নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুশফিক এর বাংলা ব্লগ

মেঘনা পাড়ের ছেলে

জনারণ্যে নির্জনতায় আক্রান্ত

মেঘনা পাড়ের ছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিফোর দ্য ল - ফ্রানৎস কাফকা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩১


আইনের দরজায় প্রহরী দন্ডায়মান। এক আগন্তুক ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে প্রহরী তাকে নিবৃত্ত করে বলে, এখনি প্রবেশ সম্ভব নয়। অাগন্তুক খানিক ভেবে পুনঃরায় শুধায়, পরে কখনওকি তাকে ঢুকতে দেয়া হবে? উত্তরে প্রহরী জানায়, হতেও পারে, তবে এখনই না।

কিন্তু তখনো দরজা খোলাই ছিলো। প্রহরীর খানিক বেখেয়ালে আগন্তুক উঁকি দিয়ে ভেতরটা দেখতে চাইলে, প্রহরী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, তোমার এতই যদি শখ হয় ভেতরে যাবার, চেষ্টা করে দেখতে পার, তবে আমাকে অক্ষম ভেবো না। এখানে প্রতিটি দরজায়ই ততোধিক শক্তিশালী প্রহরী বিদ্যমান। প্রত্যেকেই অন্যজনের চাইতে শক্তিমান। এমনকি আমিও অন্যজনকে একমুহূর্তের জন্যও সহ্য করতে পারি না।

এতটা জটিলতা আগন্তুকের কাম্য ছিলো না। সে ভাবে, এই দরজা সর্বদা সকলের জন্য খোলা থাকাই উচিত। কিন্তু কোট গায়ে পরিপাটি শশ্রুমন্ডিত ধারালো নাকের প্রহরীর দন্ডায়মান মূর্তির সামনে সে অসহায়ভাবে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত্য অপেক্ষাকেই শ্রেয় মনে করে। প্রহরী তাকে একটা বসার চেয়ারও দেয় অপেক্ষার জন্য। সে অপেক্ষা দিন মাস পেরিয়ে বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। এর মাঝে সে ভেতরে যাবার বহু চেষ্টা করে, প্রহরীকে অনুরোধ, উপরোধ করে করে ক্লান্ত করে দেয়। সাথে করে আনা উপহারসামগ্রীও দেবার বাকী রাখে না, প্রহরীকে প্রলুব্ধ করার্থে। প্রহরী সেগুলি গ্রহনও করে, আর বলে এগুলি গ্রহণ করলাম শুধুমাত্র তোমাকে আশ্বস্ত করতে যে তুমি যেন ভাব তোমার চেষ্টার ত্রুটি তুমি একটুও করনি।

এত বছরের নিষ্ফল চেষ্টা করতে করতে অাগন্তুক অন্য দরজার প্রহরীদের কথা ভুলে যায় এবং এই একজন প্রহরীকেই তার আইনের পথের একমাত্র বাধা মনে হয়। সে নিজের দুর্ভাগ্যকে অভিসম্পাত করতে থাকে, প্রথমে অনুচ্চস্বরে, পরে উচ্চস্বরে, আর সে যত বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছাতে থাকে আপনমনে সে বিড়বিড় করে যায় এবং পাগলামীর পুরো লক্ষণ তার মা্ঝে ফুটে উঠে। এতবছর প্রহরীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রহরীর জামার কলারে বসা মাছিগুলিও তার সবিশেষ পরিচিত হয়ে উঠে এবং সে মাছিগুলিকে অনুরোধ করে প্রহরীর মন নরম করে দেবার জন্য, যেন সে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

সময়ের পরিক্রমায় তার দৃষ্টিশক্তি কমে আসে, সে বুঝতে অপারগ হয়, সে নিজেই দৃষ্টিহীন হয়ে যাচ্ছে নাকি চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। এমনকি এই ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তি স্বত্বেও আইনের প্রবেশপথের বিচ্ছুরিত আলোকআভা তার চোখ এড়ায় না, এবং সে বুঝতে পারে তার আর বেশী সময় অবশিষ্ঠ নেই। চলশক্তিরহিত সে তার অন্তিম যাত্রার আগের মুহূর্তে অতি অনুচ্ছস্বরে হাত নাড়িয়ে প্রহরীকে শেষ প্রশ্ন করে। আগন্তুকের কথা শুনতে প্রহরীকে কুঁজো হতে হলো। বিরক্ত হয়ে প্রহরী বলল, আচ্ছা নাছোড়বান্দাতো তুমি, কি জানতে চাও বল। আগন্তুক লোকটি অনুচ্চ স্বরে বলল, অাইনের সাহায্য সবাইই চায়, অথচ এই এত বছরেও আমি ছাড়া আর একজন মানুষকেও এখানে অাসতে কেন দেখলাম না ? প্রহরী বুঝতে সক্ষম হলো, লোকটির পরপারে যাবার সময় এসে গেছে। সে তার কানের কাছে এসে চিৎকার করে বলল, আর কেউই এই দরজা দিয়ে প্রবেশের অনুমতি কখনো পাবে না, এই দরজা শুধুমাত্র তোমার উদ্দেশ্যেই তৈরী হয়েছিলো, যা এখন তোমার মৃত্যুর পরই বন্ধ হয়ে যাবে

নোট:
বিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যাপি সবচাইতে বেশী প্রভাব বিস্তারকারী লেখক হলেন ফ্রানৎস কাফকা (জুলাই, ১৮৮৩ – জুন, ১৯২৪), যিনি বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে জার্মান-ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখালেখিও জার্মান ভাষায়। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের বড় একটা অংশ তাদের লেখায় কাফকার প্রভাব নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর লেখা "ডি ভারভাণ্ডলাঙ্গ"(মেটামরফসিস বা রুপান্তর) সবচাইতে বেশী পঠিত, যার প্রথম বাংলা অনুবাদ করেন শ্রদ্ধেয় কবীর চৌধুরী। কাফকার সাহিত্য নিয়ে আরেক কিংবদন্তী লেখক আলবেয়ার ক্যামু দারুন বলেছেন- ‘নিয়তি বা সম্তবতঃ এই লেখাগুলোর মহত্ত্ব এটাই যে , সবকিছু আছে এতে, কিন্তু কোনো কিছুই নিশ্চিত করা হয়নি’। উপরের ভাবানুবাদটি করতে গিয়ে মূল জার্মান ভাষার তো প্রশ্নই আসেনা, তবে একাধিক ইংরেজী ও ততোধিক বাংলা আক্ষরিক অনুবাদের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তবে আমার উপলব্ধি আক্ষরিক অনুবাদ অাসলেই ভাবানুবাদের চাইতে সহস্রগুন কঠিন।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:১০

রোকসানা লেইস বলেছেন: একটি অনুভূতির কী অসাধারন প্রকাশ। অস্থির লেগেছিল গল্পটা পরে।
ভালোলাগল আবারও মেঘনা পাড়ের ছেলে

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: আসলেই অসাধারন প্রকাশ। কাফকাতে আক্রান্ত হলে চেনা দুনিয়াটা অন্যরকম হয়ে যায়.........

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮

অলিউর রহমান খান বলেছেন: অপূর্ব সুন্দর গল্প। একদম অন্যরকম।
বেশ ভালো ছিলো। প্রিয়তে রেখে দিলাম।

শুভেচ্ছা রইলো।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: চিরকালীন কাফকা, তাকে এড়িয়ে যাবার সাধ্য কোন সাহিত্যবোদ্ধার নেই............

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ছোট্ট একটা গল্প অথচ কী গভীর তাৎপর্য!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫১

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: কাফকার প্যারাবল নিয়ে অাছি কয়েকমাস যাবৎ.........

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


এটা কি কাফকার লেখা থেকে?

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: হ্যাঁ, তাঁরই লেখা "বিফোর দ্য ল"। কাফকার একটি গল্প পড়ি অার কয়েকদিনের জন্য হ্যাঙ হয়ে যাই..............

৫| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার গল্প। অল্প কথায় বলা হয়েছে, কিন্তু পড়ার পর পাঠকের ভাবনায় অনেক কথা এসে যায়।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: হ্যাঁ, পড়ার পরই মাথা থেকে চলে যায় না, থেকে যায় কয়েক দিন, মাস, বছর এমনকি জীবনভরও........

৬| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা খুব মন দিয়ে পরপর দুই বার পড়লাম।
বেশ ভালো লাগলো।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: অামিতো এই গল্প এজীবনে কয়বার পড়েছি, গুনে বলতে পারব না..........

৭| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২২

চানাচুর বলেছেন: ভাল লাগলো

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫১

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: কাফকা, ভালো লাগবেই...........

৮| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৯

সনেট কবি বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে।

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৫

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: চিরকালীন কাফকা.............

৯| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: কাফকাও লেখক বাংলাদেশের বর্তমান লেখকরাও লেখক।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৩১

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.