নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'If Stavrogin believes,he does not think he believes. If he does not believe ,he does not think he does not believe.'-The Possesed
স্হান: ঘন তমাল বনের ধারে যে তুমুল উচাটন নদী, তার অন্য পারের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রাম।
কাল: কেয়া ফুলের তীব্র সুবাস ছড়ানো এক বর্ষা-সন্ধ্যা
গ্রামের সবচেয়ে দামী আর মনোরম বাড়িটাতে নিত্যকার আলো জ্বলে উঠল। জীর্ণ কাঠ আর আবছা কাচের জানলা থেকে আলো ছড়াচ্ছে দিকে দিকে। সাদা রঙের বসন পরা, গোলাপ রঙের ঘোমটা মাথায় এক কাজল-নয়ন নারীকে দেখা গেল সেই অপার আলোয় মুখ ধুয়ে নিচ্ছে। নিদ্রাহীন ক্লান্ত মুখ। ভীষণ অচেনা চোখ। ঘরের এক কোনায় সযত্নে রাখা যুগল-প্রতিমার অপরূপ আলো-ছায়া সেই অচিন চোখ জুড়ে । দীঘল নয়না রাধার ত্রিভঙ্গ মূর্তি, সারা গা নীলচে কালো। হাতে মোহন বাঁশি। পিছনে গৌরবর্ণ বনমালী। প্রেমকাতর হাতে ছুঁয়ে আছে বংশীধারী রাধার প্রেমিক চিবুক। দীপ, ধূপ একাকার হয়ে জ্বলছে। পূজার আয়োজনে সমস্ত সন্ধ্যা মগ্ন তখন।
আরও সহস্র সন্ধ্যার মতোই মৌন মুগ্ধতায় কেটে গেল আজকের সন্ধ্যা-পূজার প্রথম প্রহর।
খানিক পর, গোলাপ রঙের ঘোমটা মাথায় সেই অলঙ্কারহীন নারী ভক্তিভরে বন্ধ করে রাখা দুইচোখ ধীরে ধীরে খুলল।তার ঘোর দৃষ্টিকে অতি ভীষণ অবাক করে দিয়ে সে দেখল, গোরা গোপাল ছেড়ে গেছে তার কালো রাধাকে। কীভাবে? কে জানে? অথচ রাধা তেমনি বাঁশি হাতে ত্রিভঙ্গে দাঁড়ানো। কাজল রঙের মুখ থেকে আগের মতোনই মায়া ঠিকরে পড়ছে। কিন্তু কোথায় রাধারমণ? অমর প্রেমের যুগল প্রতিমা ছেড়ে কতদূরে হারিয়ে গেল শ্রী -গোবিন্দ ?
নতুন কোন অভিলাষে, অমন কীসের অভিমানে?
আসলে অবাক হওয়ার আরও অনেক বাকি ছিল! পূজাশেষে কাজল-নয়ন নারী যখন ঘোমটা কুলে উঠে দাঁড়াল, যখন পিছন ফিরে তাকাল অতি স্বাভাবিক স্বভাবে, এক অসম্ভব অস্বাভাবিক কিছু দেখল সে। খেই হারিয়ে ফেলল। কথাহীন মুখে, অনুভব ভুলে তাকিয়ে রইল অপলক। কৃষ্ণ-বরণ রাধাকে ছেড়ে গৌর-বরণ কানাই এসে দাঁড়িয়েছন তাদের পরম পূজারির সামনে। হাজার সন্ধ্যার সত্য প্রদীপ, মধু-ধূপের সহজ সুবাস, ধ্যানে-প্রেমে বন্ধ দুইচোখ, দুই হাতের সকল সমর্পণ- বাসুদেবকে দারুণ মুগ্ধ করেছে। এই পুজারি হয়তো রাধার সমান কখনও না। সে এক নতুন পাগল-প্রেমিক। মীরার দুর্দান্ত পুনর্জন্ম হয়েছে যেন। সন্তুষ্ট, তৃপ্ত, প্রেম-উদাস ভগবান মধুসূদন তাই তার ভক্তের চোখের সমান ভক্তি নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
- আমার দর্শন চেয়ে তুমি এতো এতো কাল ধরে পুষ্পে, ধূপে আলোর প্রদীপ জ্বেলেছ ! বন্ধমুখে, বন্ধচোখে উচ্চারিত তোমার অজস্র প্রেমের শব্দগুলো বারবার আমার বুক, মন ছুঁয়ে গেছে। ভাবলাম, তোমাকে যদি দেখা না দেই, যদি তুমি আমাকে না পাও আপনার করে, ঘোর অন্যায় হবে । আর, এভাবে ভক্ত, প্রেমিক ছেড়ে দূরে সরে থাকা কোনকালেই কোন ভগবানের শোভা পায় না।
-কিন্তু, হে ভগবান, কেবল একলা তুমি দেখা দেবে এমন চাওঢা আমার কোনকালেই ছিল না। রাধিকাবিহীন রাধিকামোহন কোনদিন আমি কামনা করতে পারিনি। হে, বাসুদেব, যদি সম্ভব হয় তো যুগলরূপে দর্শন দিন। কাজল-নয়ন কৃষ্ণ-বরণ রাধার হাতে হাত রেখে আশীর্বাদ করুন আমার ভক্তমন আর প্রেমিক চোখকে।
নন্দদুলাল, যশোদা নয়নমণি খানিক হেসে এক বুক অভিমান নিয়ে ধীর সুধীর পায়ে চলে গেলেন অচেনার পানে।
এক ঝলক ভেজা বাতাস ভেসে এসে তার ঘরে ঢুকল। নদীর ওপার থেকে তমাল বনের ছায়া হয়ে বয়ে এলে করূণ শঙ্খধ্বনি। সাদা রঙের বসন পরা, গোলাপ রঙের ঘোমটা মাথায় সেই কাজল-নয়ন নারীকে দেখা গেল শঙ্খের বিষণ্ণ সুরে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে। ভেজা বাতাস সারা গায়ে মেখে কদমের ফুল হয়ে ফুটে রইল রাতজুড়ে। একলা হয়ে যাওয়া রাধার হাতের বাঁশি খানিক ছুঁয়ে দেখল। তারপর নয়নভরে চেয়ে রইল কালো-আলো ছড়ানো ত্রিভঙ্গ-প্রতিমা বরাবর।
উদাসীন রাধা একলা তবু অম্লান।
অলঙ্কারহীন নারী ভক্তিভরে আবারও শুরু করল পূজার আয়োজন।
বছরের সবচেয়ে অন্ধকার রাত ডুবে গেল উজ্জ্বলতম আলোয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: গল্পের শুরুটা ভালই ছিল শেষর দিকে রিপিটেশন কেন বুঝতে পারলামনা । যাহোক ভাল লেগেছে । ধন্যবাদ ।