নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয়ানালের মধ্যরাতের কবিতা

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৭

সিঁড়িঘরে পা দিতেই বিদ্যুৎ চলে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে জয়নাল কিছুক্ষণের জন্য দিশেহারা হয়ে পড়লো। তার ডানহাতে অফিসের ব্যাগ। গত দশ বছরের চাকরীর ইতিহাসে সে তার এই ব্যাগ কখনো মাটিতে নামায়নি। চামড়ার এই ব্যাগটা নিয়ে জয়নালের খানিকটা গর্ব আছে। চাকরী জীবনের শুরুতে গুলিস্তানের সাহাবুদ্দিনকে দিয়ে সে তার এই ব্যাগ বানিয়েছিল নগত এক হাজার টাকা দিয়ে। এই ব্যাগ মাটিতে শোভা পায় না।

তার আরেক হাতে বাজারের ব্যাগ। অফিস থেকে ফেরার পথে সে হালকা শাকসবজি কিনেছে। জয়নালের স্ত্রী রুবি দুপুরে তাকে ফোন করে মূলা আনতে বলেছিল। সবজি কেনার সময় তার ব্যাপারটা খেয়াল ছিল না। মূলার ব্যাপারটা তার মনে পড়লো এই মাত্র। যাক, ভালো হয়েছে। মূলা জিনিষটা তরকারী হিসেবে তার খুবই অপছন্দ।

মূলার বদলে সে বিরাট সাইজের ছয়টা কৈ মাছ কিনে ফেলেছে। কৈ মাছগুলো এমন ভাবে লাফাচ্ছিল যে সে মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ কৈ মাছগুলোর প্রাণবন্ত লাফালাফি দেখেছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। সেই প্রাণবন্ত কৈ মাছগুলো এখনো তার বাম হাতের পলিথিনের ব্যাগে ফর ফর করে নড়াচড়া করছে।

পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে আলো জ্বালাতে হলে তাকে তার হাতের যেকোনো একটা ব্যাগ মাটিতে নামাতে হবে। খানিকটা অন্যমনস্ক থাকায় তার মনে পড়লো না বিদ্যুৎ চলে যাবার আগ মুহূর্তে সে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে হঠাৎ অন্ধকারে তাই সে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না তার কি করা উচিৎ।

হতভম্ব জয়নালকে বাঁচালেন বাড়িওয়ালা হারুন সাহেব।

মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় জয়নাল আছে প্রায় নয় দশ বছর। এই দশ বছরের মধ্যে ব্যাচেলার লাইফের দুবছর বাদ দিলে গত আট বছরে জয়নাল বাসা বদলেছে সর্বসাকুল্যে নয় বার। হারুন সাহেব তার নবম বাড়িওয়ালা। আগের বাসাগুলোতে ওদের শেয়ার করে থাকতে হতো। মেয়েরা আর কিছু থাকুক বা না থাকুক, সংসারের ব্যাপারে প্রচণ্ড সিরিয়াস। বাসা শেয়ার করার জন্য সংসারের একান্ত বিষয়গুলো মাঝে মাঝে অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ত। রুবি একারনে অনেক দিন ধরেই বলছে আলাদা বাসা নিয়ে থাকার জন্য। এভাবে নাকি সংসার করা যায় না।

জয়নাল বিষয়টা প্রথমে মাথায় ঢোকায়নি। আসলে উপায়ও ছিল না। আলাদা বাসা মানে খামাখাই বাড়তি খরচ। কিন্তু রুবির ক্রমাগত পীড়াপীড়িতে আর ছেলে একটু বড় হওয়ার পর তার নিজেরও মনে হতে শুরু করল - শেয়ার না করে আলাদা থাকলে মন্দ হয় না।

জয়নালের কপাল ভালো, বাসার জন্য ওকে খুব বেশী খোঁজা খুঁজি করতে হয়নি। আগের বাসার কয়েক গলি পরই হারুন সাহেবের বাসা। প্রথম দেখাতেই ভদ্রলোককে তার ভালো লেগে যায়। ঢাকায় ভালো একজন বাড়িওয়ালা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এই শহরে বাড়িওয়ালারা যে কি চিজ সেটা নিয়ে জয়নালের চাইতে আর কেউ ভালো জানে না। মাঝে মাঝে বিপত্নীক হারুন সাহেবকে জয়নালের অনেকটা বটগাছের মতো মনে হয়। ভদ্রলোককে দেখলে বোঝা যায় যে তার ভালোই বয়স হয়েছে। কিন্তু তার শরীর স্বাস্থ্য দেখে কেউ বলতে পারবে না তার আসল বয়স কত। সেটা পঁয়ষট্টিও হতে পারে আবার আশিও হতে পারে। বয়স যতই হোক, তার স্নেহের ছায়ায় থাকতে পেরে নিজেকে অনেক নিশ্চিন্ত লাগে।

ভদ্রলোক মনে হয় মাগরিবের নামাজ শেষে বাসায় ফিরছিলেন। সিঁড়িতে টর্চের আলো ফেলতেই সেখানে জয়নালকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হারুন সাহেব ডাক দিলেন,

“কি জয়নাল, অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

“স্লামালেকুম চাচা। অন্ধকারে আটকে গেছি।“

“আচ্ছা, এসো এসো। আমার পেছন পেছন এসো। মাছ কিনেছ নাকি?“

জয়নাল হারুন সাহেবকে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, “জি চাচা, একদম টাটকা কৈ মাছ।“

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে গিয়ে হারুন সাহেব একটু থামলেন। জয়নালের ব্যাগের ওপর টর্চের আলো ফেলে মাছগুলো একবার পরখ করে নিলেন।

“কত নিল?”

“দামাদামি করিনি চাচা। যা দাম চেয়েছে, তাই দিয়ে দিয়েছি। মাছগুলো দেখে খুব ভালো লাগলো, তাই নিয়ে নিলাম।”

সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে হারুন সাহেব সমঝদারের মতো মাথা নেড়ে বললেন,

“আচ্ছা, আচ্ছা। ভালো ভালো। তোমার ছেলে কেমন আছে?”

“হ্যাঁ চাচা ভালো আছে।”

“এবার না স্কুলে ভর্তি করানোর কথা?”

“এ বছর তো চলেই গেল। আগামী বছর ইনশাআল্লাহ।”

“আচ্ছা, আচ্ছা। ভালো ভালো। তোমার ছেলের মাথায় মাশাল্লাহ বুদ্ধি ভালো।”

জয়নাল একটু হেসে, খুশী খুশী গলায় বলে, “দোয়া করবেন চাচা।”

“করি বাবা, প্রাণ ভোরে দোয়া করি। দোয়া ছাড়া আর কি করার আছে আমার।”

কথা বলতে বলতে হারুন সাহেব ওকে সাথে করে চারতলায় চলে এলেন। কড়া নাড়ার পর রুবিই গেট খুলল। মোমের আলোতে হারুন সাহেবকে দেখে ওর চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠলো।

“আরে চাচা আপনি?”

“হ্যাঁ! এই দেখ কাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।“ বলে পেছনে থাকা জয়নালকে সামনে এগিয়ে দিলেন।

জয়নাল সামনে এগিয়ে গিয়ে বাজারের ব্যাগটা রুবির হাতে ধরিয়ে দিল। এই রাতে মাছ আনা ঠিক হয়নি। রুবি নির্ঘাত চেঁচামেচি শুরু করবে। হারুন চাচাকে পেয়ে একদিকে ভালোই হয়েছে। শাঁকের বদলে হারুন চাচাকে দিয়ে মাছ ঢাকা গেছে।

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জয়নাল রুবিকে বলল, “নিচে আটকে গিয়েছিলাম। হারুন চাচা আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসলেন। চাচাকে এক গ্লাস শরবত খাওয়াও তো!”

রুবি মোমবাতিটা ওর হাতে দিয়ে বাজারের ব্যাগ হাতে রান্না ঘরে চলে গেল।

হারুন সাহেব ওর পেছন পেছন এলেন। ওদের মোটে দু’রুমের বাসা। একটা শোবার ঘর আর একটা ড্রয়িং বা ডায়নিং রুম, যে যেটা বলে। শোবার ঘরে একটা অ্যাটাচড টয়লেট আছে যেটার আবার দু’দিকে দরজা। অন্য দিকের দরজাটা খুলে দিলে ড্রয়িং রুম দিয়েও টয়লেটটা ব্যাবহার করা যায়। সোফা কেনার বিলাসিতা করা ওর পক্ষে সম্ভব হয়নি ফলে ড্রয়িং রুমটা আপাতত ডায়নিং রুম হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আপাতত সেখানে একটা টেবিল পাতা আছে। টাকার অভাবে চারটার বেশী চেয়ার কেনা সম্ভব হয়নি। জয়নাল আর হারুন সাহেব ওখানেই বসলেন। আর তখনি বিদ্যুৎ চলে এলো। ড্রয়িং রুমের টিউব লাইটটা কয়বার চেষ্টা করে চারপাশ ফকফকা করে জ্বলে উঠলো।

জয়নাল সেদিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে হালকা গলায় বলল, “চাচা আপনি তো দেখা যায় আমাদের জন্য খুবই লাকি। আপনি আসলেন আর কারেন্ট চলে এলো।”

“হা হা হা! কি যে বলো তুমি মাঝে মাঝে। কই? তোমার ছেলে কই? বাসা একদম চুপচাপ।”

জয়নাল ঘাড় বাঁকিয়ে রান্না ঘরের দিকে রুবিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো, “অ্যাই, তূর্য কোথায়?”

ওদের অবাক করে দিয়ে রান্না ঘর থেকে তীক্ষ্ণ স্বরে জবাব এলো, “আমার মাথায়।”

হঠাৎ এমন অদ্ভুত জবাব শুনে হারুন সাহেব আর জয়নাল একজন আরেক জনের দিকে তাকালেন। রান্নাঘর থেকে কাঁচের গ্লাসে শরবত গুলাবার টুংটাং...টুংটাং...শব্দটার মধ্যেও কেমন যেন রাগ মেশানো। হঠাৎ করেই ঘরের মধ্যে একটা অস্বস্তিকর নিরবতা নেমে এলো।

রুবি রান্নাঘর থেকে বের হলো একটা ট্রে হাতে নিয়ে। ট্রে-তে দু’গ্লাস শরবত, বিস্কুট আর চানাচুর। জয়নাল আর হারুন সাহেবের কৌতূহলী আর সতর্ক চোখ তাকে অনুসরণ করলো। ট্রে-টা টেবিলে রেখে রুবি একটা ঝামটা মেরে জয়নালের বিপরীতে বসলো। তারপর হারুন সাহেবের দিকে তাকিয়ে অভিযোগের সুরে বলল,

“চাচা, আপনি ওকে একটু বোঝান তো! এই রাত দুপুরে কেউ একগাদা মাছ কিনে আনে? এখন এই মাছ কুটবে কে?”

রুবির কথা শুনে নিমিষেই সমস্ত অস্বস্তি কেটে গিয়ে পরিবেশটা ঝরঝরে হয়ে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হারুন সাহেব হা হা করে প্রাণ খুলে হাসলেন কিছুক্ষণ। এই দম্পতিকে তার খুবই পছন্দ। তার নিজের ছেলে মেয়েরা দেশের বাইরে থাকে। পাঁচ দশ বছর পর পর বিদেশী বাচ্চাদের সাথে করে নিয়ে আসে, যারা বাংলা-ই বলতে পারে না। এই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ বুক ভর্তি স্নেহ ভালোবাসা আগলে বসে থাকে অকাতরে বিলিয়ে দেবার জন্য। হারুন সাহেবের কপাল খারাপ। যাদের জন্য এক বুক ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলেন তাদেরকে তিনি কাছে পান না। কিংবা কাছে পেলেও তার সেই অতল ভালোবাসা কচু পাতায় পরা পানির মতো পিছলে কোথায় যেন হারিয়ে যায়, কিছুতেই ধরে রাখা যায় না। হারুন সাহেব শেষ বয়সে এসে জীবনের আরেকটি তিক্ত বাস্তবতার সম্মুখীন হলেন। এবং জানলেন, তীব্র ভালোবাসা অনেক সময় তীব্র যন্ত্রণার কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

রুবির অভিযোগের জবাবে কপট গাম্ভীর্যে তিনি সায় দিলেন,

“ঠিক বলেছ মা। জয়নালের এই কাজটা করা একদম ঠিক হয়নি। জয়নাল!”

জয়নাল কি যেন ভাবছিল। হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেয়ে জবাব দিলো, “জী চাচা!”

“আজকে এই কৈ মাছ তুমি কুটবে। রান্নাও করবে। ঠিক আছে?”

জয়নাল সুবোধ ছেলের মতো জবাব দিল, “জী চাচা।”

হারুন সাহেব হাসিমুখে এবার রুবিকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি রুবি? শাস্তি ঠিক আছে, না কানে ধরে উঠবস করাবো?”

রুবি হাসতে হাসতে জবাব দিল, “একদম ঠিক আছে চাচা। আপনিও আজকে আমাদের সাথে খেয়ে যাবেন। আজ রাতে আমাদের বাসায় আপনার দাওয়াত।”

“ঠিক আছে মা। ঠিক আছে। এখন বলতো আমার আদরের নাতিটা কোথায়?”

সৌরভ বিকেলে আবিরদের বাসায় খেলতে যায়। এখনো ফেরেনি। হারুন সাহেব আরো কিছুক্ষণ হালকা গল্প গুজব করলেন। চা খেয়ে খানিকবাদে নামাজের সময় হয়ে যাচ্ছে বলে চলে গেলেন।

====================================================================

সৌরভ রাত দশটায় ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে ঘুমাবার আগে সে বাবার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে। অনেক প্রশ্ন তার মনে। জয়নাল ধৈর্য্য ধরে তার সব প্রশ্নের জবাব দেয় প্রতিদিন। সৌরভ ঘুমিয়ে গেলে পড়ে ওরা দু’জন একসাথে খেতে বসে।

কৈ মাছ শেষ পর্যন্ত তাকে রান্না করতে হয়নি। রুবিই সব কিছু ম্যানেজ করেছে। কৈ মাছের দোপেয়াজা রান্না করা হয়েছে সাথে পেঁয়াজ মরিচের ভর্তা। হারুন সাহেব অবশ্য আর দাওয়াত খেতে আসেননি। রুবি বাটিতে করে একটা বড় সড় কৈ মাছ পাঠিয়ে দিয়েছে।

রাতের খাবার খাওয়ার মাঝখানে আবার কারেন্ট চলে গেল। ইদানিং ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। বিরক্তিকর একটা অবস্থা। রুবি উঠে একটা মোমবাতি জ্বালালো। মোমবাতিটা টেবিলে রাখতে গিয়ে সে দেখল জয়নাল কেমন যেন আনমনা হয়ে প্লেটে আঁকিঝুঁকি করছে। ও তো কখনো এমন করে না।

“আচ্ছা, তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?”

জয়নাল খাবার প্লেট থেকে মুখ না তুলেই জবাব দিল, “করো।”

“তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ?”

“নাহ।”

“অফিসে কিছু হয়েছে?”

জয়নালের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। মেয়েরা তাদের স্বামীর মন পড়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায় কিনা কে জানে? ব্যাপারটা নিয়ে সে মাঝে মাঝেই গভীরভাবে ভাবে। কিন্তু আজো সে এই রহস্যের কুল কিনারা করে উঠতে পারেনি। অফিসে আজ সত্যিই একটা ঝামেলা হয়েছে। রুবির সেটা জানার কথা না। তারপরও কিভাবে...

রুবি উৎকণ্ঠার স্বরে তাগাদা দিল, “কি হলো? কিছু বলছো না কেন?”

জয়নাল প্রবল বেগে মাথা নেড়ে বলল, “ওহ! না। অফিসে কিছু হয়নি। সারাদিন একটু ধকল গেছে এজন্য কিছু ভালো লাগছে না।”

জয়নাল দেখল মোমের আলোতে রুবি চোখগুলো কেমন জুলজুল করছে। চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল কথাগুলো বোঝার জন্য। আহারে! বড় মায়া লাগে তার। মিথ্যা কথা বলার জন্য জয়নালের একটু মন খারাপ হয়। কিন্তু সংসার করতে গেলে একটু অভিনয় না করলে যে হয় না! অভিনয়টা বোধহয় ভালো হয়েছে। কারণ উত্তর শুনে রুবির মুখ থেকে উৎকণ্ঠার কালো ছায়াটা সরে গেল।

“আজকে তোমার ট্রাংক থেকে একটা জিনিষ পেয়েছি।”

একমনে ভাত মাখাতে মাখাতে সে জিজ্ঞেস করে, “কি?”

“তোমার একটা ডায়রি।”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

“তুমি যে একসময় আমাকে কবিতা লিখতে সেটা মনে আছে?”

“হা হা হা! আরে! ওগুলো আবার কবিতা হলো নাকি?”

“আমার কাছে তো ভালোই লাগতো।”

খানিকক্ষণ চুপ থেকে রুবি বলে উঠলো, “তুমি এখন কবিতা লেখ না কেন?”

“আরে ধুর! সময় কই?”

“কেন? সময়ের কি অভাব নাকি?”

“ধুর! কবিতা লিখলে পেট ভরবে?”

রুবি কঠিন গলায় বলল, “হ্যাঁ ভরবে।”

রুবি মজা করছে কিনা ব্যাপারটা বোঝার জন্য সে ওর দিকে মুখ তুলে তাকায়। রুবি মুখ শক্ত করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েদের মন আসলেই বোঝা অতি দুরূহ। কি কথা কোথা থেকে কোথায় চলে গেল।

“কি হলো আবার?”

“তুমি এখন থেকে প্রতিদিন আমার জন্য একটা করে কবিতা লিখবে।”

জয়নাল কথা শেষ না করে খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে উঠে যায়। মেয়েদের সব কথার উত্তর দিতে নেই। তাতে ঝামেলা বাড়ে। তার কি এখন কবিতা লেখার বয়স আছে?



রাতের খাওয়া শেষে জয়নাল অন্ধকারেই এশার নামাজ আদায় করলো। অন্ধকারে নামাজ পড়ার নিয়ম নেই। কিন্তু আজ তার অন্ধকারেই নামাজ পড়তে ভালো লাগছে। অন্ধকারে নিজেকে কেমন যেন হালকা হালকা লাগছে। যদিও নামাজে বারবার তার মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছিল। মনটা তার বড়ই বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে আজ।

নামাজ শেষে বিছানায় এসে সে আবিষ্কার করলো রুবি মশারীর ভেতর ঝিম ধরে বসে আছে। কোলের উপর তার সেই পুরনো ডায়রি। মশারীর ভেতর থেকে আবারো সেই জুলজুলে চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। জয়নাল সেদিকে তাকিয়ে গোপনে একটা হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে তোমার আবার?”

রুবি আদুরে গলায় বলল, “একটা কবিতা লিখে দাও।”

“এখনি লিখতে হবে?”

“হ্যাঁ।”

“আচ্ছা দাও। লেখা শেষ হলে আমি তোমাকে ডেকে কবিতা পড়িয়ে শোনাবো। এখন শুয়ে পড়, তোমার এ সময় রাত জাগা থাকা ঠিক না।”

মশারীর ফাঁক দিয়ে খাতাটা বের করে দিয়ে সৌরভের পাশে রুবি শুয়ে পড়ে। জয়নাল ওর কাছ থেকে কবিতার খাতাটা নিয়ে আনমনে কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টে দেখে। ছেলেবেলার ডায়রি। উঠতি বয়সে প্রেমে পড়ার পর সে একসময় প্রচুর কবিতা লিখেছে। প্রচণ্ড আবেগ দিয়ে লেখা অর্থহীন সব কাব্য। আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস তার বুক ঠেলে উঠে আসে।

সাবধানে মোমবাতিটা ধরে সে বারান্দার দিকে চলে যায়। বারান্দায় ব্যাচেলার লাইফের একটা টেবিল-চেয়ার পাতা আছে। রুবি হয়তো মাঝে মাঝে বিকেলে এখানে এসে বসে। তবে এগুলো এখন আর তেমন কাজে লাগে না, কিন্তু মায়া পড়ে গেছে বলে ফেলে দেয়াও যাচ্ছে না।

মোম আর খাতাটা রেখে আরাম করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে জয়নাল। বাইরে সুন্দর জোছনা উঠেছে। বাতাসটাও খুব আরামদায়ক আর ঠাণ্ডা। কেমন শীত শীত লাগে। শীতকাল কি চলে এসেছে নাকি?

আজ দুপুরে ম্যানেজার আলাউদ্দিন সাহেব তাকে অফিসে ডাকিয়েছিলেন। ভদ্রলোক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। মুখে মেহেদি দেয়া লাল রঙের চাপ দাঁড়িও আছে। সারাদিনই জর্দা দিয়ে পান খাচ্ছেন বলে মুখ লাল থাকে সারাক্ষণ। এই লোকটাকে সে একদম পছন্দ করে না। পিশাচ প্রকৃতির লোক। হাসতে হাসতে মানুষকে ভয়াবহ বিপদে ফেলে দিতে পারে। কি কারনে ডেকেছে কে জানে।

ম্যানেজার সাহেবের অফিসের গেটে টোকা দিয়ে জয়নাল জিজ্ঞেস করলো,

“স্যার আসবো?”

“আরে জয়নাল সাহেব! আসেন আসেন। আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।”

জয়নালকে অবাক করে দিয়ে আলাউদ্দিন সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে আসে। জয়নালকে বসতে বলে তিনি দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। তারপর নিজের সিটে ফিরে আসতে আসতে বললেন,

“বোঝেনই তো আজকাল সময় খুব খারাপ। কথাবার্তা বলতে হয় সাবধানে।”

জয়নাল কিছু বুঝে উঠতে না পেরে বোকার মতো মাথা ঝাঁকায়। তার সাথে আলাউদ্দিন সাহেবের কোন গোপন কথা থাকার কথা না। কাজে কর্মে সে যথেষ্ট সৎ এবং আন্তরিক। ভুলভালও তেমন একটা সে করে না। হঠাৎ এমন রুদ্ধদ্বার বৈঠকের কি প্রয়োজন হল সে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।

“তারপর জয়নাল সাহেব কেমন আছেন?”

“জী স্যার, ভালো আছি।”

“বউ বাচ্চা ভালো?”

“জী স্যার, সবাই ভালো আছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌!”

“বাচ্চা তো একটাই নাকি? ছেলে?”

“জী স্যার।”

“বাচ্চা কাচ্চা কি আর নেবেন, না এই-ই শেষ?”

জয়নাল বুঝে উঠতে পারলো না কি জবাব দেবে। রুবি তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। কিন্তু এই কথাটা কেন যেন আলাউদ্দিন সাহেবের কাছে বলতে ইচ্ছা করছে না। ইতস্তত করে সে জবাব দিল,

“ঠিক নেই স্যার। দেখা যাক। আল্লাহ্‌ পা’ক যা চান তাই হবে!”

আলাউদ্দিন সাহেব কোন একটা অদ্ভুত কারনে তার কথায় খুব মজা পেয়ে হা হা করে হেসে উঠলেন। জয়নাল এবার একটু ঘামতে শুরু করল। ভদ্রলোকের মতি গতি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।। কি মতলবে ডেকেছে কে জানে?

“জয়নাল সাহেব। আপনি তো জানেন, আমাদের কোম্পানির অবস্থা খুব খারাপ। কি জানেন না?”

“জানি স্যার।”

“ছাটাই মাটাই চলছে তা-ও তো বোধহয় জানেন।”

জয়নাল কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল। বুকটা একটু দুরুদুরু করছে। আজ খুব বিপদ আছে তার। আপাতত, চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

“কি হল জয়নাল সাহেব চুপ হয়ে গেলেন কেন?”

জয়নাল মাথা নিচু করে বলল, “না। কিছু না স্যার। আপনি বলেন। আমি শুনছি।”

আলাউদ্দিন জয়নালের দিকে তাকিয়ে একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, “আচ্ছা। ভালো। আপনাকে আজকে ডেকেছি একটা গোপন কথা বলার জন্য। আপনি তো জানেন, এই অফিসে সব কয়টা এমপ্লয়িই খারাপ। তাদের মধ্যে একমাত্র আপনাকে আমি একটু স্নেহ করি। কি জানেন না?”

“জী স্যার জানি।”

“হেড অফিস থেকে আজকে পাঁচ জনের ছাঁটাই এর একটা লিস্ট পাঠিয়েছে। সেখানে আপনার নাম আছে।”

জয়নাল মুখ তুলে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আলাউদ্দিনের দিকে তাকাল। সে কি ঠিক শুনছে? ছাঁটাই এর লিস্টে তার নাম থাকবে কেন? অসম্ভব। এটা হতেই পারে না।

আলাউদ্দিন হয়তো তার মনে অবস্থাটা বুঝতে পেরে তার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিল। জয়নাল কম্পিত হাতে কাগজটা টেনে নিয়ে তাতে চোখ বুলালো।

হ্যাঁ, সে ঠিকই দেখছে। কোম্পানির প্যাডে লেখা একটা চিঠি। তার নাম এসেছে পাঁচ নাম্বারে। ইস! আরেকটু পেছাতে পারলেই তো সে বেঁচে যেতে পারতো!

চিঠির নিচে এইচ আরের জিএম সানোয়ার সাহেবের চমৎকার প্যাঁচানো একটা স্বাক্ষর। সানোয়ার সাহেবকে দেখলে তার মনে অন্য রকম একটা ভক্তি চলে আসে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও এই লোক স্যুট-টাই পড়ে থাকেন। অবশ্য স্যুট-টাইতে ভদ্রলোককে খুব মানিয়ে যায়। কেমন যেন “সাহেব সাহেব” লাগে। এতো টকটকে ফর্শা মানুষ সে আগে দেখেনি।

“জয়নাল সাহেব।”

সে অবাক হয়ে মুখ তুলে তাকিয়ে বলে, “জী স্যার।”

আলাউদ্দিন চোখ বন্ধ করে পান চিবাতে চিবাতে বলে, “দেখেন জয়নাল সাহেব। আপনি যে একটা বিপদে পড়েছেন সেটা নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ্‌ পা’ক মানুষকে বিপদ দেন পরীক্ষা করার জন্য। আবার আল্লাহ্‌ পা’ক নিজেই সেই বিপদ দূর করেন নানান উছিলার মাধ্যমে। কি? বুঝতে পারলেন?”

জয়নাল কোন জবাব দিল না।

আলাউদ্দিন আবার বলা শুরু করলেন, “আপনি যে বিপদে পড়েছেন সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের ব্যাবস্থা আমি করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা আমি কেন করবো বলেন?”

জয়নালের মাথায় হঠাৎ কেমন যেন চিন চিনে একটা ব্যাথা করা শুরু করলো। সব কিছু তার কাছে একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এসব কিছু কি আসলেই হচ্ছে? নাকি তাকে নিয়ে কেউ একটা নিষ্ঠুর রসিকতা করছে? সে কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। এই মুহূর্তে চাকরীটা চলে গেলে সে বিশাল একটা বিপদে পড়ে যাবে। রুবি প্রেগন্যান্ট। ছেলেকে আগামী বছর স্কুলে ভর্তি করাতে হবে। অনেক টাকা প্রয়োজন।

“কি হল জয়নাল সাহেব? চুপ করে রইলেন কেন?”

জয়নাল অসহায়ের মতো বলল, “কি বলবো স্যার? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

আলাউদ্দিন সাহেব অসহিষ্ণুর মতো অস্ফুট স্বরে বললেন, “আহ! আপনাদের নিয়ে আমি কি যে একটা বিপদে পড়েছি সেটা এক উপর আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কেউ জানে না।”

তিনি টেবিলের দিকে ঝুঁকে ষড়যন্ত্রীদের মতো নিচু গলায় বললেন, “আপনি কি আপনার চাকরী বাঁচাতে চান?”

জয়নাল ব্যাকুল হয়ে বলল, “জী স্যার চাই। আমাকে বাঁচান স্যার।”

হারুন সাহেব এবার সোজা হয়ে বসলেন। দাঁড়িতে হাতাতে হাতাতে বললেন, “আপনাকে বাঁচালে আমার কি লাভ? আমি কেন খামাখা ঝামেলা কাঁধে নেব বলেন? আমি তো কিছু করিনি। আমি কি আপনার চাকরী খেয়েছি?”

জয়নাল মাথা নিচু করে রইল। তার মনে হচ্ছে পায়ের তলার মাটি ফাঁক হয়ে যাক। তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাক। সে এমন কি পাপ করেছে যার জন্য আজ তার এই অবস্থা?

“আহ! আবার চুপ করে গেলেন। আমার হাতে একদম সময় নেই। কিছু একটা বলেন।”

বোঝা যায় না এমন স্বরে জয়নাল বলল, “স্যার, কিছু একটা করেন। আমি খুব বিপদে পড়ে যাবো।”

“ঘরে টাকা পয়সা আছে কিছু?”

অবাক হয়ে সে জিজ্ঞেস করে, “কিসের টাকা স্যার?”

“আহ! আপনারা এতো দিন ধরে কিভাবে চাকরী করছেন আমি মাঝে মাঝে বুঝি না।” একটু থেমে হারুন সাহেব এবার একটু দৃঢ় আর রাগান্বিত স্বরে বলা শুরু করলেন,

“জয়নাল সাহেব, আমি মানুষের উপকার করিনা। তাতে বদনাম হয়। আর এই বদনাম কারা করে জানেন? সেধে সেধে যাদের উপকার করি তারাই আমার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায় যে আমি নাকি টাকা খাই। আরে ভাই, আমি কি লিল্লাহ বোর্ডিং খুলে বসেছি নাকি ফ্রিতে মানুষের উপকার করে বেড়াবো?”

একটু কেশে দম নিয়ে তিনি আবার বলতে থাকলেন, “ছয়মাস আগে তাজুল সাহেবের নামেও এরকম একটা লেটার এসেছিল। এক লাখ টাকার বিনিময়ে আমি সব সিস্টেম করে দিয়েছি। আপনি একঘন্টার মধ্যে এক লাখ টাকা আমার বাসায় পৌঁছে দেবেন। তার বদলে আমি আপনার দিকটা দেখবো। আর যদি কিছু করতে না পারি তাহলে টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন। আমি দুই নাম্বারি পছন্দ করি না। এখন আপনি বলেন, পারবেন টাকা জোগাড় করতে?”

জয়নাল এতক্ষণ বিহ্বল হয়ে ম্যানেজার সাহেবের কথাগুলো শুনছিল। টাকা কোত্থেকে জোগাড় হবে সেটা না ভেবে জয়নালের মাথায় অদ্ভুত সব ভাবনা ঘুরে বেড়াতে লাগলো।

মাস খানেক আগের কথা। রুবিকে ডাক্তার দেখিয়ে ওরা বাসায় ফিরছিল। জয়নাল চেয়েছিল সিএনজি নিতে, কিন্তু রুবি বলল সে আজ রিকসা করেই যাবে। আজ নাকি খুব সুন্দর জ্যোৎস্না উঠেছে। এমন রাতে সে কিছুতেই সিএনজির খুপরিতে বসে যেতে পারবে না।

রুবি এমনিতেই খুব শান্ত কিন্তু মাঝে মাঝে খুব জেদি হয়ে ওঠে, তখন একবার যেটা বলেছে সেটাই করবে। তাছাড়াও ও এখন প্রেগন্যান্ট। এ অবস্থায় মেজাজ এমনিতেই খারাপ থাকে। জয়নাল কিছু না বলে রিকসা ঠিক করে উঠে বসে। অনেকদিন পর সেদিন তারা দু’জন রিকসায় উঠল একসাথে। কিছুদূর যাবার পর রুবি তার মাথাটা জয়নালের ঘাড়ে এলিয়ে দেয়। শঙ্কিত হয়ে সে জিজ্ঞেস করে,

“তোমার কি খারাপ লাগছে?”

রুবি ক্লান্ত স্বরে জবাব দেয়, “না। খুব ভালো লাগছে। ... তোমাকে একটা চুমু খেতে ইচ্ছা করছে।” মাথা তুলে জয়নালের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “দেবে একটা চুমু?”

জয়নাল হেসে অন্য দিকে তাকায়, “কি যে বল তুমি!”

রুবি আবার জয়নালের ঘাড়ে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে শক্ত করে তার হাতটা ধরে রাখে।

আহ! সে রাতটা কি চমৎকার স্বপ্নময় ছিল!

জ্যোৎস্নালোকিত সেই রাত্রে তার মনে হয়েছিল এবার হয়তো তার ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে। বিয়ের আট বছর হয়ে গেলেও রুবিকে সে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই দিতে পারেনি। সে প্রতিজ্ঞা করলো এবার সৌরভকে একটা সাইকেল, মেয়ে হলে তার জন্য একটা জোড়া স্বর্ণের চুড়ি আর রুবির জন্য একটা দামী শাড়ি কিনে দেবে।

আলাউদ্দিনের কথার জবাবে জয়নাল শুধু বলল, “স্যার! আপনি আমাকে বাঁচান। আমি এক ঘন্টার মধ্যে টাকার ব্যবস্থা করছি।”

অফিস থেকে বেরিয়ে জয়নাল গেল ব্যাংকে। দশ বছরের চাকরীর জীবনে সে দুপুরে কলা পাউরুটি খেয়ে এক পয়সা এক পয়সা করে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা জমিয়েছিল। টাকা তুলে সে সোজা স্যারের বাসায় চলে গেল। আলাউদ্দিন সাহেব থাকেন ধানমণ্ডি, নিজস্ব বাড়িতে। স্যারের বাসায় সে আগে কখনো আসেনি। কলিং বেল চাপার পর মোটা মতো এক মহিলা দরজা খুলে দিল। নিজের পরিচয় দেবার পর তার হাতে টাকার বান্ডিল্টা দিয়ে আর কোন কথা না বলে সে চলে আসতে নিয়েছিল।

কিন্তু ভদ্রমহিলা তাকে আটকালো। ঘরের ভেতর নিয়ে তাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে একটা একটা করে নোটগুলো গুনলো। তারপর “আচ্ছা, ঠিক আছে। এবার আপনি যেতে পারেন।” বলে বিদায় দিল।

জয়নাল কতক্ষণ বারান্দায় বসে এসব ভাবছিল তার ঠিক খেয়াল নেই। এখন প্রায় মধ্যরাত। চারপাশ অনেকটাই নিস্তব্ধ হয়ে এসেছে। কোথা থেকে যেন একটা ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে।

জয়নাল কলমটা হাতে নিয়ে তার কবিতার খাতাটা খুলে বসলো। আচ্ছা, কবিতা কি বিক্রি করা যায়? বিক্রি করা গেলে খুব ভালো হতো। তার অনাগত মেয়ের জন্য এক জোড়া দুল, রুবির জন্য একটা জামদানী শাড়ি আর সৌরভের জন্য একটা সাইকেল কেনা যেত সে টাকা দিয়ে।

বাইরে আজও খুব জ্যোৎস্না উঠেছে। চারপাশ ভেসে যাচ্ছে সাদা আলোয়। জয়নালের চোখের কোণ থেকে এক বিন্দু এক বিন্দু করে মুক্তো ঝরে পড়ছে তার কবিতার খাতায়। খুব আবেগ দিয়ে সে একটা কবিতা লিখবে আজ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন: ভালো লাগলো।



শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২০

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন:
ও হ্যাঁ! আপনার সন্তানের জন্য অগ্রিম দোয়া রইল :) :)

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: আমার প্রোফাইলের ওই কথাগুলো অনেক আগে লেখা। জুলাইএর ৬ তারিখ ছেলের বাবা হয়েছি!

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৫

শায়মা বলেছেন: জয়নালের কবিতা বিক্রি হোক , পূরণ হোক তার মনের সকল আশা।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: শায়মা আপু, জয়নালের কবিতা কখনই বিক্রি হয়না।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৯

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লেগেছে। একটানে পড়ে ফেললাম।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:০৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.