নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকিলিকস

আকিলিকস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা জাতি হিসেবে বড়ই অকৃতজ্ঞ এবং র্নিল্লজ্জ জাতি।

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৪৪

রেহানা। উত্তরবঙ্গের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা। অভাবের সংসারে বড় হয়েছে। স্বামীর সংসারে এসেও সুখের দেখা মিলল না। তাই ৫ বছরের বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে রেখে স্বামীসহ পাড়ি জমালো ঢাকা শহরে। ভাগ্যবদলের চেষ্ঠায় তারা কাজ শুরু করল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। লোক মুখে যত সহজ শোনা যায়, গার্মেন্টস এ চাকরি পাওয়া ততোটা সহজ নয়। তারপরও গার্মেন্টস এ কর্মরত নিজ এলাকার মানুষদের ধরে রেহানারা গার্মেন্টস এ চকুরী পেল। কিন্তু দুইজন দুই গার্মেন্টস এ চাকরি পেল।

দু’জনের আয়ের টাকা দিয়ে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সুখ নামক মায়াময় হরিনটি সবেমাত্র তাদের ঘরের জানালায় উঁকি দেওয়া শুরু করেছে। রেহানা ভেবে রেখেছে আগামী ঈদে বাড়িতে গেলে বাবুকেও ঢাকায় নিয়ে আসবে। তারপর বাবুকে একটা স্কুলে ভর্তি করে দিতে হবে। ঢাকায় এসে রেহানার সংসারে কিছুই ছিল না। আস্তে আস্তে সেই সংসার পরিপূর্ণতা পেতে শুরু করেছে। কখেনো কখনো স্বামী স্ত্রী দু’জনকে ‍ভিন্ন সময়ে ডিউটি পালন করতে হয়। রেহানার যেদিন নাইট ডিউটি থাকে সেই দিন হয়তো রেহানার স্বামীর নাইট ডিউটি থাকে না। তখন তাকে একাই বাসায় থাকতে হয়। এই একাকিত্বের সময়টাকে একটু বিনোদিত করতে তারা টিভি কিনে ফেলল। এই টিভি কেনাটাই তাদের কাছে আনন্দদায়ক বিলাসিতা মনে হল। তারপরও নিজেদের পয়সায় টিভি কিনতে পেরেছে। এটাই তাদের কাছে বিরাট আনন্দের বিষয়।

চৈত্রের প্রচন্ড তাপদাহে এক গ্ল্যাস ঠান্ডা পানির জন্য সকলেরই প্রাণ কাঁদে। আর সে যদি হয় খেটে খাওয়া এক দিনমজুর। তবে এই ঠান্ঠা পানিটিকে মনে হবে, বেহেশতের অমৃত সরাব। তাই এই সরাবের আনন্দটুকু পাওয়ার জন্য তারা টাকা জমানো শুরু করল। টাকা জমিয়ে তারা একটি ফ্রিজ কিনবে। টাকা জমিয়ে নিজেদের বন্ধকী জমিগুলোও ছাড়ানোর চিন্তুা করতেছে। এরকম নানা স্বপ্ন নিয়ে রেহানা সেদিনও গার্মেন্টস এ কাজ করতে গেল। সেই যে গেল আর ফিরে এলো না। তাজরিন ফ্যাশনের সেই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রেহানার সলিল সমাধি হয়ে গেছে। সেই অগ্নিকান্ডে রেহানার মত এমন শতাধিক রেহানার জীবনের স্বপ্নের সলিল সমাধি ঘটে গেছে।

গত ২৪ তারিখ অনেকটা নীরবেই ‘তাজরীন ফ্যাশন ট্র্যাজেডি” দিনটি চলে গেল। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে ‘তাজরিন ফ্যাশন’ নামক তৈরি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অকালে নিভে যায় ১১১টি জীবন প্রদীপ। ২৪ নভেম্বর। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট। ঢাকার অদূরে আশুলিয়া নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেডের একটি পোশাক কারখানায় আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার আগে কারখানায় পাঁচটি ফ্লোরে প্রায় আঠারশ` শ্রমিক কাজ করছিলেন। এরপর বেজে ওঠে ফায়ার এলার্ম। সতর্ক শ্রমিকেরা। কিন্তু মূল গেটে থাকা একজন নিরাপত্তা কর্মী জানান, ভয় নেই, আগুন নিভে গেছে। গোডাউনে মশার কয়েল থেকে আগুন লাগে বলে শোনেন তিনি। শ্রমিকদের নিশ্চিন্তভাবে কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। এটাই যেন নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তা। সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে হঠাৎ ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়। পুরো কারখানায় আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু হয়। আট তলা ভবনের অন্ধকারে ছাদ থেকে আটকে পড়া শ্রমিকদের আর্তনাদ আর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার ভেসে আসে। দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের লেলিহান শিখা দেখে অনেকেই লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। কিন্তু কারো ভাগ্যে জোটে চিরকালের জন্য পঙ্গুত্ববরণ। অবশেষে এক এক করে ১১১টি তাজা প্রাণ পুড়ে অঙ্গার।

নিহতদের মধ্যে ১৮ জনেরই সন্ধান মিলে রংপুরের মিঠাপুকুর ও গঙ্গাচড়ার বলে। যে কারণে প্রিয় স্বজনদের সনাক্তের পর কফিনের দীর্ঘ বহন যোগ হয় ওই এলাকায়। মিঠাপুকুর থানার তৎকালীন ওসি আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, গঙ্গাচড়ার অনেক লোক ওই গার্মেন্টেসে কাজ করত। তাদের অনেককে এখনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মিঠাপুকুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের মনছুর আলী (৭০) জানান, ঢাকায় গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার ছেলে নজরুল ইসলাম, ছেলের বউ আমেনা বেগম, নাতি নয়ন মিয়া ও তার স্ত্রী মনিরা বেগমসহ ৪ জন পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এখনও তাদের লাশের কোন খবর পাননি তিনি।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার আজমাতা গ্রামের সালাম খুঁজে পাননি বোনের লাশ। ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছেন কয়েকবার। আবার এসেছেন ফ্যাক্টরির কাছে, সেখানেও পাননি। আগুনের হাত থেকে লাফিয়ে বেঁচে যাওয়া শ্রমিক সালাম জানান, ১১০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও বাস্তবে এর চেয়ে অনেক বেশি শ্রমিক মারা গেছে। তার ভাষায়, মারা গেছে আরও প্রায় ৫০০ শ্রমিক। আর এসব শ্রমিকের শেষ ঠিকানা হয়েছে রাজধানীর জুরাইনে সিটি কর্পোরেশনের কবরস্থানে।

সেই ১১১ জন শ্রমিকের জীবনের মূল্য আমাদের কাছে কিছুই না। আর সেকারণেই তাদের সেই বিভীষিকাময় মৃত্যুর দিনটি নীরবে নিভৃতে চলে যায়। কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞরা সেই দিনটির কথা ভুল করেও স্মরন করিনি। যাদের প্রচেষ্ঠায় বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে, যাদের রক্ত পানি করা পরিশ্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিভার্জ গড়ে উঠেছে আমরা তাদেরকেই ভুলে গেছি। আমরা আমাদের জাতীয় বীরদের ভুলে গেছি। সেই বীরদের ভুলে আমরা এখন ফারাজা,মেরাজদের নিয়ে পড়ে আছি।

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মতূজা নিজেই বলেন, আমরা হিরো নাহ। আমরা বীর নাহ। হিরো তারাই যারা বিদেশে আমাদের দেশের নাম উজ্জল করছে। হিরো তারাই যাদের হাতে বানানো পোশাক বার্সালোনা ফুটবল ক্লাবের টিমের জার্সি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই জার্সির পিছনে লেখা থাকে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। এই নাম রোশনকারী গার্মেন্টস কর্মীরাই আমাদের সমাজের সবচেয়ে নিঁচু পর্যায়ে অবস্থান করছে। কিন্তু তাদের উপর নির্ভর করতে আমরা বিন্দুমাত্র লজ্জবোধ করি না। বরঞ্জ তাদেরকে যত কম পয়সায় পারা যায়, গায়ে গদরে খাটিয়ে টাকা কামাই করে নিচ্ছি। ধিক এই নোংরা সমাজটাকে। যারা তাদের রিয়েল হিরোদের সম্মান দিতে জানে না, সেই জাতি কি করে উন্নতি করবে?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

শাব্দিক হিমু বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩১

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: দেশে মানুষ বেশী, তাই প্রাণের মূল্য আমাদের নেই বললেই চলে। এক একটি মানবজন্ম খুবই মূল্যবান। জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে আমরা তাই মানুষের প্রাণের মুল্য টাকায় নিরূপণ করি, তাই মানব জীবনের মূল্য আমাদের কাছে নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.