নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরে গেলে মেঘ হতো যমুনার জল...

ঘরেও নহে পারেও নহে,যে জন আছে মাঝখানে...............

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর

'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed

আব্দুল্লাহ আল মুক্তািদর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: বছরের দীর্ঘতম রাত

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৪



শহরের দেবী আসবেন সমুদ্রতীরের এই নিবিড় ছোট্ট গ্রামে। প্রায় হাজার বছর ধরে ক্রমাগত নগর, বন্দর দেখে ভয়ানক ক্লান্ত চোখজুড়ে তিনি দেখতে চান দিগন্ত-অপার সমুদ্র, নীল-উচাটন ঢেউ। দেখতে চান সবুজ আজও কতখানি সবুজ। আসমানের উদাস মেঘ আর রাতের সাগরজুড়ে নেমে আসা অযুত তারার রাত দেখে দেখে তিনি প্রাণ খুলে গাইতে চান মধুরতম গান। তিনি আসবেন, বছরের দীর্ঘতম রাতে...

যেহেতু যেকোন শহর আর শহুরে নিদর্শন দেবীকে ক্লান্ত, বিরক্ত করে, আমরা তাই প্রায় সপ্তাহ ধরে এই গ্রামকে আরও গ্রাম করে তোলার চেষ্টায় মত্ত। আমাদের যত বিজলী বাতি, যত আধুনিক যন্ত্র, মাঠ চিরে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার, বেতার যন্ত্র, বৈজ্ঞানিক পাখা সমস্ত লুকিয়ে ফেলার কষ্টসাধ্য কাজ করে চলেছি সকাল থেকে সন্ধ্যা। তবু আমাদের সকলের মুখ জুড়ে সূর্যমুখী হাসি।

যেন আমাদের গ্রাম চিরকালই প্রচণ্ড গ্রাম ছিল।
যেন আমরা চিরকাল প্রকৃতি, আজীবন প্রকৃতিই আমাদের জীবন।

আমাদের আকাশ, ফুলের ঘ্রাণ, সমুদ্রজল সবকিছু প্রস্তুত হয়ে আছে। আর প্রস্তুত গাতক পাখির দল। আমাদের কবি, চিত্রকর, নৃত্যকর আর বাদকেরা প্রস্তুত। দেবী আসবেন বছরের দীর্ঘতম রাতে...

কিংবদন্তির এই দেবী যেদিন প্রথম ধরায় পা রাখেন, প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা, তিনি নাকি এমনই এক সমুদ্রপাড়ের গ্রামই বেছে নেন। এক অমরাবতী রঙের কুটির নির্মাণ করে শুরু করেন আনন্দ-জীবন। সমুদ্রই ছিল তার প্রথম ভালোবাসা। সহস্র ঝিনুক দিয়ে গয়না গড়ে নিজেকে সাজাতেন দেবী। প্রতি প্রজাপতি-ভোরে বাহারী মুক্তা দিয়ে গলার হার গড়ে হেসে গলে পড়তেন। তখনও কোন মানুষ দেখেননি দেবী। দিনগুলো আরও দীর্ঘ ছিল বোধহয়। বোধহয় মানুষের রূপের গন্ধ আরও প্রচণ্ড চিল সেইসব বুনো দিনে।

সমুদ্র-সুখে কিছু কাল কেটে গেলে ঝিনুক আর ঝলমলে মুক্তার সাজে দেবী একবার বেরিয়ে পড়লেন বন ভ্রমণে। কয়েকদিনের পথ পার হয়ে রাত গভীরে এসে পৌঁছালেন এক ঘন বনের পূর্বপ্রান্তে। পূর্ণিমাই ছিল বোধহয়। সেই মোহ-আলোয় তিনি দেখলেন তাঁর জীবনের প্রথম মানুষের মুখ। কী তীব্র চোখ! দেবী প্রেমে পড়লেন। মানুষ এতো সুন্দর হয়! চোখে সমুদ্র আর আগুন বয়ে বেড়ানো সেই মানুষটির মোহে প্রায় অন্ধ দেবী খানিকক্ষণ ঠাহর করতে পারছিলেন না কী করবেন। লোকটি তখন আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছিল। জোছনার আলোয় হঠাৎ আগুন জ্বললে দেবীর সম্বিৎ ফিরে আসল। তিনি ধীরে গিয়ে লোকটির হাত চেপে ধরলেন। চমকে গিয়ে আচানক আঘাত করে বসল মানুষটি। দেবীর গলার মুক্তো আর কানের ঝিনুক গয়না খসে পড়ল বনের ঝরা পাতায়। তারপর এক ঝলক দেবীদর্শন। লোকটি চাঁদ, আগুন আর দেবীর রূপের আলোয় খেই হারিয়ে ফেলল। চোখ বুজে নীরব, নিশ্চুপ, নিজেকে দেবীর পায়ে সঁপে দিল। আগুন আর চাঁদের বন্যায় দেবী প্রানভরে মানবদেহের ঘ্রাণ নিলেন। ঝরাপাতায় মানুষটিকে প্রায় পিষ্ট করে উপভোগ করলেন তার প্রতি অঙ্গ।লোকটিকে পান করে, দারূন ক্লান্ত করে দেবী তারপর আনমনে উঠে চলে গেলেন তাঁর সমুদ্র কুটিরে। কে জানে কী কারণ? সেই প্রথম দেবী হাসলেন, সেই প্রথম কাঁদলেন। আকাশ, ঢেউ সবকিছুকে অবাক করে প্রতিজ্ঞা করলেন সবকিছু ছেড়ে চলে যাবেন কোন এক জন-ঘন নগরে।

আর এদিকে, দেবীর প্রেমের নেশায় এক চোখে আগুন এক চোখে সমুদ্র নিয়ে লোকটি প্রতি জোছনারাতে বনের পূর্ব কোণে এসে আগুন জ্বেলে বসে থাকত। কত শত জোছনা শেষে ভোর হল, কিন্তু আর কখনও দেখা মেলেনি তাঁর । আশায়, নেশায়, হতাশায় প্রায় উন্মাদ হয়ে যতদিন বেঁচেছিল, সেই রাতের ফেলে যা্ওয়া ঝিনুক আর মুক্তোদানায় চোখের জল ফেলে বিরহ-বর্ষার গান গেয়ে গেছে লোকটি।


আজ এতোকাল পরে আবার আসছেন দেবী। আবার সমুদ্রতীরে এসে ঘর বাঁধবেন হয়তো। হয়তো ঝিনুক, মুক্তায় আবার সাজবেন জোছনা রাতে। কতকাল কাটাবেন কে জানে? আবারও হয়তো প্রেমে পড়বেন। আমাদের সবচেয়ে সুন্দর পুরুষেরা তাই সেই মরণসমান প্রেমের ভয়ে সারাগায়ে কালি মাখছেন। চুল-গোঁফ-দাঁড়িতে যথাসম্ভব রূপ লুকানোয় ব্যস্ত।

সবথেকে বেশি ভয় আটাশ বছর বয়সী এক তরুণ অরুণ কবিকে নিয়ে। রোগে ভুগে পরিশ্রান্ত তবু তার এক চোখে তাঁর আগুন, আরেক চোখে সমুদ্র। একদিন কী যেন কী স্বপ্নে দেখল সে। তারপর থেকেই সমুদ্রপাড়ের ঝিনুক দেখলেই সীমাহীন দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকে। আর বিরহের কবিতা গুনগুন করে গায়।

'ঝিনুক নীরবে সহো
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সহে যাও
ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!'

আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি যে সন্ধ্যায় শেষ হল, এ গ্রামের সবচেয়ে অসুন্দর পুরুষেরা যখন দেবী বরণের অপেক্ষায় অধীর, বছরের দীর্ঘতম রাতে, আগুন হাতে সেই বিষাদকাতর কবি চলে গেল আমাদের গ্রামের পূর্ব কোণে। যেন দেবীর সেই ভুলে যাওয়া প্রেমিক এই জন্মে নীরব গভীর কবি। যেন দেবীর ফেলে যাওয়া সমস্ত ঝিনুক তার বুকজুড়ে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১

ডাঃ প্রকাশ চন্দ্র রায় বলেছেন: আহা সেই অরুণ কবি যে শুধুই বিরহের কবিতা গায় গুন গুন করে । অসম্ভব সুন্দর রচনা । কবিকে ফানুনের শুভেচ্ছা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.