নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্যা

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪

অনন্যা নামটি গত কয়েকদিন ধরে নিয়মিতই চোখে পড়ছে । ফেসবুকের প্রত্যেকটি লেখায় ছবিতে লাইক দেয় মেয়েটি । তবে কখনো অনন্যার আইডিতে যেয়ে দেখিনি এটা আসলেই কোন মেয়ের আইডি না ফেক আইডি । আশ্চর্যের বিষয় হল মেয়েটি এতদিন হল আমাকে ফলো করে অথচ এখনো আমাকে এড করার জন্য রিকোয়েস্ট দেয়নি । আজ কৌতুহল নিয়ে অনন্যা নামের আইডিতে যেয়ে দেখলাম অনেক ছবি দেয়া আছে, মনে হচ্ছে অরিজিনাল আইডি । ভাব না নিয়ে তাকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম । ৩০ সেকেন্ডের মাথায় রিকোয়েস্টটি এক্সেপ্ট করা হল । অবাক হয়ে ঘটনাটি দেখলাম । এমনটা আগে কখনো হয়নি । কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনন্যার মেসেজ । এই প্রথম মেসেজ দিল ।

- আপনি আমাকে রিকোয়েস্ট দিয়েছেন !!!
- কেন আমার কি রিকোয়েস্ট দেয়া নিষিদ্ধ !
- না তা বলিনি ।
- তবে ?
- আপনি আমাকে রিকুয়েস্ট দিবেন এটা স্বপ্নেও ভাবিনি ।
- একটা সত্যি কথা বলবেন ?
- মিথ্যা বলবো কেন ?
- আপনি এতদিন ধরে আমাকে ফলো করেন অথচ রিকুয়েস্ট দেননি কেন ?
- আসলে আপনি এক্সেপ্ট করবেন কি করবেন না সেটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম । আমার আগের আইডি থেকে আপনাকে রিকুয়েস্ট দিয়েছিলাম, তিন মাস ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, পরে ডিলেট করে দিলেন । সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম, অভিমান থেকে আইডিটাই ডিএকটিভ করে দিয়েছি । আসলে আপনার লেখা আমার খুব ভাল লাগে ।
- তখন কি কারনে এক্সেপ্ট করিনি জানিনা । তবে আপনি তো একটা মেসেজ দিয়েও বলতে পারতেন ।
আর আমি ভাল লিখি আপনাকে কে বললো ?
- আসলে সংকোচ থেকেই এতদিন আপনাকে মেসেজ দেইনি । আর আপনি ভাল লিখেন না খারাপ লিখেন সেটা আমার দেখার ব্যাপার না । আমার ভাল লাগে আপনার লেখা আমি সেটাই বলেছি । অন্য কেউ কি বললো তাতে আমার কিছু আসে যায়না ।
- ভাল লাগলো আপনার কথাটা । আচ্ছা এত রাতে জেগে আছেন যে !
- কাল এক্সাম আছে তাই ছবি আঁকছি ।
- এক্সাম আছে আবার ছবি আঁকছেন ! ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না ।
- আমি চারুকলায় পড়িতো তাই । আচ্ছা আপনি এত রাতে কি করছেন ? নিশ্চয়ই লেখালেখি ?
- নাহ, আমি এমনিতেই রাতে ঘুমাই না ।
- ইশশ,আপনি কেমন আছেন সেটাই তো জিজ্ঞেস করা হলোনা ! কেমন আছেন আপনি ?
- কেমন আছি ? আসলে আমি কখনোই জানিনা যে কখন কেমন থাকি । আপনি কেমন আছেন ?
- আজব মানুষ তো আপনি ! আমি ভালই আছি । আচ্ছা সব লেখকরাই কি এমন হয় ?
- আমি তো লেখক নই , একটু চেষ্টা করি এই আরকি ।
- আর সবাই কি বলে জানিনা, আপনি আমার লেখক । আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন ? আপনার সব লেখায় এত কষ্ট থাকে কেন ?
- কষ্টের মাঝে যার বসবাস তার লেখায় যদি কষ্ট না থাকে তবে কার লেখায় থাকবে !
- আচ্ছা কিসের এত কষ্ট আপনার ?
- সব কিছুরই কি কারণ থাকা বাধ্যতামুলক !
- আচ্ছা আমি আজ যাই, কাল এক্সাম আছে ।
- বিদায় ।

আজ প্রথম দিনেই মেয়েটির সাথে অনেক কথা বলে ফেললাম । সাধারনত আমার এমনটা হয়না । ভোর হয়ে গেছে প্রায় । কয়েকমাস হল বাজে অভ্যেস হয়েছে, এই সময়ে এক কাপ চা আর একটা আস্ত সিগারেট না খেলে ঘুম আসেনা ।

এরপর থেকে অনন্যার সাথে প্রতিনিয়তই কথা হতে থাকে ফেসবুকে। কয়েকদিন পরে অনন্যা মোবাইল নম্বর চাইলে বিনা বাক্যে দিয়ে দেই । যেদিন প্রথম অনন্যার কন্ঠ শুনলাম মনে হল বাচ্চা কোন মেয়ে কথা বলছে, ভারি মিষ্টি কন্ঠ । তার প্রথম প্রশ্ন ছিল "ভাইয়া আপনার নামটাই তো আমি জানিনা !" আমি শুভ্র । সেদিন অনেকক্ষন কথা হয় । চারদিন পরে বলল ভাইয়া আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি ? কথাটি শুনে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না । হ্যা বলে দিলাম । সময় পেলেই মেয়েটি কথা বলতো । হঠাত করে একদিন বললো দেখা করবে ।

একমাস কথা বলার পরে প্রথম দেখা হল চারুকলায় । টানা দুই ঘন্টা পাশাপাশি বসা থাকলেও আমি খুব একটা কথা বলিনি । আসলে সামনা সামনি আমি কারো সাথে কথা বলতে পারিনা, এটা আমার একটা বাজে অভ্যেস । আমি শুধু একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছিলাম আর মুগ্ধ হয়ে মিষ্টি কন্ঠের মত মিষ্টি চেহারার মেয়েটিকে দেখতে লাগলাম । সে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল ।

- ভাইয়া তুমি এত কম কথা বলতেছ কেন ? আমি দেখতে অসুন্দর বলে !
- কে বলছে তুমি দেখতে অসুন্দর ।
- আচ্ছা তুমি এত সিগারেট খাও কেন ?
- এমনি ।
- সিগারেট একদম কম খাবে বুঝলা । আচ্ছা তোমার প্রেমিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেনা ?
- না ।
- কেন ? আমাকে দেখলে কি তোমার প্রেমিকা তোমার সাথে ঝগড়া করবে ?
- না থাকলে কিভাবে ঝগড়া করবে !
- কাউকে ভালবাসোনা তুমি ?
- রাতকে ।
- আচ্ছা তুমি সব কথার উত্তর এমন করে দিচ্ছো কেন ! আমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছেনা না ?
- আমি কি বলেছি । আমি এমনিতেই কথা কম বলি ।
- আচ্ছা কেউ যদি তোমাকে অনেক ভালবাসে, তোমাকে নিজের করে নিতে চায় তবে কি করবে ?
- আমার জন্য তেমন কেউ জন্মায়নি ।
- কে বলছে তোমায় ? কত মানুষ তোমাকে ভালবাসে জানো !
- ভালবেসে সারাজীবন পাশে থাকা অনেক কঠিন । সবাই পারেনা ।
- কেউ যদি তোমায় ভালবাসতে চেষ্টা করে তাকে কি তুমি ভালবাসার সুযোগ করে দিবে ?
- ভালবাসা !!! আমি আজ গেলাম মাথা ব্যথা করছে ।
- উত্তরটা দিয়ে যাও, আর বলে যাও আবার কবে দেখা হবে ?
- সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হয়নারে পাগলী । আর দেখা হওয়া কি জরুরী ?
- হ্যা, দেখা করতে হবে । তোমার সাথে আমার কথা আছে ।
- মোবাইলে বললেই তো হয় ।
- সব কথা মোবাইলে বলতে হয়না ।
- আচ্ছা শুক্রবার দেখা হবে বিকেলে ।
- সাবধানে যেও ।
- তুমিও ।

সেদিন বাসায় এসে ভাবনায় পরে গেলাম । কি বলতে চায় অনন্যা, ও কি আমায় ভালবেসে ফেলেছে !

শুক্রবারে নামাজ পরে বাসায় এসে দেখি মোবাইলে অনন্যা ৩৭ বার কল দিয়েছে । কল দিলাম, সাথে সাথে রিসিভ করে বললো -
- কোথায় ছিলে, কতক্ষন ধরে কল দিয়েছি কখন বের হব জানতে ।
- আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম, আজ শুক্রবার না ।
- নামাজ পড়তে গিয়েছিলে মানে ! তুমি মুসলমান ?
- হ্যা, এত আশ্চর্য হওয়ার কি আছে । আমি বের হচ্ছি, তুমিও বের হও । ছবিরহাটে দেখা হবে ।
- আমি কিন্তু হিন্দু ।
- তাতে কি হইছে ! বের হও রাখলাম ।
বিকেল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বসেছিলাম । অনন্যা আসেনি । মোবাইল অফ ছিল । কারন টা বুঝতে পারলাম না । ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে রাখলাম ।
সাতদিন কোন রিপ্লাই আসেনি । হঠাত একদিন অনন্যার মেসেজ -

"শুভ্র,আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভীষণ পছন্দ করতাম । কিন্তু কখনো বলতে পারিনি । তোমার লেখা খুব ভাল লাগতো । কথা বলতে বলতে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম । সেদিন তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম ভালবাসার কথা কিন্তু বাধ সাধলো ধর্ম । আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান । তারা এটা কখনোই মেনে নিত না । আর আমি তাদের কষ্ট দিতে পারবোনা । তাই নিজেই দূরে সরে গেলাম । দেখা করলে, কথা বললে স্মৃতি বাড়বে আর কষ্টও বাড়বে । তাই আর কখনো কথা বলবো না, দেখা করবো না । দূর থেকেই ভালবেসে যাব । প্লিজ আমাকে আর খুজবে না তুমি । আমি এই আইডিটা ডিএকটিভ করে দিব । অন্য কোন আইডি থেকে তোমার লেখা পড়ে যাব । ভাল থাকার চেষ্টা করবে, সিগারেট কম খাওয়ার চেষ্টা করবে, ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করবে, সময়মত ঘুমাবে । বিদায় শুভ্র । "

অনন্যার মেসেজের কোন উত্তর দিতে পারিনি ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.