নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিসঃঙ্গ মেঘ

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৪১

মেঘের ঘুম ভাঙলো ২০ মিনিট হল । বিকেল প্রায় শেষের পথে । গতকাল রাত থেকেই তার প্রচন্ড জ্বড় । সেই যে গত রাতে বিছানায় পড়েছে এখনো উঠে বসতে পারেনি । খায়নি কিছুই ।

বাবা-মা থাকে গ্রামের বাড়িতে । সে ঢাকায় একা থাকে মেসে । জ্বড়ের কথা বাবা-মা কে এখনো জানায়নি । জানালে তারা শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করবে ।

মেঘ এমনই অপদার্থ যে এখনো বাবার দেয়া টাকাতেই চলে । প্রতি মাসেই তার টানাটানি । আজ মাসের ২২ তারিখ হলেও তার পকেটে একটি টাকাও অবশিষ্ট নেই । এমনিতেই অসুধ খেতে চায়না মেঘ তারউপর পকেটে নেই টাকা, তাই এখনো অসুধ খাওয়া হয়নি মেঘের ।

শরীরে একফোটা শক্তি না থাকলেও উঠে বসলো অনেক কষ্টে । ড্রয়ার থেকে একটা কমদামি সিগারেট বের করে ধরিয়ে ধীরপায়ে গিয়ে বেলকনিতে দাড়াল । গলা ব্যথার কারনে সিগারেটে ছোট ছোট টান দিয়ে ধোয়া বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছে । আর শুন্যদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আকাশে এখন মেঘের ঘনঘটা । মেঘের মনের আকাশেও কয়েকদিন যাবত বয়ে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় । কিছুদিন আগেও এই মানুষটিকে সবাই হাসতে দেখেছে, খেলতে দেখেছে । অথচ গত ৭ দিন হল মেঘ এক মুহুর্তের জন্যেও হাসতে পারেনি । কেন যে হাসতে পারেনি সেকথা মেঘ ছাড়া দ্বিতীয় কেউ জানেনা । কারন মনের সব কথা খুলে বলার মত কোন বন্ধু নেই তার ।

মেঘের একটা ভালবাসার মানুষ থাকলেও মেঘকে ভালবাসার জন্য এই বড় পৃথিবীতে একজন মানুষও নেই । কিন্তু ৭ দিন আগে পর্যন্ত তার জগতে এমন একজন ছিল যে মেঘকে কখনো মন খারাপও করতে দেয়নি । গতরাত থেকে বিছানায় পড়ে থাকলেও সেই মানুষটি একবারও ফোন দিয়ে বলেনি "কি হয়েছে তোমার মেঘ ? "

ভাবতে অবাক লাগে এই একই মানুষ আগে দিনে ১০-১২ ঘন্টা নিজেই ফোন দিয়ে মেঘের সাথে কথা বলতো । তার পাগলামী, দুষ্টুমির কারনে মেঘ তাকে তার নিজের নামে না ডেকে পাগলী বলে ডাকতো । মেঘকে সে এতটাই ভালবাসতো, বিশ্বাস করতো যে সে কয়েকদিন আগে এসে মেঘের মেস বাসায় তিনরাত থেকে গেছে ।

যে মেঘ একটু শরীর খারাপ করলে তার পাগলী সত্যি সত্যি পাগলী হয়ে যেত সে আজ অনেক দুরে । মাত্র ৯ দিন আগে যখন পাগলীটা মেঘের বাসায় ছিল তখন মেঘের সামান্য মাথা ব্যথা করেছিল । তখন পাগলীটা সারারাত বসে থেকে মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল । সারারাত এক ফোটাও ঘুমায়নি পাগলীটা ।

পাগলীর এত ভালবাসা দেখে তখন মেঘের চোখ থেকে একফোটা জল গড়িয়ে পড়েছিল । মেঘের চোখে এক ফোটা জল দেখে পাগলীর সে কি কান্না । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে রেখেছিল মেঘকে তার পাগলীটা । কপালে, গালে, ঠোটে দিয়েছিল অজস্র ভালবাসা মিশ্রিত চুম্বন ।

যে তিনটা দিন পাগলী মেঘের কাছে ছিল সেই তিনটা দিন মেঘকে একবারও নিজের হাতে কিছুই খেতে দেয়নি । যাওয়ার সময় আবারও শক্ত আলিংগন করে বলেছিল "মন খারাপের কি আছে মেঘ, আমি তো সামনের মাসেই আবার আসবো । আমাকে হাসি মুখে বিদায় দিবেনা মেঘ ? "

মনের অজান্তেই আবারও মেঘের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা জল । মনের কষ্ট মনেই চাপা দিয়ে সেদিন পাগলীকে বিদায় দিয়েছিল মেঘ । কিন্তু মেঘ তখনও জানতো না যে পাগলীর সাথে এটাই তার শেষ দেখা ।

পাগলীকে বিদায় দিয়ে এসে সেদিন মেঘ বিষন্ন মন নিয়েই ভর দুপুরে ঘুমিয়ে পরে । সন্ধ্যায় মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভাঙে মেঘের । মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে পাগলীর নম্বর । সে ভাবে হয়তো পৌছিয়েছে সেটা জানাতে ফোন দিয়েছে । সে ফোন রিসিভ করেই বলে, "পাগলী তুমি ঠিকভাবে পৌছে গিয়েছো ? " কিছুক্ষন ওপাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে মেঘ আবার পাগলী বলে ডাক দেয় । হঠাত কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে । কান্নার শব্দে মেঘের বুকে ঝড় বয়ে যায় । কিন্তু এ কন্ঠ তো তার পাগলীর নয় । তাহলে তার পাগলীর নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে কে কাদছে ?

ওপাশ থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে "ভাইয়া আমি মুন, আপু নেই, আপনার কাছ থেকে আসার পথেই একসিডেন্টে সব শেষ। "

কথাটা শোনার পরেই মেঘের হাত থেকে মোবাইলটা পরে যায় । অজ্ঞান হয়ে যায় মেঘ । তার রুমমেটরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল । ১৫ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে মেঘের । কিন্তু তিনদিন কথা বলতে পারেনি মেঘ । পরের তিনদিন উদভ্রান্তের মত রাস্তায় রাস্তায় হেটেছে মেঘ । তাই গত রাত থেকে এই জ্বড় ।

বেলকনিতে দাড়িয়েই পরপর তিনটা সিগারেট শেষ করেছে মেঘ । বেলকনি থেকে এসে বাথরুমে ঢুকে দড়জা বন্ধ করে এখন সে এই জ্বড় নিয়েই ঝড়না ছেড়ে দাড়িয়ে থাকবে আর কাদবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.