নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধারের আলোক হতে আমি জাগিয়াছি চির বিস্ময়ে...

মুমাইন

আমার মৃত্যুর দিন তোমরা যেন বলতে পার ‘শুভ মৃত্যুদিন’। কারণ ঐ দিনটা শুভ থাকা আমার জন্য খুব জরুরি।

মুমাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

-[:: গল্প ::]-

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

পুরান ঢাকার অন্ধকার গলির টিউশনিটা শেষ করে আলো-পথে এসে পা ফেলল নয়ন। ৩৬ নাম্বার বাসে দুটাকার বিনিময়ে নামল নিউমার্কেট মোড়ে। রাত প্রায় সাড়ে নয়টা। বেশ গতি নিয়ে হাঁটছিল সে। তার সামনে বস্তা-কাঁধে একটা ছেলে। জুতাবিহীন পায়ে স্বচ্ছল তার গতি। মুহসীন হলের মাঠের কাছে এসে নয়ন ছেলেটাকে ডাকল।

- এই দাঁড়া। (একটু ধমকের সুরে)

গেস্টরুমের শিক্ষাটা ইতোমধ্যে বেশ রপ্ত করেছে নয়ন। নিজের কণ্ঠস্বরে বিস্ময় লাগে তার। অনেক কিছু শিখে ফেলেছে সে হলে ওঠার ছমাসের মধ্যে। অনেক কিছুই শিখতে হয় জীবনের তাগিদে।

ছেলেটা আচমকা ভড়কে ওঠে। চুরি করে কিছু লুকোতে গিয়ে ধরা পড়ার মতো। নয়ন বেশ উপভোগ করে টোকাই ছেলেটার এই বেসামাল অবস্থা। ছেলেটার কাঁধে হাত রাখে সে, ‘ভয় পেয়েছ নাকি?’

ধমকের সুর পাল্টে এমন মোলায়েম স্বর শুনে ছেলেটা আরও অবাক হয়। নয়নের অভিনয়টাও তাহলে পাকা হয়ে গেছে। নিজের এই সাফল্যে সে আরও সচেতন হয়ে ওঠে। ছেলেটাকে নিয়ে বসুনিয়ার ঠিক অপজিটে ফুটপাতে বসে সে। ওর ডান হাতটা চেপে ধরে আবারও সেই প্রশ্ন। এবার ছেলেটা মুখ খোলে। কণ্ঠে খানিকটা জড়তা ভরা।

- ডর তো একটু লাগেই। আপনারে চিনি না আমি।
- আমি এইখানের ছাত্র। কোনো ভয় নেই।

তারপর একটু থেমে,
- কী কর তুমি?
- টোকাইগিরি মানে কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল এইগুলা টোকাই।
- তাতে কত পাও রোজ?
- ৩০/৪০ টাকা হয়।
- তাতে চলে?
- না চললেও চালাইতে হয়।
- থাকো কই?
- ফুটপাতে থাহি, গুলিস্তানে।
- দুপুরে কী খেয়েছ?
- চা, রুটি আর কলা খাইছি একটা।
- চা, রুটি খেয়ে ক্ষুধা মেটে?
- ভাই, আমারে ছাইড়া দ্যান, আমি যাই।

অস্বস্তি আর আতঙ্কে ছেলেটা নয়নের হাত গলে ছুটে যেতে চায়। রাস্তা থেকে কেনা চারটা আপেল থেকে একটা ছেলেটার হাতে দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করে নয়ন।
- আমার নাম সোহাগ।
- বাবা-মা কই থাকে?
- বাপে আমাগো ছাইড়া দিয়া নতুন বিয়া কইরা আলাদা থাহে। বাপের কাছে গ্যালে মারে। মায়ও একটা রিক্সাঅলার লগে ভাইগ্যা গ্যাছে। আমার একটা বইন আছে। হে মার লগে থাহে।
- তুমি তোমার মার কাছে যাও না?
- গ্যালে কয়, এইহানে আর আইবি না। মাঝে মাঝে ছোডো বইনডারে দ্যাখতে গ্যালেও আমারে তাড়াইয়া দ্যায়।

ছেলেটার এই নিঃসংকোচ স্বীকারোক্তিতে নয়ন কিছুটা নিরুপায় হয়ে ওঠে। ওর ভাষা যেন হারিয়ে যায়। ভাবে, কেন শুধু শুধু ওকে ধরে এগুলো জানতে চাওয়া। শুধু কি জানতে চাওয়া? সে কি পারবে সোহাগকে তার প্রাপ্য অধিকারটুকু ফিরিয়ে দিতে? ও তো ওর মতো ভালোই আছে। সারাদিন কাগজ টোকাচ্ছে। ক্ষুধা লাগলে চা, রুটি খাচ্ছে। বোনের জন্য মন কাঁদলে ছুটে যাচ্ছে। আবার মায়ের ভর্ৎসনা শুনতে হচ্ছে। সারাদিন কাজ শেষে গন্তব্যে পৌঁছে ও এখন দুচোখ বুজে ভাববে ওর বোনের কথা, ওর মায়ের কথা। আর ভাববে আগামী কাল কোন গলিতে টোকাতে গেলে ভালো পয়সা জুটবে, তার কথা। এতে নয়নের কী-ই বা করার আছে।

- ভাই, আমারে ছাইড়া দ্যান, আমি যাই।

নয়নের ভাবনায় টান লাগে। ছেলেটার ধরা হাতটা ঢিলে হয়ে যায় নিজের অজান্তে। সোহাগ সুযোগ পেয়ে হাতটা ছুটিয়ে নিয়ে দ্রুত উঠে চলে যায়। নয়ন ওকে ডাক দেয়- এই সোহাগ, আপেলগুলো নিয়ে যাও। তোমার বোনকে দিও।
সোহাগ দাঁড়ায় না। সামনে ওর অনেক পথ। হেঁটে চলে বীরের মতো। যেন মনে হয়, ক্যাম্পাসটা ওর একান্ত নিজের।

উত্তরা, ঢাকা
১৪.০৯.২০১৫

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

জুনজুন বলেছেন: ভাল লাগল..।.।.।.।.। আসলে জীবন বড়ই বৈচিত্রময়।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫

মুমাইন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অল্প কথায় অনুভুতিগুলো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন| সাধু

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪৫

মুমাইন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.