নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈপরীত্ব

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৭

বৈপরীত্ব

রাতের ঢাকার অদ্ভুত একটা শক্তি আছে । মন খারাপের শেষ স্তরে পৌছানো মানুষগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে আনার শক্তি । ইদানিং রাত ১২টা বাজলেই আর বাসায় মন টেকেনা অর্কর । বের হয়ে নির্জন গলিতে একা একাই হেটে বেড়ায় কানে হেডফোন গুজে । চলতে থাকে পুরানো দিনের মন খারাপ করা যত গান । মাঝে মাঝে রেল লাইনে বসে থাকে । বর্ষার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখে, দেখে চাঁদের সাথে মেঘের লুকোচুরি খেলা । একটু পরপর এক একটা ট্রেন নির্জনতা ভেঙে দিয়ে তীব্র আওয়াজ আর আলো নিয়ে এসেই আবার সব নির্জন করে দিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায় । আজ অর্কর একটু বেশিই মন খারাপ । ইদানিং মন খারাপ করতে আর কারন লাগেনা । আজও তেমনি কোন কারন ছাড়াই মনটা খারাপ হয়ে আছে । মোবাইলে চলতে থাকা গানটা অফ করে অনিন্দিতাকে কল দিল, রাত বাজে একটা । মেয়েটি কল রিসিভ করলো না । হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে । আজকাল মন খারাপ থাকলে অর্ক কেন জানি এই মেয়েটির কাছেই ফোন দেয়, মেয়েটিও স্বাচ্ছন্দে কথা বলে । অনিন্দিতা মেয়েটি প্রচুর কথা বলে তবে এই মেয়েটির কথা শুনে অর্কর কখনো বিরক্তি আসেনি । অনিন্দিতার সাথে অর্কর এখন পর্যন্ত একবারও দেখা হয়নি । পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে । ফেসবুকে চ্যাট করতে করতে একসময় অর্ক বলে যে তার প্রচন্ড ঘুমের সমস্যা সাথে সাথে অনিন্দিতা বলে আমার ইচ্ছে ঘুম, যখন ইচ্ছা তখনই ঘুমাতে পারি । অর্ক - সুখে থাকলে সবাই ইচ্ছে ঘুম দিতে পারে ।
অনিন্দিতা - কে বললো আমি সুখে আছি ?
অর্ক - সব কথা কি মুখে বলতে হয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয় ।
অনিন্দিতা - বুঝে নেয়া ভাল তবে বেশি বোঝা ভাল না ।
অর্ক - আচ্ছা আমি এখন তাহলে কম বুঝেছি, একটু বুঝিয়ে বলবে ?
অনিন্দিতা - আমার বেশি কষ্টে থাকলেই বেশি ঘুম আসে ।
অর্ক - এই প্রথম ব্যতিক্রম দেখলাম ।আচ্ছা কিসের কষ্ট তোমার আমাকে কি বলা যায় ?
অনিন্দিতা - কেন কষ্ট দূর করার চেষ্টায় নেমে যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি ?
অর্ক - আচ্ছা থাক বলতে হবে না ।
অনিন্দিতা - কেন বললে কি আমার কষ্ট তোমায় ব্যথা দিবে ?
অর্ক - না তেমন কিছুনা, এমনি জানতে ইচ্ছে হয়েছিল । কিন্তু তুমি যেভাবে প্রথম উত্তরটা দিলে জানার ইচ্ছেটা নষ্ট হয়ে গেছে ।
অনিন্দিতা - বলতে পারি এক শর্তে যদি রাজি থাক ।
অর্ক - আমি রাজি ।
অনিন্দিতা - শর্ত না শুনেই রাজি হয়ে গেলে ?
অর্ক - কখনো কখনো ঝুকি নিতে হয় ।বল কি শর্ত ?
অনিন্দিতা - আমার কষ্টগুলোকে মেরে ফেলতে পারবে ? কষ্টের পাল্লাটা এত ভারি হয়ে গেছে যে ভার আর সইতে পারিনা ।
অর্ক - আমারও একটা শর্ত আছে ।
অনিন্দিতা - তোমার আবার কিসের শর্ত ?
অর্ক - তোমার অর্ধেক ঘুম আমাকে দিতে হবে ।
অনিন্দিতা - আচ্ছা তোমার সাথে কি আমি মোবাইলে কথা বলতে পারি ?
অর্ক এই প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে সরাসরি তার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে দিল । ১০ মিনিট পরেই কল আসলো, ওপাশ থেকে বললো আমি অনিন্দিতা । এই তাদের কথা বলার শুরু । সেদিন রাতে তারা প্রায় ৩ ঘন্টা কথা বলে । দুজন দুজনের বর্তমান অবস্থা নিয়েই আলোচনা করে । অর্ক অনিন্দিতা সম্পর্কে যা জানতে পারলো তা হল তার বাবা নেই, তারা দুই বোন এবং এক ভাই । ভাই-বোন-মা সবাই আলাদা জায়গায় থাকে । অনিন্দিতা সবার ছোট তাই আদর সব থেকে বেশিই পেয়েছে ছোট বেলা থেকে । আর ৩ বছরের একটা প্রেম ছিল, খুব সামান্য কারনে সেটা ভেঙে গেছে । আরো অনেক কথা হল । এরপর থেকে অনিন্দিতার সাথে অর্কর নিয়মিত কথা হতে থাকে, সারাদিন কে কি করলো এইসব নিয়েই কথা হয় ।
অর্ক অনিন্দিতাকে আরেকবার কল দিতে গিয়েও দিল না, হয়তো মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে তাকে জাগানো উচিত হবেনা । এরপর আরো কিছুসময় রেল লাইনে হাটাহাটি করে রাত ৩ টার সময় বাসায় ফিরে আসে অর্ক । অল্প খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে অর্ক ।
রাত ৪ টায় হঠাৎ মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় । উঠে দেখে অনিন্দিতার কল । রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে । অর্ক উদ্ধিগ্ন হয়ে বলে কি হয়েছে তোমার ? কাদতেছো কেন ?
অনিন্দিতা - কিছু হয়নি এমনি ।
অর্ক - এই রাতে কেউ এমনি কাদেনা, বল কি হয়েছে ?
অনিন্দিতা - বললাম তো কিছু হয়নি, এমনি ঘুম ভেঙে গেছে, তারপর কান্না আসলো কাদতেছি । তোমার কথা মনে হল তাই কল দিলাম ।আমি মনে হয় তোমাকে বিরক্ত করলাম, আচ্ছা সরি আমি রাখলাম তুমি ঘুমাও ।
অর্ক - আশ্চর্য মেয়ে তো । আমি কি বলেছি যে আমি বিরক্ত হয়েছি । এত বেশি বোঝ কেন ? ফোন রাখবেনা বলছি ।
অনিন্দিতা- আচ্ছা রাখবো না, বল ।
অর্ক - বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙছে ?
অনিন্দিতা - জানিনা, ঘুম ভেঙে গেল । তারপর খুব কান্না পেল, বাথরুমে গিয়ে কিছুক্ষন কাদলাম, তারপর ভাবলাম তোমায় ফোন দেই ।
সত্যি বলতে কি স্বপ্ন দেখেই আমার ঘুম ভেঙেছে । খুব খুব বাজে স্বপ্ন ।
বলেই অনিন্দিতা আবার অঝোরে কান্না শুরু করলো ।
অর্ক - এই এই একদম কাদবে না বলছি । যাও ওঠো, উঠে এক গ্লাস পানি খেয়ে শুয়ে পর ।
অনিন্দিতা - না এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে না ।
অর্ক - তুমি পানি না খেলে কিন্তু আমি এখন কথা বলবো না ।
অনিন্দিতা -আচ্ছা পানি খাচ্ছি, এবার খুশি । তুমি ঘুমাওনি ?
অর্ক - না ।
অনিন্দিতা - কেন ?
অর্ক - তুমি কথা রাখনি তাই ।
অনিন্দিতা - কি কথা রাখিনি ?
অর্ক - তোমার অর্ধেক ঘুম আমায় দেয়ার কথা ছিল । দিয়েছো ?
অনিন্দিতা - তুমিও তো কথা রাখনি ।
অর্ক - কথা রাখার সুযোগ কি দিয়েছো কখনো ?
অনিন্দিতা - সবসময় কি সুযোগ দিতে হয় ?
অর্ক - সুযোগ না দিলে কি কখনো কারো কষ্ট জোড় করে দূর করা যায় ?
অনিন্দিতা - কখনো কখনো সুযোগ তৈরি করে নিতে হয় ।
অর্ক - সেই সময় কি কখনো দিয়েছো ?
অনিন্দিতা - সময় বের করে নিতে জানতে হয় ।
অর্ক - যদি ভুল বোঝ সেই ভয়ে কখনো চেষ্টা করিনি ।
অনিন্দিতা - ঝুকি নিতে জানতে হয় রে পাগল ।
অর্ক - ভুল সময়ে, ভুল ক্ষেত্রে যদি ঝুকি নেই আর তুমি ভুল বুঝে যদি দূরে সরে যাও তাই ঝুকির কথা কখনো মাথায় আনিনি ।
অনিন্দিতা - পানিতে নামবে আর চুল ভেজাবে না সে কি সবসময় হয় ?
অর্ক - কিসব কথা বল কিছুই বুঝিনা ...
অনিন্দিতা - সব কথা কি বোঝার জন্যই বলতে হয় ?
অর্ক - বাদ দাও তো । এখন বল তোমার মন খারাপ ছিলো কেন ?
অনিন্দিতা - কই মন খারাপ ছিল ?
অর্ক - কাল ঘুমানোর আগে মন খারাপ ছিল বলেই তো আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছো ।
অনিন্দিতা - তুমি জানলে কিভাবে ?
অর্ক - জানতে হয় রে পাগলী ।
অনিন্দিতা - আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছে, কারো বুকে মাথে রেখে শান্তিতে একটু কাদবো এমন কেউ পাশে নেই । আম্মুটাও পাশে নেই ।
অর্ক - একদম মন খারাপ করবে না ।
অনিন্দিতা - সবসময় মন খারাপ করতে হয়না, এমনি এমনিই মন খারাপ হয়ে যায় ।
অর্ক - অনিন্দিতা তোমাকে একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম ।
অনিন্দিতা - বল ।
অর্ক - না থাক, এখন বলা উচিত হবেনা পরে বলবো ।
অনিন্দিতা - না এখনই বলবে, না বললে কথাটা উঠালে কেন ।
অর্ক - রাগ করবে না তো ?
অনিন্দিতা - না রাগ করবো না । ঢং বাদ দিয়ে বল ।
অর্ক - অনিন্দিতা তোমার সাথে কথা বলতে বলতে কখন জানি মনের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছি । কিন্তু সাহস করে বলিনি ভয়ে যদি তুমি দূরে সরে যাও । আরও একটা ভয় ছিল, আমি তেমন ভাল ছাত্র নই, পড়ালেখা শেষ করতে পারবো কিনা জানিনা, শেষ করলেও হয়তো ভাল কোন চাকরি আমি করতে পারবো না । তাই হয়তো আমাকে সারাজীবন নিম্নমধ্যবিত্ত হয়েই থাকতে হবে । আমি চাইনা আমি যাকে ভালবাসি সেই মানুষটা সারাজীবন আমার সাথে থেকে কষ্ট করুক । তুমি ভাল ছাত্রী, চাইলেই অনেক ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে সুখী হতে পারবে । তারপরও ভালবাসি তো তাই একটা কথা বলবো, আমি যদি কখনো ছোট একটা চাকরি করতে পারি তুমি কি আমার সাথে কষ্ট করে থাকতে পারবে ? এইটুকু বলতে পারি যে আমার কাছ থেকে তুমি কখনো মানসিক কষ্ট পাবেনা । আমি সত্যি তোমায় অনেক ভালবাসি অনিন্দিতা । আমার মনে হয় তোমার ভাই-বোন-মা এর পরে যদি কেউ তোমায় সব থেকে বেশি ভালবাসে সে আমি । থাকবে পাশে ভালবেসে অনিন্দিতা ?
এতসময় অনিন্দিতা চুপ করে মন দিয়ে অর্কর কথাগুলো শুনলো ।
অনিন্দিতা - মিথ্যার ভিড়ে সত্যকে খুজে পাওয়া দুষ্কর । তাই সত্যকে খোজা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম । আজ যদি আমি তোমার কথা বিশ্বাস করে নিয়ে তোমায় ভালবেসে ফেলি তারপর যদি দেখি কিছুদিন পরে আমি আবার সেই মিথ্যার বেড়াজালে পা দিয়েছি তখন কিন্তু আমার আর বেচে থাকার কোন পথ খোলা থাকবেনা ।
অর্ক - তোমায় কি বলবো বুঝতে পারছিনা । কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে তাও মাথায় আসছে না । তোমাকে যদি আমি সত্যি ভাল না বাসতাম তবে বানিয়ে বানিয়ে অনেক মিথ্যা বলতে পারতাম, আমি কিন্তু মিথ্যা বলিনি অনিন্দিতা ।
অনিন্দিতা - আমি চাই এমন একজন আমার জীবন সংজ্ঞী হবে যে আমায় বুঝবে, সব কথা মুখে বলতে হবেনা চোখের দিকে তাকিয়েই অনেকটা বুঝে ফেলবে । আমার বাবা নেই, ভাইটা আম্মুর সাথে খুব একটা ভাল ব্যবহার করেনা, আমি চাই আমার ভালবাসার মানুষটা যেন আমার মা কে তার নিজের মা মনে করে । তুমি কি এসব পারবে ?
অর্ক - তুমি পাশে থাকলে অবশ্যই পারবো ।
অনিন্দিতা - আর একটা কথা মনে রাখো ভালবাসতে আর সুখী হতে টাকা লাগেনা, বড় চাকরি লাগেনা । একটা নির্মল মন প্রয়োজন । যারা মনে করে টাকা সুখ - ভালবাসা আনতে পারে তারা সুখ আর ভালবাসার সংজ্ঞাই জানেনা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.