নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুশফিক এর বাংলা ব্লগ

মেঘনা পাড়ের ছেলে

জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত

মেঘনা পাড়ের ছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম: মাগো, জয় আমাদেরই, তোমার সন্তানেরা জেগে আছে, তুমি ঘুমাও শান্তিতে

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৬

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যাকারী ও সহায়তাকারীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে তৈরি হয়েছিলো দালাল আইন। বিচার শুরুও হয়েছিলো। তারপর ১৯৭৩ সালে তৈরী হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন। কিন্তু ১৯৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ফলশ্রুতিতে সবকিছু থেমে যায়। সবকিছু উল্টোপথে চালিয়ে দেয়া হয়।



১৯৭৫ এর রক্তাক্ত বর্বরতা, ১৯৮১ সালের দু:খজনক অধ্যায় এবং ১৯৯০ এর গনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর্যায়ে অনেক বছর পর ১৯৯১ সালে শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী দলের প্রধান ঘোষণা করায় সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারই ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধে স্বামী ও সন্তান হারানো শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেত্রীত্বে দেশব্যাপি গড়ে উঠে ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব আন্দোলন। যাঁর একমাত্র সন্তান রুমি '৭১ এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর হতে গ্রেফতার ও পরবর্তীতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। এই বাংলার আনাচে কানাচে যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য উনি দিনরাত ঘুরে বেড়িয়েছেন। গঠিত হয়েছিলো "একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি" । স্থাপিত হয় '৭১ এর ঘাতকদের বিচারের জন্য গনআদালত।



১৯৯২ সালের ২৬শে মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অস্থায়ী মঞ্চে স্থাপিত গণআদালতে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালতের বিচারকমণ্ডলীর চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই গণআদালতের সদস্য ছিলেনঃ ভাষাসৈণিক এডভোকেট গাজিউল হক, ডঃ আহমদ শরীফ, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম , ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, শিল্পী কলিম শরাফী, কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামান, লেঃ কর্ণেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী এবং ব্যারিস্টার শওকত আলী খান।



বিচারে গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদন্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়। রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানানো হয়।



গনআদালতের রায় ঘোষনার পরই তৎকালীন বিএনপি সরকার জাহানারা ইমাম সহ ২৪জন বিশিষ্ঠ নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করে, যা ছিলো অজামিনযোগ্য অপরাধ। তারপরও আদালত সবদিক বিবেচনায় তাদেরকে জামিন দিয়েছিলেন। আমৃত্যু জননী জাহানারা ইমাম সেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা কাঁধে বয়ে বেড়িয়েছেন।



১৯৯৩ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের প্রথম বার্ষিকীতে জাহানারা ইমামের নেত্রত্বে গণতদন্ত কমিটি ঘোষিত হয় এবং নিন্মোক্ত আটজন ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীর নাম ঘোষণা করা হয় : আব্বাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী, মোঃ কামরুজ্জামান, আবদুল আলীম, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী, মওলানা আবদুল মান্নান, আনোয়ার জাহিদ এবং আবদুল কাদের মোল্লা।



১৯৯৪ সালের ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে গণআদালতের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে গণতদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান কবি বেগম সুফিয়া কামাল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের হাতে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট হস্তান্তর করেন। এই গণতদন্ত কমিশনের সদস্যরা ছিলেন: কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান, ব্যারিষ্টার কে এম সোবহান, এডভোকেট সালাহ উদ্দিন ইউসুফ, ড: অনুপম সেন, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ, কবি শামসুর রাহমান, ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ, আবদুল খালেক এবং সদরুদ্দিন। এই সমাবেশে আরো আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়।



যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে চলা ধারাবাহিক কার্যক্রম চলাকালীন ১৯৯৪ সালের ২৬শে জুন ক্যান্সারাক্রান্ত শহীদজননী জাহানারা ইমাম পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অনন্তালোকে যাত্রা করেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি বাংলাদেশের জনগনের প্রতি যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য আহবান জানিয়ে নিচের চিঠিটি লিখেছিলেন :



{সহযোদ্ধা দেশবাসীগন,

আপনারা গত তিন বছর ধরে একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরূদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসি অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমাদের অঙ্গীকার ছিল লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাব না। মরণ ব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেবার ক্ষমতা কারো নেই। তাই আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান- সন্ততিরা আপনাদের উত্তরসূরিরা সোনার বাংলায় থাকবেন।



এই আন্দোলনকে এখনো দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও যুব শক্তি, নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। তবু আমি জানি জনগণের মত বিশ্বস্ত আর কেউ নয়। জনগণই সকল শক্তির উৎস। তাই একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও '৭১- এর ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় আন্দোলনের দায়িত্বভার আমি আপনাদের বাংলাদেশের জনগনের হাতে অর্পণ করলাম। জয় আমাদের হবেই।



জাহানারা ইমাম }



শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক শুরু করে যাওয়া সেই আন্দোলনেরই যৌক্তিক পরিণতিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ স্থাপিত হয় ১৯৭৩ সালের আইনকে সংশোধন ও যুগোপযোগী করে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যে ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমসহ শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষনা ও বাস্তবায়ন করে এই দেশকে ৪০ বছরের অভিশাপ থেকে মুক্ত করবে।



ক) প্রথম রায় ঘোষনা করা হয়েছিলো আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় দিয়ে।



খ) দ্বিতীয় রায় ঘোষনা করা হয়েছিলো মিরপুরের কশাই নামে পরিচিত আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দিয়ে। এই রায়ের পরই দেশের তরুণ সমাজ ফুসে উঠে। বিশ্ব দেখে অন্য এক বাংলাদেশকে। শাহবাগ যার কেন্দ্রবিন্দু। সরকার বাধ্য হয় আপিল আইন সংশোধন করতে। কশাই কাদেরের সর্ব্বোচ্চ শাস্তির জন্য আপিল আদালতের দিকে এখন সবার নজর।



গ) আজই ট্টাইব্যুনাল তার তৃতীয় রায় ঘোষনা করে দেলোয়ার হোসেন শিকদার এর। ৪০ বছর আগের সেই দেলোয়ার হোসেন শিকদারই আজকের দেলোয়ার হোসেন সাইদি। আদালত তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে।



একে একে অভিযুক্ত বাকীদের অপরাধের রায়ও স্বল্পসময়ে ঘোষনা করে ও কার্যকর করে জাতিকে কলম্কমুক্ত করা হবে সে আশায় পুরো জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনছে। জয় আমাদের হবেই। জয় সত্যেরই। হোক না তা ৪২ বছর পর।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০০

অশ্রুহীন মন বলেছেন: জয় আমাদেরই হবেই

০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৬

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: সত্য আগুনের মত। প্রকাশিত হবেই.............

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৭

নিয়েল ( হিমু ) বলেছেন: জয় আমাদের হবেই । হতেই হবে ।

০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৪

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: হ্যাঁ, জয় আমাদেরই......

৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১১

মেহেরুন বলেছেন: joy hobei amader

০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: জয় বাংলা

৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩৫

শুক তারা বলেছেন: জয় সুনিশ্চিত, , , আল্লাহ্ তখনো আমাদের সাথে ছিলেন, এখনো আছেন।
জয় বাংলা :)

০১ লা মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: আল্লাহ সর্বদাই সত্যের সাথে থাকেন....

জয় সুনিশ্চিত.....

৫| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: এই আন্দোলনের একটা ইতিবাচক দিক হল শহীদ জননীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্মরণ করা। আমাদের পথ প্রদর্শিকা তো তিনিই।

০১ লা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৯

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: তিনিইতো ছিলেন আমাদের পথ প্রদর্শিকা.............

৬| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০

যোগী বলেছেন:

মাগো তুমি শান্তিতে ঘুমাও, তোমার লক্ষ কোটি রুমী এখন আছে জেগে।

০১ লা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: মাগো, তোমার রুমিরা জেগে উঠেছে...........

৭| ০১ লা মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৬

তাসজিদ বলেছেন: জননী,

তুমি ঘুমিয়ে থাক, আমারা জেগে আছি। সবসময়।

০১ লা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩০

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: আমরা জেগে আছি........

৮| ১৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

তাসজিদ বলেছেন: একে একে অভিযুক্ত বাকীদের অপরাধের রায়ও স্বল্পসময়ে ঘোষনা করে ও কার্যকর করে জাতিকে কলম্কমুক্ত করা হবে সে আশায় পুরো জাতি অপেক্ষার প্রহর গুনছে। জয় আমাদের হবেই। জয় সত্যেরই। হোক না তা ৪২ বছর পর।

২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১১

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: জয় আমাদের হবেই।

৯| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:১৪

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: এখন জামাত থামাতে হলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্হা ভালো করতে হবে।

১৭ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:০২

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: পুরোপুরিভাবে একমত........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.