নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার প্রিয় কিছু পাপের কাছে আমি বন্দি হয়ে আছি

নাভিদ কায়সার রায়ান

তৃতীয় ধরণের পাগল হল সেয়ানা পাগল। এটা সবচেয়ে কঠিন ধরণের পাগলামি। এই পাগল কি সুস্থ না অসুস্থ সেটা বোঝা খুব কঠিন। যখন সে পাগলামি করছে তখন তার কাজকারবার হবে সুস্থ মানুষের মতো। জটিল সব যুক্তি দিয়ে সে তার পাগলামি প্রতিষ্ঠিত করবে। আবার যখন সে সুস্থ থাকবে তখন তার চিন্তা ভাবনা হবে পাগলের মতো। অফিসে এবং বাসায় নিয়মিত ভাবে আমি এই পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে ভালোই লাগে। শুধু মাঝে মধ্যে আমার মাথার মধ্যে জ্যোৎস্না ঢুকে পড়ে। তখন খুব অস্থির লাগে। কেন লাগে জানি না। আপনারা কেউ কি জানেন?

নাভিদ কায়সার রায়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোকার স্বর্গ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৭

চোখ ডলতে ডলতে ফয়েজ সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন। এই গভীর রাতে কে যেন গেটে ধাক্কাধাক্কি করছে। বিরক্তিকর একটা অবস্থা। সারাদিন নানান ঝামেলা গেছে, তার উপর আগামীকাল সকালে একটা ক্লাসও আছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার আবার আর ঘুম আসতে চায় না। মহা সমস্যা। এতো রাতে তাকে কে খুঁজতে এসেছে?

বিছানা থেকে নেমে লুঙ্গীর গিটটা আবার ঠিক করে নিলেন। একটু পানির পিপাসা পেয়েছে, প্রস্রাবের বেগও চেপেছে। পানি খেয়ে, টয়লেট সারতে মিনিট পাঁচেকের মতো সময় লাগবে। দরজা ধরে যে ধাক্কাধাক্কি করছিল সে কি তাকে এই মূল্যবান পাঁচ মিনিট সময় দেবে? তিনি বুঝতে পারলেন না। কেউ যখন অপেক্ষায় থাকে, তার জন্য সময় প্রায় স্থির হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট তার জন্য পাঁচ ঘন্টার সমান মনে হবে। তাতে কি? বাইরে যে দাঁড়িয়েছিল সে এখন আর কোন শব্দ করছে না। হয়তো চলে গেছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পানি খেয়ে, টয়লেট সেরেই গেট খুলবেন।

টয়লেটে বসে থেকে তিনি টের পেলেন অপেক্ষারত ব্যাক্তির এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দরজার ওপর দুড়দাড় করে বাড়ি পড়ছে। গেটটা না ভেঙ্গে যায়! কার এতো বড় সাহস রে?

মেজাজ সপ্তমে তুলে তিনি টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলেন। হুড়হাড় করে দরজা খুলে হাঁক দিলেন,

“এতো রাত্রে কে?”

গেটের বাইরে তিনি যা দেখলেন সেটা দেখে তার আবার পিপাসা পেয়ে গেল। এতো রাতে তার বাসায় পুলিশ কি করছে?

অত্যান্ত কঠিন চেহারার এক সাব ইন্সপেক্টর তাকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি ফয়জুর রহমান?”

“হ্যাঁ।”

সাব ইন্সপেক্টরের বুকের ব্যাজে নাম লেখা সেলিম। সেলিম তার এক স্টুডেন্টের নাম। বাড়ি বরিশাল। উপর লেভেলে ছেলেটার অনেক যোগাযোগ আছে। পরীক্ষায় একবার নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল। স্বয়ং প্রিন্সিপ্যাল স্যার এসে তাকে হাতে নাতে ধরেছিল। প্রিন্সিপ্যাল স্যার অত্যান্ত রাগী মানুষ। তিনি সাথে সাথে ছেলেটিকে কলেজ থেকে বের করে দিলেন।

যে রুম থেকে সেলিমকে ধরা হয় ফয়েজ সেখানে ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ছেলেটা যে নকল করছিল সেটা তিনি দেখেননি। সারারাত তার ভয়ে ভয়ে কাটল এই ভেবে যে, সকালে কলেজে গিয়ে দেখা যাবে প্রিন্সিপ্যাল সাহেব তাকে শোকজ করেছেন।

কিন্তু ঘটনা ঘটলো তার সম্পূর্ণ উল্টো। সকালে দেখা গেল সেলিম তার দলবল নিয়ে কলেজের গেটে সিগারেট ফুঁকছে আর মেয়েদের দেখলে শীষ বাজাচ্ছে। আর প্রিন্সিপ্যাল সাহেবকে রাতের মধ্যেই বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি। বিনা বাঁধায় নকল করতে দেয়ায় সেলিম তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো। এমনকি সিগারেটটাও হাতের পেছনে লুকিয়ে রেখেছিল। গলায় জোর দিয়ে বলেছিল, “স্যার! আপনার কিছু লাগলে আমাকে একবার শুধু জানাবেন।”

ফয়েজ সাহেব তারপর আর বেশীদিন সেই কলেজে থাকেন নি। যেখানে এমন কলিকাল চলছে সেখানে এমন রাবণেরাই থাকতে পারে। তিনি রাবণ নন, রাম-লক্ষনও নন। সামান্য কলেজের শিক্ষক। মসির শক্তির উপর ভোর করে অসুরের সাথে যুদ্ধে তিনি পারবেন না।

এখন মনে হচ্ছে তিনি হিসেবে খানিকটা ভুল করে ফেলেছেন। সেলিমের নাম্বারটা নিয়ে রাখলে ভালো হতো। আধুনিক যুগে অসিও না, মসিও না, অস্ত্র হল মোবাইল ফোন।

সাব ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, “আপনাকে একটু আমাদের সাথে আসতে হবে।”

ফয়েজ সাহেব একটু ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। ইন্সপেক্টরের কথায় তিনি ধাতস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”

“আপনার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ এসেছে।”

“মানে?”

“মানে আপনি থানায় গিয়ে বুঝবেন। এখন যান জামা কাপড় বদলে আসেন। আমাদের হাতে বেশী সময় নেই।”

ফয়েজ সাহেব হতভম্ব হয়ে জামা কাপড় বদলাতে গেলেন। তারমনে আরও কিছু প্রশ্ন ছিল। কিন্তু তিনি নিজেকে নিবৃত করলেন। পুলিশের প্রশ্ন শোনার অভ্যাস নেই। উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করলে হয়তো দু’চার ঘা দিয়ে বসতে পারে। থাক, কি দরকার। থানায় গেলেই সব জানা যাবে।



পরদিন পেপারে লিড নিউজঃ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক কারাগারে। হা হা হা! কি যে একটা দেশ এটা! ভাবতে ভালোই লাগে। এন্টারটেইনমেন্টের কোন অভাব নেই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার আগে ওই লোক মনে হয় ভুলেও ভাবতে পারেননি যে তার সামনে কি ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন - যে দেশে ঘরের ভেতর মানুষ জনকে কুপিয়ে মোরব্বা বানিয়ে গেলেও পুলিশ তার কিছু করতে পারে না; সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য আমার আর কি হবে? গভীর রাতে তার বাসায় যখন পুলিশ হানা দিলো তখনও কি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কি হতে যাচ্ছে? মনে হয় না। জেলে ভরার আগে ভদ্রলোকের মুখের এক্সপ্রেশনটা কি ছিল সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে। হা হা হা! একটা ছবি তুলে রাখতে পারলে এপিক হতো।



একজন শিক্ষককে নিয়ে সস্তা রসিকতা করাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। জেল থেকে বের হয়ে এই লোক মনে হয় না আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। হঠাৎ দেখা যাবে শাহবাগের মোড়ে এক পাগল ট্রাফিক কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। হাতে একটা প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা – “একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না” হা হা হা! হ্যাঁ! এমন জ্বালাময়ী স্ট্যাটাসকে দুর্ঘটনা বলাই ভালো!

আমি ভাবছি আমার ছেলেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবো। তারপর দেখি কোন শালা আমাকে পাগল বলে!







মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৫

মামুন রশিদ বলেছেন: আজকে যা ঐ শিক্ষকের সাথে ঘটলো, কালকে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে অন্য পক্ষের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও এটা ঘটবে । তাই জেনে শুনেই আমরা এই ৫৭ ধারার বিপক্ষে ।

ব্যক্তি হিসাবে আমি ঐ ভদ্রলোককে চিনি, ইউনিতে আমার সিনিয়র । আমরা পরষ্পর ভিন্ন রাজনৈতিক ধারার হওয়ার পরেও ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে উনার ভূমিকা আমাদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না । এখনও উনি সেই চেতনায় বিশ্বাস করেন ।

যাই হোক, অনলাইনে বাকস্বাধীনতা হরণ করা কোন ভাল কাজ নয় ।

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: মামুন ভাই, অন লাইন অফ লাইন যে ভাবেই হোক, বাকস্বাধীনতা হরণ করা কোন ভাল কাজ দূরে থাক, এটাকে আমি অন্যায় বলে মনে করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.