নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধারের আলোক হতে আমি জাগিয়াছি চির বিস্ময়ে...

মুমাইন

আমার মৃত্যুর দিন তোমরা যেন বলতে পার ‘শুভ মৃত্যুদিন’। কারণ ঐ দিনটা শুভ থাকা আমার জন্য খুব জরুরি।

মুমাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পান্তা-ইলিশের মধ্যবিত্ত রূপায়ণ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৪৩

একটা প্রশ্নের উত্তর পেলাম না আজও।

কেন পহেলা বৈশাখে ঘটা করে পান্তা-ইলিশ খেতে হয়? ইলিশের সাথে বাঙালির স্বয়ংসম্পূর্ণতার ইতিহাস জড়িত থাকতে প‍ারে। যেমন বলা হয়, মাছে-ভাতে বাঙালি। তবে ইতিহাসবিদরা এটাকে স্রেফ প্রবাদই মনে করেন। কারণ বাংলা অঞ্চলের অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল- ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ (অন্নদামঙ্গল)। দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারলে যদি দুমুঠো খাবার পাওয়া যায়, সেই আশায় উদ্ভব হল মঙ্গল কাব্যের। একথা তো প্রায় সবারই জানা।

কিন্তু পান্তা ভাতের রহস্য কী...?

গ্রামের দরিদ্র কৃষক অথবা দিনমজুর খুব সকালে কাজে বেরিয়ে পড়ে- সূর্য ওঠার আগেই। সে-সময় বাড়ির গৃহিনীরা থাকে ঘুমিয়ে। আগের দিন দুপুরের রান্না-করা ভাত রাতে পানি দিয়ে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা হত, সকালে খাওয়‍ার জন্য। কারণ তিন বেলা রান্না করার মতো সামর্থ্য বা মানসিকতা কখনওই তাদের ছিল না। যাদের অবস্থা ‘দিন আনে দিন খায়’ গোছের তাদের আবার শহরের সাহেবদের মতো গরম ভাত- এত বড়লোকি কপালে নাই- এমনটাই ভাবনা গ্রামের কৃষকদের।

পান্তা ভাতের প্রাসঙ্গিকতাও তাদের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। অথচ আমরা শহুরে শিক্ষিতজনরা তাদের নিত্য অপরিহার্যতাকে একদিন উৎসবের দোহাই দিয়ে যে কৃত্রিমতার পরিচয় দিচ্ছি, তা কি নিছক তামাশা হয়ে গেল না? কিংবা তাদের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শনের এই মহোৎসব নিয়ে কেউ কি একটুও সচেতন? প্রশ্ন রইল নিজ বিবেক ও জাতির কাছে?

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সম্রাট আকবর প্রথম বাংলা সন চালু করেন প্রশাসনিক কাজ-কর্ম পরিচালনার সুবিধার্থে। আর পহেলা বৈশাখকে কৃষক-প্রজার বহুদিনের বকেয়া খাজনা পরিশোধ করার সুযোগ দানের জন্য ধার্য করেছিলেন।

আজো গ্রামে-গঞ্জে বাকি টাকা তোলার জন্য পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ নামক অনুষ্ঠান করা হয়। ঐদিন কৃষকগণ খাজনা দিতে দরবারে যেতেন। আর দরবারের কর্মচারীরা তাদেরকে মিষ্টিমুখ করাতেন। কৃষকের দেনাশোধের আনন্দ আর সম্রাটের খাজাঞ্চিখানা টইটম্বুর হবার মাঝে মিষ্টিমুখটা দরবারের একটা কূটনৈতিক চালই বটে। কিন্তু তখন পান্তা-ইলিশের কোনো নামগন্ধও ছিল না।

কালক্রমে বাঙালি মধ্যবিত্ত পান্তা-ইলিশ ভোজ প্রথাকে আনন্দের হাতিয়ার হিসেবে লুফে নেয়। কিন্তু কেন এবং কী কারণে এই পান্তা এবং বহুমূল্যের ইলিশকে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার সাথে যুক্ত করা হল, বোধগম্য নয়।
অথচ বর্তমানে বাঙালির একটা বড় অংশ (বিশেষত শিক্ষিত) পান্তা-ইলিশ প্রথাকে বাঙালি সংস্কৃতির নিদর্শন মনে করে। মধ্যবিত্ত বাঙালি সাধারণত অনুষ্ঠানপ্রিয়, আনন্দপ্রিয় এবং বিশেষ করে ভেড়ার পালের মতো অনুকরণপ্রিয়। নাট্যকার বাদল সরকারের “এবং ইন্দ্রজিৎ” নাটকের একটা উক্তি মনে পড়ছে এ প্রসঙ্গে।

“সব্বাই করে বলে সব্বাই করে তাই”

অর্থাৎ সবাই করছে আমাকেও করতে হবে। কী অদ্ভুত! বাছ-বিচার নেই, জানাশোনার কোনো বালাই নেই। (অনেকে মনে করতে পারেন, আমি খুব বেশি জানি! আসলে তা নয়। আমি আমাদের জাতীয় চরিত্র উল্লেখ করেছি মাত্র। তবে এ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে একটু সৎ ও সচেতন মানসিকতাই যথেষ্ট।)

...যেখানে কলের চাকার মতো জীবনটা কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে কর্মক্লান্ত যান্ত্রিক নিয়মের মাঝে সেখানে এতকিছু বিবেচনা করার সুযোগ কোথায়? নিত্য চলমান জীবনের ফাঁকে নিজস্ব বিচারবোধকে আড়াল করে সবকিছুর মাঝে উৎসব খোঁজাই আজ মধ্যবিত্তের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।... এটাই যদি হয় মধ্যবিত্তের মুক্তির পথ, তাহলে আগামী প্রজন্মের জ্ঞানপঙ্গু হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েই যায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:০৫

সরদার হারুন বলেছেন: স্বাধীনতা পূর্বেও পন্তা ভাত আর ইলিশের প্রথা চালু হয়নি । এখনও
ঢাকা ছাড়া অন্যত্র তেমন প্রচলন হয়নি ।

আমার মনে হয় কিছু বিত্তবানদের দুধের স্বাধ ঘোলে মেটানোর জন্য এ
প্রথা চাল হয়েছে ।

+++++++++++++

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২৫

মুমাইন বলেছেন: এই প্রথার উদ্ভবের ইতিহাসটাই খুঁজে পাচ্ছি না... তবু এটাই বাস্তব যে সমাজের অধিকাংশই কিছু একটা পেলে তা নিয়ে মাতবে... এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে স্বাভাবিক।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: "সবকিছুর মাঝে উৎসব খোঁজাই আজ মধ্যবিত্তের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে" সহমত!

পান্তা কেউ খায় না আর এখন ইলিশ মাছ পায় না...তাই এই দুই বিরল বস্তুই পহেলা বৈশাখের প্রতীক হয়ে গেছে..

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২৯

মুমাইন বলেছেন: পহেলা বৈশাখের এই হুজুগে অবস্থার মধ্যে ইলিশের যে ঊর্ধ্ব মূল্য তা একদিকে অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য বয়ে আনলেও প্রকৃত চাষী-জেলেরা সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে।
তাই বৈশাখের এই প্রতীকটা আমার কাছে তাদের প্রতি ব্যঙ্গই মনে হয়।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:

বাংগালীদের মগজ অব্যবহৃত থেকে যায়।


আমি নতুন কিছু একটা চালু করবো।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১১

মুমাইন বলেছেন: B:-/ :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.