নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৪০৪ নট ফাউন্ড

মুক্তাদির অনল

১৯

মুক্তাদির অনল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা লাস্ট ফিফটিন মিনিটস

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪২

-আমার মতো কেউ তোমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবে না.
-সবাই বলে।
-আমি অন্য সবার থেকে আলাদা।আমাকে আর সবার মতো এক করো না।
-(হেসে) সবাই এমনটাই বলে।

টুটুল কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার কাছে সবটাই কেমন যেন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। শেষ পনেরোটা মিনিটে তার জীবনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। তার কথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যাচ্ছে, ক্যান্টিনের হৈহুল্লোড় তার কানে বাজছে না, মাথাটা যেন ফাঁপা একটা বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে।সে শুধু ফ্যালফ্যাল করে সামনে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে আর হড়বড় করে কি সব বলছে জেতার মানে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।

-আপনি কি নার্ভাস? সুহানি জিজ্ঞেস করলো।
-না। আসলে যে মেয়েটাকে গত ছয়টা মাস থেকে খুঁজছি তাকে হটাৎ চোখের সামনে পেয়েছি বলে চোখ এতটা আনন্দ নিতে পারছে না। জল হয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে।
সুহানি একটা বাঁকা হাসি হাসে যেন কথাটা পাত্তাই দিতে চাইলো না। তারপর বললো "আপনি আসলে যেটাকে ভালোবাসা বলতে চাইছেন সেটা আসলে ভালোবাসা না, ভালোলাগা। আর কিছুদিন পর এমনিতেই আপনার এই অনুভুতিটা কাজ করবে না।
টুটুল কথাটা একেবারে হেলায় হারিয়ে দিতে পারলো না। কাওকে যদি আমুদে ছেলে বলা হয় তবে টুটুলকে অবলীলায় এর ভালো একটা উদাহরণ বলা চলে। ভিতরে যায় থাকুক না কেন মুখে সবসময় চওড়া একটা হাসি লেগেই আছে। "এই আছি,এই নেই " তত্ত্বে বিশ্বাসী বলে সিরিয়াসনেস ভাবটা টুটুলের মধ্যে একটু কম। তবে সুহানি ইস্যুতে এতটা সিরিয়াস হয়ে যাবে সে নিজেও এতটা ভাবে নি। সুহানির সাথে টুটুলের দেখা জাকারবার্গের দুনিয়ায়। প্রোফাইল পিকচারের উপর ক্লিক করলে নিজের অজান্তেই টুটুলের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে "বাহ্!!" এক দেখাতেই মনে হয় যেন অনেকদিনের চেনা। তবে না, একই ইউনিভার্সিটিতে পড়লেও টুটুল ওকে চর্মচক্ষে কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। তবে খুঁজে পেতে কতক্ষন? ছোট্ট একটা ইউনিভার্সিটি, আজ না হোক কাল ঠিক মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
ভাগ্য মনে হয় টুটুলের প্রতি খুব একটা সুপ্রসন্ন নয়। নয়তো দিন যায়, রাত যায়,টুটুলের জুতোর তলা ক্ষয় হয়,ক্যান্টিনের শয়ে-শয়ে কাপ কফি বিক্রি হয়,ভার্সিটির গেটের গার্ডগুলোর সাথে দোস্তি হয়ে যায়,কিন্তু সুহানির দেখা মেলে না। সকাল সন্ধ্যা ভার্সিটির এ মাথা থেকে ও মাথা করতে করতে ছয় ছয়টা মাস পার হয়ে যায়। একটা সময় কব্জির ঘড়িটাও ক্লান্ত হয়ে বলতে চাই "এবার আমায় ক্ষান্ত দে বাবা।" টুটুলও সহজে ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। আর তাছাড়া সুহানি তো এখন তার খুব পরিচিত। চোখ বন্ধ করলেই অপরূপ মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। এমন একটা মেয়েকে একবারের জন্যেও হলেও দেখা চাই ই চাই।

"ফেসবুক ডাক" আবার সহায় হলো। টুটুলের "ভালোবাসি তোমায়" বার্তাটা সেকেন্ডের মধ্যে পৌঁছে গেলো মেয়েটার কাছে।প্রথম দিকে মেয়েটা পাত্তা দিতে চাইলো না। টুটুল ও নাছোড়বান্দা। শুধু দেবে বলেই অন্তত পাঁচটা মিনিট চাই। মায়াতে পড়েই হোক বা বিরক্তি কিংবা কৌতূহল বশেই হোক সুহানি টুটুলকে তার আসার চাইতে ও তিন গুন্ বেশি দিলো। পনের মিনিট...।

নামে সুহানি। দেখতেও রূপবতী। মিষ্টি হাসিতে মায়ার জন্ম দিতে পারে। মেয়েটার চোখে নিমেষেই হারিয়ে যাওয়া যায়। চোখে মুখে প্রাণের ছাপ। কম কথা বলেও উচ্ছলতায় ভরপুর। হাস্তে হাস্তে টুটুলকে বললো "আমি একজনকে ভালোবাসি, আমাকে যত তাড়াতাড়ি ভুলে যেতে পারবেন,আপনার জন্য ততই ভালো।"

কথাই টুটুলকে সহজে কেউ পেরে উঠবে না। তবে আজ সামনে বসে থাকা মেয়েটাকে দেখতেই ভালো লাগছে। কথা বলে শুধু শুধু হাতের পনেরোটা মিনিট নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না। আর তাছাড়া ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে,ও তো জানবে "মানুষের মস্তিস্ক কোনো মেমোরি কার্ড নয় যে চাইলেই মুছে ফেলা যায়।"থাকে না বলাই ভালো। অযথাই ডায়লগবাজি।

-আমরা তো ভালো বন্ধু হতে পারি? টুটুল জিজ্ঞেস করলো।

-তাতে লাভ?মেয়েটার পাল্টা প্রশ্ন।

বিজনেসের স্টুডেন্টরা সব সময় মনে হয় লাভ হিসাব করতে জানে। চাইলেই এই কঠিন কথাটা মেয়েটাকে বলে দেয়া যায়। কিন্তু না। এমন একটা মেয়েকে কঠিন কথা বলা সাজে না। আজ নাহয় সেই জিতুক।

-কি হলো চুপ করে আছেন? আপনার তো পনেরো মিনিট শেষ।

এমনি দিনে কচ্ছপ এর গতিতে চললেও ঘড়িটা আজ বোল্টের গতিতে ছুটছে। টুটুল একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বললো, আমাদের কি আর কখনোই দেখা হবে না?

-না।

টুটুল আর কিছু বলে না। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অভিমানে বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে উঠে।চলে যাবার সময় একবারও পিছন ফিরে তাকায় না সে। ভাবে "ও কি ভুল সময়ে ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে?" পরক্ষনেই নিজেকে সান্তনা দেয়, আসলে বোঝাতে পারেনি মেয়েটাকে কতটা ভালোবাসে সে।

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। টুটুল তার চিরচেনা ভঙ্গিতে শরীরটা ভিজিয়ে দিয়েছে। সুহানি তখন বোঝেনি টুটুল তার কান্না লুকাচ্ছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৪৬

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: কেঁদে হালকা হওয়ার পর কী হল?

২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: জল যেমন জলকে চায়, মানুষও তেমনি মানুষকে চায় । ছবি, বই, গান, প্রকৃতি এসব কারো সর্বক্ষণের সঙ্গী হতে পারে না । নারী-পুরুষকে, পুরুষ-নারীকে যদি ভালো না বাসে । আদর না করে- তাহলে মনের শক্তি নষ্ট হয়ে যায় । পুরোপুরি সুস্থ থাকা যায় না

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.