নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় জুড়ে শুধু শুন্যতা ...

সময় জুড়ে শুধু শুন্যতা ...

টানিম

তড়িৎ প্রকৌশলী। টুইটার : https://twitter.com/mztanim88

টানিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্ব-বরেণ্যদের রম্য উপাখ্যান ১

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৩

কোলরিজ ও ওয়ার্ডসওয়ার্থ ইংরেজি সাহিত্যে ‘রোমান্টিক যুগ’-এর স্বপ্নদ্রষ্টা কবি কোলরিজ (Samuel Taylor Coleridge : 1772-1834) ও তাঁর বন্ধু কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ (William Wordsworth :1770-1850) ১৭৯৮ সালে যুগ্মভাবে The Lyrical Ballads শীর্ষক কবিতার সংকলন প্রকাশ করে মানুষ ও প্রকৃতি নির্ভর নতুন কাব্য যুগের উন্মেষ ঘটান। ১৮৪৩ সালে রাজকবি (Poet Laureate) -র সম্মানে অভিষিক্ত হন।

১. কবি কোলরিজ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিলেন। তো তিনি যখন লন্ডনে স্কুলের ছাত্র তখন ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাফিরা করতেন আর বই-এর দোকানে উঁকিঝুঁকি মারতেন। এভাবে একদিন এক বই-এর দোকানে দন্ডায়মান অবস্থায় তিনি, তাঁর নিজের ভাষায় ‘অন্যমনস্কভাবে’, এক অপরিচিত লোকের কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেন। ওই ভদ্রলোক প্রথমে তাকে চোর বলে ঠাওরালেও তাঁর কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে চিপসাইড (Cheapside) বলে একটা জায়গার লাইব্রেরিতে ফ্রি-মেম্বার করে দেন। অতঃপর তিনি সেই লাইব্রেরি থেকে কোনো চাঁদা প্রদান ব্যতিরেকেই প্রতিদিন দুটো করে বই ধার নিতে পারতেন।

২. কোলরিজের একটি বিখ্যাত কবিতার শিরোনাম হচ্ছে Kubla Khan (কুবলা খাঁন)। এটাকে বলা হয় গোটা ইংরেজি সাহিত্যে অন্যতম ‘ম্যাজিকেল’ তথা ঐন্দ্রজালিক কবিতা এবং এটার জন্ম বৃত্তান্ত খুব মজার। কোলরিজের বর্ণনা অনুসারে, তিনি মোঙ্গল অধিপতি চেঙ্গিস খাঁনের নাতি কুবলাই খাঁনের শৌর্যবীর্যের কাহিনী পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন এবং স্বপ্নের মধ্যে কবিতাটি তিনি পেয়ে যান। ঘুম থেকে জেগে ওঠার সাথে সাথেই তিনি প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় কবিতাটি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু অর্ধেক লিখার পর কে যেন কোনো একটা কাজে তাকে ডেকে নিয়ে গেল এবং অতঃপর তিনি যখন ফিরলেন, তখন আর স্বপ্নের বাকিটা কিছুতেই স্মরণ করতে পারছিলেন না। কাজেই কবিতাটি চিরকালের জন্য অসম্পূর্ণই রয়ে গেল, যদিও তজ্জন্য বোদ্ধা পাঠকের পক্ষে এটির রসাস্বাদন করতে মোটেই অসুবিধে হয় না।

৩. কোলরিজের অন্যতম বন্ধু ছিলেন চার্লস ল্যাম্ব, যার তোতলামির কথা সর্বজনবিদিত। তো কোলরিজ মাঝে মাঝে চার্চে ধর্মীয় লেকচারও দিতেন এবং একবার ল্যাম্বকে তিনি বললেন, ‘আমার বিশ্বাস তুমি কখনো আমাকে ধর্ম প্রচার করতে শোননি। ‘ই-ইয়েস’ ল্যাম্ব জবাব দিলেন, ‘আ-আমি তোমাকে অ-অন্য কিছু করতে ক-কখনো শুনিনি।’ আরেকবার কোলরিজকে এক মহিলা জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি ভূত প্রেত বিশ্বাস করেন কী না। ‘নো ম্যাডাম’ কোলরিজ জবাব দিলেন, ‘আমি এত বেশি ভূত দেখেছি যে ওগুলোতে বিশ্বাস করি না। (I have see toon many to believe in them) ।

৪. বিলেতে বাথ (Bath) নামক এক শহর আছে, যেখানটায় প্রাচীন রোমানদের বাথ তথা গোসলখানার জলাধারে পয়সা ফেলে আজোব্ধি ইংরেজরা ইচ্ছাপূরণের মানত করে থাকে। তো এই শহরের এক পুস্তক প্রকাশক বলছেন: ‘আমি একবার ঘোড়ায় চড়ে এসে কিছুতেই ঘোড়ার জ্বিন ও গলাবন্ধ আলগা করতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে আমি সাহায্যের জন্য চিৎকার করলাম। আমার ওখানে কোলরিজ ও ওয়ার্ডসওয়ার্থ বন্ধুদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে ওয়ার্ডসওয়ার্থ এগিয়ে এলেন; কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারলেন না। অতঃপর কোলরিজ ও এগিয়ে এসে খানিকক্ষণ চেষ্টা তদবির করে মতামত ব্যক্ত করলেন যে, জিন ও গলাবন্ধ লাগানোর পরে নিশ্চয়ই ঘোড়ার মাথা আকারে বেড়ে গেছে। তাই গলাবন্ধ আলগা করা যাচ্ছে না। সেই মুহুর্তে আমার কাছের মেয়েটি আবির্ভূত হল এবং সে নিমেষের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান করে দিল।’

৫. কোলরিজ ও ওয়ার্ডসওয়ার্থের সমসাময়িক সাহিত্যিক গডউইন একবার ভীষণ অর্থকষ্টে পড়লে তাদের অন্যান্য বন্ধু যথা বায়রন, ল্যাম্ব ও স্কট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু ওয়ার্ডসওয়ার্থ কোনো প্রকার সাহায্য করা থেকে বিরত রইলেন এটা বলে যে, সমগোত্রীয় লোকদেরকে সাহায্য করলে ওরা তা স্মরণ রাখে না। বোধকরি একারণেই পরবর্তীতে একদিন ওয়ার্ডসওয়ার্থ ল্যাম্বকে কথা প্রসঙ্গে ‘আমি ইচ্ছে করলেই শেক্সপীয়ারের মতো লিখতে পারি’ বলতেই ল্যাম্ব তার স্বভাবজাত তোতলামি সহকারে বলে ওঠছিলেন, ই ইয়েস, না-নাথিং ইজ ওয়ানটিং বাট মা মাইন্ড’ (y-yes, n-nothing is wanting but m-mind) অর্থাৎ ইচ্ছে ব্যতিরেকে আর কিছুরই অভাব নেই।

৬. স্যার ওয়াল্টার স্কট (Sir Walter Scott) ছিলেন কোলরিজ ওয়ার্ডসওয়ার্থের সমসাময়িক কবি ও বন্ধু। তিনি বেশ কটি উপন্যাসও লিখেছেন। তো স্যার ওয়াল্টার স্কট-এর বিশ্বস্ত পরিচায়ক টম একদিন তার লেখা কয়েকটি বই তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিল। দিন কয়েক পরে তিনি টমকে বইগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে শিশুর সারল্য নিয়ে একগাল হেসে জবাব দিল, স্যার আপনার রচিত উপন্যাসগুলো খুবই চমৎকার। আমার কাছে ওগুলো হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। আমি যখন খুব ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরি এবং ওগুলোর একটা হাতে নিই, তখন আমি খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি।’

৭. কোনো এক বসন্তের সুন্দর সকালে স্যার ওয়াল্টার স্কট ডাকযোগে বেশ বড় সাইজের একটা প্যাকেট পেলেন ওটা এসেছিল আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে। তিনি প্যাকেটটা খুলে ভেতরে আবিষ্কার করলেন একটি নাটকের পান্ডুলিপি ও সঙ্গে একখানা চিঠি। চিঠিতে নিউইয়র্কবাসী এক ইয়াং লেডি, যিনি নাটকটি লিখেছেন, স্যার ওয়াল্টার স্কটকে অনুরোধ করেছেন- তিনি যেন পান্ডুলিপিটা পড়ে প্রয়োজনবোধে ওটাকে সংশোধন করেন, প্রস্তাবনা (prologue) ও উপসংহার (epilogue) লিখে দেন, লন্ডনের কোনো থিয়েটারের ম্যানেজারকে ওটা মঞ্চস্থ করতে রাজি করান এবং কোনো ভালো প্রকাশককে ওটা বই আকারে প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। একেবারে মামার বাড়ির আব্দার, এই আর কি! প্যাকেটের কভার পরীক্ষা করে স্যার ওয়াল্টার স্কট দেখতে পেলেন অতিরিক্ত ওজন হেতু ওটা ভেলিভারি নেবার সময় তার পরিবারকে পাঁচ পাউন্ড দিতে হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, ঠিক এক পক্ষকাল পরে একই ধরণের আরেকটি প্যাকেট তাঁর নিকট প্রেরিকার কাছ থেকে এসে পৌঁছাল এবং এবারও পাঁচ পাউন্ড জরিমানা দিতে হল। আর প্যাকেট খুলে তো স্যার ওয়াল্টার স্কটের চক্ষু চড়কগাছ। লেখিকা লিখেছেন যে, তিনি জানতে পেরেছেন দিন কয়েক পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরে একটি জাহাজ ডুবেছে; কাজেই তার প্রতীতি জন্মেছে যে তার পান্ডুলিপিটাও উক্ত জাহাজের সাথে আটলান্টিকের তলদেশে তলিয়ে গেছে যেজন্যে তিনি পুনর্বার একই অনুরোধ সহ পান্ডুলিপিটার কপি পাঠালেন। তার বিশ্বাস, স্যার ওয়াল্টার স্কট তাকে নিরাশ করবেন না। একেই বুঝি বলে খ্যাতির বিড়ম্বনা।



সংগৃহীত ।



ধন্যবাদ

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯

টানিম বলেছেন: কয়েকটা ঘটনা আছে । একটু মনযোগ দিয়ে পড়বেন । অবশ্যই ভালো লাগবে । ধন্যবাদ

২| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০

একাকী বালক বলেছেন: হা হা হা হা।

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮

টানিম বলেছেন: হা হা হা হা।

৩| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৫

কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: +++++++++++++++++++

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮

টানিম বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কুবলা খান কবিতা কোলরিজ আক্ষরিক অর্থেই লিখেছিলেন গাঁজা খেয়ে, সুতরাং তাতে ম্যাজিক রিয়ালিজম থাকাটা স্বাভাবিক!! লেখাটা ভালো হয়েছে, প্লাস।

আর একটা কথা, পয়েন্ট গুলো স্পেস দিয়ে দিয়ে লিখলে আরও ভালো লাগত। এখন চোখ সরু করে পড়তে হচ্ছে।

২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:২৭

টানিম বলেছেন: ঠিক করে দিলাম । ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য ।

৫| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

শফিক১৯৪৮ বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে, পোস্টে +++++++++++++

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০৪

টানিম বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৫ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: লেখিকা লিখেছেন যে, তিনি জানতে পেরেছেন দিন কয়েক পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরে একটি জাহাজ ডুবেছে; কাজেই তার প্রতীতি জন্মেছে যে তার পান্ডুলিপিটাও উক্ত জাহাজের সাথে আটলান্টিকের তলদেশে তলিয়ে গেছে যেজন্যে তিনি পুনর্বার একই অনুরোধ সহ পান্ডুলিপিটার কপি পাঠালেন। তার বিশ্বাস, স্যার ওয়াল্টার স্কট তাকে নিরাশ করবেন না। একেই বুঝি বলে খ্যাতির বিড়ম্বনা।
খুব চমৎকার একটা পোস্ট। ভালো লাগলো।

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০৫

টানিম বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.