নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আব্বাদের যখন এক দল পাকিস্তানী সৈন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন আরেক দল সৈন্য আমাদের বাসা সার্চ করছিল। আমার বড় ভাই রাশেদ ভাইয়া আমার থেকে এক বছরের বড়। তখন ইস্পাহানী স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ে। আর আমাদের বাসায় ১২-১৩ বছরের একটা কাজের ছেলে ছিল, আমাদের গ্রামের মানুষ । রাশেদ ভাইয়া আর সেই ছেলে মিলিটারি আমাদের বাসায় ঢুকতে দেখে স্টোর রুমে পালিয়েছিল, হাতে দা নিয়ে। সেটা দিয়ে কি করত কে জানে। আব্বাকে নিয়ে যাওয়ার পরে বাসা সার্চ করে এই দুই জনকে খুঁজে বের করে আম্মার কাছে নিয়ে আসে।
আব্বাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পরদিন সকালে পাকিস্তানি মিলিটারিরা আবার আমাদের বাসায় আসে এবং আম্মাকে বলে যে এক্ষুনি আমাদের এই বাসা ছাড়তে হবে। আমরা কোথায় যাব, কতদিনের জন্য যাব, কিছুই জানা নাই। আম্মা তারাহুড়া করে এক আমাদের ভক্সওয়াগন গাড়ীর কালো শক্ত কভারে কিছু কাপড় চোপড়, ছোট খাট জিনিস পত্র আর কিছু খাবার পোটলা বেধে নিলেন। আম্মার হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম আমরা সেই শেষ বারের মত। তারপরে সেই বাসায় আমাদের আর ফেরা হয় নাই। আর্মিরা বাসা লুটপাট করে আমরা যাওয়ার পরে, সেটা আমরা পরে জানতে পারি।
তারপরে আমাদের সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে আরও অনেক লোকের সাথে ছাউনিওালা আর্মি ট্রাকে তুলে ইস্পাহানী স্কুলে নিয়ে গেল। স্কুল্টা দোতালা ছিল। নীচের তলায় স্কুল আর উপরের তলা ছেলেদের হোস্টেল ছিল। এখন সেটাকে মিলিটারিরা একটা রিফিউজী ক্যাম্প বানালো। নীচের তলাটা সম্পূর্ণ মিলিটারি দখলে। আর উপর তলা দুইভাগে ভাগ করে অর্ধেকটায় বাঙ্গালী অফিসারদের পরিবার আর বাকি অর্ধেকটায় বাঙ্গালী সৈনিকদের পরিবারদের থাকার জায়গা।
আমার মনে হয় তখন প্রায় দুই শত অফিসার আর সাত শত সৈনিক পরিবার আটকা ছিল সেখানে। মানুষ জন গিজগিজ করছিল ছোট একটা জায়গার মধ্যে । আমরা প্রথমে বিরাট এক হল রুমে মাটিতে আম্মার শাড়ী বিছিয়ে বিছানা করে ঘুমিয়েছিলাম। সেই হল রুমে আমাদের সাথে আরও দশ বিশটা পরিবার ছিল। আর বাকিরা এক রুমে দুইটা করে পরিবার ছিল। এই ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্তে ছিলেন একজন বাঙ্গালী অফিসার, ওয়ালি আংকেল। তিনি তার পরিবার সহ একটা রুমে থাকতেন।
রিফিউজী ক্যাম্পে প্রথম দিকে পানির কানেকশান ছিল না। পানির ট্রাকে করে পানি আসতো । আমাদের দোতালা থেকে নীচে নামা নিষেধ ছিল। খালি বালতি করে পানি আনার জন্য নীচে নামতে দিত। আর খাওয়া দাওয়ার বেবস্থা ছিল লঙ্গর খানায়। সকাল বেলা সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়াত সেখানে, আর লঙ্গর খানার লোকেরা প্রত্যেককে একটা তিন কোনা রুটি আর এক গ্লাস চা দিত। আমার মনে হয় জীবনে এমন সুস্বাদু খাবার খাই নাই, দারুন খিদার জন্যই হয়ত। আর দুপুরের খাওয়া আর রাত্রের খাওয়া আম্মাই রান্না করতেন। কোথা থেকে আম্মা চুলা, হাড়ি-পাতিল, চাল ডাল যোগাড় করেছিলেন, কে জানে। আমার সেই সর্ম্পকে কোন ধারনা নাই।
সবচেয়ে অসুবিধা হয়েছিল যাদের ছোট বাচ্চা ছিল, আমার দুই বছর বয়সী ছোট বোন শাহীনের মত। যেই টিনের গুড়া দুধ তারা খেতে দিত, সেটা থেকে বাচ্চাদের ডাইরিয়া হয়ে গেল, রক্ত আমাশা। ভীষণ প্রবল ডাইরিয়া, যখন তখন যেখানে সেখানে পায়খানা করে দিত, রক্তের মত রঙ, আর সেটায় মাছি এসে বসত পরিস্কার করার আগেই। আর এভাবেই সেটা সারা ক্যাম্পের বাচ্চাদের মধ্যে ছড়িয়েছিল।
আমরা যারা একটু বড় ছিলাম, তাদের এখন আর কোন কাজ ছিল না । স্কুল নাই, পড়াশুনা নাই, বাড়ীর কাজ নাই। তাই সারাদিন ঐ এক যায়গায় ঘুরাঘুরি আর নিজেদের মধ্যে খেলা। আম্মা মাঝে মধ্যে আমাকে শাহীনের দেখার ভার দিতেন। কিছুক্ষন দেখার পরেই আমি তাকে ভুলে নিজের খেলায় বা অন্য কিছুতে মন দিতাম। শাহীন খুব জোরে দৌড় দিতে পারত, আর দৌড় দিয়ে মাটিতে পড়ে মাথায় ব্যথা পেত আর কেঁদে উঠত । আর তখন আমি ছুটতে ছুটতে ওকে দেখতে ফিরে আসতাম। তার সেই কান্নার শব্দ এখনও আমার কানে বাজে ।
(To be continued)
প্রথম খন্ডের লিঙ্ক Click This Link
তৃতীয় খন্ডের লিঙ্ক Click This Link
৪র্থ খন্ডের লিঙ্ক - Click This Link
৫ম খন্ডের লিঙ্ক - Click This Link
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫৭
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ। পরের পর্ব লিখতে একটু দেরী হবে, আশা করি কিছু মনে করবেন না।
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২২
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
সাথে আছি, চলতে থাকুক ।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪২
আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৩
নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: পড়ছি
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৩৫
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫২
বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: পড়লাম
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৩৫
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য
৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:৫৪
রাফা বলেছেন: ভালোই, লিখতে থাকুন।অনেক কিছুই হয়তো জানা যাবে আপনার লেখা থেকে।
৭১-এর সেই দিন গুলো কেমন ছিলো।
ধন্যবাদ,আগুন ডানা।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৫
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। বইয়ে লেখা ইতিহাস হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আর জীবনের ইতিহাস থেকে অনেক ভিন্ন। সেই সময়ে আমি যাদেরকে হারিয়েছি তাদের স্মৃতিটুকু অন্তত বাঁচিয়ে রাখতে চাই ।
৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:২৭
সুফিয়া বলেছেন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অগণিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একটি আপনারা।
ভালো লাগল লেখাটা পড়ে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
সম্পরক বানানটা হবে সর্ম্পক।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। সর্ম্পক বানান ঠিক করে দিচ্ছি
৭| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১২
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চলুক.......সাথে আছি।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
৮| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
ডাঃ মাহবুব গাউস বলেছেন: ভালো লাগসে, লেখার ধরনটা খুব সিম্পল, তাই আরো বেশী ভালো লাগসে
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
আগুন ডানা বলেছেন: Thank you for reading it. It is a simple eyewitness account of the events from a child's perspective.
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৫১
চাঁদগাজী বলেছেন:
পড়ছি।