নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

৪০৪ নট ফাউন্ড

মুক্তাদির অনল

১৯

মুক্তাদির অনল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপকথার রাজকুমার- নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২০

মনে আছে ব্লকব্লাস্টার “সারফারস” এর কথা?? কিংবা ধরা যাক রাজকুমার হিরানির “মুন্নাভাই এম বি বি এস” এর কথা।যেকোনো বলিউড সিনেমাপোকাদের মাথায় এই সিনেমাগুলো অনেকদিন গিজগিজ করবে সমসাময়িক সুপারহিট নায়ক আমির খান বা সঞ্জয় দত্তের অভিনয়গুণ,সাবলীল স্ক্রিপ্ট বা অসাধারন ডিরেকশানের জন্যে।কিন্তু কজন জানে এইসব মুভিতে একজন সত্তিকারের অভিনেতা তার অঙ্কুর গজাচ্ছিলেন।হ্যাঁ, সারফারসে আমির খানের হাতে পিটুনি খেতে খেতে প্রান ভিক্ষে চাওয়া বা মুন্না ভাই এম বি বি এস –এ লাথি খাওয়া পকেটমারটার কথা বলছি।হোক কয়েক সেকেন্ডের অভিনয়,হোক জুনিয়র আর্টিস্ট,এত এত অসাধারনের ভিড়ে হয়ত কেউ ঐ অতি সাধারনটাকে খেয়াল করে নি,তবুও তিনি ছিলেন।আর এখন?তিনি এখন আছেনই নয়,বলিউডের ইতিহাসে তিনি আজীবন থাকবেন।

নাম- নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি।

“কেউ যখন আমার দিকে তাকায়, মনে হয় সে আমাকে দেখছে না। আমার ভেতর অন্য কাউকে খুঁজছে। তারা আসলে আমাকে নয়, আমার ভেতরের তারকাকে খোঁজে। কিন্তু আমার তো সেই তারকাদ্যুতি নেই। তাই তাদের সেই চাহনির সঙ্গে এখনো আমি অভ্যস্ত হতে পারিনি” কথাগুলো নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির।যশ,খ্যাতি আর অর্থের প্রাচুর্য হলেও পা এখনো মাটিতেই আছে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির।রূপকীয় কথা হলেও অজপাড়া গ্রামের মাটি থেকে উঠে এসেই বিশ্ব মাতিয়েছেন এই মানুষটা।কৃষক বাবার নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে নওয়াজ সবার বড়।অভাবের সংসারে যেখানে তিনবেলা খাবার জোটানই দায় সেখানেও নওয়াজউদ্দিন শেষ করেছেন তাঁর গ্রাজুয়েশন।ওহো,গ্রামের প্রথম গ্রাজুয়েট!!গল্প-উপন্যাসে ছাই এর মধ্যে খুব সহজেই মুক্তো পাওয়া যায়।নওয়াজউদ্দিন কোন গল্প-উপন্যাস নন,সেজন্যই হয়ত সেই ছাই এর কয়লাটার মুক্তো হওয়াটা খুব সহজ ছিল না।

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙের ডিগ্রি ছিল।একটা কোম্পানিতে কেমিস্টের চাকরিও করতেন।চাইলেই আর পাঁচটা সাধারন মানুষের মত জীবন বেছে নিতে পারতেন।কিন্তু না,স্বপ্ন তাঁকে ঘুমাতে দিত না।তাড়িয়ে বেড়াতো প্রতিনিয়ত। তাইত সবকিছু ছেড়েছুড়ে শুধুমাত্র মেধা,বিশ্বাস আর স্বপ্নটাকে পুজি করে চলে এলেন মুম্বাই।যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের স্বপ্ন নিয়ে এই শহরটাই ভিড় করেন।সত্যি হয় কজনের?হারিয়ে যান তারা যারা হাল ছেড়ে দেন।কিন্তু নওয়াজউদ্দিন তো হাল ছেড়ে দেবার মানুষ নন। তাইত ভারতের উত্তর প্রদেশের অখ্যাত গ্রাম বুধানায় জন্ম নেয়া নওয়াজ তার পরিশ্রম ও ধৈর্যের জোরে আজ বিখ্যাতদের কাতারে।

সাল ২০০০। নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির শুরুর গল্পটা মোটেই সিনেমার মত “নায়কের এন্ট্রি” টাইপ ছিল না। থাকবেই বা কেন, কৃষ্ণবর্ণ নওয়াজের না ছিল নায়কের মত চেহেরা,না ছিল সিক্স প্যাক অ্যাবস।তবে হ্যাঁ, ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা থেকে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ডিগ্রি ছিল।কিন্তু এটা তো আর কোন লিখিত পরীক্ষা নয় যে ডিগ্রি থাকলেই সিনেমাই ভাল রোল পেয়ে যাবেন।নওয়াজউদ্দিন ঘুরতে থাকলেন পরিচালক, প্রযোজকদের অফিসে অফিসে।যেখানেই কড়া নাড়েন,ফিরে আসতে হয় সেখান থেকেই।রোজগার নেই,পকেটে খাবার টাকা নেই,রাতে ঘুমানোর জায়গা নেই।তবু আঁকড়ে পড়ে থাকেন মুম্বাইয়ে।শেষমেশ একটা অফিসে নিশিপ্রহরীর চাকরি নিলেন।আশা,তাতে অন্তত যদি হাতখরচটা আসে।ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-র বড় ভাইয়ের সাথে রুমে উঠলেন এই শর্তে যে বড় ভাইয়ের জন্য খাবার তৈরি করতে হবে।দাঁতে দাঁত চেপে নওয়াজ তাতেই রাজি হয়ে গেলেন।ভাবলেন মরতেই যদি হয় তবে মুম্বাইয়েই মরবেন অন্তত নিজেকে সান্তনা তো দিতে পারবেন যে তিনি চেষ্টা করেন নি।

ঘুরতে ঘুরতে নওয়াজ “সারফারস” ছবিতে প্রথম সুযোগ পেলেন।কয়েক সেকেন্ডের অভিনয়।ছোট-খাট চরিত্র।তিনি করলেন...। এমনিভাবে “মুন্নাভাই এম বি বি এস” “ব্লাক ফ্রাইডে” “পিপলি লাইভ” “ডেভ ডি” “দ্যা বাইপাস” “নিউ ইয়র্ক” এমন অনেক ছবিতেই ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে লাগলেন।ইতিহাস সাক্ষী, কঠোর পরিশ্রমী মানুষকে ভাগ্য কখনও হতাশ করে না। নওয়াজউদ্দিন দেখা পেলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের সাথে।যার চিন্তা ভাবনার সাথে নওয়াজউদ্দিনের চিন্তা ভাবনা মিলে গেলো একেবারে খাপে খাপ। অনুরাগ বানালেন সুপারহিট “দ্যা গ্যাংস অব ওয়াসিপুর”।যেখান থেকে নতুনের শুরু হল নওয়াজ এর।আর বলিউড আবিস্কার করল একজন সত্তিকারে অভিনেতা।

এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি নওয়াজকে। “পান সিং তমার” “কাহানি” “দ্যা লাঞ্চবক্স” “তিন” কিক” “বাজরাঙ্গি ভাইজান” “মাঝি দ্যা মাউনটেন ম্যান” “রইস” “তালাশ” “রমণ-রাঘব” “বাদলাপুর” “গ্যাংস অব ওয়াসিপুর ২” “হারামখোর” এমন বেশ কিছু ছবিতে শক্ত অভিনেতা হিসেবে নিজের ছাপ রেখেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। সময়টা এখন একেবারে বদলেছে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির।প্রযোজকরা এখন টাকা লগ্নি করার জন্য নওয়াজউদ্দিনের পিছু নিচ্ছেন।বরং সময় দিতে পারছেন না নওয়াজউদ্দিন নিজেই।বিষয়টা এমন নয় যে একক অভিনেতা হিসেবে নওয়াজউদ্দিনের ছবি শত শত কোটি রুপির আয় করছে কিন্তু তার ছবি নিয়ে আসছে দেশ-বিদেশের পুরস্কার, আর সম্মাননা।কারন, নওয়াজউদ্দিন বলিউডের মাল-মশলা ঘরানার ছবি থেকে বেরিয়ে এসে ছবি করেন অন্য আঙ্গিকের।যেখানে গল্প বলা হয় সম্পূর্ণ আলাদাভাবে,গল্পই তৈরি হয় নওয়াজউদ্দিন চরিত্রটাকে মাথায় রেখে।

খুব বেশি সিনেমা তিনি করেন নি।কিন্তু যে অল্প কিছু সিনেমা তিনি করেছেন সেখানে তিনি রেখেছেন নিজের প্রতিভা।আর এই প্রতিভা দিয়েই তিনি বলিউডে গেড়েছেন নিজের শক্ত খুঁটি।হোক সেটা বলিউডি মারকাটারি ছবি কিংবা আর্ট ফিল্ম। নওয়াজউদ্দিন সবখানেই ফিট।যদিও মারকাটারি ঘরানার ছবি খুব একটা পছন্দ নয় নওয়াজের, তবুও তিনি মাঝে মাঝে নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে এসে এমন ছবি করেন।কারণটা জানলে একটু অবাকই হবেন।এর পিছনে আছে নিজের গ্রামের মানুষের প্রতি ভালবাসা।কেউ কি জানেন নওয়াজউদ্দিনের গ্রামের মানুষদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের ছবি “কিক”। আর সবচেয়ে পছন্দের দৃশ্য??

“কিক” ছবিতে সালমান খান-কে মারা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সেই ঘুষি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি আমার পছন্দের অভিনেতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.