নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন যোগাতে নয় মন জাগাতে

নকিব হাসান আবিদ

কষ্ট পাওয়া খুব সহজ বরং সুখে থাকাটাই অনেক কঠিন

নকিব হাসান আবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় মাধবীলতা

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৯

বাংলা একাডেমীর সামনের রাস্তায় নিয়ন আলোর বুক চিরে আমি আর মাধবীলতা হেঁটে যাচ্ছিলাম । নিয়ন আলো আমাকে সবসময়ই খুব আকর্ষণ করে । যখনই মন খারাপ থাকে তখনই সারা রাত ধরে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত নিয়ন আলোর নিচে সুখের সন্ধান করে বেড়াই । আগে একাই হেঁটে বেড়াতাম , এখন সংজ্ঞী হয়েছে মাধবীলতা । মাধবীলতাকে আমি আদর করে মাধবী বলে ডাকি ।
মাধবীর সাথে প্রথম পরিচয় প্রায় দেড় বছর আগে । প্রথম দেখাতেই একটা ভাল লাগা কাজ করেছিল, কিন্তু সেটা কেমন ভাল লাগা তা বুঝতে পারিনি তখন । আমার আড্ডার জায়গা শাহবাগ-টিএসসিতে তাকে প্রায়ই দেখতাম কিন্তু কখনো সামনে গিয়ে কথা বলা হয়ে ওঠেনি । দিনে দিনে ভাল লাগাটা বাড়তে থাকে । শাড়ি পড়লে তাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে । আর কপালের টিপটা তো পুর্ণিমার চাঁদ । কথা বলার লোভ সামলাতে না পেরে ফেসবুকের ইনবক্সে কথা বলতাম । তবে দীর্ঘ এক বছরে তার সাথে কথা হয়েছে মাত্র তিন থেকে চারবার । কখনোই বলিনি যে তাকে দূর থেকে দেখতাম আমি ।
প্রথম দেখার ঠিক তেরো মাস পরে হঠাত শাহবাগে মাধবীর সাথে দেখা হয়ে যায় । চোখে চোখ পরে যাওয়াতে এড়াতে পারিনি । সেদিনও শাড়ি পড়া ছিল । মিনিট দশেক কথা হয় সেদিন । তারপর হঠাত ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যায় মাধবী । মনে মনে অনেক খুজেও সেদিন আর তার দেখা পাইনি । রাতে বাসায় এসে ফেসবুকে মেসেজ দিলাম "আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছিল,শাড়ি আর টিপটা তোমার সাথে একদম মানিয়েছিল" । এরপর ইনবক্সে কথা হতে থাকে । ফোন নাম্বার চাইবার সাহস ছিলনা । তাই সরাসরি কথা বলার সুযোগটা হয়ে উঠছিলনা ।
হঠাত একদিন কথায় কথায় টিএসসিতে আড্ডা দেয়ার কথা বললাম , আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে গেল । কিন্তু সেই আড্ডার সময়টা আরো চারদিন বাদে । বললাম নাম্বারটা দাও , টিএসসি আসলে খুজে বের করেত সুবিধা হবে । নাম্বার দিলো । ফোনে কথা বলার শুরু । লজ্জার মাথা খেয়ে এক সময় বলেই ফেললাম ভালবাসি কথাটি । তার উত্তরের প্রত্যাশা করিনি । আমি ভালবাসি তাই আমি আমার মত করেই ভালবেসে যাবো । সে ভালবাসবে কি বাসবেনা সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার ।
আড্ডার দেয়ার সেই দিনটি এসে গেল । সকালে মাধবীকে ফোন দিলাম , বলল , আমার সাথে তোমার দেখা না হওয়াই ভাল । কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল , অপেক্ষা করেছিলাম যেই দিনের জন্য সে দিনে এসে এমন কথা ! "দেখা না হওয়াই ভাল" এই কথাটির কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলল , "দেখা না হলে আমার প্রতি তোমার যে মোহ কাজ করছে সেটা কেটে যাবে" । উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করেছিলাম । পরে বললাম মোহ না ভালবাসা সেটা নাহয় আমার উপরেই ছেড়ে দাও । আমি তো তোমাকে কোন সিদ্ধান্ত দিতে বলিনি । তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে , বিকেলে আসবে এটাই শেষ কথা ।
বিকেলে দেখা হল ত্রিশ মিনিটের জন্য । ঐ ত্রিশ মিনিটে মাধবীর সাথে মাত্র দুইবার কথা হয় আমার । অবশ্য পরের দিন আবার দেখা হয় যেটা কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই । সেদিন অবশ্য অনেক কথা হয় । আমি এমনিতেই কথা কম বলি তাই অনেকেই ভেবে নেয় যে আমার হয়তো বেশিরভাগ সময় মন খারাপ থাকে । কিন্তু না । কথা কম বলা আমার ছোটবেলা থেকেই অভ্যেস । মাধবীর সাথে অই দিনের পর থেকে নিয়মিত ফোনে কথা হয় দীর্ঘ সময় ধরে । আমি জানিনা মাধবী আমাকে ভালবাসে কিনা । জানার ইচ্ছেও হয়নি কখনো । কারণ আমি ভালবাসি এটাই যথেষ্ট । এরপর মাধবীর সাথে দেখা করতে চেয়েও হয়নি , কারণ মাধবী চায়নি । কিন্তু মাধবীকে দেখতে খুব ইচ্ছে হতো ।
মাধবী কোন কাজ না থাকলে বাসা থেকে বের হয়না সাধারণত । গত রাতে ফোনে কথা বলার সময় বলল আজ একটা কাজে বের হবে । আমি বললাম খুব দেখতে ইচ্ছে করছে , যদি দেখা করতে খুব ভাল লাগতো । এক কথায় না বলে দিল । অভিমান করে ফোন রেখে দিলাম । সকালে উঠে আর ফোন দেইনি । মাধবীর যখন বের হওয়ার কথা ঠিক তখন একটা মেসেজ দিয়ে রাখলাম যে কাজ শেষ হওয়ার আগে কল দিয়ো , দেখা করবো । কোন রিপ্লাই পাইনি । ভেবেছি দেখা করবে না ।
কিন্তু অবাক করে দিয়ে মাধবী তার কাজ শেষ হওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে বলল বের হও ,আমার কাজ শেষ । মেসেজ দেখে হতভম্ভ হয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হলাম । পৌছানোর পর দেখলাম সেখানে মাধবী নেই এবং আমার ফোন রিসিভ করছেনা । মাধবী আমায় মিথ্যে বলেছে ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছিল । তবুও একটা সিগারেট ধরিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করলাম ।
দশ মিনিট পরে হঠাত আমার কাঁধে একটা হাত পড়াতে পেছন ফিরে তাকালাম । দেখি মাধবী দাঁড়িয়ে । পড়নে লাল শাড়ি , কাঁচের চুড়ি আর লাল টিপ । ঠিক যা যা আমি পছন্দ করি । মাধবী বলল, কোথায় যাবে ? আমি বললাম, টিএসসিতেই চলো । মাধবী বলল, অই জায়গা ছাড়া তো মনে হয় কিছুই চেনোনা । আচ্ছা চলো । বললাম রিক্সায় যাবে না হেঁটে ? মাধবী বলল, হেটেই যাই । মাধবীকে কবে যেন বলেছিলাম আমার হাটতে খুব ভাল লাগে , আর সেটা যে তার মনে আছে আজ সেটা বুঝলাম ।
ত্রিশ মিনিট হাটার টিএসসিতে পৌছালাম । এক কাপ চা খেলাম দুজনে । সিগারেট ধরাতে যাবো কিন্তু মাধবীর বাধায় সিগারেট ধরাতে পারলাম না । মাধবী বলল এদিকটায় অনেক ভিড় চলো বাংলা একাডেমীর দিকে যাই । কোন উত্তর না দিয়ে হাটতে শুরু করলাম আবার । আমি কখনো মাধবীর হাত ধরিনি , সেই সাহস হয়নি কখনো , ভয় হতো যদি হাতটি সরিয়ে নেয় । বাংলা একাডেমীর সামনের রাস্তাটা তুলনা মুলকভাবে নির্জন । এখানে সন্ধ্যার পরে নিয়ন আলোয় হাটতে আমার অসম্ভব ভাল লাগে । এতদিন আমি একাই হাটতাম কিন্তু আজ আমার প্রিয় মানুষটি আমার সাথে হাটছে ভাবতেই কেমন যেন শিউরে উঠছে শরীর ।
খুব ইচ্ছে করছিল মাধবীর হাত ধরে হাটতে । কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই । মাধবী এখনো সেই অধিকার দেয়নি । দুজনেই হেঁটে চলছি , কারো মুখে কোন কথা নেই । হঠাত আমার আঙুলে কয়েকটি আঙুলের স্পর্শ পেলাম । শিউরে ওঠে শরীর । এ যে মাধবীর হাত আমার হাতের ভেতরে । নির্বাক হয়ে হেঁটে চলছি দুজন হাতে হাত রেখে, গন্তব্য জানা নেই আজ । আজ শুধুই ভালবাসা । এ রাত ভালবাসার রাত । আমার জীবনে নিয়ন আলোর সতীন হয়ে আসলো যে মানুষটি সে মাধবীলতা । আমার মাধবী ।
18 – 03 - 2016

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.