঁজে দেখি কাউকে পাই কিনা। কাল সকাল থেকে তো তালিকা মতোন কাজে লেগে যেতে হবে।' মরণচাঁদ চাইল স্বপ্নের প্রথম রাত যেন স্বপ্নের মতোই হয়। যেন গান থাকে। অপরূপ শোভা, অলৌকিক আভা! ভূবন-মোহিনী কোন রূপসীর দেখা পেলে আরও ভালো। যেমন সিনেমার কোন নায়িকা!

এইসব ভাবতে ভাবতে চলে এল গুলিস্তান সিনেমার সামনে। এ কী! সিনেমা হলটি নাই। ঠিক ওই জায়গা থেকে দুইটা রাস্তা দুই দিকে চলে গেছে। সেই রাস্তার খানিক বাদে বাকি ঘোর অন্ধকার। ভয়ে দুই পা কাঁপছিল। দুই হাতে হাঁটু চেপে বসল। পরক্ষণেই মনে পড়ল ভয়ের কী আছে! সে তো মৃত । খানিক ভাবনার পর ডানদিকের রাস্তা ধরে এগোতে লাগল। একটা নদীর ধারে এসে পথটা থেমে গেছে। সমুদ্রসমান নদী। ওপার দেখা দায়। অজস্র তারা জ্বলছে আকাশময়। বুকের অতি গহীনে গিয়ে পৌঁছায় এমন মধুর হাওয়া। এমন স্বর্গীয় অনুভূতির রাত ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। ঘোলা জলে ভোরের আলো এসে ঢেউয়ের উপর আছড়ে পড়ছে। পকেটে হাত দিয়ে সাতদিনের কাজের সেই ফিরিস্তি বের করে আনল। মনে পড়ল ফিরতে হবে। ঢাকায় ফেরার পথ খুজতে লাগল। কিন্তু আবারও তাকে আকাশ-পাতাল অবাক করে দিয়ে সমস্ত পথ নাই হয়ে গেছে।

স্বপ্নে বেঁচে থাকা আর হল না। দ্বিতীয় মৃত্যুর অগাধ বিষণ্ণ মেঘ এসে যেন চোখ ভাসিয়ে দিয়ে গেল। কতক্ষণ এভাবে কাটল বুঝতে পারল না মরণচাঁদ। কিন্তু বুঝতে পারল তার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বুঝল মরণের এপারের বাস্তব হয় স্বপ্নের মতোন। অনন্ত সুখের দুনিয়ায় পৌঁছে গেছে সে। এই নদী, নীল-অসীম আকাশ, সবুজ অবুঝ মাঠ জোড়া ভেজা বাতাসের ঢেউ এই সমস্ত আসলে স্বর্গের অংশ।

দেখল খানিকদূরেই একটা বটগাছ নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। নদীর বিজন ওপার থেকে বাঁশের বাঁশির সুর ভেসে আসছে। এ যে অপার অসীম বঙ্গদেশ। মরণচাঁদের মনে হল ব্রিটিশবিহীন, অপাকিস্তান এক বাঙলার অবারিত প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সে। বুঝল সত্যিকারের স্বর্গ হয় জন্মভূমির মতো অতি-অম্লান-আপন।

বটের ছায়ায় বসে সে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগল কোন সে পূণ্যের অশেষ গুণে মরণের পরে আবার সেই প্রিয় স্বদেশ ফিরে পেল।


..........
ছবি: কাইয়ুম চৌধুরী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.