নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৪০৪ নট ফাউন্ড

মুক্তাদির অনল

১৯

মুক্তাদির অনল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাসন্তী

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৮


রাশেদ হাতের ট্যাবটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই বললো "তোমার নামটা যেন কি?"
"নামে কি আসলো গেলো, ভোর হলেই তো আর চিনবেন না। শরীরের সাথে কাজ.. নাম ফুলবানু হোক বা দীপিকা তাতে কিছু আসবে যাবে না।"
একথা শোনার পর রাশেদ একটা ধাক্কার মতো খেলো।এমন একটা উত্তর এমন একটা মেয়ের কাছ থেকে সে আশা করে নি। নিজেকে সামলে নেয়ার আগেই মেয়েটি আবার বলল "তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করেন,অনেক ক্ষুধা লাগছে,ভাত খাবো।এখন পর্যন্ত চারজন কাজ করে চলে গেছে,খাবারের নাম নাই। আমিও তো মানুষ,পেট আছে। মানুষকে মানুষ মনে করেন না আপনারা।"

রাশেদ মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। ওয়াশরুমের দরজাটা সামান্য খোলা, ওখান থেকেই যা একটু আলো আসছে ঘরের মধ্যে। তবে মেয়েটার কণ্ঠের মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া জড়িয়ে আছে। কণ্ঠ শুনেই যেন বলে দেয়া যায় বিছানার ওপাশটাই যে মেয়েটা বসে আছে সে অতি রূপবতী। হটাৎ করেই রাশেদের খুব ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে দেখার। এমন সব মেয়ের জন্য তার আগে কখনো এরকম ইচ্ছে হয় নি। আজ কেন জানি এই মেয়েটাকে তার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। রাশেদ উঠে গিয়ে আলোটা জ্বালিয়ে দিলো।কোনো কথা না বলে,কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা ইন্টারকমটার কাছে গিয়ে রিসিভারটা কানে তুলে নিলো।একটা খাবারের অর্ডার দিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো।মেয়েটাও রাশেদের দিকে তাকিয়ে আছে। কালো,গড়পড়তা একটা মেয়ে। বয়স বিশ-একুশের মতো হবে হয়ত।আহামরি সুন্দর নয় তবে চেহারায় একটা মায়া আছে। সোফাটায় বসতে বসতে বললাম "খাবার আসছে,আগে খেয়ে নাও। আর তুমি বলেছো, আমরা মানুষকে মানুষ মনে করি না। বিষয়টা আসলে ঠিক নয়। আমি তো মনে করি তোমার আমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা সবাই আসলে যে যার মতো কাজ বেছে নিয়েছি। কেউ শরীর বেচে খাচ্ছি, কেউ মাথা আবার কেউবা পরিশ্রম। কিন্তু আমরা কেউই আমাদের নিজের কাজ নিয়ে খুশি নই,হতে পারে দিনশেষে আমরা সবাই আসলে নিজেদেরকে প্রস্টিটিউট মনে করি।"

-না,পার্থক্য একটা আছে। সম্মানের। আপনি যে কাজ করেন তাতে সম্মান আছে। আপনার নিজের ইচ্ছের দাম আছে। আমার নাই। আমার হাজার ইচ্ছে হলেও আপনাকে আমার কাছে আসতে বাধা দিতে পারবোনা,আর আপনার ইচ্ছে জাগলেই আমাকে যেভাবে খুশি সেভাবে পাবেন।এখানেই পার্থক্য। মানুষ আমাকে বেশ্যা বলে। আপনি বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন আপনি আসলে কি করেন। পার্থক্যটা এখানেই। যে মানুষটা আমাকে বেশ্যা বলে সে কখনোই বোঝেনি জন্মের পর ও যে পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছে,আর আমি যে পরিবেশ থেকে উঠে এসেছি এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে।
রাশেদ কোনো কথা বলে না। এমন মনে হচ্ছে যেন মেয়েটা তার গলা চেপে ধরেছে। রাশেদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। আজ যেন নিজের কাছেই নিজেকে অনেক ছোট ছোট লাগছে। সত্যিই তো নিশ্চয় এমন কোনো কারণ আছে যার কারণে সে এই পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝতে চাই না। আমাদের কাছে এরা মনোবাসনা লব্ধ করার একটা উপকরণ মাত্র। আমরা এদের কখনো সম্মান দিতে শিখিনি।

খাবার চলে এসেছে।
মেয়েটা খেতে বসেছে। গপাগপ খাওয়া বলতে যেটা বোঝাই মেয়েটা ঠিক ঐভাবেই খাচ্ছে। বললাম "আস্তে খাও,গলায় আটকাবে তো"
-বাধবে না। আমি এভাবেই খেয়ে অভস্ত। ক্ষুধার জ্বালা আমি বুঝি। এই এক প্লেট ভাত যে কতটা ক্ষুদা মেটাতে পারে, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

রাশেদের চোখ ছলছল করে উঠে। কিন্তু এমন একটা মেয়ের কষ্ট দেখে তো কাদা যাবে না। বাইরে বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। এমন একটা মেয়ের জন্য মায়া দেখালে সমাজ ও রাশেদকে মেনে নিবে কিনা সন্দেহ। রাশেদ আর কথা বাড়ায় না। উঠে দাঁড়ায়। বলে "বাইরে বেশ ঠান্ডা আছে,সকালে যাবার সময় আমার জ্যাকেটটা পড়ে যেও।
-ওই লাল জ্যাকেটটা?
-হুম।
-আপনি কাজ করবেন না?
-না। ইচ্ছে নেই। নিজেকে কেন জানি মানুষ মনে হচ্ছে না। আর মানুষ ছাড়া মানুষকে কেউ ভালোবাসতে পারে না। ও হ্যা,তোমার নামটা জানা হলো না।
-মা সুন্দর একটা নাম দিয়েছিলো,ওই নাম কেউ ডাকে না। বাসন্তী বললে সবাই চিনবে।

-ভালো থেকো বাসন্তী। "মানুষ" নামধারী মানুষগুলো তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


এখনো বিপ্লবী; আামী বছর আবার পড়ে দেখবো

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৩

মুক্তাদির অনল বলেছেন: ;) ;) ;)

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

করুণাধারা বলেছেন: আপনার লেখনী চমৎকার! ভাল লাগল।

লিখতে থাকুন।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৫২

মুক্তাদির অনল বলেছেন: ধন্যবাদ অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য :) :)

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩২

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা ভাল। চেষ্টা চালিয়ে যান এবং অন্যদের পোস্টেও কমেন্ট করুন, লোকজন তাহলে আরও জানতে পারবে আপনার লেখা সম্পকে এবং আশা করি ভাল ফিডব্যাক পাবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.