নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তুই আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে নাই কেন? বড় ভাই জিজ্ঞেস করল।
টুটুল কোন কথা বলে না। চুপ করে থাকে।
কি হল? বল।আমাকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছিস? বড় ভাই আবার জিজ্ঞেস করে।
টুটুল এবার বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়।ভাইয়ের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভাইয়া যতটা না রাগন্নিত তার থেকেও বেশি শকড।তিনি যেন মেনেই নিতে পারছেন না তারই ছোট ভাই তাকেই ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বের করে দিয়েছে। এটা তো ইগোতে লাগাটাই স্বাভাবিক। টুটুলের এখন খুব খারাপ লাগছে। সে আসলে ভাবতে পারেনি ভাইয়া বিষয়টাকে এতটা সিরিয়াসলি নিবে। এমনিতে টুটুল ভাইয়াকে অনেক ভয় পাই। আসলে ভয় পাওয়ার থেকেও বেশি সম্মান করে। জুবায়ের টুটুলের খালাত ভাই। বয়স পঁয়তিরিশের কাছাকাছি। একটা বড় কোম্পানিতে বড় পদে চাকরি করেন।টুটুল যখন খুব ছোট তখন থেকেই জুবায়ের টুটুলের কাছে একজন দিক নির্দেশকের মতো।টুটুলের যেকোনো ডিসিশান নেয়ার ক্ষেত্রে টুটুলের পরিবার জুবায়েরের সাথে আলোচনা করে। টুটুলের পরিবারের কাছে জুবায়ের মোটামুটি এলিয়েন সমান,যেন জুবায়ের কখনো ভুল করতে পারে না।হয়তো এই কারণেই টুটুল জুবায়ের ভাইকে এতটা ভয় পাই।
-সরি ভাইয়া,বাট আই ক্যান এক্সপ্লেইন।
বড় ভাই একদৃষ্টিতে টুটুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাঁর কপালে ভাঁজ পড়েছে। চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি টুটুলের উপর মহাবিরক্ত। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে বললেন "ওই যে টেবিলের উপর লাইটারটা রাখা আছে, দে।"
টুটুল উঠে গিয়ে লাইটারটা এনে ভাইয়াকে দেয়। ভাইয়া সিগারেটটা জ্বালাতে জ্বালাতে বলে "শোনা, তোর খোঁড়া যুক্তি।"
প্লিজ ভাইয়া রাগ করবেন না কিন্তু আমার মনে হয় আমার মধ্যে আরেকটা টুটুল আছে।
-কি!! বুঝলাম না।
-শুধু আপনিই নন,আমার পরিবার,আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী আমাকে জানে অনেক ভদ্র,মার্জিত,লাজুক,কথা কম বলা, ঝামেলাহীন একটা ছেলে হিসেবে। অবশ্যই সত্যি জানে। কিন্তু আমার মনে হয় আমি এটাই শতভাগ নই। ওরা হয়তো আমাকে পঞ্চাশ ভাগ চেনে। বাকি যে পঞ্চাশ ভাগ থাকলো সেটা চেনে আমার বন্ধুরা। আমার বন্ধুদের সামনে আমি একেবারেই আলাদা একজন টুটুল। মাঝে মাঝে আমার যায়ই ইচ্ছে হয় না কেন আমি তাই করি। রাত জেগে আড্ডা দেই, ইচ্ছে হলেই যেদিকে যেতে মন চাই,ব্যাগ প্যাক বেঁধে সেদিকে ছুটে যাই,আন্দোলনে আমিও গলা ফাটাই,কখনো কখনো তো আমি মারামারিও করি, আমিও স্ল্যাং জানি, কেউ জানে না কিন্তু আমিও কখনো কখনো আপনার মত সিগা....টুটুল চুপ করে যায়। মাথা নিচু করে বলে "সরি।"
-হুম বুঝলাম কিন্তু এর সাথে আমাকে আনফ্রেন্ড করার কি সম্পর্ক?
ভাইয়াকে এখন একটু সহজ মনে হচ্ছে। উনি যেন টুটুলের কথা শুনে মজা পাচ্ছেন। টুটুলের একটু সাহস বাড়ে। চোখ নাচিয়ে বলে "প্রথমত ভাইয়া,আপনার সাথে ফেসবুকে আমার খুব একটা চ্যাট হয় না। কোনো প্রয়োজন হলে আমি নিজেই আপনাকে ফোন করে নি। ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে থাকার আরেকটা উদ্দেশ্য হলো আপনি কখন কোথায় কি করছেন সে বিষয়ের আপডেট জানতে পারা। এটা তো আমি বাড়ির লোকের সাথে কথা হলেই জানতে পারি। মা,সবসময় আপনার কথাই বলেন।বাকি থাকলো লাইক,কমেন্ট,শেয়ার করার ব্যাপারটা। আমার একটা লাইক না পেলে আপনার কিছু আসবে যাবে না,আমি কখনোই আপনার কোনো পোস্ট বা ছবিতে কমেন্ট বা শেয়ার করি না। করি না কারণ আমি আপনাকে এখনও ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারি নি। হয়ত এই কারণে আমি আপনাকে একটু ভয় ও পাই। এখন কথা হলো ভাইয়া এমন অনেক কিছু আছে যেটা আমি শুধুই আমার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে চাই কিন্তু পরিবারে মানুষে কাছে চাই না। এমন অনেক সময় আমার মনে হয়েছে হয়তো এই জিনিসটা দেখলে ভাইয়া অন্যরকম কিছু ভাবতে পারে। কত সময় তো আমি বন্ধুদেরও বলি দোস্ত এই জিনিসটা ফেসবুকে দিসনা,ভাইয়া দেখলে রাগ করতে পারে। যদিও ভাইয়া ফেসবুক আসার পর প্রাইভেসির সংজ্ঞাটাই বদলে গেছে। তারপরেও, পরিবার আর বন্ধু তো এক করতে পারি না।
জুবায়ের ভাইয়া মিটমিট করে হাসে। তারপর মুখটা একটু সামনে এনে এক চোখ টিপে বলে, তুই ও তো দেখছি আমার মতোই রে। এক কাজ করি, আমার আরেকটা আই ডি আছে। ওই আই ডি তে আমার ও ফিফটি পার্সেন্ট আছে। ওটাতে আমরা এড হয়ে যাবো। আফটার অল, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০২
মুক্তাদির অনল বলেছেন: জীবন এখন ফেসবুকময়
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: ফেসবুক প্রজন্ম।