নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আগুন ডানা

আগুন ডানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধে বেঁচে থাকার কাহিনী: ৪র্থ খণ্ড

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:২০

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে যখন আমাদেরকে পাকিস্তানী মিলিটারিরা ইস্পাহানী স্কুলে নিয়ে এসে বন্দী করে রাখল, তখন মায়েদের প্রধান দায়িত্ব তাদের বাচ্চাদের দেখা শুনা করা। সেই বিপদের মধ্যেই যেভাবে হোক তারা নিজেদের বাচ্চাদের খাওয়া দাওয়া আর ঘুমানোর যায়গার বেবস্থা করলেন।



তখন সেখানে যেসব বাচ্চাদের কথা মনে আছে তারা হচ্ছে, আমরা চার ভাই বোন - আমি তখন ক্লাস ফোরে, রাশেদ ভাইয়া ক্লাস ফাইভে, আমার ছোট বোন শামীম ক্লাস টুতে পড়ত। আর সব চেয়ে ছোট বোন শাহীনের তখন স্কুলে যাওয়ার বয়স হয় নাই। তরফদার আঙ্কেলের তিন ছেলে মেয়ে - বিপ্লব ভাইয়া ক্লাস এইটে পরতেন মনে হয়, জেসমিন ক্লাস থ্রিতে আর নিপা ক্লাস টুতে পড়ত। বাহার আঙ্কেলের চার ছেলে মেয়ে - মিনি, বেবী, ইতি আর শ্যামল; হোসেন আংকেলের তিন ছেলে মেয়ে - লুসি, লনি আর সানি; তাহের আংকেলের দুই মেয়ে - রিমি আর সিমি; হাসিব আংকেলের মেয়ে রুবি, তার বড় বোন - আপার তখন বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক আর্মি অফিসারের সাথে। রুবির আব্বা মেজর খান আর তার দুলাভাই দুজনকেই এক সাথে মেরে ফেলে পাকিস্তান আর্মিরা । সেটা অবশ্য আমরা তখন জানতাম না।



খাওয়া, ঘুমানো আর মাঝে মধ্যে শাহিনকে দেখা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না আমার। বাকি সময় সারাদিন কাটতো অনান্য বাচ্চাদের সাথে খেলা করে আর ইস্পাহানী স্কুলের দোতালার অর্ধেকটা ঘুরে বেড়িয়ে। আমাদের শুধু ততটুকু জায়গায় চলাচলের অনুমতি ছিল।



ইস্পাহানী স্কুল তখন ছিল ইংলিশ মিডিয়াম রেসিডেন্সিয়াল বয়েজ স্কুল। তবে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে হওয়াতে সেখানে আর্মি অফিসারের কিছু ছেলে মেয়েরাও পড়ত। দোতালায় ছেলেদের হোস্টেলের যে রুমগুলিতে আমাদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল সেগুলির আলমারিতে ছেলেদের ফেলে যাওয়া অনেক জিনিস তখনও পড়ে ছিল। তারা যে হঠাত করে স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেটা বুঝা যেত। অনেক বই খাতা, কাগজ পেনসিল এমনকি ছোট খাট খেলনাও সেখানে পড়ে ছিল।



তাদের ফেলে যাওয়া যে বই গুলি আমি তখন পড়েছি মনে আছে - রবার্ট লুইস স্টিভেন্সনের ট্রেজার আইল্যান্ড, ড্যানিয়েল ডিফোর রবিন্সন ক্রুসো , জুলস ভারনের এরাউণ্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ , ইত্যাদি। আর এক আলমারিতে খুজে পেয়েছিলাম একটা ঘরে তৈরি কেলেইডোস্কোপ, তিন টুকরা লম্বা কাঁচের উপরে সাদা কাগজ পেচিয়ে তার এক মাথা বন্ধ করে তার ভিতরে কিছু রঙ্গিন কাঁচের টুকরা ভরা ছিল। সেটা নাড়িয়ে চোখে দিলেই নতুন নতুন ডিজাইন দেখা যেত।



নীচের তলার মিলিটারিদের সাথে আমাদের খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ হত না, খালি বিশেষ কয়েকজনকে তারা লোক পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে যেত। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে বাহার আন্টি। প্রথম দিকে তাকে জেরা করত, বাহার আংকেল কিভাবে পালিয়েছিলেন, কোথায় লুকিয়ে আছেন বা গেছেন, সেটা জানার জন্য। কিন্তু বাহার আন্টি তার বক্তব্য কখন এক চুলও পরিবরতন করেন নাই, তাদেরকে বলতেন যে তোমাদের সৈন্যরা বাহার সাহেবকে ধরে নিয়ে গেছে। বেশ কয়েকদিন জেরা করে এক কথা শুনতে শুনতে পাকিস্তানী মিলিটারি যখন বুঝতে পারল যে এর কাছ থেকে কিছুতেই আর কোন কিছু জানা যাবে না, তখন তারা বাহার আন্টিকে জেরা করা বাদ দিয়েছিল।



আর একবার নীচের তলা থেকে পাকিস্তানী মিলিটারি অফিসার উপরে উঠে এসেছিল দুই আন্টির মধ্যে এক ঝগড়া থামাতে। তারা কারা ছিলেন আমার নাম মনে নাই। তবে তাদের মধ্যে একজন ছিলেন অনেক লম্বা আর মোটা আর বেশ ঝগড়াটে। কি নিয়ে ঝগড়া লেগেছিল জানি না, কিন্তু অনেক লোক জড় হয়ে গিয়েছিল। নীচের তলা থেকে চিল্লাচিল্লি শুনে মিলিটারি অফিসার উপরে উঠে এসেছিল। আর তার পরে সেই লম্বা আন্টিকে তার লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়েছিল। একজন আর্মি অফিসারের বউয়ের গায়ে হাত তোলা সাংঘাতিক অপমান। কিন্তু কেউ কিছু বলার ছিল না। তার পরে সেই পাকিস্তানী মিলিটারি চলে যাওয়ার পরে আর কাউকে কখনো এরকম ঝগড়া করতে দেখি নাই।



যুদ্ধের সময় মানুষের জীবনে সব চেয়ে প্রধান লক্ষ হয়ে দাঁড়ায় কিভাবে বেঁচে থাকা যায়। বড়রা সবাই তখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও তাহাজ্জতের নামাজ, নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সবাইকে নিরাপদ রাখার আর এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য দিন রাত দোয়া করত। আমার আম্মা অনেক দোয়া দরুদ জানতেন, আর মনে হয় নেয়ামুল কোরান বইটা সাথে নিয়ে এসেছিলেন। সুতরাং অনান্য সবাই তার কাছে আসতো, বিভিন্ন কাজের দোয়ার জন্য।



ইস্পাহানী স্কুলে বন্দী অবস্থায় এক বাঙ্গালী সৈন্যের সন্তান সম্ভবা বউয়ের বাচ্চা হয়। আর বাচ্চাটা হওয়ার সাথে সাথেই মারা যায়। তখন সেখানে কোন মৌলবি সাহেব ছিল না যিনি ঐ বাচ্চাটার কাফন, দাফন, জানাজার বেবস্থ্যা করবেন। তাই ওরা আমার আম্মাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। আম্মা সেই বাচ্চার গোসল দিয়ে কাফন পড়িয়ে দিয়েছিলেন। তারপরে তাকে স্কুলের পিছনে কবর দিয়েছিল মিলিটারিরা। কেউ তার জন্য জানাজা পড়েছিল কিনা মনে নাই।



বিঃ দ্রঃ এটা ২য় খন্ডের ক্রমশ হবে, তৃতীয় খন্ডে কিছুটা সময় স্কিপ করা হয়ে গিয়েছিল।

(To be continued)



প্রথম খন্ডের লিঙ্ক Click This Link



দ্বিতীয় খন্ডের লিঙ্ক Click This Link



তৃতীয় খন্ডের লিঙ্ক Click This Link



৫ম খন্ডের লিঙ্ক - Click This Link

মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪৮

ধুম্রজ্বাল বলেছেন: এধরনের মৌলিক লেখা যখন কেউ পড়ে না তখন কষ্ট লাগে।
আপনার লেখনী চমৎকার।
লিখতে থাকুন। সতত

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭

আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। কেউ পড়ুক বা নাই পড়ুক, আমি লিখে যাচ্ছি যাদেরকে আমরা হারিয়েছি তাদের স্মৃতিকে সম্মান করার জন্য। সেটা আমাদের দায়িত্ব মনে করি।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২২

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
াআমি হাজির ছিলাম।
জানিয়ে গেলাম।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩২

আগুন ডানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য আর জানিয়ে যাওয়ার জন্য :)

৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

বিদগ্ধ বলেছেন: হোস্টেল রুমের সম্পদগুলোর খবর (বইপত্র) শুনে লোভ হচ্ছে। আর্মি অফিসারের স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার বিষয়টিতে ব্যথি হলাম। চলতে থাকুক স্বাধীনতার ইতিহাস।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। শুরুতে যত তাড়াতাড়ি লেখা শেষ করতে পারব মনে করেছিলাম, এখন দেখছি তার থেকে বেশী সময় লাগবে।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: চমৎকার লেখা
আরো লিখুন

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

আগুন ডানা বলেছেন: Thank you for reading it :)

৫| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

সৌম্য বলেছেন: দারুন হচ্ছে, তবে এত ছোট করে পর্ব না করে একটু বড় করে পড়েন। এত দ্রুত শেষ হয়ে যায় যে আফসোস লাগে। :||

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

আগুন ডানা বলেছেন: Thank you for reading it, Soummo. Sorry, it took me three hours to write this short segment and it still has spelling mistakes. I eill try to write longer installments :)

৬| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১০

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: Do u remember Brig Iqbal Shafi who was the CO that time.

So far I know Lt Col Yakub Malik of 53rd Field Reg was the main culprit behind the acrocities happened there. He ordered the killing of over 200 officers and 1000 bengali soldiers. Brig Shafi was against the killing, am I right apa??

And in the other part of the country, the famoush Brig Jahanjeb Arbab was the notable among most cruel West Pakistani officers ordered and planned massacres in north bengal.

Thanks for sharing. Following u with extreme interest.

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০০

আগুন ডানা বলেছেন: Thank you for the information. As a matter of fact, I don't remember the names of non-Bengali Pakistan Army officers at that time. Of course, I have heard about the CO who opposed the killings of Bengali soldiers & officers, but I didn't know that his name was Brig Iqbal Shafi. Are you talking about the CMH CO who saved the three doctors' (Major Taher, Major Hossain & Captain Talukder) lives by hiding them in the OT? Or was he a different officer?

৭| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৩৫

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: No, not the CO of Comilla CMH. Talking about Brig Iqbal Shafi, who was the Brigade commander of 53rd bde.

Heard about that Kashmiri Colonel from u only. Take time and make it as informative as u possibly can. It will be a document for the next generation who will have to listen from others or read from the books if they want to know.

Thanks

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

আগুন ডানা বলেছেন: Thank you for the name of Brig Iqbal Shafi, the Brigade commander of 53rd brigade who saved my father's life that day in March 1971, along with Major Khondokar and our orderly Borhan's lives as well, by telling the soldiers not to kill them because they were doctors.

৮| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

আমি অথবা অন্য কেউ বলেছেন: Im not sure who saved your fathers life. But it could be him also. CMHs are directly controlled by HQs Med Dte so far I know. So, CO of CMH and CO of a bde is not the same person. You may ask uncle or aunty if they are still alive or someone else who may remember.

But I'd request you to take time to write every part, so that you can make them more informative and arranged.

I'd also like to have a conversation with u about it in detail if you are interested. I'm trying to compile something like this on a larger canvas. It woulld be helpful on that regard also.

thanks

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৭

আগুন ডানা বলেছেন: I know that my father's life was saved by the Brigadier, not the CMH CO. My father passed away in April 2010, so I can't ask him anymore. Very few of his contemporaries are still alive today. I have no idea who you are, hard to have a conversation with anonymous person. I mainly use Facebook, so if you have a Facebook ID, it might be the easier for me to contact you through that.

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩

সুমাইয়া আলো বলেছেন: Nice job

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৫৭

আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। :)

১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:

ভালো লেখা, পড়ছি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৫৭

আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

১১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

ডাঃ মাহবুব গাউস বলেছেন: হম... লেখা গুড হয়েছে... নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়... সেটা যত ব্যক্তিগত এক্সপেরিয়েন্সই হোক।।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৭

আগুন ডানা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ইতিহাসে কেবল বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আর বীর যোদ্ধাদের কথাই লেখা থাকে, কিন্তু সাধারণ মানুষও ইতিহাসের অংশ ছিল। আমি সেই একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির বর্ণনা লেখার চেষ্টা করছি। লেখাটা ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.