নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবনী

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:১৭

দীর্ঘ ছয় বছর পরে ঢাকায় আসলাম । একটা সময় পড়াশুনা করার সুবাদে ঢাকায় থাকতাম । কিন্তু একটা ঝড় পড়াশুনা শেষ করার আগেই আমাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল শহর থেকে দূরে । মফস্বলে ছোট একটা চাকরি করি । ইচ্ছে না থাকলেও জীবনধারনের জন্য নিতে হয়েছে । ইচ্ছে ছিল ভবঘুরেই হয়ে থাকবো সারাজীবন কিন্তু বাবা-মায়ের কথা ভেবে অবশেষে ছাপোষা জীবন বেছে নিতে হয়েছে ।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বন্ধুর বাসায় উঠেছি । ও একটা বড় চাকরি করে । বিয়ে করেছে বছরখানিক হল । এখনো আমার সব বন্ধুরা সন্ধ্যার পরে ছবিরহাট ,টিএসসিতে আড্ডা দেয় । অনেকদিন পরে ঢাকায় এসেছি শুনে বন্ধুরা সবাই অনুরোধ করলো যেন অবশ্যই সন্ধ্যার পরে টিএসসিতে ওদের সাথে দেখা করতে যাই । পুরনো আড্ডার জায়গাগুলো দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে । তাই একা একা বিকেলেই বেড়িয়ে পরলাম ।

টিএসসিতে যে জায়গাটায় আড্ডা দিতাম সেখানের অনেক চায়ের দোকানদার এখনো আছে । দুজন দেখেই চিনে ফেললো । শেষমেষ মোক্তারের চায়ের দোকানেই বসলাম । একটু পরেই মোক্তার মরিচের চা আর একটা বেনসন নিয়ে এল । মোক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম , তুই এখনো মনে রেখেছিস আমি কি চা আর কি সিগারেট খাই ? একটা সরল হাসি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেল মোক্তার ।

একটা সিগারেট শেষ করে আরেকটা সিগারেট ধরালাম । অনেকদিন পরে প্রিয় জায়গায় আসায় বুকের ভিতরে কেমন যে একটা উত্তেজনা কাজ করছে । হঠাত ডাচের দিকে চোখ পড়লো । কালো শাড়ি পড়া একটা মেয়ে এদিকেই হেঁটে আসছে । খুব পরিচিত মুখ ,পরিচিত হাটার ভংগী । আমার সামনে থেকে যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন নাম ধরে ডাক দিলাম , “এই নবনী”। মেয়েটি আমার দিকে ফিরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম ,চিনতে পারছোনা নবনী ? নবনী বলল , চিনবোনা কেন ! এতদিন পরে কোথা থেকে ? আমি বললাম , চাকরির কাজে আসতে হয়েছে । নবনী পাশে এসে বসলো । তাকে দেখে কত স্মৃতি মনে পড়ে গেল ।

নবনী আর আমি একসাথেই পড়াশুনা করতাম । ক্লাশের প্রথম দিনেই পরিচয় হয়েছিল । এরপর আটমাসের মাথায় সম্পর্কটা বন্ধুত্ব থেকে প্রেমিক প্রেমিকায় রুপান্তরিত হয় । আমার একটা সাইকেল ছিল । ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন ওর বাসার সামনে চলে যেতাম । নবনী বের হলে ওকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে টিএসসি চলে যেতাম । দুজনে দুকাপ চা খেয়ে কিছুসময় আড্ডা দিয়ে যে যার ক্লাশে চলে যেতাম । দুপুরে আবার টিএসসিতে এক হয়ে চলে যেতাম চানখারপুলে ।তিনটা রুটি আর একটা ভাজি ভাগাভাগি করে খেতাম । দুজনই টিউশনি করে চলতাম তখন ।

হাতে কারোরই খুব বেশি টাকা থাকতোনা । তবে একসাথে থাকার কারনে কোন কষ্টবোধ ছিলনা । বিকেলে দুজনই টিউশনিতে চলে যেতাম । আটটায় আবার দেখা হত টিএসসিতে ,তখন অবশ্য সব বন্ধুরাই থাকতো । নয়টা বাজলেই আমি আর নবনী সাইকেলে চলে যেতাম ফুলার রোডে নিজেদের কিছু সময় দেয়ার জন্য ।

ফুলার রোডে যতক্ষন বসতাম ততক্ষন কেউই খুব বেশি কথা বলতাম না । একে অন্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম । যদিও পরের দিন আবার দেখা হবে তবুও ওঠার সময় হলে নবনীর চোখ কেমন ছলছল করে উঠতো । এখান থেকে উঠে সাইকেলে করে নবনীকে ওর হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে আসতাম । সাইকেলে ওঠার আগে নবনীর একটা আবদার আমাকে টানা দুই বছর পুরন করতে হয়েছে । বিদায় নেবার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু ।

নবনী তার বাবাকে খুব ভয় করত । যখন আমরা ফাইনাল ইয়ারে পড়ি তখন হঠাত একদিন নবনীর বাবা ঢাকায় আসলো তাকে গ্রামে নিয়ে যেতে । হঠাত করে নবনীর বিয়ে ঠিক করেছে । তখন একদিন সন্ধ্যার পরে শামসুননাহার হলের পাশে দাঁড়িয়ে নবনী আমায় জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করেছিল । আমরা দুজন তখন এমন অবস্থায় ছিলাম যে আমাদের কারোরই কিছু করার ছিল না ।

নবনী তার পরদিন বাবার সাথে বাড়িতে চলে গিয়েছিল । যাওয়ার আগে বলেছিল আমি যেন কোন ধরনের পাগলামী না করি । আমি নবনীর কথা রাখতে পারিনি । বড্ড ভালবাসতাম নবনীকে । ওর চলে যাওয়া সহ্য করতে পারিনি । স্মৃতিঘেড়া জায়গাগুলো থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলাম তাই তার কিছুদিন পরেই ঢাকা শহরটাই ছেড়ে দিলাম । ঢাকা শহরের যে জায়গাগুলোতে আমার বিচরন ছিল সব জায়গায় ছিল নবনীর স্মৃতি । নবনীর চলে যাওয়ার কষ্ট আমাকে পড়াশুনাও শেষ করতে দেয়নি । ওর পরে আর কোনদিন নবনীর সাথে যোগাযোগ করিনি ।

নবনীর কথায় আমার ভাবনাটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল । নবনী বললো , বিয়ে করেছ ? আমি বললাম , তোমার মত কাউকেই যে পাইনি নবনী । উত্তরটা শুনে নবনীর চোখ ছলছল করে উঠলো । নবনীকে প্রশ্ন করলাম, ছেলেমেয়ে হয়েছে তোমার ? নবনী বলল,বিয়ে করলে তো ছেলেমেয়ে হবে । আমার মাথায় বাজ পড়লো । আমি শুধু হা করে নবনীর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।

তারপর নবনী বলল ,বিয়ের আগেরদিন রাতে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে এসেছিলাম । এসে তোমাকে অনেক খুজেছি ,পাইনি ।তোমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা আমাকে কোনদিন বলোনি যে ওখানে খুজবো । পালিয়ে আসার কারনে পরিবারের সবার অনেক অপমান সইতে হয়েছে আমাকে । আমি আর বাড়ি ফিরে যাইনি । পড়াশুনা শেষ করার পরে এখানেই শিক্ষক হয়ে থেকে গেলাম । একাই বাসা নিয়ে থাকি ।

নবনীর কথা শেষ হওয়ার পরে প্রায় বিশ মিনিট আমি কোন কথা বলতে পারিনি ,শুধু ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম । মনের অজান্তেই চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো । এরপর আমি নবনীকে শুধু একটা কথাই বললাম “ভালবাস” ?
নবনী বলল, “বড্ড বেশি” ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.