নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁধারের আলোক হতে আমি জাগিয়াছি চির বিস্ময়ে...

মুমাইন

আমার মৃত্যুর দিন তোমরা যেন বলতে পার ‘শুভ মৃত্যুদিন’। কারণ ঐ দিনটা শুভ থাকা আমার জন্য খুব জরুরি।

মুমাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের স্মৃতিরা অনেক রকম হয়

১১ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৮

১৯৬৮ সালের একটা বাদলা দিন কল্পনা করুন। ছয় তলার জানালা দিয়ে আপনি ঝরঝরে বৃষ্টি দেখছেন। রুমে মাত্র দুটা প্রাণি। আপনার রুমমেট গেছে টিউশনিতে আপনার ছাতাটা নিয়ে। আপনি তাই অলস বিকেলে জানালার গ্রিল ধরে বৃষ্টি দেখছেন।

হলের বাদল মামা দৌড়ে এল আপনার কাছে। স্যার, আপনার মা আপনাকে ফোন করেছেন, দ্রুত আসেন। আপনি ছয় তলা বেয়ে ফোন ধরতে গিয়ে কেটে গেল লাইন। আবার অপেক্ষা, কখন কল আসে। সন্ধ্যার পর দীর্ঘ লাইনে থাকতে হয়। এ সময়টা তেমন ভিড় নেই। আপনি মায়ের অপেক্ষায়, দৃষ্টি আপনার দেয়ালে সাঁটা টেলিফোনের দিকে।

রিনি সম্পর্কে আপনার কাজিন। সে জানে না, আপনার তিন দিন ধরে জ্বর। মিরপুর থেকে রিকশা নিয়ে হলে এসে খবর নিবে- এতবড় স্পর্ধা তখন কোনো মেয়েরই ছিল না। তাদের বাসার ফোনের লাইন কাটা- বিল পরিশোধ না করায়। আপনি অপেক্ষা করছেন, এই সময় যদি প্রিয় মানুষটা একটু খবর নিত। আপনি তাই ফোনের অপেক্ষায় কয়েকটা ক্লাসও মিস করেছেন। এক সপ্তাহ পর ফোন এল রিনির। আপনি ক্লাস থেকে এসে শুনলেন বাদল মামার কাছে, খালাম্মা আপনাকে ফোন করেছিল। আসলে ফোনটা কার ছিল, আপনি তা ভালো করেই জানেন।
কিন্তু আপনার আফসোসের সীমা রইল না।

আজ আপনার রেজাল্টের দিন। হল অফিসে গিয়ে জানলেন আপনি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন! মনের মধ্যে আনন্দের তুফান বয়ে যাচ্ছে। সবার আগে মাকে খবরটা দিতেই হয়। সবাই ফোনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ ৩০ সেকেন্ডের বেশি কথা বলার সময় পাচ্ছে না। তার মধ্যে হ্যালো বলতে বলতে আরও পনেরো সেকেন্ড পার হয়ে যায়। আপনি দীর্ঘ ৪০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে মাকে কল দিলেন। মা, তোমার ছেলে আজ ফার্স্ট ক্লাস গ্রাজুয়েট! আপনার উচ্ছ্বাস আপনার মাকেও আলোড়িত করল। ওপাশের ভেজা গলাটা আপনি টের পেলেও তাঁর উষ্ণ দুফোটার খবর হয়ত রাখেননি।

টেলিফোনে দীর্ঘ সময় কথা বললেই মামারা সন্দেহ করে। আড় চোখে চায়। আপনি তেমন পাত্তা দেন না। তবে ভয় হয় যদি আপনার নামে নালিশ যায় হাউজ টিউটরের কাছে? তবে হল ছাড়তে হবে কোনো সন্দেহ নেই। তবু আপনি রাত ১০টার দিকে ফোন করতে আসেন যখন সবাই ঘুমে বিভোর বা লাইব্রেরিতে পড়ায় ব্যস্ত। ৯টার পর ফোন করা নিষিদ্ধ। এটা হলের নিয়ম। আপনি মামাদের সাথে খাতির জমিয়ে সুযোগটা নিচ্ছেন। রিনি ১০টায় ফোনের জন্য অপেক্ষায় থাকে। শুধু একটি ফোনের জন্য। আপনাদের মধ্যে সম্পর্কটা অতটা গাঢ় না হলেও একেবারে ফেলনা নয়। দুএকটি আবেগের কথাবার্তা চলে এলেই বুঝতে পারেন টানটা কত গভীর! রিনি ফোন কেটে দেওয়ার পরও আপনি ফোনটি কতক্ষণ যে কানের সাথে চেপে ধরে রেখেছেন তা কেবল আপনিই জানেন। আর অপর প্রান্তের ফ্যাকাশে মুখটার ছায়ায় যে কী পরিমাণ মেঘ জমে আছে তা আপনি টের পান ঠিকই কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারেন না। কারণ এ বলা যায় না। আপনি হঠাৎ বৃষ্টির ঝুম ঝুম শব্দ টের পেলেন।

আরও একটা রাত। হয়ত শেষ রাত। খবর পেলেন রিনির বিয়ে ঠিক হয়েছে। জামাই কলকাতার বড় উকিল। বিলাত ফেরত। পূর্ব বাংলায় থাকবার ইচ্ছা বা আগ্রহ কোনোটাই তার নাই। রিনিকে কালই নিয়ে যাবে কলকাতায়। সন্ধ্যায় খালাম্মা ফোন দিলেন। বাবা, তুমি না এলে রিনি কিন্তু খুব রাগ করবে। জানোই তো, রিনি তোমাকে কত শ্রদ্ধা করে। আপনার কোনো প্রত্যুত্তর না শুনেই ফোনটা রেখে দিলেন তিনি। আপনি শেষ বারের মতো রিনির সাথে কথা বলতে চান। ফোনের অপেক্ষায় ফোনের পাশেই আপনি। অপেক্ষা যেন ফুরায় না আর...

এরকম কত শত গল্প জড়িয়ে আছে এই পুরোনো মডেলের টেলিফোনের সাথে। কত না-বলা কথা বলতেই কেটে গেছে টেলিফোনের লাইন। কত ফোন স্বপ্ন ভেঙেছে, আবার কত ফোন এনে দিয়েছে কত সাফল্যের খবর। সেই খবর আর কেউ রাখে না। ওর যদি প্রাণ থাকত তবে ডেকে উঠে বলত, তোমরা মানুষরা অনেক স্বার্থপর! আজ রংচটা বলে, অকেজো বলে আমাকে কি ছুঁয়েও দেখতে নেই। আমি কি এতটাই অবহেলার?

[ছবিটি মহসীন হল থেকে নেওয়া]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.