নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৪০৪ নট ফাউন্ড

মুক্তাদির অনল

১৯

মুক্তাদির অনল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ষায় লেখা কবিতা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩

সেসময় ফটোগ্রাফার হিসেবে ভালোই নাম কুড়িয়েছিলাম। বন্ধু সার্কেলে দুজন আবির ছিলাম বলে কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো, আবির কি রে ? সাথে সাথে পাল্টা প্রশ্ন আসতো কোন আবির? ট্যাঁরা নাকি ফটোগ্রাফার? সে যাই হোক, যখন প্রথম বর্ষে পড়তাম ছবি তোলার নেশাটা এমনভাবে মাথায় চেপে বসেছিল যে সবকিছু বাদ দিয়ে ইভেন্ট বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তুলে বেড়াতাম। ভালোই লাগতো। নতুন জায়গা,নতুন মানুষ, অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া আর সুন্দরী মেয়েদের "ভাইয়া,আমার একটা ছবি তুলে দেন"-এর মধুর রিকোয়েস্ট। সব মিলিয়ে লাইফ ইজ ভেরি ভেরি বিউটিফুল অবস্থা। আমার কাছে বেশ কিছুদিন পরপরই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের সিডিউল থাকতো।এমনি একবার এক হিন্দু পরিবারের বিয়ে কাভার গেছিলাম। আমি আর আমার এক বন্ধু। আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয় হিন্দুরা তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটাকে মোটামুটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সবকিছুই একেবারে অন্যরকম। এলাহী কান্ড অবস্থা। জাকজমকপূর্ণ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আমি কনের ছবি তুলছি। হটাৎ এক মেয়ে এসে কনের হাতে ফোন দিয়ে বললো "দিদি,নে। জামাইবাবু কল করেছে।" কনে আমার দিকে তাকিয়ে "এক্সকিউজ মি, এক সেকেন্ড" বলে একটু আড়ালে চলে গেলো। আমি ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কনের ছোট বোনের দিকে চোখ পড়তেই আমি একেবারে স্থির। আমার সামনে যে দাঁড়িয়ে ছিল সে অতি রূপবতী একজন তরুণী। একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। ভাবলাম এমন পরীর মত একটা মেয়ের ছবি তুলতে না পারলে ফটোগ্রাফী জীবনটায় বৃথা। বললাম "নড়বে না, ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকো" বলেই ক্যামেরায় চোখ রাখলাম।
মেয়েটা এবার আমার দিকে তাকাতেই... একটা ক্লিক।
বললাম " উহু, বললাম না নড়বে না। ছবিটা ভালো হয়নি।আরেকবার।একটু স্মাইল...."
মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হাসলো। আমি পরপর কয়েকটা ছবি তুললাম। ছবিগুলো দেখতে দেখতে বললাম "বাহ্!! তোমার ফটোফেস তো অনেক সুন্দর"
-কিন্তু মা যে বলে আমি দেখতেও অনেক সুন্দর।
এবার মেয়েটার দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।সুন্দর চেহারা দেখে যতটা লাজুক ভেবেছিলাম, ততটা নয়.মুখে কথার খৈ ফুটে।বললাম, "তোমার মা মিথ্যে বলে না। একটু আলোর নিচে দাঁড়াও, আরো কয়েকটা ছবি তুলে দেই।"
-না।
-না কেন?
-আমার ছবি তুলতে ভালো লাগে না।
-কেন? ছবি তুললে কি তোমার সব সৌন্দর্য ছবির মধ্যে চলে আসবে?
-না, আসলে আমি তো অনেক সুন্দর। ছবি তুললে অন্য অনেকে আমার ছবি দেখবে।তারপর কেউ পছন্দ করে আমাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে যাবে।আর আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।
ওর কথাগুলো শুনে না হেসে পারলাম না। মনে মনে ভাবলাম মেয়েটা ঠিক যতটা সুন্দর, রূপ নিয়ে ঠিক ততটাই অহংকারী।বললাম "নাম কি তোমার?"
-বর্ষা।
-সুন্দর নাম। "বর্ষা।" এই নামটা শুনলেই একটা কবিতার কথা মনে পড়ে "এমন বর্ষায়..."
-আপনার লেখা?
-ধুর, তুমি তো শুনলেই না?
-আগে বলুন আপনি লিখেছেন কিনা?
-আরে নাহ,আমি লিখতে যাব কেন?
-তাহলে বাদ দিন। এর আগে যারা আমার নাম শুনে কবিতা শুনিয়েছিল সবগুলো ওদের নিজের লেখা। বলেই হাসতে হাসতে চলে গেলো।

আমি তো পুরাই থ বনে গেছি। কেবল একটু ইম্প্রেশন ক্রিয়েট করার চেষ্টা শুরু করেছি আর অমনি বোল্ড আউট। তবে মেয়েটার কথার মধ্যে একটা ঝাঁজ আছে। কথা ও বলে বাচ্চার মতো করে। হাউ সুইট!!

-কি হাউ সুইট?

পাশে তাকিয়ে দেখি কনে চলে এসেছে। বললাম "না দিদি, আপনার বিয়েতে এতো এতো মিষ্টি, ভাবাই যায় না।" ছাড়ুন না,আপনি লাইটের সোজাসুজি দাঁড়ান। এইখান থেকে ছবি আরো ভালো আসবে।

এরপর আবার ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।কিন্তু বর্ষা যেন আমার মনের পোড়া মাটিগুলোকে একদম ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সারাক্ষন শুধু ওর কথাই ভাবতে লাগলাম।ও কখনো বান্ধবীদের নিয়ে মজা করছিলো,কখনো সিঁদুর খেলছিল। শাড়িতে এতই অপরূপ লাগছিলো যে একবার দেখলে আর চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না। যতবার দেখি ততই মুগ্ধ হই। আর যতবার ওর সাথে কথা বলতে যায় ততবারই ও হাসতে হাসতে বলে "আপনি বরং ফটোগ্রাফিটাই করুন,ঐসব কবিতা-টবিতা আপনাকে দিয়ে হবে না।" বলেই আবার চলে যায়।

সাধারণত অনুষ্ঠান শুরুর আগেই আমাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এমন সময় বর্ষা এসে যারা খাবারের দেখভাল করছিলো তাদের বললো "মেহমানদের ভালোভাবে খাইয়ে দিয়ো,নয়তো আবার রাগ করে ভালোভাবে ছবি তুলবেন না।"
আমি বললাম তুমি বসো না,ওরা ঠিকমতো তদবির করতে পারছে না।
বর্ষা আমার সামনে এসে বসলো।
বললাম "তুমি কি আমার কোনো কথাই কিছু মনে করেছো?"
-না,না। কি আবার মনে করবো? আমি জানি আমি সুন্দর,সবাই সুযোগ নিতে চাই। আগে এইসব নিয়ে ভাবতাম।এখন আর পাত্তা দেয় না।
-তুমি কি জানো,তুমি তোমার রূপ নিয়ে একটু বেশিই অহংকারী?
-জানি।
-মানছি তুমি অনেক সুন্দর। তাই বলে এতটা স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড হওয়াটাকি একটু বেশিই হয়ে গেলো না। এবার মনে হয় মেয়েটা একটু অপ্রস্তুত হয়েছে।আমারও এমনভাবে বলাটা উচিত হয়নি।নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বললাম "অপোজিট এট্ট্রাক্ট, বলে একটা কথা আছে জানো। তুমি ঠিক যতটা সুন্দর আমার কাছে মনে হয় আমি ঠিক ততটাই অসুন্দর।উই ক্যান বি গুড ফ্রেন্ডস।"

-বর্ষা এবার শব্দ করে হাসলো। তারপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। বললো "আপনি খান,আমি যাই। অনেক কাজ বাকি আছে।"
-"তুমি তো আমার কথার উত্তর দিলে না" জিজ্ঞেস করলাম।
- ভগবানের বানানো পৃথিবীতে কোনো কিছুই অসুন্দর নয়। বলেই আবার চলে গেলো।

এই প্রথমবারের মতো মনে হতে লাগলো মেয়েটাকে আমার সত্যিই অনেক ভালো লাগতে শুরু করেছে। শুধু ওর কথায় ভাবতে ভালো লাগছে।ওর হাসি,ওর কথা বলা,উচ্ছলতা,অহংকার সবকিছুই ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাকে।বিয়ে শেষ। যেদিন চলে এসব সেদিন নিজের খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো।শুধু মনে হতে লাগলো, ইস !! আর কখনো হয়তো ওর সাথে দেখা হবে না। ব্যাপারটা নিয়ে আমার বন্ধুর সাথে কথা বললাম। ও বললো "দ্যাখ দোস্ত,চলেই তো যাবি। কখনো আর দেখা নাও হতে পারে।তুই বরং ওকে তোর ভালোলাগার কথাটা বলেই ফেল।"

আসার আগে বর্ষাকে গিয়ে বললাম "তোমাকে কিছু বলার ছিল"
-হুম, বলুন।
-আমি কথাগুলো বলেই চলে যাবো।শুধু আমিই বলবো। তোমার কিছু বলার দরকার নাই। কারণ "না" শুনতে আমার ভালো লাগে না।
-বলুন।

-আমি জানি তোমার সাথে আমার কোনোদিক দিয়েই মেলে না। অনেক সুন্দর তুমি,সুন্দর করে হাসো,কথা বলো,আদরের দুলালী তুমি।জানিনা কেন আমার মনে হচ্ছে এখন থেকে চলে যাবার পর আমি তোমাকে বড্ডো বেশি মিস করতে চলেছি। এমন অনুভূতি কখনো কারো জন্য হয় নি আমার। আমি তোমাকে বোঝাতে পারছি না আমার মনের মধ্যে এখন কি চলছে। চলে যাচ্ছি,কখনো দেখা হবে না হয়তো।আমি তোমাকে সারাজীবন মনে রাখবো আর...
-আপনার বলা শেষ?
-না। যেটা বলতে চাচ্ছি সেটাই তো বলা হলো না।
-বলতে হবে না, আপনার চোখ দেখে আমি পড়তে পারছি আপনি কি বলতে চাইছেন।
-(আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি) বললাম তুমি কিছু বলবে না?
-না। কারণ আপনার "না" শুনতে ভালো লাগে না।

আমি চলে এলাম।

এর প্রায় দিন দশেক পরে হটাৎ একদিন গভীর রাতে অচেনা নাম্বার থেকে একটা কল আসলো।রিসিভ করে বললাম "হ্যালো.."
অন্য প্রান্ত থেকে একটা মেয়ে কণ্ঠ "আপনার কবিতাটা শোনা হয়নি এখনো, শোনান এখন"
-বর্ষা তুমি!!নাম্বার কোথায় পেয়েছো?
-আপনি আমাদের ওয়েডিং ফটোগ্রাফার। আপনার নাম্বার ম্যানেজ করা কঠিন কিছু না। ছাড়ুন,বাদ দিন। এখন কবিতা শোনান,অনেকদিন থেকে আপনার কবিতা শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।
-"মেঘ তুমি বড়াই করো না.."
-থামুন,থামুন, আর বলতে হবে না। খুবই নিম্নমানের কবিতা।কে লিখেছে?
-আমি।
-ওহ,তাহলে শোনান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

সপ্তর্ষি নাথ বলেছেন: সুন্দর ছিল ভাই

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:০৩

মুক্তাদির অনল বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.