নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত প্রায় দুইটা বাজে । নেহাল বাসা থেকে বের হইছে সেই ১০ টার দিকে । সেই থেকে অনবরত হেটে যাচ্ছে । কোন দিকে যাচ্ছে সে নিজেও জানেনা । মনটা অস্থির , তাই যখন যে রাস্তায় ইচ্ছা সেই রাস্তাতেই হেটে চলেছে । নিজেকে আজ হিমুর মত লাগছে । যদিও নেহাল একদমই হিমুর মত নয় । সে খুব বেশি হাটে না , খালি পায়ে একদমই চলতে পারে না ।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সে । এখনো নিজে উপার্জন করে না । বাপের টাকায় চলে । তিন মাস হল অনার্স শেষ করেছে । চাকরির জন্য ছোটাছুটি করছে কিন্তু চাকরি পাচ্ছে না । ছাত্র ভাল হলেও ঘুষের টাকা দিতে পারেনা বলে চাকরি হয়না ।
সমবয়সী সবারই চাকরি হয়ে গেছে । আর সে এখনো তার বাবার পাঠানো টাকায় চলে বলে খুবই হীনমন্যতায় ভোগে ।
এতদিন হলে থাকতো, গত এক মাস হলো একটা মেসে উঠেছে নেহাল । খরচ বেড়ে গেছে । চলতে হিমসিম খাচ্ছে ।
আজ মা ফোন দিয়েছিলো । বাবা নাকি অসুস্থ । বয়স হয়েছে, আর কত ? মা বললো, "বাবা একটা কিছু করার চেষ্টা কর, তোর বাপ যে আর পারেনা । তোর বোনটাও তো বড় হইছে । তুই কিছু না করলে কেমনে চলে বল বাপ । "
বলতে বলতে মায়ের গলাটা ধরে আসছিল ।আস্তে করে ফোনের লাইনটা কেটে দেয় নেহাল ।
সেই থেকে মনটা অস্থির, কি করা যায় ? কিছু ভাবতে না পেরে রাস্তায় বেরিয়েছে । হাটছে তো হাটছেই ।
হাটতে হাটতেই হঠাৎ চোখে পড়লো "লাভলী হোটেল এন্ড রেস্ট্রুরেন্ট "
সে সম্বিত ফিরে পেল । নেহাল বুঝতেই পারেনি কখন সে নীলক্ষেত চলে এসেছে । নীলক্ষেতের এই হোটেলটিতে হলে থাকাকালীন অনেকবার খেয়েছে । হোটেলের সবাই তাকে চেনে ।
হোটেলের সামনে আসতেই তার মনে হল সে খেয়ে বের হয়নি । প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করলো । নেহাল পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলো । সেখানে আছে মাত্র ১১০০ টাকা । মাসের আজ ১৭ তারিখ । এই সামান্য টাকা দিয়ে কিভাবে সে চলবে তাই ভাবতে লাগলো ।
ভাবনায় বাধ সাধলো মোবাইলে আসা কল । পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে পুশন কল দিয়েছে । কল রিসিভ করবে কি করবে না সেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে ভুগতেই কল কেটে গেল । মোবাইল পকেটে রাখতেই আবার কল । এবার কলটি রিসিভ করে ।
: হ্যালো
: তোমার না রাতে খাওয়ার পরে কল দেয়ার কথা ছিল ?
: হুম
: দাওনি কেন ? কতসময় ধরে ওয়েট করতেছি জানো ? আমার কি টেনশন হয়না ?
: টেনশন কেন ? আর ফোনে টাকা নেই ।
: ফোনে টাকা নেই এটা এখন কেন বলো ? বিকেলে যখন দেখা হইছে তখন বললা না কেন ?
: বললে কি করতে ?
: কি করতাম মানে ? উল্টাপাল্টা কথা বলতেছ কেন ?
: এত রাত হইছে ঘুমাওনি কেন ?
: আপনার সাথে কথা না বলে কি আমি গত তিন বছরে একবারও ঘুমিয়েছি ?
এই তুমি কোথায় ? তোমার পাশে গাড়ির আওয়াজ কেন ?
: বাইরে ।
: বাইরে মানে !!!!!!!
: বাইরে মানে নীলক্ষেতে ।
: এত রাতে তুমি নিলক্ষেতে কি করো ?
: ভালো লাগছিলো না তাই হাটতে হাটতে চলে এলাম ।
: হাটতে হাটতে !!!!!!!!!! এতদূর থেকে কিভাবে হেটে গেছ ? কি হইছে তোমার ? ভালো লাগছিলো না আমাকে বলতে, আমি সময় দিতাম, ফোনে কথা বলতাম, তাই বলে তুমি এত রাতে বাইরে যাবে ? এই তুমি খেয়ে বের হইছিলা ?
: না খেতে ইচ্ছা করছিলো না ।
: খেতে ইচ্ছে করছিল না মানে ? একটা চড় মারবো ফাজিল পোলা । নীলক্ষেতে হোটেল খোলা আছে না ?
: হুম ।
: যাও এখুনি খেয়ে নাও । খাওয়া শেষ করে আমাকে ফোন দিবা । ও তোমার ফোনে তো টাকা নেই, আমিই ফোন দিব ৩০ মিনিট পরে । যাও তারাতারি খেয়ে নাও । তোমার সাথে ঝগড়া আছে আমার ।
: পাগলী একটা, ফোন রাখো ।
পুশনের সাথে পরিচয় হয়েছিল বছর তিনেক আগে । এক মাসের মাথায়ই ভালবাসার শুরু । অসম্ভব ভালবাসে দুজন দুজনকে । কিন্তু কিছুদিন ধরে মানসিক অস্থিরতার কারনে নেহাল পুশনকে একটু এড়িয়ে চলছে । এটা নিয়ে পুশন নেহালের উপড় ভীষন ক্ষেপে আছে ।
মোবাইল পকেটে রেখে হোটেলে প্রবেশের জন্য রাস্তা পার হতে শুরু করে নেহাল, হঠাৎ দ্রুতগতির একটা মাইক্রো এসে ধাক্কা দেয় নেহালকে । ছিটকে দূরে গিয়ে পরে নেহাল । দোকানের লোকেরা ছুটে গিয়ে নেহালকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যেতে থাকে । তখনো বেচে আছে নেহাল । নেহালের চোখের সামনে ভেসে আসতে থাকে বাবা, মা, বোনের ছবি । মনে পড়তে থাকে পুশনের সাথে মধুর ঝগড়াগুলো । ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পরে নেহালের শরীর । তারপর হারিয়ে যায়.........
©somewhere in net ltd.