নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাধীনতা যুদ্ধের কাহিনী:
১৯৭১ সালের মার্চ মাস। আমরা তখন কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে থাকি। আমার আব্বার নাম মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। জন্ম ১লা মার্চ, ১৯৩০ সালে। তিনি ডাক্তার, তখন আর্মির মেজর ছিলেন, কুমিল্লা সি এম এইচের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড (2-i-C)। সি এম এইচের সিও ছিলেন লে: কর্নেল জাহাঙ্গীর আঙ্কেল, উনিও বাঙালি ছিলেন। আর কাজ করতেন একজন কাশ্মীরি ক্যাপ্টেন, আব্বাদের সবার জুনিয়ার ডাক্তার, তার নামটা মনে নাই আমার।
সারা দেশে তখন আন্দোলনের বন্যা চলছে। ইলেকশানে শেখ মুজিবুর রহমান জিতেছেন কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাকে প্রধান মন্ত্রী হতে দিবে না। ৭ই মার্চ শেখ মুজিব ঘোষণা দিলেন, "এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম "। তারপর হঠাৎ সব চুপচাপ। সারা ক্যান্টনমেন্ট খালি হয়ে যেতে লাগল । ইস্পাহানী স্কুলের ছাত্র বেশীর ভাগ হোস্টেলে থাকতো , তারা সব বাড়ী চলে গেল। আমাদের বাসায় কাজ করত দুই বোন , নুরজাহান আর আনোয়ারা , পাশের গ্রামে থাকতো । ওরা কাজে আসা বন্ধ করে দিল। চারিদিকে থম্ থমে আবহাওয়া ।
তারপর আসলো ২৫শে মার্চ । আমাদের স্কুল বন্ধ, আব্বার অফিস যাওয়া বন্ধ, কিন্তু ঘরে ইউনিফর্ম পড়ে বসে আছেন। আব্বা সারাদিন কোরান শরীফ পড়ছেন , আর আম্মা খালি দোয়া দরুদ পড়ছেন। আর বাইরে খালি মেশিন গানের গুলির শব্দ। ঠা-ঠা ঠা-ঠা ঠা ... এক টানা তিন দিন তিন রাত এই শব্দ চলতেই থাকল। অনবরত গুলি করে ১,২০০ মানুষ মারতে কিছু সময় লাগে। (পাকিস্তানী মিলিটারীরা দুই শত বাঙ্গালী অফিসার আর এক হাজার বাঙ্গালী সৈনিককে গুলি করে মেরেছিল সে সময়)
আমাদের আর খন্দকার আংকেলের বাসা ছিল পাশাপাশি। মেজর খন্দকার আঙ্কেলও ডাক্তার ছিলেন। আমরা দুই বাসার লোক এক বাসায় জড়ো হয়ে থাকলাম। আব্বা আর খন্দকার আংকেল এক সাথে বসে থাকলেন ইউনিফর্ম পড়ে। আম্মা আমাকে বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করে দিলেন, কিন্তু আমি সব সময় কথা শুনতাম না। অবস্থা যে কত গুরুতর সেটা তখনো বুঝি নাই । তখন বসন্ত কাল ছিল। গাছে গাছে আমের মুকুল ফুটেছিল, মৌমাছি উড়ে বেরাচ্ছিল। আর কিছুক্ষণ পরে পরেই আসে কাল বৈশাখী ঝড়। ছোটবেলায় শোনা সেই গানটার মতইঃ
ঝড় এল, এল ঝড়
আম পড়, আম পড়
কাঁচা আম, পাকা আম, টক টক মিষ্টি
এই যাহ, এল বুঝি বৃষ্টি
কাল বৈশাখী ঝড়ে গাছের নীচে আম পড়েছিল। আমি গিয়ে সেই বৃষ্টি ভেজা আম কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি। আম্মা মনে হয় সেদিন আমাকে বকাও দেন নাই সেই জন্য।
আমাদের বাসা থেকে পাশের গ্রামগুলি দেখা যেত । সেদিন বিকেলে হঠাত দেখি পাকিস্তানী মিলিটারিরা সেই গ্রামের বাড়ীগুলি ঘেরাও করে বাড়ীতে কেরসিন ঢেলে আগুন জালাচ্ছে । দাউ দাউ করে আগুন জলছে। বাঁশ ঝাড়ের চেয়েও বেশী উঁচু আগুনের শিখা। আমারা জানালার পর্দা ফাঁক করে দেখছি, আর খন্দকার আংকেলের মা সমানে আগুন নেভার দোয়া পড়তে আরম্ভ করলেন। ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামলো । কিন্তু সেই আগুন নিভল না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ বাড়ী গুলি পুড়ে ছাই না হয়ে গেল। আমি এখন পর্যন্ত ভাবি যে ঐ বাড়ীর লোক গুলি আগেই পালিয়ে গিয়েছিল, কেউ সেই আগুনে পুড়ে মরে নাই। নয়ত এই বিভীষিকাময় স্মৃতি সহ্য করার মত না।
তিন দিনের দিন সকাল বেলা দেখলাম আব্বা স্টীলের আলমারি থেকে টাকা বের করে আম্মার হাতে দিচ্ছেন, আর আম্মা সেই টাকা প্যাকেট করে শাড়ীর কোমরে গুঁজে রাখলেন । তার কিছুক্ষন পরে আমাদের ঘরে পাকিস্তানী মিলিটারী সৈন্যরা আসলো, হাতে বন্দুক তাক করে। লম্বা রাইফেল, সেটার আগায় ধারালো বেয়োনেট চকচক করছে। পাকিস্তানী মিলিটারীরা আব্বাকে দুই হাত হ্যান্ডস আপ করে ঘর থেকে নিয়ে গেল । আমি তখন আম্মার সাথে বাসার বারান্দায় দাঁড়ানো, আম্মার কোলে আমার দুই বছরের বোন শাহীন আর আমার ছোট বোন শামীম আম্মার শাড়ীর আঁচল ধরে আরেক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা দেখছি আব্বাকে ধরে নিয়ে বাসার সামনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে পাকিস্তানী মিলিটারীরা।
আব্বাকে আর খন্দকার আংকেলকে এক সাথে হ্যান্ডস আপ করে একটা জীপে তুলে নিয়ে গেল এক দল মিলিটারী, আর আরেক দল আমাদের বাসা সার্চ করতে লাগলো । ধরে আনল আব্বার আর্দালি বোরহানকে তার থাকার রুম থেকে। তারপর আমাদের বাসার সামনের বাগানে বেল গাছের নীচে হ্যান্ডস আপ করে পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে দাঁড় করালো তাকে। তক্ষুনি গুলি করে মেরে ফেলত মনে হয় বোরহানকে । কিন্তু আমার আম্মা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন , "মাত মারো , মাত মারো " বলে। কি যেন দয়া হল সেই মিলিটারীর , সে তখন বোরহানকে সেখানে আমাদের চোখের সামনে মারল না, আব্বাদের সাথে জীপে তুলে নিয়ে গেল।
(To be continued)
দ্বিতীয় খন্ডের লিঙ্ক Click This Link
তৃতীয় খন্ডের লিঙ্ক Click This Link
৪র্থ খন্ডের লিঙ্ক - Click This Link
৫ম খন্ডের লিঙ্ক - Click This Link
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২২
দূর্যোধন বলেছেন: Bookmarked !
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
আগুন ডানা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ
৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
ডাঃ মাহবুব গাউস বলেছেন: আপু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার একটা সিরিয়াল বানাইতে মন চায়... ব্যান্ড অফ ব্রাদার্স এর মত।।
যাইহোক, লেখা উত্তম হয়েছে... পরের পর্ব গুলোর জন্য ওয়েটিং
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর ব্লগ লেখায় উৎসাহিত করার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার একটা সিরিয়াল বানাইতে মন চায়... তাহলে একটা সিরিয়াল বানিয়ে ফেল, অন্তত ভিডিও করে
৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৫
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত যে কোন লেখাই গুরুত্ব পায় আমার কাছে।
ভালো লিখেছেন।
+++
এ জাতি তার বীরসেনাদের কদর করতে পারে নি।
তাই আজ মুক্তিযোদ্ধারা মুখ লুকিয়ে আছে।
ভালো থাকবেন।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ লিখাটা পড়ার জন্য। এটা শুধুমাত্র আমার দেখা ঘটনার বর্ণনা , কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নাই এর মধ্যে ।
৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১০
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চলুক সাথে আছি।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩
এহসান সাবির বলেছেন: চলুক..
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৮
রাফা বলেছেন: ভালো প্রয়াস....স্বৃতি হাতরে সত্য-টুকুই লিখুন।একটু সংশোধন করে নিন ২৫শে মার্চ নয় ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষন দিয়েছিলেন।সেখানেই বলেছিলেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।
ধন্যবাদ,আগুন ডানা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। আমি নতুন লেখক, সুতরাং একটু উলটা পালটা হয়ে গেছে। ঠিক করে দিচ্ছি এখনি।
৮| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪১
কলমের কালি শেষ বলেছেন: যুদ্ধের স্মৃতি সবসময় অসাধারণ । চলুক ।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৯| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭
বিদগ্ধ বলেছেন: রক্ত হিম হয়ে আসে। বসন্ত কাল বাঙালির জন্য আগুনের কাল।
বাবার প্রতি শ্রদ্ধা। প্রথম পর্ব পড়ে গেলাম।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং আমার আব্বাকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য । আমার লেখাটা বিশেষত তাদেরকে মনে রাখার জন্য যাদেরকে আমরা হারিয়েছি কিন্তু যাদের কথা ইতিহাসের বইয়ে কেউ কোনদিন পড়বে না।
১০| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০২
নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: ভালো লাগলো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সব লেখাই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। +++++
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৩
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য আর আপনার মতমতের জানানোর জন্য। আমি ঠিক মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী লিখছি না। সেই সময়ের কাহিনী, যারা যুদ্ধে যায় নাই, তাদের দিন কিভাবে গেছে সেই কাহিনী। It is a survivor's story।
১১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৩২
রামন বলেছেন: সাক্ষাত আজরাইলের দেখা পেয়েছিলেন আপনি এবং আপনাদের পরিবার। কী ভয়ঙ্কর ছিল সেই দিন গুলো।
ও হ্যা, ঝড় এবং আমের গানটি নস্টালজিক। আবেদা সুলতানার ছোট বোনের গলায় গানটি শুনতাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তখনকার দিনে ছোটদের জন্য জনপ্রিয় একটি গান।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫২
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আর ছোটদের ঐ গানটা কে গেয়েছিল সেটা জানানোর জন্য।
১২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৪৮
রামন বলেছেন:
আসলে ঝর আর আমের গানটির শিল্পী ছিলেন শিমুল বিল্লাহ। অনেক পরে জেনেছিলাম।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের দিনগুলোতে মতিঝিল কলোনির মাঠে প্রায়ই গানের ফাংসন হত৷ সেখানে আবেদা সুলতানার সাথে তার দুই বোন্ চিত্রাও গান গাইতেন। তার গলায় গানটি শুনে ভাবতাম, তিনি এই গানটির শিল্পী।
১৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭
মনিরা সুলতানা বলেছেন: কি শীতল করা হিম অনুভুতি
লেখা অনেক ভালো লাগল ।
২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:১১
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
১৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:৩৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: একটি অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছেন। এমন কথাই শুনতে চাই- রাজনীতির রঙ মাখানো ছাড়া নিপাট সত্য কাহিনী- চোখে দেখা ঘটনার সত্য বর্ণনা।
আপনার বাবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানাচ্ছি, এমন একটি দুঃসময়কে মোকাবিলা করার জন্য।
"ঝড় এলো, এলো ঝড়" গানটির মূল গায়িকা শিমুল বিল্লাহ, উনারা একসময় কমলাপুরে থাকতেন। তবে আবিদা সুলতানা, রেবেকা সুলতানা বোনেরাও এ গানটি গাইতেন।
পোস্টে প্লাস +
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ছি