নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা দেখি যেভাবে দেখি (কহিলো সে ফিরে দেখো, দেখিলাম থামি , সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি...) [email protected]
থ্যাংকসগিভিং উইকএন্ডের চান্নি পসর রাইতে ড্রাকুলা দর্শন
---------------------------------------------------------------
তখন সদ্য পড়তে এসেছি আমেরিকার উত্তর পূর্বদিকের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাস টাউন, শহরের জনসংখ্যা মূলত: ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক। আগষ্টে এসেছি, ফল (fall) সেমিস্টারে। আগষ্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হলো। সেপ্টেম্বর থেকে দেখছি পাতার রং বদলে যাওয়া এবং পাতা ঝরার খেলা। দেখতে দেখতে অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বরে শুরু হলো তুষারপাত। সেই শ্বেত ক্যাম্পাসে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আসলো টানা কয়েকদিনের ছুটি, বাৎসরিক থ্যাংকসগিভিং ডে'র (Thanksgiving Day)। এই ছুটিটা নিয়ে এখানে বিস্তারিত লিখবো না, সেটা আপনারা একটু গুগুল করলেই জানতে পারবেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে সেই ১৮৬৩ সাল থেকেই আব্রাহাম লিংকন নাকি এই ছুটিটা নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবারে উদযাপন করে আসছেন, যেটা এখন একটা বৃহৎ জাতীয় উৎসবে রুপ নিয়েছে। যেহেতু নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে এই দিনটি উদযাপিত হয় তাই এর সাথে শুক্রবারটি বেশীরভাগ মানুষই ছুটি নিয়ে নেয়। ফলে কমপক্ষে চারদিনের একটা ছুটির আমেজ তৈরী হয় সারা আমেরিকায় এই উপলক্ষে। যেহেতু সেটা ছিলো আমার প্রথম দেখা প্রথম থ্যান্কসগিভিং উদযাপন, তাই এ ছুটির ব্যাপকতা এ্ববং বিদেশী ছাত্র হিসেবে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমি তখনো কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।
থ্যাংকসগিভিং এর ছুটি শুরু হবার আগের দিন, অর্থাৎ বুধবার বিকেলে একটা ভাত ঘুম দিয়েছিলাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এপার্টমেন্টের রুমমেটরা কেউ নেই। বাইরে বেরিয়ে দেখি পুরো ক্যাম্পাস খাঁ খাঁ করছে। অন্যান্য উইকএন্ডে দেখছি ক্যাম্পাসে অনেক মানুষের চলাচল। আজ দেখি ক্যাম্পাস একদম ফাঁকা, একটা মাণুষ নেই। আকাশে ভরা পূর্ণিমা। ঘরে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে, টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে ভালো লাগলো না। গতকাল লাইব্রেরী থেকে আনা 'ড্রাককুলা' ম্যুভিটির ভিডিও ক্যাসেট চালিয়ে দিলাম। বিভিন্ন সময়ে কাউন্ট ড্রাকুলার জীবনী ভিত্তিক 'ড্রাকুলা' ছায়াছবির রিমেক ভার্সণ নির্মিত হয়েছে , কপাল গুনে হলিউড নির্মিত সবচেয়ে খতরনাক ভার্সনটাই আমি বুধবারে লাইব্রেরী থেকে এনেছিলাম। বাইরে আবারো হাল্কা তুষারপাত হচ্ছে, বিশাল ক্যাম্পাসে কোথাও কেউ নেই, আমি ছাড়া। আর ভিসিআর-এ চলছে কাউন্ট ড্রাকুলার সব রক্ত হীম করা , রক্তচোষা কাজ-কারবার! আমি একটু পর পর রিমোটের 'পজ' (pause) বাটনে চাপ দিয়ে লেপের ভিতর সেঁধিয়ে যাচ্ছি। আবার একটু পরে প্রচন্ড কৌতুহলের রোমান্চে একটু পর কাছিমের মতো মাথাটা লেপের বাইরে বের করে আবার রিমোটের 'প্লে' বাটনে চাপদিয়ে পরবর্তী দৃশ্যদেখছি। এভাবে দু'দশক আগের এক চান্নিপসর রাতে কাউন্ট ড্রাকুলার সাথে আমেরিকার এক ক্যাম্পাসে আমার প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে উদযাপন হয়। সেই দোলাচলের কথা আজো মনে পড়ে, কখনো ভয় জয়ী হয়, লেপের ভেতরে সেঁধিয়ে যাই, কখনো রোমান্চ জয়ী হয়, কল্লাটা কাছিমের মতো বের করে আবার ম্যুভিটা দেখতে থাকি।
ভাগ্যিস দেশে থাকতে কিশোর বেলায় সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড্রাকুলা বইটি পড়া ছিলো, এবং সে কারনে কিছুটা সাহস ছিলো মনে, নয়তো সে রাতে পুরো ম্যুভিটা দেখার হয়তো সাহস হতো না! ধন্যবাদ, সেবা প্রকাশনী!
১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:২২
মুক্ত মানব বলেছেন: ভাই, আমি নিশ্চিত, একটু গুগুলে খুঁঝলেই পেয়ে যাবেন ছবিটি। আমি যখন দেখেছিলাম তখন ছিলো ভিডিও ক্যাসেটের যুগ। এখন তো সব কিছুই ডিজিটাল। পাবেন নিশ্চয়ই।
২| ০২ রা জুন, ২০২১ রাত ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা তিনটা প্যারা করে দিলে পড়ে আরাম পেতাম।
১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:২২
মুক্ত মানব বলেছেন: দিলাম, আপনার পরামর্শমতো। ভালো থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ১১:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আমি তো আরেকটু হলেই ভয় পাইয়া গেছিলাম - ড্রাকুলা ছবি দেখে না, আপনার পোস্ট দেখে। পোস্টটা সত্যিই কোনো মুক্ত মানবের, নাকি কোনো জিনের- এটা এক ভয়ের উদ্রেক করতে যাচ্ছিল আর কী
আপনাকে কম্বলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে পোস্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমার এক যুগেরও অধিককাল সময়ে আপনার পোস্ট মনে হয় এই প্রথম দেখলাম। কী সৌভাগ্য আমার!!
ড্রাকুলা ছবিটার কোনো লিংক থাকলে দিন, দেখি ভয়টয় পাইয়া কাঁথার নীচে যাইতে পারি কিনা।
শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।