নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৪০৪ নট ফাউন্ড

মুক্তাদির অনল

১৯

মুক্তাদির অনল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেট পূজা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৪৫

তৃষ্ণায় সাদেকার গলাটা শুকিয়ে আসছে।
একটু পানি হলে ভাল হত।কিন্ত আশেপাশে কোন নলকূপ নেই।পানি খেতে গেলে সেই দশ-পনের মিনিট হাঁটা পথ।এত সময় সাদেকার হাতে নেই।ভাইয়ের আসার সময় হয়ে গেছে।সাদেকা তাই তৃষ্ণাটাকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে চোখ বন্ধ করে আমগাছটার নিচে বসে আছে।এই ভরদুপুরে আমবাগানটায় গ্রামের মানুষের যাওয়া-আসা নেই বললেই চলে।মাঝে মাঝে অবশ্য কেউ কেউ পাটি পেতে গাছের নিচে দিব্যি ঘুমায়।আজ সেটাও নেই।না থাকার অবশ্য একটা কারন আছে,সপ্তাহের এই দিনটায় বাড়ির ছেলে বুড়োর বেশিরভাগই হাটে যায়।
আমবাগানটাকে আজ বড্ড বেশি নিরব লাগছে সাদেকার কাছে।ভ্যাপসা গরমে চারিদিকে যেন আগুনের ফুল্কি ছিটছে।মাঝে মাঝে দু-একটা কাক কা-কা শব্দে ডেকে ওঠে।সাদেকা মনে মনে ভাবে কাকগুলোর তো পাখা আছে,চাইলেই ফুরুত করে উড়ে গিয়ে পানি খেয়ে আবার আসতে পারে।ইস,আমার যদি কাকের মত এমন দুটো পাখা থাকতো।

খুব বেশি ধরলেও সাদেকার বয়স সাত-আট বছরের বেশি হবে না।এই বয়সেই অভাব নামক এক রাক্ষসীর সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে।জন্মের আগেই বাবা মারা গেছে।জন্মের চার বছরেই মাথায় মাকে ও হারিয়েছে।চার ভাই-বোনের সংসার।সাদেকা সবার ছোট হলেও অন্য ভাই-বোনগুলো যে খুব লায়েক হয়ে উঠেছে তাও নয়।সবার বড় বোনটার বয়স উনিশ।বাকিগুলো তের থেকে আঠারোর মধ্যে।বড় বোনদুটো পরের বাড়িতে কাজ করে।একটা ভাই সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি করে।সংসারে চার-চারটা মুখের অন্ন জোগানর আয় বলতে ওইটুকুই।দিনে একবেলা রান্না হয় আর সেটাই তিন ভাগে ভাগ করে তিন বেলা খাওয়া হয়।ছোট্ট সাদেকার পেটের ক্ষুধা কখনই মেটে না।আগেরদিনই সে তার বড় বোনকে বলে দিয়েছে তাকে যেন তিনবেলার খাবারটা একবারেই দিয়ে দেয়া হয়।বুবু মনে হয় কথাটা শুনতেই পাই নি।আজ আরেকবার বলতে হবে।

আজ যেন সাদেকার অপেক্ষা শেষ হয় না।পরের সপ্তাহে সে যখন আবার আসবে তখন একটা বোতলে করে পানি নিয়ে আসবে।রাস্তাই সে মাঝে মাঝেই বোতল পড়ে থাকতে দেখে।আজই একটা কুড়িয়ে এনে ভাল করে ধুয়ে রাখতে হবে।সাদেকা মনে মনে পণ করে বোতলভর্তি পানি না নিয়ে আসার ভুল সে আর কখনই করবে না।সাদেকা রাস্তার দিকে তাকায়।নাহ,ভাই আসছে না।সাদেকা গাছে হেলান দিয়ে আবার চোখটা বন্ধ করে।মনে মনে সে নিজের একটা পৃথিবী কল্পনা করে।যেখানে সে তিন বেলায় পেট পুরে ভাত খায়,বাড়িতে টিনভর্তি মুড়ি থাকে,বয়োমে গুড় আর নারকেলের নাড়ু থাকে।চোখ বন্ধ করলেই বড় বুবু তার হাতে দুটো টাকা দেই,আর সেই টাকা নিয়ে সে দৌড় দিয়ে কালুর মিষ্টির দোকানে গিয়ে একটা সন্দেস কেনে।আহা,কি মিষ্টি।সাদেকা মিটি মিটি হাসে...

-কিরে ঘুমিয়ে পরেছিস?? বড় ভাই ডাক দেয়।
সাদেকার ঘুম ভেঙ্গে যায়।দুহাত দিয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বলে “না”।

“এই নে ধর” বলে বড় ভাই সাদেকার হাতে ছোট্ট পলিথিনে মোড়ানো পোয়া খানেক গরুর মাংস ধরিয়ে দেয়।বুবুকে বলিস একটু বেশি করে তেল-পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করতে।মেম্বারের বাড়িতে বাজারটা দিয়ে আবার আমাকে হাটে আসতে হবে।মেম্বারের দুই গরুরগাড়ি ধান আজ হাটে নামিয়েছে।ওইগুলো বিক্রি করে আবার টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে।বাড়িতে আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে।

সাদেকা দাদার কথার দিকে কান দেয় না। ও শুধু দাদার হাতের ব্যাগদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে।চোখ বড় বড় করে বলে “দাদা,মেম্বাররের বাড়ির জন্য তুমি এত বাজার করো?এত খাবার ওরা কয়দিনে খায়?”

বড় দাদা চুপ করে থাকে।

সাদেকা আবার বলে “দাদা, তুমি যে এখান থেকে মাংস দাও,ওরা বুঝে ফেলে না?”

বড় দাদা কিছু বলে না।শুধু ছোট বোনটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “এত এত বাজারের মধ্যে এতটুকু ওদের চোখে পড়বে নারে বোন।তুই যা তাড়াতাড়ি।বুবু তোর জন্য বসে আছে।”

সাদেকা দৌড় দিয়ে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে।সত্যিই বাড়িতে ওর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।সপ্তাহের এই একটা দিন ওরা মাংস খায়।অন্যান্য দিন তো শাঁক লতা-পাতা দিয়েই দিন চলে যায়।আজ হোক এক টুকরো মাংস,তবু খায় তো।যেতে যেতে সাদেকা নলকূপের কাছটাই এসে পড়ে।ইস!! বড্ড পিপাসা পেয়েছে।একটু পানি খাওয়া দরকার।পরক্ষনেই ভাবে, না থাক রাতে আজ মাংসের তরকারি।শুধু শুধু পানি খেয়ে ক্ষুধাটা মারতে ইচ্ছে করছে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৩

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পড়তে গিয়ে চোখে জল চলে আসলো, বুকের ভেতরটা মনে হয় চাপ দিয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে.. :(

২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৩

মাআইপা বলেছেন: ভালই করেছেন এখানে গল্পটা শেষ করে। আর একটু লেখা বড় হলে দেখা যেত চুরির দায়ে বড় দাদা মার খাচ্ছে। এমনিতেই কষ্ট পেলাম তার উপর বড় দাদা মার খেলে ভীষণ খারাপ লাগতো। এমন অসহায় যে কত আছে কে জানে!!!!!!!!
ভাল হয়েছে লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.