নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন এক বড় মহাজন

মনের কথা ব্লগে বলে ফেলুন,নয়তো মনে কথার বদহজম হবে

মুনযুর-ই-মুর্শিদ

মুনযুর-ই-মুর্শিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাঃ জন লাইক্যোওডিস সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা বিজ্ঞানী

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

২০০৫ সালে জন ওয়ারেন এবং বেরি মারশালকে হেলিকো ব্যাকটার পাইলোরি আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।তাদের এই আবিষ্কার পেপটিক আলসার রোগ সম্পর্কে জানার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।প্রায় ১০০ বছর যাবৎ পেপটিক আলসার রোগের কারণ খোঁজা হচ্ছিল।অনুসন্ধানীরা প্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। প্রায় সবাই পাকস্থলীর এসিডের দিকে নজর দিচ্ছিলেন।অল্প কয়েকজন অনুসন্ধানী এর পিছনে সংক্রামক উৎস নিয়ে চিন্তা করছিলেন।১৮৭৫ সাল থেকেই পেপটিক আলসারের জন্য "ব্যাকটেরিয়াল হাইপোথিসিস" প্রচলিত ছিল। সেই সময় থেকে কয়েকজন অনুসন্ধানী পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করার চেষ্টা করছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬৮ সালে Kussmaul এবং ১৯৪০ সালে গোরহাম (Gorham) পেপটিক আলসার এর চিকিৎসায় বিসমাথ ব্যবহারের কথা বলেন। বেঞ্জামিন বার্গ নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে পেপটিক আলসারের প্রান্তে(Peptic Ulcer Margin) সংক্রমন কমাতে আংশিক ভেগোটমি(Partial Vagotomy) শুরু করেন। ১৯৪৬ সালের দিকে উনি পেপটিক আলসার এর চিকিৎসায় ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন (Chlortetracycline) এর ব্যবহার শুরু করেন; পরে অবশ্য তিনি এই ঔষধের ব্যবহার বন্ধ করে দেন। এই সময় পর্যন্ত অধিকাংশ অনুসন্ধানী এই রোগের পিছনে পাকস্থলীর এসিডের পরিমানের ভারসাম্যহীনতা এবং ভেগাস নার্ভ এর কাজের অস্বাভাবিকতাকে দায়ী করছিলেন।১৯৫৮ সালে Dr. John Lykoudis হেমোরেজিক গ্যাস্ট্রো ইনটেরাইটি সে আক্রান্ত হন।তিনি এর চিকিৎসায় এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহন করেন।উনি অনুধাবন করেন হেমোরেজিক গ্যাস্ট্রো ইনটেরাইটিস'ত(Hemorrhagic Gastroenteritis) ভালো হয়েছেই সাথে উনার পেপটিক আলসার রোগের লক্ষনগুলোও ভালো হয়ে গেছে।

এরপরে উনি এ নিয়ে আরো গবেষনা করেন এবং ডাঃ জন লাইক্যোওডিস(Dr. John Lykoudis)সুনির্দিষ্টভাবে বলতে থাকেন যে পেপটিক আলসারের পিছনে সংক্রামক কারন রয়েছে।তিনি তার গবেষনা অনুযায়ী এ্যান্টিবায়োটিক রেজিম্যান (Regimen) কয়েক হাজার রোগীর পেপটিক আলসার চিকিৎসায় ব্যবহার করেন এবং সুফলও পান।



Dr. John Lykoudis এর প্রয়োগ করা Antibiotic Regimen:

5,7-di-iodo-8-oxyquinoleine - 0.125 gm

5-iodo-7-chloro-8- oxyquinoleine - 0.125 gm

Phthalylesulphathiazol - 0.3 gm

Streptomycin Sulphate - 0.075 gm

Vitamin A - 10000 Unit

তিনি যৌথ রেজিমেন একটি ট্যাবলেটে রুপান্তরিত করে Elgaco নামে ৬ ঘন্টা অন্তর ১০ দিনের জন্য প্রয়োগ করতেন।

তিনি তার গবেষনা ও চিকিৎসা নিয়ে সহজে মুখ খুলতেন না।তবে "Ulcer of the Stomach and Duodenum" শিরোনামে করে উনার গবেষনা লব্ধ ফল JAMA(Journal of American Medical Association) তে নিবন্ধ আকারে পাঠিয়ে ছিলেন। JAMA কর্তৃপক্ষ উনার এই কাজকে অবজ্ঞা করলো এবং তা প্রকাশ করলেন না।উনি ছিলেন একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার; হয়তো এজন্যই তৎকালীন সনামধন্যরা তার এই কাজকে স্পর্ধাই মনে করলো।

অনেকটা - "হাতি ঘোড়া গেল তল ,

পিঁপড়া বলে কত জল"এর মতো আর কি!!!

ডাঃ জন ও বদ্ধ-পরিকর উপযুক্ত জায়গা ছাড়া উনি এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।

একে'ত গবেষনা ফলাফল প্রকাশিত হলো না; সেই সাথে তার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও উনার সমগোত্রীয় লোকেরা অভিযোগ তুলতে লাগলো যে উনি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চিকিৎসা করছেন না।

সেই সাথে উনার ওপর নানা রকম বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল ।

১৯৮০ সালে Dr. John Lykoudis একজন ব্যর্থ অনুসন্ধানীর তকমা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৮২ সালে দুই অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী প্রফেসর ব্যারী মারশ্যাল এবং প্রফেসর রবিন ওয়ারেন সফলভাবে Helicobacter Pylori কালচার করেন।উনারা সুনির্দিষ্টভাবে H.pylori কে পেপটিক আলসারের জন্য দায়ী বলে মত দেন। উনাদের এই গবেষনার বড় রশদ ছিল Dr. John Lykoudis এর রেখে যাওয়া চিন্তা।

H.pylori পেপটিক আলসার রোগ করে একথা এবারও বোদ্ধা সমাজ মানতে নারাজ।গবেষনায় জানা যায় H.pylori পাকস্থলীতে ইউরিয়েজ এনজাইম দিয়ে ইউরিয়াকে ভেঙ্গে অ্যামোনিয়া তৈরী করে।অর্থাৎ,পাকস্থলীর এসিডিক পরিবেশকে এলকালাইন(Alkaline) পরিবেশে পরিণত করে।

প্রফেসর ব্যারী মারশ্যাল নাছোড় বান্দা।তিনি বোদ্ধা সমাজকে একেবারে চোখে আংগুল দিয়ে ব্যাপারটা বোঝাতে এক কান্ড করে বসলেন। একদিন বেশ কিছু বোদ্ধাকে ডেকে H.pylori কালচার নিজের ওপর প্রয়োগ করলেন। পরবর্তীতে দেখা গেল হ্যা H.pylori প্রফেসর সাহেবের পাকস্থলীতে ক্ষত তৈরি করেছে ।২০০৫ সালে প্রফেসর ব্যারী মারশ্যাল এবং প্রফেসর রবিন ওয়ারেনকে এই অসামান্য কাজের জন্য নোবেল দেয়া হয়।

২০০৫ সালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সারাংশঃ

"The Nobel Assembly at Karolinska Institutet has today decided to award The Nobel Prize in Physiology or Medicine for 2005 jointly to Barry J. Marshall and J. Robin Warren for their discovery of "the bacterium Helicobacter pylori and its role in gastritis and peptic ulcer disease"



প্রফেসর ব্যারী মারশ্যাল এবং প্রফেসর রবিন ওয়ারেনকে আমরা সবাই চিনি কিন্তু ডাঃ জন লাইক্যোওডিস(Dr. John Lykoudis) এর কথা আমরা অনেকেই জানি না।



Dr. John Lykoudis কে আপনাদের সাথে পরিচয় করাতেই এই ছোট্ট প্রয়াস। Dr. John Lykoudis এর প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানিয়ে লেখা শেষ করছি।ও!! আরেকটা কথা আপনার চারপাশের কেউ অনুসন্ধানী কোন তথ্য দিলে নাকচ করার আগে দয়া করে একবার ভাববেন।আর কোন Dr. John Lykoudis হারাতে চাই না।

তথ্যসূত্রঃ

১। John Lykoudis: an unappreciated discoverer of the cause and treatment of peptic ulcer disease. The Lancet।Volume 354, No. 9190, p1634–1635, 6 November 1999.

২।http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/medicine/laureates/2005/press.html

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ প্রফেসর ডাঃকানু বালা,

প্রফেসর অব ফ্যামিলি মেডিসিন,

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি,চট্টগ্রাম।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৯

সোহানী বলেছেন: নতুন কিছু জানলাম....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.