নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অভিষেকহীন অভিসারিকা

নাসরিন চৌধুরী

সময় মানুষকে কিভাবেইনা বদলে দেয় ,বদলে যাই - বদলে যায় সবাই! আনমনে স্মৃতির পাতা উল্টাই বেছে বেছে জমে থাকা ক্লেদগুলোকে উগলে ফেলে দেই স্বস্তির নিঃশ্বাসের চাদরে নিজেরে জড়াবো বলে! কিন্তু কতটা পারি বা পেরেছি কতটাই বা পারা যায় খুঁতের মাঝে নিখুঁতের বীজ বোনা !

নাসরিন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে দায়ী বউ না শ্বাশুড়ি?

২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৯



বউ শ্বাশুড়ি সম্পর্কটার সাথে আমরা সবাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।আজ যারা বউ কাল তারাই আবার শ্বাশুড়ি।প্রশ্ন জাগে মনে সময়ের বিবর্তনে সম্পর্কের অবস্থানের পরিবর্তন হয় কিন্তু আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন কেন হয়না?কেন এই সম্পর্কটা কখনও সহজ সরল ও স্বাভাবিক হয় না?প্রতিনিয়তই উভয়ের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ লেগেই আছে ঠিক ঠান্ডা ও বলা যাবেনা কারন মাঝে মাঝে এই যুদ্ধ চরম আকারও ধারণ করে যার পরিণতি কখন ও সুখকর হয়না।আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে পর্যালোচনা করলে বেশ কিছু কারন স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারন হলোঃ



প্রথমতঃমায়েরা যখন কোন ছেলে সন্তান বড় করে তখন ধারণা তাদের মনে বদ্ধমুল হয়ে যায় যে,ছেলেটাকে সংসারের হাল ধরতে হবে,অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।কিন্তু বিয়ের পর একটা ছেলের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকগুন বেড়ে যায় যার ফলে ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও আগের মতো সূচারুরূপে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনা।এই ক্ষেত্রে অভিযোগের তীরটা গিয়ে বিঁধে সরাসরি বউয়ের উপর।শ্বাশুড়িরা ভাবেন বউয়ের বুদ্ধিতেই ছেলে পিছুটান দিয়েছে,আগেতো ছেলে এমন ছিলনা।শ্বাশুড়িদের এমন মনোভাবের কারনে বউরাও শ্বাশুড়ির বিপরীতে অবস্থান নেয় এবং শুরু হয় দ্বন্দ।



দ্বিতীয়তঃমায়েরা সবসময় ছেলেদের অন্ধের মতো ভালবাসেন।ঠিক ছেলেরাও তাই। মায়ের সাথেই ছেলের সম্পর্কটা থাকে নিবিড়।জীবনের সবকিছুই সে তার মায়ের সাথে শেয়ার করে।কিন্তু যখন বিয়ের পর সে জায়গাটা দখল করে নেয় বউ তখনই শুরু হয় সমস্যা।যদিও মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ঘাটতি থাকেনা শুধু শেয়ারিংটা কমে যায়।যা একটা মা সহজেই মেনে নিতে পারেনা তার ভিতর তখন ঈর্ষা কাজ করে ।ছেলের বউকে তখন তিনি প্রতিদ্বন্ধী মনে করেন।



তৃতীয়তঃআমাদের সমাজে বেশিরভাগ শ্বাশুড়িই সহজে তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়না।তিনি ভাবেন এটা তার সংসার।বউ মানে হলো রান্না বান্না করবে,সংসারের যাবতীয় কাজ করবে ,শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর সেবা করবে।প্রত্যেকটা কাজ করার আগে শ্বাশুড়ির অনুমতি নিতে হবে।নিজের ইচ্ছামতো কোন করতে গেলই সর্বনাশ!!!!!!বউ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেই লেগে গেল আগুন।আমাদের সমাজে অনেক সিদ্ধান্ত বউদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় যা অযৌক্তিক ও অন্যায়।



চতুর্থতঃবেশিরভাগ পরিবারগুলোতেই গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রদানে বউদের মতামতের মূল্যায়ণ এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়না কারন ছেলের বউকে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে কেউ মনেই করেনা।যার কারনে বউদের মনে জন্ম নেয়পক্ষোভ,ঘৃণা।কোনো বউরা হয়তো সব স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েই সংসার করে আবার কেউ হয়তো সময়ের অপেক্ষায় থাকে কখন শোধ নিতে পারবে যার ফলশ্রুতি আজকের বৃদ্ধাশ্রম।



পঞ্চমতঃআমাদের পরিবারগুলোতে যখন নতুন বউ আসে তখন তাকে পরিবারের। সদস্যদের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় না।সংসারের সব কাজ চাপিয়ে দেয়া হয় আর পান থেকে চুন খসলেই বিচার ,সালিশ।এমন অনেক পরিবারে ও শুনেছি বউ আসলে কাজের বুয়া বিদায় করে দেয়া হয়।অনেক পরিবারে শুনেছি শ্বাশুড়ি বলে" বউ হচ্ছে পায়ের জুতা"জুতা যেমন বদলানো সহজ বউও তাই ।অনেক মা তার ছেলকে বলেন "বউ মরলে বউ পাবি ,কিন্তু মা মরলে মা পাবি?"অথচ শ্বাশুড়ি ভুলে যান তিনি ও এক সময় বউ ছিলেন।



ফলাফলঃএর পরিনতি কি হয় সেটা আমরা সবাই জানি।প্রথমত ছেলেদের জীবনটা হয়ে যায় অতিষ্ঠ।না পারে মা সামলাতে, না পারে বউ সামলাতে ।মাকে খুশি করতে গেলে বউয়ের মন পায়না ,আবার মায়ের মন পায় না ।বউয়ের পক্ষ নিলে মা বলে বউ পাগল আর মায়ের পক্ষ নিলে বউ বলে মায়ের আচঁল ধরা ।সংসারের ঘানি টানতে টানতে জীবনটাই পার করে দেয় তবুও কাউকে খুশি করতে পারেনা।



দ্বিতীয়তঃপত্রিকার পাতা খুললেই আমরা দেখি শ্বাশুড়ি,ননদ ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজন দ্বারা গৃহবধু খুন,নয়তো শারিরীকভাবে,নয়তো মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে।পরিবার ভাঙ্গছে,বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে,বৃদ্ধাশ্রমের প্রসার ঘটছে।যৌতুক ও এক্ষেত্রে বড় একটা ভূমিকা পালন করে।



আমি শুধু শ্বাশুড়িদের বিপক্ষে বলছিনা ,বউদেরকেও বলছি কারন আজকের বউরাই কালকের শ্বাশুড়ি।শ্বাশুড়ি হলে মনেই থাকেনা সেও এক সময় বউ ছিল।এই চিত্র আমাদের সমাজের সকল স্তরেই বিদ্যমান।ব্যতিক্রম যে নাই তা কিন্তু নয় অনেক ভালো শ্বাশুড়ি আছেন যারা বউয়ের হাতে জিম্মি।আবার এমনও দেখা যায় উভয়ই খুব ভালো কিন্তু এ সংখ্যা অতি নগন্য যা দিয়ে সমাজের সামগ্রিকতাকে বিচার করা যায় না।



আমাদের করণীয় কি?ঃপ্রথমত আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।একে অপরের প্রতিদ্বন্ধী না হয়ে ভালো বন্ধু হতে হবে।।মনে রাখতে হবে মা মা-ই,মায়ের জায়গা কেউ নিতে পারেনা।বউয়ের জায়গায় বউ ,সেটা ও শ্বাশুড়ি নিতে পারেনা।শ্বাশুড়িদের বলবো বউকে মেয়ের মতো ভাবুন।তাকে মানিয়ে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন।তাকে অফুরন্ত ভালবাসা দিন কারন ভালবাসা দিলেই ভালবাসা মিলে।তাকে সহযোগিতা করুন ,তাকে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে স্বীকৃতি দিন



আর বউদের বলবো শ্বাশুড়ি হলে কখনও ভুলে যাবেনা আপনিও বউ ছিলেন।যা আপনি সহ্য করেছেন তা যেন আপনার হাতে অন্য কেউ সহ্য না করে।শোধ নেয়ার জন্য শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবেন না কারন তারা আপনার স্বামীর বাবা মা ,যাদের কারনে আপনি পেয়েছেন প্রিয় মানুষটিকে।সততার সাথে দায়িত্ব পালন করুন ,একদিন আপনই জয়ী হবেন।না হলেও বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবেন যে আপনি আপনার জায়গায় ঠিক ছিলেন



আর ছেলেদের বলবো,মাকে খুশি করতে বউকে কষ্ট দেয়া উচিত নয়,আবার বউকে খুশি করতে গিয়ে মাকে কষ্ট দেয়া ঠিক না।সমস্যা হলে দুজনকে নিয়ে একসাথে বসুন আলোচনা করুন,সমাধানের পথ বের করুন।

।।

সর্বোপরি বলতে চাই সম্পর্কগুলো হোক মজবুত,টিকে থাকুক যুগ যুগ।।।



।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.