নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাবা ও একটি বিড়াল ছানা

১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৪

রোজা প্রায় শেষের পথে। ঈদের আর বেশি দেরি নেই। ভাবতে ভালোই লাগছে। অফিসের প্রেশার আর গরমের মধ্যে এবার একটা শক্ত রোজা পার করলাম। সেহেরীতে গামলা ভরে পানি খেলেও সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয় মাত্র সাহারা মরুভূমি পার করে এলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ। কিভাবে যে সারাদিন পার করেছি আল্লাহই জানেন।

নানান ঝামেলার মধ্যে একটাই ভালো খবর, বাবা হিসেবে এটা আমার প্রথম ঈদ। ব্যাপারটা ভাবতে অবাক লাগে, আবার খুশীও লাগে। এক্সপেরিয়েন্সের অভাবে মাঝে মাঝে কি করবো না করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। ছেলেকে আদর করতে গিয়ে ছাগলের মত উল্টা পাল্টা কাজ কারবার করে ইতিমধ্যে আমি নিজেকে অত্যান্ত সফলতার সাথে কুখ্যাত বাবা হিসেবে প্রমাণ করে ফেলেছি। অফিস শেষে বাসায় ঢুকলে সবাই এখন আমার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায়। রাস্তায় কোন পাগল হেঁটে গেলে লোকজন তার দিকে যেভাবে তাকায় সবার দৃষ্টি অনেকটা সেরকম। আমি এসব একদম গ্রাহ্য করছিনা। হাসি মুখে গলায় “বিপদজনক – শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন” সাইনবোর্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

গতকাল অনেকদিন পর ইফতারির পর বাইরে বেরিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। প্রতিদিন যেখানে আড্ডা না মারলে আমার ঘুম আসে না সেখানে এবারের রোজায় একদিনও বাইরে বের হইনি। কারন ইফতারির পর এই কয়দিন আর নড়তে চরতে পারিনি। ইফতারি খেয়েই বিছানায়, ঘণ্টা দু’একের জন্য একদম ডেড। কাল কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল বলে গুঁড়িগুড়ি বৃষ্টির মাথায় নিয়েই বের হয়েছিলাম।

আড্ডার শেষে বাসায় চলে আসছি এমন সময় বিড়ালের বাচ্চাটা আমার চোখে পড়ল। বেচারা বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য আমার পায়ের নিচে এসে দাঁড়িয়েছিল। হয়ত নিজের আরাম প্রিয় চরিত্রের সাথে মিল থাকার কারনেই বিড়াল আমার সব সময়ই পছন্দ।

বিড়ালটাকে দেখেই বিদ্যুৎ চমকের মত আমার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এল। ছেলের জন্য বিড়ালটাকে গিফট হিসেবে নিয়ে গেলে কেমন হয়? ছেলে বড় হবে, সাথে সাথে বিড়ালের বাচ্চাটাও বড় হবে। বুদ্ধি-শুদ্ধি হবার পর আমার ছেলে রেডি মেড জ্যান্ত খেলার সঙ্গী পেয়ে যাবে! এরকম একটা যুগান্তকারী বুদ্ধি মাথায় আসায় খুশীতে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। দ্রুত আড্ডা শেষ করে ধবধবে সাদা আর তুলতুলে বিড়ালের বাচ্চাটা কোলে করে বাসায় নিয়ে এলাম। বিড়ালের বাচ্চাটা দেখে ছেলের কি রিঅ্যাকশন হবে সেটা ভাবতেই খুশিতে চোখে পানি চলে আসছিল।

বিড়ালের বাচ্চা নিয়ে বাসার দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারিনি। তার আগেই আমার বউ, আমার আব্বা,আম্মা ঝাড়ু নিয়ে আমার দিকে ধেয়ে এলো। ওরা মনে করেছিল বিড়ালের বাচ্চাটা আমার পেছন পেছন উপরে উঠে এসেছে। আমি কোন রকমে ঝাড়ুর আক্রমণ থেকে বিড়ালের বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে ওটাকে বাসায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্য সবাইকে বললাম।

আমার কথা শুনে আম্মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। আমার বউ চোখ বড় বড় করে আঙ্গুল উঁচিয়ে নিচে নামার রাস্তা দেখিয়ে বলল ওটাকে এখুনি রাস্তায় ফেলে আস। তারপর গোসল করে বাসায় ঢুকবে। আব্বা শুধু একটা কথাই বলল, “ছাগল”, কারে বলল বুঝলাম না।

আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বিড়ালের বাচ্চাটাকে নিয়ে নিচে নেমে এলাম। এর মধ্যে ওর একটা নাম দিয়ে ফেলেছিলাম – “কুটুস”।

কুটুস চুপচাপ আমার কোলে বসে আছে। কোথায় যেন পড়েছিলাম মহানবী (সাঃ) বিড়াল খুবই পছন্দ করতেন। সেই অসহায় বিড়ালের সাথে এমন ব্যবহারে আমি খুবই কষ্ট পেলাম। কিন্তু কিছুই করার নাই। গ্যারেজে কুটুসকে ছেড়ে দিলাম। বেচারা আমার দিকে তাকিয়ে একবার মিউ মিউ করে কি যেন বলার চেষ্টা করল। তারপর দৌড়ে গেটের নিচ দিয়ে বাইরে চলে গেল।

এত দুঃখ আমি জীবনে পাইনি। দুঃখে কষ্টে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছিল। এত দুঃখের মধ্যেও নিজের ছেলেটার জন্য আমার মায়া লাগলো। যে দজ্জাল টাইপের মা আর দাদা-দাদীর পাল্লায় ও পড়েছে তাতে মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে বেচারার বিশাল বিপদ আছে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে আমি ভাবছিলাম ছেলের জন্য কি করা যায় যেন সে এই বন্দী কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে তো ও প্রকৃতি কাকে বলে সেটা চিনতেই পারবে না।

কথাটা মাথায় আসা মাত্র বিদ্যুৎ চমকের মত আবার আমার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এল। আচ্ছা, বারান্দায় কিছু মাটি ফেলে ঘাস লাগিয়ে দিলে কেমন হয়? প্রকৃতি একেবারে নাগালের মধ্যে চলে এলো? নিজের বুদ্ধিতে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। খুশীতে আমার চোখ মুখ ঝলমল করতে লাগলো।

হাসিহাসি মুখ করে আমি বাসায় ঢুকলাম। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও সবাই আমাকে জোর করে এই রাতে গোসল করালো। তাতে একটু মেজাজ খারাপ হলেও মনে মনে কিন্তু আমি খুব খুশী। ছেলের জন্য অবশেষে আমি কিছু একটা করতে যাচ্ছি।

রাতে খেতে বসে দেখলাম সবাই আমার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাস্তায় কোন পাগল হেঁটে গেলে লোকজন তার দিকে যেভাবে তাকায় সবার দৃষ্টি অনেকটা সেরকম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

মামুন রশিদ বলেছেন: প্রথম বাবা হলে এরকম পাগলামী মাথায় আসে । গল্প ভালো লেগেছে ।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: হা হা হা! পাগলামী চলছেই! ধন্যবাদ মামুন ভাই।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:২৫

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
একজন বাবাকে, ভালো লাগলো !

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩২

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: একজন বাবাকে! কথাটা শুনে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আলিফ ভাই।

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৫

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
B+ গ্রুপে আপনাকে স্বাগতম!

জরিপ! জরিপ!! বিবাহিত ব্লগার জরিপ!!! ২০১৩

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: মজার তো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.