নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাধবী

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪০

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, যেই দিনগুলোতে মাধবীর সাথে হেটেছি অনেকটা পথ । শাহবাগ,চারুকলা,ছবিরহাট,টিএসসি,বাংলা একাডেমী,দোয়েল চত্বর,শহীদ মিনার,ফুলার রোড,পলাশী,নীলক্ষেতের রাস্তার প্রত্যেকটি ধূলিকণা মাড়িয়ে এগিয়ে চলতাম আমি আর মাধবী । রাস্তার দুই ধারের গাছপালা সাক্ষী দীর্ঘ সাড়ে চার বছর একসাথে হাটলেও আকোনদিন কেউ কারো হাত ধরিনি ।

মাধবীর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল টিএসসিতে । বুথ থেকে টাকা তুলে বের হচ্ছি তখন মাধবীর ডাক "ভাইয়া একটু হেল্প করবেন ? "
মাথা তুলে যখন মাধবীর দিকে তাকালাম তখন মনে হলো আরেকটু হলে মাথা ঘুরে পরেই যেতাম । কোন মানবী এত সুন্দর হয় কিভাবে ! বিধাতা মনে হয় স্বর্গের অপ্সরী বানাতে গিয়ে ভুল করে নারীতে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন । পড়নে ছিল নীল শাড়ি আর কপালে কালো টিপ ।

- এই যে ভাইয়া শুনছেন ?
- হ্যা বলুন ।
- আমি মোবাইল ব্যাংকে নতুন একাউন্ট খুলেছি, কিভাবে টাকা তুলতে হয় জানিনা । যদি একটু দেখিয়ে দিতেন অনেক উপকার হত ।
- আসুন দেখিয়ে দিচ্ছি ।

টাকা তুলে বের হওয়ার পরে মাধবী বলল -
- ভাইয়া অনেক উপকার করলেন ।
- এ এমন কি !
- আমরা কি একটু চা খেতে পারি ?
- চা ? এটা কি আপনার উপকার করলাম তার জন্য না পরিচিত হওয়ার জন্য ?
- না মানে,পরিচিত হওয়ার জন্য ।
- আসুন । আচ্ছা কি করেন আপনি ?
- এবার ভর্তি হলাম । আপনি ?
- আমি সেকেন্ড ইয়ারে ।

সেদিন প্রায় ঘন্টাখানেক কথা হয়েছিল মাধবীর সাথে । জানলাম তার পুরো নাম মাধবীলতা । বাবা নাকি খুব শখ করে নামটি রেখেছে । আমি তার অনুমতি নিয়েই লতা বাদ দিয়ে মাধবী নামে ডাকা শুরু করি । মাধবী থাকতো রোকেয়া হলে । প্রথম দিনই জানতে পেরেছিলাম তার তেমন কোন বন্ধু নেই । সে ঢাকায় এই প্রথম । কথা কম বলার কারনে তেমন বন্ধু তৈরি হয়নি । সাহস করে বলে ফেললাম "আমি যদি আপনাকে এই এলাকার রাস্তাঘাট ঘুড়িয়ে চিনিয়ে দেই আপনার আপত্তি নেই তো ? " কথাটা শোনার পরে মাধবী পরম বিশ্বাসের একটা হাসি দিয়েছিল ।

সেই থেকে মাধবীর সাথে নিয়মিত দেখা হত । দুই মাস বাদে একে অন্যকে তুমি বলা শুরু করি । ক্লাশের ফাঁকে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া বা মধুর ক্যান্টিনে একসাথে দুপুরের খাবার খেতাম । সন্ধ্যায় আবার বের হয়ে একসাথে হাটাহাটি, চা খাওয়া,গল্প কচরা ।

ভালই কেটেছে সাড়ে চারটা বছর । প্রতি রাতে তাকে হলের গেটে পৌছে দিয়ে আমি আমার হলে যেতাম । আর যাওয়ার সময় নিয়ম করে প্রতিদিন মাধবী আদুরে কন্ঠে বলতো "সিগারেট একটু কম করে খেও "

মাধবী অসাধারন কবিতা আবৃত্তি করতো । আমিও তখন টুকটাক কবিতা লিখতাম । যদিও সব কবিতা লেখা হত মাধবীকে কেন্দ্র করেই । মাধবী সেইসব বস্তাপঁচা কবিতা খুব সুন্দর করে আবৃত্তি করতো । মাধবী বুঝতে পারতো যে সব কবিতা তাকে ঘিড়েই লেখা । প্রতিদিন কবিতা হাতে পেয়ে সাথে সাথেই পড়তো আর মিটিমিটি হাসতো ।

প্রথম যেদিন মাধবীকে দেখেছিলাম সেদিনই অসম্ভব ভাল লেগে গিয়েছিল । তারপর একসাথে পথ চলতে চলতে কখন যে ভালবেসে ফেলেছিলাম তা মনে করতে পারছিনা । কিন্তু মাধবীকে কখনো ভালবাসার কথাটা বলিনি । ভয় ছিল,সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল সেটা যদি নষ্ট হয়ে যায় ।

দেখতে দেখতে একসাথে সাড়ে চার বছর । ধৈর্য ধরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছিল । তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের ছুটির পরে ঢাকায় এসেই মাধবীকে বলে দেব ভালবাসার কথা । জানি মাধবীও আমাকে ভালবাসে । সে আমাকে ফিরিয়ে দেবে না কখনোই ।

ঈদের ছুটি শেষ হল ছয় মাস পেরিয়ে গেছে । বলতে পারিনি "মাধবী আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি "। এখনও সেই চিরচেনা রাস্তা ধরে একাই হেটে চলি । একটার পর একটা সিগারেট খাই । এখন আর কেউ বলেনা "সিগারেট একটু কম করে খেও "। এখন আর কেউ কবিতা আবৃত্তি করে শোনায় না তাই আমার আর কবিতাও লেখা হয়না ।

যে আবৃত্তি করে শোনাতো তার সাথে যে আর দেখাই হলোনা । ছোট একটি গাড়ি দূর্ঘটনা তাকে আর ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে দিলোনা ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আহারে! মর্মাহত হলাম ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.